Nov 29, 2020
Nov 28, 2020
"ফুরফুরে" - ধ্রুবজ্যোতি সরকার
Edit Posted by নেট ফড়িং with No comments
ফুরফুরে
ধ্রুবজ্যোতি সরকার
আর একটু দেরি হলেই মিস করে ফেলত বাসটা। একপ্রকার দৌড়ে এসে বাস ধরলেন অবিনাশ
বাবু। আজও অফিসে দেরি হলে আর রক্ষে ছিল না। অফিসে কদিন ধরে মাঝে মাঝেই বসের কথা শুনতে
হচ্ছে। কেমন হাফ ধরে গেছে বুকে, যেন একটু চিন চিন করে ব্যথাও করছে। বুকের বামপাশটায়
হাত রেখে এগিয়ে গেলেন পেছনের দিকে একটা ফাঁকা সিট লক্ষ করে।
সিটে বসতেই বাড়ির চিন্তা মাথায় ভিড় করে এলো। সাংসারিক অশান্তি তো আছেই
তারপর বছর খানেক আগে একমাত্র ছেলের মৃত্যুর পর থেকে তার গিন্নি কেমন যেন বদলে গেছে।
না ঠিক করে খায়, না ঠিক করে কোনো কাজ করে। বাড়িতে নিজেকে তার একেবারেই নিঃসঙ্গ মনে
হয় আজকাল। তার নিজের বয়স হচ্ছে, কি জানি আর কদিন এই শরীরে এরকম ধকল সইবে।
না, আজ ঠিক সময়েই পৌঁছেছেন অফিসে। নিজের রুমে বসে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস
ফেললো। কিন্তু বুকের বাম পাশটা এখনও কেমন যেন চিন চিন করে ব্যথা করে চলেছে। না লক্ষণ
ভালো নয়। আজ বিকেলে ডাক্তার দেখিয়ে ইসিজিটা না করালেই নয়। সামনে ফাইল খুলে বসে একটু
কাজে মন দেওয়ার চেষ্টা করলেন। কিন্তু পারলেন না, মাথায় নানা চিন্তা ভিড় করে এল।
বোতল খুলে ঢকঢক একটু জল খেলেন। বুকের ব্যথাটা চেপে ধরে মাথাটা উপুড় করে একটু চোখ দুটো
বন্ধ করার চেষ্টা করলেন।
কখন ঘুমিয়ে পড়েছেন নিজেও জানেন না। হাত ঘড়িতে তাকিয়ে দেখেন বিকেল হয়ে
গেছে। তড়িঘড়ি উঠলেন। অফিসের দাড়োয়ান বাদে আর কেউ নেই। যাইহোক নিঃশব্দে তিনি বাইরে
বেরিয়ে এলেন। এদিকে বুকের ব্যথাটাও আর একেবারেই নেই। বেশ লাগছিল শরীরটা। আর মনটাও
একদম ফুরফুরে লাগছে। উফ, অনেকদিন যেন এরকম শান্তির ঘুম হয়নি। আজ তবে ডাক্তার না দেখালেও
চলবে। ইচ্ছে হলো আজ হেঁটেই বাড়ি ফিরবেন। খুব বেশি হলে মিনিট ত্রিশ লাগবে, তা লাগুক
বেশ একটু হাঁটাও হয়ে যাবে।
গোটা রাস্তা হেঁটে এলেন বেশ নিশ্চিন্ত ও ফুরফুরে মনে। কিন্তু বাড়ির কাছে
যেতেই কেমন চেনা কান্নার আওয়াজ, গিন্নির গলা মনে হচ্ছে। একটু এগোতেই দেখলেন বেশ ভিড়,
তার বাড়ির সামনে একটা অ্যাম্বুলেন্সও দাড়িয়ে আছে। কি হলো ব্যাপারটা দেখতে এগিয়ে
যেতেই নজরে পড়লো তারই দেহ শোয়ানো রয়েছে। সবাই কি যেন একটা হার্ট অ্যাটাক নিয়ে আলোচনা
করছে । এক ঝটকায় যেন আরও হালকা হয়ে গেল শরীরটা...
Nov 26, 2020
"আগমনী" - সায়রী লাহা
Edit Posted by নেট ফড়িং with No comments
আগমনী
সায়রী লাহা
পবিত্রতা, শুভ্রতার প্রতিমূর্তি মা দুর্গা, অন্যদিকে তাঁর মূর্তি তৈরিতেই
দরকার হয় তথাকথিত ‘অশুচি’, ‘অপবিত্র’ এলাকার মাটির ৷ এক পুজো চলে যেতেই শুরু হয়ে
যায় পরের বছরের পুজোর প্রস্তুতি ৷ পুজোর কয়েক মাস আগে থেকেই কুমোরপাড়ায় ব্যস্ততা
ওঠে তুঙ্গে ৷ কাদা মাখা শিল্পী হাত থামতেই চায় না ৷ মৃন্ময়ীরূপে জেগে ওঠেন মা দুর্গা
৷ একমেটে, দোমেটে থেকে ধাপে ধাপে পূর্ণ অবয়বে ফুটে ওঠেন তিনি।
নিষিদ্ধপল্লীর মাটির মিশ্রণে তৈরি হবে দেবীমূর্তি ৷ আর সেই কারণেই সেই পুরাকাল
থেকে আজও দেবীর মূর্তি তৈরিতে দরকার হয় বেশ্যালয়ের মাটি ৷ কিন্তু কেন এই রীতি ?
এই সমস্থ কিছু নিয়ে নানান মানুষের ভিন্ন ভিন্ন মতামত চলছে প্রাচীন কাল
থেকেই…
খবর সংগ্রহের উদেশ্যে নিজের টিমকে নিয়ে পতিতালয়ে উপস্থিত হয়েছে অভিরূপ।
অনুমতি নেওয়া হয়েছে সংবাদ পত্রের তরফ থেকে। হবে কিছু আলাপচারিতা এবং ফোটো
শুট।
অভিরুপ এক সংবাদ পত্রের রিপোর্টার, নিউজ এডিটর এবং ফটোগ্রাফার।
মহালয়ার পূণ্য লগ্নে প্রকাশ হবে এই আগমনী প্রজেক্টটি তাই জোর কদমে চলছে
প্রস্তুতি।
পতিতালয়ের প্রধান আম্মা দেবিকারানীর সাথে সকাল থেকে ইনফরমেশন কালেক্ট করছে
টীম।
কিছু ভিডিও ফুটেজ, কিছু ভয়েস নোট আর কিছু বক্তব্য খাতায় নোট করে রাখছে
ওরা।
আম্মার বক্তব্য অনুযায়ী " পুরুষ-মানুষ পতিতালয়ে গিয়ে যখন বীরাঙ্গনার
সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন, তখন তিনি জীবনে সঞ্চিত সমস্ত পুণ্য সেখানেই ফেলে আসেন ৷ আর সংগ্রহ
করেন ঘড়া ভর্তি পাপ।
চিরাচরিতভাবে মানুষ বিশ্বাস করেন যে, মানুষের মধ্যে যে কামনা, বাসনা, লালসার
বাস। পতিতারা তা নিজেদের মধ্যে নিয়ে নেন। তাঁরা নিজেদের অশুদ্ধ, অপবিত্র করে সমাজকে
শুদ্ধ রাখতে চান। পবিত্র রাখতে চান। ফলে হাজার হাজার পুরুষের পুণ্যে বেশ্যাদ্বারের
মাটি হয়ে ওঠে পবিত্র ৷ সে কারণেই এই মাটি দিয়ে গড়তে হয় দেবী মূর্তি ৷ এই আচার থেকে
বোঝানো হয় যে, নারী মায়ের জাতি।" নথিভুক্ত হয় আম্মা দেবিকারানীর সমস্ত কথাই।
" অনেক সকালে এসেছ, তোমরা চা বিস্কুট কিছু নেবে?" আলাপচারিতা
শেষ হলে বলে ওঠেন আম্মা।
" না, আমরা খেয়েই বেড়িয়েছি। ফটো শুট করে নিয়ে একেবারে চলে যাবো।"
জানায় অভীরূপ।
" কিন্তু ভেতরে ফটো তোলা তো নিষিদ্ধ। তাছাড়া ওখানে এভাবে তোমাদেরকে
আমি যেতে দিতে পারবো না।" বাধা দিলেন আম্মা।
" আমাদের বেশিক্ষণ সময় লাগবে না। আধ ঘন্টা নেবো… চার্জ দেবো। রাজি?
" প্রজেক্ট শেষ না করে অভীরুপ ছেড়ে যাওয়ার পাত্র নয়।
" আচ্ছা চলো ঠিক আছে। তবে একজন কে অ্যালাও করতে পারি।" বলে উঠে
দাঁড়ালেন আম্মা।
" ঠিক আছে তাই হবে। রায়ান ট্রাইপড,লাইট,লেন্স আর ক্যামেরাটা দে,তোরা
চলে যা। আমি ফটো শুট কমপ্লিট করেই আসছি।" বলেই ঘড়িটা দেখলো অভীরুপ, দুপুর একটার
মধ্যে কাজ সেরে বেরিয়ে যেতে হবে। নয়তো শ্রেয়া রেগে যাবে, আজ ওর সাথে লাঞ্চ সেরে শপিংয়ে
যাবে কথা দিয়েছে। হাতে এখনও ঘণ্টা দুই, আরামসে হয়ে যাবে।
" দেখো বাবা, সব মেয়ের ছবি তুলতে দেওয়া যায় না।
ওরা নিজের কাজে, কোনো না কোনো ক্লাইন্টের সাথে আছে। ওদের কাজ নষ্ট মানে,
চার্জ না পাওয়া।" আবার বাধা দেয় আম্মা…
" এক জনের ছবি তুলতে বা কথা বলতে পারি কি?" বিরক্তির সাথে গলা
ঝাঁকিয়ে বলে অভিরুপ।
" হ্যাঁ তা পারো,তা পারো.." বিনয়ীর সুরে আম্মা বলে উঠলে অভীরূপ
জানায় " তবে আপনার এখানে সব চেয়ে সুন্দরী মহিলাটিকে পাঠিয়ে দিন।"
কথা মতো কাজ শুরু হয় " জি আমার নাম অপর্ণা, আপনি কাজ শুরু করতে পারেন।"
মেয়েটাকে দেখলে মনে হয় যেন মাটি দিয়ে নিখুঁত ভাবে গড়েছে কেউ… এত সুন্দর
চোখ দুটো। এত বছর ধরে সাংবাদিকতা করেও অভিরুপ এমন মোহময়ী কাউকে দেখেনি আজ পর্যন্ত।
বাইরে এত কাজ থাকতে কেন যে মানুষ এসবে জড়িয়ে পড়ে কে জানে? যাক গে ফটো শুট শুরু করা
যাক।
" আপনার একটা ভিডিও ফুটেজ নেবো, কবে থেকে এখানে আছেন? প্রতি বছর দুর্গা
পুজো কেমন কাটে? এসবই..." ক্যামেরা সেট করতে করতে জানায় অভীরুপ।
" আমাকে আপনি বলতে হবে না, তুই করেই বলুন।
আমি অপর্ণা, এখানে এসে পৌঁছাই মা মারা যাওয়ার পর সৎ মা বাড়ি থেকে তাড়িয়ে
দেয় যখন। মাধ্যমিক দিয়ে ছিলাম, তার কয়েক মাস পরেই... মাধ্যমিকে ফার্স্ট ডিভিশন ছিল।
কিন্তু পড়াশোনাটা আর হলো না... যাই হোক এখানে আছি প্রায় দশ বছর হলো। আম্মা আমাকে
মেয়ের মতোই রেখেছেন, অসুস্থ হলে খেয়াল রাখেন। এই আর কি... অনেক কথা বলে ফেললাম আসলে
এমন প্রশ্ন কেউ কখনো করেনি।" বলেই মাথা নিচু করে চুপ করে বসে মেয়েটি।
" তুমি পড়াশোনা করতে ভালবাসো? জীবনে কি হতে চেয়েছিলে? কিছু ইচ্ছে
আছে জীবনে।" মুখের দিকে না তাকিয়েই প্রশ্ন করে অভীরূপ।
" আমাদের স্বপ্ন বলে কিচ্ছু হয় না। আপনাদের আর আমাদের পৃথিবী সম্পূর্ণ
আলাদা। আমি শুধু মুক্তি চাই, এই চার দেওয়ালের ভিতর থেকে মুক্তি। স্বাধীনতা চাই, সম্মান
চাই এক মুঠো… দম বন্ধ হয়ে আসে এই জীবনে... যেগুলো কোনোদিন পাওয়া সম্ভব নয়।"
চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে অপর্ণার ময়ূখের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে " আপনি মনে হয়
সকাল থেকে কিছু খাওয়া দাওয়া করেননি।" বলে উঠে গিয়ে বিস্কুট আর চা নিয়ে আসে।
না খেয়েই বেরিয়েছিল সে, কাজ সেরেই এক্কেবারে লাঞ্চ করবে ভেবে… লাঞ্চ কথা
মনে করতেই মনে পড়লো। আরে একটা বাজতে চললো শ্রেয়াকে কথা দিয়েছে ও।
ফোনটাও সাইলেন্ট করা আছে, ব্যাগ থেকে ফোন বের করতেই দেখে ১১ টা মিস কল।
আজ তো ও শেষ। চা, বিস্কুট ফেলে রেখে ফোন করে শ্রেয়াকে।
" হ্যালো, শুনতে পাচ্ছো… ভেরি সরি, আমি একদম..." কথা শেষ করতে
পরে না অভীরুপ।
" এই শোনো, তুমি কি মনে করো হ্যাঁ? এত কাজ তোমার? আমি কিছু বুঝি না?
এতবার ফোন করলাম... তুমি কোথায় ছিলে কি করছিলে? ডোন্ট মেক এনি এক্সকিউজ। ফোনটা রাখো,
আর হ্যাঁ আজ আমি তোমার সাথে কোথাও যাচ্ছি না। একটা বাজতে চললো, আমি লাঞ্চ করে নিচ্ছি...
তোমার জন্য আমি নিজের হেলথ খারাপ করতে রাজি নই " বলেই ফোনটা কেটে দিল শ্রেয়া।
কিছু বলার সুযোগটুকুও পেলো না অভীরুপ...
ধপ করে বসে পড়লো চেয়ারে " একটু জল হবে?" বলে অপর্ণার দিকে তাকালো।
" হ্যাঁ আনছি। আপনি চা, বিস্কুট খান.." বলে উঠে গেলো সে।
এত বছরের সম্পর্ক তাও অভীরূপকে চিনলো না শ্রেয়া। আগে এমনটা ছিল না… কথায়-কথায়
দোষারোপ রাগ, ভরে উঠছে দিন দিন… ওর বাবা একটা সম্বন্ধ এনেছিল ছেলে ডাক্তার, বিদেশে
থাকে অনেক বড়ো ব্যাপার, সেখানে অভীরূপ কিছুই না। কি বা দিতে পারে সে শ্রেয়াকে?
" জলটা… একটা কথা বলবো?" বললো অপর্ণা।
সে কখন এসে দাঁড়িয়েছে খেয়াল করেনি অভীরূপ।
" কিছু বললেন?" জিজ্ঞেস করে অপর্ণাকে...
" উনি মানে, ফোনে যার সাথে আপনি কথা বলছিলেন উনি আপনার স্ত্রী?"
" না প্রেমিকা... কেন বলুন তো?" আর কোনো কথা না বাড়িয়ে ক্যামেরা,
ট্রাইপড সব গুছোতে শুরু করে অভিরুপ।
" উনি আপনাকে ভালবাসেন না। চিৎকারের শব্দ পাচ্ছিলাম, একবারও শুনলাম
না উনি জিজ্ঞেস করছেন আপনি খেয়েছেন কি না…"বলেই থেমে গেলো অপর্ণা।
" হাউ ডেয়ার ইউ? আপনাকে সাহস কে দিল এ কথা বলার? নষ্ট মেয়ে একটা...
আপনার কাছে ভালবাসার জ্ঞান শুনতে হবে? নিজের জায়গাটা ভুলে যাবেন না। আপনি জানেন শ্রেয়া
কে?" তীব্রস্বরে কথা গুলো বলতে বলতে সমস্ত কিছু গুছিয়ে নিয়ে বেরিয়ে গেলো অভীরূপ।
আজকের মতো কাজ শেষ তার, অফিসে সব কিছু জমা করে...
বাড়ি ফিরে স্নান, খাওয়া করে শ্রেয়ার কাছে গেলো ওকে মানাতে।
" দেখো অভি, আমাদের সম্পর্কটা বাড়ি থেকে এমনিতেই মেনে নিচ্ছে না।
তুমি সাংবাদিকতা করো, কোনো চিরস্থায়ী চাকরি তো নয়। তার উপর তোমার এমন বেআক্কেলে হাবভাব,
ফোনটা রিসিভ করে একবার জানতে তো পারতে আমাকে…"
" আই অ্যাম সরি বেবী, আর হবে না পাক্কা। কাজে ফেসে গেছিলাম একটু...
চলো আজকে শপিং করে আসি তুমি যা বলবে তাই হবে.." বলেই কান ধরে অভীরূপ।
" এই গরমে তোমার বাইকে উঠতে ইচ্ছে করছে না। এসি ট্যাক্সি বুক করো…"
বলে ফ্রেশ হতে যায় শ্রেয়া।
ঠাণ্ডা ঘরে বসে ভাবতে থাকে অভীরূপ, ওই অপর্ণা মেয়েটির সাথে বড্ড খারাপ ব্যবহার
করে ফেলেছে রাগের মাথায়। এভবে বলাটা ঠিক হয়নি, একবার কি গিয়ে সরি বলে আসা উচিৎ?
এমনিতেও এসব মানুষের জীবনে কিছু নেই। আঘাত করাটা উচিৎ হয়নি...
শ্রেয়ার সাথে শপিং সেরে ডিনার করেই ফিরেছে, মাস মাইনেটা প্রায় শেষ… এখনও
মা-বাবার জন্য শপিং বাকি।
ভাবতে ভাবতেই সোফায় মাথাটা ঠেকিয়ে দিল।
ফোনের স্ক্রিনে আম্মার নম্বরটা পেয়েই ফোন করে জানাল " কাল সকালে একবার
আসবো, প্রজেক্টের জন্যই..বেশি সময় নেবো না।"
" একটা গোলাপ ফুলের তোড়া নিলে কেমন হয়?
হয়ত মনটা ভালো হয়ে যাবে মেয়েটির " ভাবতে ভাবতেই গোলাপ ফুল নিয়ে হাজির
হলো আম্মার দরজায়।
" একি তুমি এসব নিয়ে?" আম্মা বলতেই, অভিরুপ জানায় " একটু
দরকার আছে, অপর্ণাকে পাওয়া যাবে? "
" ওরকম ভাবে এখানে কিছু পাওয়া যায় না। চার্জ দিতে হবে।" বলতে
বলতে আম্মা ঘুরে তাকায় অভিরুপের মুখের দিকে " এই নিন, এবার তো ভিতরে যেতে পারি?
"
" দু ঘন্টা…"
" অপর্ণা... কোথায় আছো? একটু কথা বলবো.."
ডাক দিতেই ভিজে চুল মুছতে মুছতে ঘরের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে অপর্ণা, ভিজে
চুল থেকে টপ টপ করে জল পড়ছে, উজ্জ্বল কপালের লাল টিপ.. কোনো অপ্সরার থেকে কম কিচ্ছু
না।
" কালকে কিছু কথা বলেছিলাম,তার জন্য ক্ষমা চাইতে এসেছি। আসলে মাথার
ঠিক ছিল না একদম।" গোলাপ ফুল হাতে নিয়ে কাঁচু মাঁচু মুখ করে বলে অভীরুপ ।
" এসব ছাড়ুন, অভ্যাস আছে শোনা। কি জন্য এসেছেন বলুন? নিজের কাজ মিটিয়ে
চলে যান।"
" তুমি যেটা ভাবছো, আমি সেটা নই। আমি সত্যিই ক্ষমা চাইতে এসেছি। আমি
কারুর সাথে সজ্ঞানে অন্যায় করতে চাই না। আই অ্যাম সরি.." বলেই অপর্ণার হাতে গোলাপ
ফুলের তোড়াটা দেয় অভীরূপ।
চোখ ছল ছল করে ওঠে মেয়েটার…
" আমি তবে আজ থেকে আপনার বন্ধু হলাম।
আপনার যে কোনো সমস্যায় আমাকে ফোন করতে পারেন " বুক পকেট থেকে পেন বের
করে হাতে নম্বরটা লিখে দেয় অভিরুপ।
" আপনার মত মানসিকতার মানুষ আমার বন্ধু হবে ভেবে আমার জীবনটা… জানেন
আমার সাথে মন খুলে কথা বলার কেউ নেই… কেউ না।
আমার তো ফোনও নেই, আপনাকে ফোন করবো কি করে? আপনি আমাকে একটা ফোন এনে দেবেন?"
বলে অভিরূপের হাতে কিছু টাকা ধরায়।
" তুমি কোনোদিন এখান থেকে বাইরে বেরোও না?
এই ভাবে বছরের পর বছর আছো? কি সাংঘাতিক… আমি তোমাকে ফোন এনে দেবো।"
" না, অনুমতি নেই যে… এখান থেকে বেরোলে, আর কোনোদিন ফিরতে পারবো না।
আমাকে মেরে ফেলবে ওরা… আমি মুক্তি চাই।
কিন্তু কোথায় যাবো? আমার যে কেউ নেই…"
দেখতে দেখতে দুঘন্টা কেটে গেলো, আজকের দিনেও মানুষ কতটা অসহায়। নিজের জীবনটা
তিল তিল করে শেষ করছে… অথচ জীবনে কতকিছু করতে পারতো…
এদিকে অভিরুপ আর শ্রেয়ার সম্পর্কের তিক্ততা বেড়েই চলেছে।
" এই কোনো দায়িত্ব জ্ঞান নেই না তোমার? মা-বাবাকে পুজোয় যে কিছু
দিতে হয় সেটাও জানো না নাকি? তোমার থেকে ওই ডক্টর অনিমেশ ঢের ভালো। সম্বন্ধ হতেই এত
গিফটস দিয়ে গেছে.. তোমাকে কি দেখে পছন্দ করবে আমার বাড়ির লোক? " রাত তিনটের
সময় তারস্বরে ফোনের ওপার থেকে চিৎকার করছে শ্রেয়া।
" দেখো শ্রেয়া কদিন আগেই তোমার শপিং করে এনেছি। এখনও আমার মা - বাবার
জন্য কিচ্ছু কেনা হয়নি। আমার কাছে আর টাকা নেই.. আর তোমায় একটা কথা বলি আমার সাথে
থাকতে গেলে এভাবেই থাকতে হবে.. নয়তো তুমি ডক্টর অনিমেশ কেই পছন্দ করে নাও.. আমি আর
পারছি না।" বলে ফোনটা কেটে দেয়।
সারারাত একটা অশান্তির মধ্যে হাঁসফাঁস করে।
কোথাও যেন পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।
সকাল হতেই এসে পৌঁছোয় আম্মার দরজায়।
"যদি সারাদিন অপর্ণা কে বুক করি কত চার্জ নবেন?" বলে পকেট থেকে
মোটা নোটের বান্ডিল বার করে…
আম্মা টাকা দেখেই অনুমতি দেয়।
" কিন্তু আমি যাবো না আপনার সাথে, এত টাকা আপনি কোথায় পেলেন? বলুন
আগে.. এত গুলো টাকা এভাবে নষ্ট করবেন না।" বলে বিছানায় মুখ ঘুরিয়ে বসে অপর্ণা।
" আমি আমার পুরনো ফোনটা বিক্রি করে দিয়েছি। ওটার আর দরকার নেই, ঠিক
আমার সম্পর্কটার মতই। বাদ দিন এসব.. আপনি বেরোবেন এখান থেকে, আমি জীবনে কখনো ভালো কাজ
করিনি। আপনাকে স্বাধীন দেখতে পেলে মনে হবে জীবনে কিছু করেছি। আপনি আপনার বন্ধু হন,
এইটুকু আপনার জন্য করতে পারলে আমার ভালো লাগবে। না করবেন না.."
দুজনে সারাদিন ফুচকার দোকান থেকে, ধাবা খুব ঘুরলো।
দুজনের বন্ধুত্ব জমে উঠলো, সমস্ত যন্ত্রণা ভুলে দুজনে খুশিতে আত্মহারা হয়ে
গেলো… সারাটাদিন কেটে বিকেল হতে চললো।
এত কমদামী উপহারে কোন মানুষ যে এতটা খুশি হতে পারে, আগে কখনো দেখেনি অভিরুপ।
একটা গাড়ি ওদের দুজনকে ক্রস করে সামনে এসে দাঁড়ায়, গাড়িটাকে খুব ভালো
করেই চেনে অভীরূপ।
গাড়ির ভিতর থেকে নামে শ্রেয়া, মুখের উপর একটা কাগজের টুকরো ছুঁড়ে মারে
" এটা আমার আর ডক্টর অনিমেশের বিয়ের কার্ড। তুমি ভুল করেও এসো না। তোমার স্ট্যান্ডার্ড,
তোমার ক্লাস আজকে আমার চোখের সামনে এসে গেলো। কোথা থেকে জোটালে এটাকে? সাজ পোশাক দেখে
তো পুরো ভিখারী লাগছে… একে তুমি ভালবাসো এটা বলে আবার লোক হাসিও না।যদিও তোমার জন্য
এই ঠিক আছে।এর থেকে বেশী খরচ তুমি বহন করতে পারবে না।" বলে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে
শ্রেয়া।
" হ্যাঁ আমি একে ভালবাসি, এটা শুনতে চাও তুমি?
তোমার থেকে অনেক ভালো এ, কেন জানো? তোমার মত চাহিদা নেই ওর। তোমার মতো টাকা
দেখে মানুষকে ভালবাসে না। তোমার মতো লোভী নয়।
চলো অপর্ণা..." বলে অপর্ণার হাতটা চেপে ধরে এগিয়ে যায় অভিরুপ।
হাউ মাউ করে কেঁদে ওঠে অপর্ণা।
" আমার বাড়িতে কেউ থাকে না। মা-বাবা গ্রামের বাড়িতে থাকেন, মাঝে
মাঝে যাই। ছোটো একটা ফ্ল্যাট,সাংবাদিকতা করি। বেশি রোজগার নয়। কোনো স্থায়ী চাকরিও
না। তুমি আমার স্ত্রী হয়ে থাকতে পারবে আমার সাথে?"
" আমি নষ্ট মেয়ে,কারুর স্ত্রী হতে পারি না। আপনার জীবনটা নষ্ট হয়ে
যাবে। আম্মা জানতে পারলে ক্ষতি করার চেষ্টা করবে.." চোখে একরাশ জল অপর্ণার।
" কেউ কিচ্ছু করতে পারবে না। আমি আছি তো..
চুপ আর একটা কথা নয়, বাড়িতে চলো রেস্ট নেবে… কাল সকালে কোনো মন্দিরে গিয়ে
বিয়ে করবো।"
দুজনের চোখে জল, মুখে অব্যাক্ত হাসি... একটা অদ্ভুত পূর্ণতা গ্রাস করছে
দুজনকেই, চাঁদের আলোয় চোখের জল চকচক করছে দুজনের…
একটা অসহায় মেয়ে, মাথা রাখে একটা মধ্যবিত্ত ছেলের কাঁধে।
রাত পেরোলেই মহালয়া, শুরু হবে দেবীপক্ষ।।
"বৃষ্টির রূপ" - অবাস্তব ডায়েরী
Edit Posted by নেট ফড়িং with No comments
বৃষ্টির রূপ
অবাস্তব ডায়েরী
“ওয়াও কি জোড় বৃষ্টি হচ্ছে, আজ তো মনে হচ্ছে পুরো কলকাতা ডুবে যাবে। এরম
একটা বৃষ্টিমুখর পরিবেশের ছবি ক্যামেরাবন্দি না করলে চলে নাকি !” ভাবতেই মোবাইলটার
ক্যামেরা অন করে বেশ কয়েকটা ফটো তুলল শ্রেয়া। তারপর মুহূর্তের মধ্যে সেই ফটো সোশ্যাল
মিডিয়ায় আপলোডও হয়ে গেল। সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইকের বন্যা দেখে বেশ খুশি অনুভব করলো শ্রেয়া।
শ্রেয়াদের বাড়িটা চারতলার ওপরে। ব্যালকনিতে মুখ বাড়িয়ে শ্রেয়া দেখলো রাস্তা প্রায় জলমগ্ন।
রাস্তায় একটাও লোক নেই। এত বৃষ্টিতে বাইরে কারুর থাকারও কথা না। কানে হেডফোন লাগিয়ে
সুদর্শন আপ্যারমেন্টের চারতলার ওপর থেকে বৃষ্টির মুহূর্তগুলো উপভোগ করতে লাগলো ও।
এই সুদর্শন আপ্যারমেন্টের ঠিক অনতিদূরেই একটা ঘিঞ্জি বস্তি আছে। সেই বস্তিরই
এক চিলতে ঘরে বসে বৃষ্টির দিকে আপন নয়নে তাকিয়ে আছে রেবা। বৃষ্টির প্রকোপের সাথে সাথে
মনে বাড়ছে দুর্যোগের ঘনঘটা। গতবার এমন বৃষ্টিতে বন্যা হয়ে গেছিল। তাতে তার বাড়ির অনেকাংশ
প্রায় নষ্ট হয়ে গেছিল। বাড়ির ভেতরেও জল ঢুকে গেছিল। সরকারি বাবুদের তৎপরতায় সামনের
স্কুল বাড়িতে আশ্রয় পেলেও সেই বৃষ্টির তান্ডবের কথা এখনো মন থেকে মুছে যায়নি রেবার।
তারপর বহু কষ্ট করে মা বাবা বাড়িটা আবার আগের মত করে মেরামত করেছিল। কিন্তু ক্ষতচিহ্ন
যেন এখনো রয়ে গেছে। এবারও যদি আবার বন্যা হয় তবে সম্পূর্ণভাবে ভিটেমাটি হারাবে তারা।
বাড়িটা নষ্ট হয়ে গেলে তারা কোথায় যাবে সেটাই ভেবে কুলকিনারা পায় না রেবা। মনে মনে ভগবানের
কাছে প্রার্থনা করে এবারের মত বৃষ্টিটা কমিয়ে দাও ঠাকুর।
সত্যি দু’প্রান্তে বৃষ্টির রূপ সম্পূর্ণ একইরকম। কিন্তু দু’প্রান্তে মানুষের
কাছে বৃষ্টির ভাবনা আলাদা। হয়তো এটাই সমাজের নিয়ম, হয়তো এটাই ভবিতব্য।
Nov 22, 2020
নেট ফড়িং সংখ্যা- ১৬৮
Edit Posted by নেট ফড়িং with 2 commentsNov 15, 2020
নেট ফড়িং সংখ্যা- ১৬৭ (শিশু-কিশোর সংখ্যা)
Edit Posted by নেট ফড়িং with No commentsNov 8, 2020
নেট ফড়িং সংখ্যা- ১৬৬
Edit Posted by নেট ফড়িং with No commentsNov 7, 2020
"খেদ" - আবদুস সাত্তার বিশ্বাস
Edit Posted by নেট ফড়িং with No comments
খেদ
আবদুস সাত্তার বিশ্বাস
এক বুক দুঃখ নিয়ে বেঁচে আছে অঙ্কিতা। স্বামীর প্রচুর অর্থ সম্পদ থাকলেও
তার মতো নিঃস্ব এই মুহূর্তে পৃথিবীতে কেউ নেই। কোনো নারী নেই। অঙ্কিতার তাই ভগবানের
প্রতি ক্ষোভেরও শেষ নেই। যেকারণে ভগবানকে সে আর কোনদিন ডাকবেনা। কিছু চাইবেনা। সে বুঝে
নিয়েছে যে, ভগবানের কাছে দেওয়ার মতো কিছু নেই। মানুষ শুধু ভগবান ভগবান করে ডাকে তাই।
ভগবানকে ডেকে ডেকে বিফল হয়ে সে সেটা বুঝেছে। ভগবান বলে কেউ নেই। কিছু নেই। আর থাকে
যদিওবা সেটা কাল্পনিক একটা নাম মাত্র। তাছাড়া কিছু না। তার কোনো অস্তিত্ব নেই। মানুষই
তার অস্তিত্ব। মানুষ মনে করে তাই সে আছে। মানুষ মনে না করলে নেই। অতএব সে আর ডাকবেনা।
কখনো, কোনোদিন ডাকবে না। ডেকে যদি ফল না হয় তো ডাকবে কেন?
অঙ্কিতারা দুই বোন এক ভাই। ভাইটা সব ছোট। বাবা নেই। অনেক দিন আগে সে যখন
ক্লাস এইটের ছাত্রী ছিল সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। তারপর তার মায়ের কাছে তারা তিন ভাইবোন
মিলে মানুষ হয়েছে। দৈবাৎ তার বিয়েটা হয়ে গেলেও তার বোনের বিয়ে হয়নি। দেখতে সে তার থেকেও
বেশি সুন্দরী। তবু তার বিয়ে না হওয়ার জন্য তার মায়ের মনে দুশ্চিন্তার শেষ নেই। বিয়ে
ঠিকই হতো। লোকে যে তার বাবা না থাকার দরুণ তার মায়ের চরিত্র
টেনে এনে ভেংচি দেয়। বিয়ে অমনি ভেঙে যায়। বাস্তবে
যদিও তার মায়ের চরিত্রে সেরকম কোনো কলঙ্কের দাগ নেই। না, অঙ্কিতা ভগবানকে এরজন্য কোনোদিন ডাকেনি।
অঙ্কিতা তখন কলেজের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী। বাড়ি থেকে সে কলেজে যাওয়ার জন্য
সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে গেলেও কোনোদিন সাইকেল নিয়ে কলেজ যেতো না। অঙ্কিতার
পক্ষে যে তিরিশ কিলোমিটার রাস্তা সাইকেল ছোটানো সম্ভব ছিল না। যেকারণে সে সাইকেলটা মোড়ে রেখে বাসে চেপে যাতায়াত করত। যে রাস্তাটা ধরে অঙ্কিতা বাড়ি থেকে সাইকেলে করে যাতায়াত করত
ওটা এখন পাকা রাস্তা হলেও তখন কিন্তু ওটা একটা কাঁচা রাস্তাই ছিল।
অঙ্কিতা সেদিন কলেজ থেকে বেরনোর পর আকাশে মেঘের কোনো চিহ্ন মাত্র ছিল না। বাস থেকে নেমে মোড়ে সাইকেল চাপার সময়ও না।ফলে অঙ্কিতা ওই কাঁচা
রাস্তা ধরে সোজা বাড়ি চলে আসছিল। আসতে আসতে কিছুদূর
আসার পর আকাশ মেঘে ছেয়ে গিয়েছিল। ও গুড়গুড় করে মেঘ
ডাকতে শুরু করেছিল। অঙ্কিতার সঙ্গে সেদিন
ছাতা ছিল না। যেকারণে সে ভিজে যাওয়ার ভয় করেছিল। আর সে তখন তাড়াতাড়ি বাড়ি পৌঁছনোর জন্য পায়ের সমস্ত শক্তি প্যাডেলে
প্রয়োগ করে সাইকেলের গতি বাড়িয়েছিল। কিন্তু তাতে তার
বিশেষ লাভ হয়েছিল না। বৃষ্টি তক্ষুনি ঝেঁপে
শুরু হয়ে গিয়েছিল। একটা দোতলা পাকা বাড়ি ছাড়া দাঁড়ানোর
মতো ওখানে আর কোনো বাড়ি ছিল না। অঙ্কিতা কিছু ভেবে
না পেয়ে বাড়িটার ভিতর ঢুকে গিয়েছিল। ঢুকতে গিয়ে সে যেটার
ভয় করেছিল সেটাই হয়েছিল। ঝমঝম বৃষ্টিতে ভিজে
গিয়েছিল। ভিতরে একটা বুড়ি মেয়ে তাকে দেখে তখন
বলেছিল,"তুমি কে গো মেয়ে,চিনতে পারলাম না।"
"আমায় চিনতে পারবেন না।আমি এ গ্রামের নই।"
"তবে তুমি কোন গ্রামের?"
"আমি কালীপুর গ্রামের।"
"এদিকে কোথায় এসেছিলে?"
অঙ্কিতা বলেছিল, "আমি কলেজ থেকে
বাড়ি ফিরছিলাম। ফিরতে ফিরতে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়ে
গেল।আপনাদের বাড়ি তাই উঠলাম।"
"ভালো করেছ। তা তুমি তো ভিজে
গেছো। শরীরের সঙ্গে ভিজে জামা একেবারে লেপ্টে রয়েছে
দেখতে পাচ্ছি। তোমাকে একটা গামছা এনে দেব? গা মুছবে?"
"গামছা লাগবে না। রুমাল আছে। "অঙ্কিতা বলেছিল।
বুড়ি মেয়েটা বলেছিল, "এত ভিজে গেছো! রুমালে কি মোছা হবে?"
"হবে।"
"বেশ,মোছো তাহলে।আমি ততক্ষণ একটা তোমার জন্য চেয়ার বের করে আনি ঘর
থেকে।"
অঙ্কিতা রুমালে তার ভিজে গা মুছতে মুছতে একটা চেয়ার নিয়ে সে চলে এসেছিল। অঙ্কিতা চেয়ারে বসেছিল। সে
তখন অঙ্কিতার সুন্দর মুখের দিকে তাকিয়ে বলেছিল, "তুমি
দেখতে কি সুন্দরী! তোমাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে।তোমার নামটা কি?"
অঙ্কিতা মিত্র। সে তার পুরো নাম বলেছিল।
"বা:,খুব সুন্দর নাম তো তোমার।"তারপর জিজ্ঞেস করেছিল,"তোমরা
ভাইবোন ক'টা?"
অঙ্কিতা তার ভাইবোনের সংখ্যা বলেছিল।বললে পরে সে তাকে জিজ্ঞেস করেছিল,"তুমি
কত নম্বর?"
অঙ্কিতা বলেছিল,"আমি প্রথম।"
"তোমার বাবার নাম কি?"
"অমল মিত্র।"
"বাবা বেঁচে আছেন তো?"
"না,মারা গেছেন।"
"আর মা?"
"মা আছে।"
"কালীপুরে তোমাদের বাড়িটা কোন জায়গায়?"
অঙ্কিতা বলেছিল,"ক্লাবটা চেনেন?"
"হ্যাঁ,চিনি।"
"ওই ক্লাবের কাছে আমাদের বাড়ি।"
বুড়ি মেয়েটা এবার বলেছিল,"বেশ,তোমাদের বাড়ি বেড়াতে যাবো।"
অঙ্কিতা বলেছিল,"যাবেন।"তারপর জানতে চেয়েছিল,"কবে যাবেন,বলুন!"
সে বলেছিল,"কবে যাবো সেটা বলতে পারছিনা। তবে খুব তাড়াতাড়িই যাবো।তোমার
বিয়ের ব্যাপারে তোমার মায়ের সঙ্গে কথা বলতে। আমার
একটা নাতি রয়েছে।তার বিয়ে দেবো তো মেয়ে পাচ্ছি না। মেয়ে
আবার পাবোনা? পাচ্ছি। কিন্তু
পছন্দ হচ্ছে না। তোমার মতো দেখতে সুন্দরী মেয়ে পাচ্ছি
না। মাস্টার মানুষের বউ যেমন তেমন নিলে কি চলবে? আমি তো আগেই বলেছি,তোমাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে।তাই আমার নাতির
সঙ্গে বিয়ের জন্য তোমার মায়ের কাছে প্রস্তাব নিয়ে যাবো।তোমার মা তোমার এখন বিয়ে দেবে
তো?"
অঙ্কিতা বলেছিল,"আমি জানিনা।"
"গিয়ে জানব।"
"সেটা জানতে পারেন। কিন্তু আপনাদের চাহিদা
পূরণ করবার মতো শক্তি কি আমার মায়ের আছে? আমার মা যে ভীষণ
গরিব।"
সে বলেছিল, "হলই বা।তা তে কি হয়েছে? তোমার মায়ের কাছে
আমাদের কোনো চাহিদা থাকবেনা। শুধু আমাদের তোমাকে চাই, ব্যস।"
অঙ্কিতা তখন উত্তরে বলেছিল, "এখন হয়তো মুখে
বলছেন। পরে এই নিয়ে কোনো অশান্তি করবেন না তো?"
বুড়ি মেয়েটা বলেছিল, "তুমি আমাদের
চেনোনা তাই এ ধরনের কথা বলছো। আমরা কি রকম গ্রামের মানুষের কাছে একবার জেনে নিও।"
অঙ্কিতা এবার বলেছিল, "বলছেন যখন
মা'র কাছে গিয়ে জানবেন তাহলে।"
"অবশ্যই গিয়ে জানব। তুমি আজ থাকো। আমার নাতি আসুক। তার সঙ্গে তোমার
আলাপ করিয়ে দেবো। কাল সকালে উঠে চলে যেও।"
অঙ্কিতা বলেছিল, "না, থাকা যাবে না। মা বাড়িতে তাহলে খুব চিন্তা করবে। মাকে
না জানিয়ে একা কোনোদিন কোথাও রাত কাটাই নি।"
"তাহলে তো কিছু বলার নেই।"
এরপর বৃষ্টির ফোঁটা কমতে কমতে এক সময় একেবারে কমে গিয়েছিল।অঙ্কিতা তখন উঠে
পড়েছিল,"চলি।"
"আচ্ছা,এসো।আর হ্যাঁ,দেখেশুনে যেও।"
এইসময় ঠিক অঙ্কিতার মায়ের বয়সী একটা মেয়ে উপর থেকে নিচে নেমে এসেছিল।বুড়ি
মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করেছিল,"মেয়েটা কে,মা?"
বুড়ি মেয়েটা বলেছিল,"মেয়েটার কালীপুরে বাড়ি। তোমার সুজয়ের জন্য আর
কোত্থাও মেয়ে দেখতে হবেনা।এই মেয়ের সঙ্গেই আমি সুজয়ের বিয়ে দেবো।মেয়ে দেখে আমার খুব
পছন্দ হয়েছে।..."
এরপর মাত্র মাসখানেকের মধ্যে দেখাশোনা সেরে সুজয় মিত্রের সঙ্গে তার বিয়ে
হয়ে যায়।ফাইনাল পরীক্ষাটা সে বিয়ের পরেই দেয়।এবং ভালো রেজাল্টও করে।সেবছরই আবার তার
পেটে সন্তান আসে।কিন্তু তিন মাসের মাথায় পেটেই সেটা নষ্ট হয়ে যায়।পরে আবার এলে সেটাও
নষ্ট হয়ে যায়।পরে আবারও আসে।সেটা এবার একটা কন্যা সন্তান রূপ নিয়ে পৃথিবীতে আসে।কিন্তু
পৃথিবীতে সেটা বেশিদিন থাকেনা।মাত্র দেড় বছর।তারপর সেটাও মারা যায়।পরপর তিনটে সন্তান
অঙ্কিতার এইভাবে নষ্ট হয়ে যায়।অঙ্কিতার মনে তখন আক্ষেপের কোনো শেষ থাকেনা। তিনটে সন্তানের
একটাও বেঁচে থাকল না।এতবড় বাড়িতে একটা সন্তান নেই।সন্তানহীন বিরাট বাড়িটা সবসময় কেমন
খাঁ খাঁ করে। যাইহোক, অঙ্কিতার
পেটে চতুর্থবার ফের সন্তান আসে। আগের বারের মতো অঙ্কিতা এবারও ভগবানকে ডাকতে শুরু করে,"ভগবান,আমার
পরপর তিনটে সন্তান নষ্ট হয়ে গেছে।লজ্জায় আমি মানুষের সামনে মুখ দেখাতে পারিনা।আমি নাকি
সন্তান খাকি একটা মেয়ে।সবাই বলে।আমার নাকি কোলের দোষ আছে।কোনো মা কি তার নিজের সন্তান
খেতে পারে?সন্তানের জন্য কি আমার কষ্ট হয় না?তাহলে আমি সন্তান খাকি একটা মেয়ে হলাম
কি করে? সমাজে কত মানুষ কত রকম পাপ করে। কারও পাপ ধরা পড়ে কারও পাপ ধরা পড়েনা। তবু সেইসব মানুষদের চরিত্রে কলঙ্কের কোনো দাগ নেই। মানুষের সামনে মুখ দেখাতে তবু তাদের লজ্জা নেই। আর আমি জীবনে কোনো পাপ বা কলঙ্কের কোনো কাজ না করেই হলাম কলঙ্কিনী। মনুষ্য সমাজে মুখ দেখাতে লজ্জা পাই।প্রভু,তাই তুমি আমার মরণ
করো অথবা আমার প্রতি তুমি করুণা করো। আমাকে আর সন্তানহীনা
করে রেখো না।বিয়ের পরে সন্তান না থাকলে স্ত্রী জাতির যে কোনো মূল্যই নেই সমাজে। সমাজের
কাছে তুমি আমাকে আর ছোট করোনা। সুস্থ,সবল,সুন্দর,সাহসী এবং মেধাবান্ একটা পুত্র সন্তান
দাও।এবং তাকে পূর্ণ আয়ু দান করো। ভিটেয় প্রদীপ হয়ে সে যেন সারাজীবন জ্বলজ্বল করে জ্বলে।...."
একেবারে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত অঙ্কিতা ভগবানের কাছে এই প্রার্থনাই
করে এবং পরে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় হলে সত্যি সত্যি একটা পুত্র সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়।অঙ্কিতা
ভগবানকে খুব খুশি হয়ে ধন্যবাদ দেয়,"তোমাকে
ধন্যবাদ ভগবান,তোমাকে ধন্যবাদ।"
এরপরও যদি কোল শূন্য হয়ে যায় সে ঠিক থাকে কি করে!
"এক চিলতে রোদ" - রাজর্ষি পাল
Edit Posted by নেট ফড়িং with No comments
এক চিলতে রোদ
রাজর্ষি পাল
১
কাঁচের ওপার থেকে দুপুরের তীব্র রোদের থাবা টেবিলের প্রায় পুরোটাই উত্তপ্ত
করে তুলেছে। ঘন্টাখানেক হবে, বৃষ্টিটা থেমেছে। অঝোর বর্ষার পর, তাই রোদের এই থাবা টা
মোলায়েম পরশের মতন লাগছে। বুধবার কাজের দিন বলেই, ক্যাফেতে ভিড় কম। নেই বললেই চলে।
শেষের ডান দিকের কোনায় এক তরুণী বসে। বোধহয় কলেজ ফেরতা। সাথে bag, মোবাইলে নিমগ্ন।
কারোর অপেক্ষারত হবে। কাউন্টারের গাঁ ঘেঁষা টেবিলটায় এক মাঝবয়সী couple, শপিং থেকে
ফিরছে বোধহয়। ঘড়ির কাঁটা বলছে বেলা দেড় টা। পনেরো মিনিট হবে espresso এর order টা নিয়ে
গেছে। ফাঁকা cafe, তবুও এখনো দিয়ে যায়নি। ওরাও অবসরের আমেজ নিতে ব্যস্ত বোধহয়। রোদটা
ধিরে ধিরে পুরো টেবিল টাই গ্রাস করতে চাইছে। একটু একটু করে এগোচ্ছে পুরবীর দিকে। ক্যাফে
এর চারিদিক কাঁচে মোড়া, তবুও বৃষ্টির পরের সোঁদা গন্ধটা কোনো ফাঁক দিয়ে গলে ঢুকে গেছে
ঠিক। পূরবী রাস্তার গাঁ ঘেঁষা টেবিল এই বসে প্রতিবার। বাইরে দেখতে পায় কিভাবে অসংখ্য
রক্ত মাংসের দলা এই মানুষগুলো ছুটে চলেছে সব না পাওয়া, ব্যর্থতা, তিরস্কার, অপমান এসব
ঢোক গিলে, একটু শান্তির আশায়। কুকুরের লেজের মতন। বারবার বিফল হয়েও, সেই ছুটেই চলেছে
মানুষ। এক মরীচিকার হাতছানি তে। কাঁচে এখনো যে জলের ফোঁটা গড়াচ্ছে, আর তার ওপর সদ্য
মেঘের আড়াল হতে উকি দেওয়া রোদ এক অদ্ভুত মায়ার প্রতিফলন তৈরি করেছে। ac এর শোঁ শোঁ
আওয়াজ টা কানে খুব লাগলেও, এই নিস্তব্ধ পরিবেশে যেন ছুটির ঘন্টার মতন লাগছে পুরবীর।
নিজের ভাবনাই যে কিছু মানুষের সবচেয়ে বড় দুঃসহ যন্ত্রনা হতে পারে, তা পুরবীর চেয়ে ভালো
আর কেউ জানেনা।
মোবাইল বের করে একবার দেখল পূরবী,
রঞ্জিতদার কোনো message এলো কিনা। এতো দেরি কখনো করেনা রঞ্জিতদা। কলেজে
সবার আগে উনিই ঢোকেন। কোনো ক্লাসে দেরি করে পৌঁছোন না। আর সেই মানুষ আজ এক ঘন্টা হল
পাত্তা নেই। যদিও বৃষ্টির মধ্যে পুরবীরও দেরি হয়েছে আসতে। শুক্রবার দুপুরের ফ্লাইট
এর কথাটা এখনো জানায়নি রঞ্জিতদা কে। চার দিন হলো কলেজে আসছেন না, বাড়িতে কাজ আছে বলে।
বছরে sick leave ছাড়া আর কোনো ছুটি না নেওয়া মানুষটার যে কি এমন কাজ কে
জানে। এবার সত্যিই বিরক্তি ধরছে পুরবীর। একবার ফোনও করেছিল সে, ধরেন নি।
"Mam, আপনার espresso, আর কিছু অর্ডার করবেন।"
সামনে tray তে সাজানো কফি mug থেকে উঠে আসে স্বর্গীয় ধোঁয়াটা শরীরে ঢুকতেই,
একটু যেন বিরক্তি কাটল পুরবীর।
"না। আর কিছু লাগবে না। thank you।"
কফি mug টা হাতে নিয়ে বড়ো একটা চুমুক দিল পূরবী। তার বহু একলা সন্ধ্যার,
নির্জন দুপুরের সাথী এই কফি। শেষবারের মতন উপভোগ করতে চাইল পূরবী। ইচ্ছে হলো কানে কানে
জানাতে, যে নতুন এক শুরুর হাতছানি তে সে এবার পাড়ি দেবে। হয়তো সেখানেও কোনো একলা বিকেলে,
আবার সাথী হবে এই কফি।
ধরাম করে একটা আওয়াজ হলো দরজায়। তাকিয়েই দেখে, রঞ্জিতদা ঢুকছে। ভেতরে ঢুকে
পড়েছেন ছাতা নিয়েই, তাই দেখে কাউন্টার এর লোক ক্ষেপে গেছে। কোনো মতে ছাতাটা বন্ধ করল
রঞ্জিতদা। পূরবী দূর হতে হাতের ইশারায় ডাক দিল রঞ্জিতদা কে। যদিও উনি জানেন যে পূরবী
কোথায় বসে। আধ ভেজা জামা আর প্যান্ট পরেও মুখে সেই হাসিটা লেগেই আছে তার।
"আর বৃষ্টিতে দেরী হয়ে গেল রে। আরেকটা কাজ ছিল, সেটায় সময় লেগে গেল।"
পূরবী খেয়াল করল রঞ্জিতদা যেন একটু পাল্টে গেছে। দাড়ি কাটেনি সপ্তাহ খানেক
হবে। চুল ও আচড়াননি ঠিক মতন। জামার হাতা, গোটানো অসমান ভাবে। জামায় দাগ দেখে মনে হচ্ছে
দু তিন দিন ধরে পড়ছেন।
"আপনি ঠিক আছেন তো রঞ্জিত দা? বৌদি ভালো আছে তো?"
-আমার আবার নতুন করে কি হবে। আর তোর বৌদি ও আছে ওই ভালো। তা হঠাৎ এখানে
আসতে বললি যে?
-আমি কই বললাম। আপনিই তো বললেন যে কলেজে কবে যাব ঠিক নেই। বাইরে বলিস কি
বলবি। তাই তো বললাম এখানে আসতে।
-তা ঠিক। তা তোর সেই ইন্টারভিউ এর রেজাল্ট এলো কি? Fellowship টা পাক্কা
তাহলে next year
-ওটাই বলার ছিল রঞ্জিতদা তোমায়। আসলে ওরা full fellowship grant সাথে
faculty position ও অফার করেছে। তুমি তো জানোই আমি এই শহরের গোলকধাঁধায় আর থাকতে চাইনা।
তাই হ্যাঁ করে দিয়েছি। সোমবার joining পরশু flight book করেছি। আমি আর পাখি যাবো। মা
পরে যাবে।
বৃষ্টির ধারা আবার জোরে বইতে শুরু করেছে।
কাঁচের ওপর ফোঁটা গুলোর ভিড় বাড়ছে। বাইরের কিছুই আর দেখা যাচ্ছে না।
shopping ফেরত সেই couple বেরিয়ে গিয়েছে কিছুক্ষন হলো। দূরের মেয়েটা এখনো মোবাইলে নিমগ্ন।
মেঘের কম্বল জড়িয়ে রোদ বোধহয় আবার ঘুম দিয়েছে। বাইরের রোদ আর পড়ছে না টেবিলে। একটা
আলো আঁধারির খেলা যেন চলছে ক্যাফের ভেতরে। খয়েরি রঙের দেওয়ালে হলুদ বাল্ব এর আলো যেন
গোধূলির সময়ে দিগন্তের রাঙা আকাশ মনে করাচ্ছে।
পূরবী দেখল রঞ্জিতদা হাতটা টেবিলের ওপর থেকে নামিয়ে নীচে রাখলেন। কিছুক্ষণ
মুখটা নীচু করে টেবিলের পায়ার দিকে তাকিয়ে থাকলেন। তারপর কাঁচের দিকে তাকিয়ে রইলেন
কিছুক্ষন। পূরবী কি বলবে বুঝে উঠতে পারলো না। রঞ্জিতদার কোনো কিছুই সে কোনোদিন বুঝে
উঠতে পারেনি। কষ্ট পাবেন তার চলে যাওয়ার কথা শুনে, এটা সে জানত, কিন্তু এভাবে এক মিথ্যা
প্রহেলিকায় কতদিন বাঁচবে সে। একবার ভাবলো রঞ্জিতদার হাতটা ধরে ক্ষমা চেয়ে নেবে। কিন্তু
না, তাকে তো যেতে হতই, আজ বা কাল।
-ওঃ। তুই যাচ্ছিস? ভালো কথা তো। আমি ভাবলাম আরো জরুরি কিছু। এটা ফোনে বললেই
পারতিস।
শুধু শুধু ভেজালি। তা এসেই যখন গেছি, এক কাপ কফি খাওয়া।
রঞ্জিতদার কথা শুনে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো পূরবী। ভাগ্গিস কোনো scene তৈরি করেনি।
বরাবরই খুব emotional মানুষ উনি। যাই হোক, তার জন্য irish অর্ডার করল পূরবী। এই
irish কফি হাতে নিয়ে প্রতিবার রঞ্জিতদা তার কথার ঝাঁপি খুলতেন, আর সেই ঝাঁপি তে প্রতিবার
হারিয়ে যেত পূরবী,
তার বুকে জমে জমে পাথর হওয়া কান্নাগুলো সেই ঝাঁপির উষ্ণ আমেজে কখন যে গলে
যেত টেরই পেতনা সে নিজেও।
-পাখি যে যাবে, adjust করতে পারবে ওখানে? একটু তাড়াহুড়ো করছিস না তো?
-তুমিই না বলতে রঞ্জিতদা, যে আমরা তো কিছুই শিখে জন্মাইনা। adjust টাও শিখতে
হয়। পাখিও শিখবে। আর সত্যি বলতে এই শহরে দমবন্ধ হয়ে আসে আমার। তুমি ছাড়া আর কারোর সাথে
সেরম যোগাযোগ ও রাখিনা। কিন্তু এভাবে কতদিন বাঁচবো বলো। একটা নতুন শুরু করতে চাই।
-হ্যাঁ সেই ভালো। তোর এতো ভালো academic qualifications। ভালো একটা জায়গা
তুই deserve করিস। তবে দেখিস হারিয়ে ফেলিস না ভিড়ে নিজেকে।
বর্ষার তীব্রতাটা কমে এসেছে আবার। বাইরে চেয়ে রয়েছেন রঞ্জিতদা। কষ্ট যে
পুরবীর হচ্ছেনা তা নয়। বিগত তিরিশ বছরে, একমাত্র এই মানুষটাই তার থেকে পরিবর্তে কিছুই
চায়নি। অনিকেতের সাথে divorce টা ফাইনাল হতে যখন কলেজে ঢুকেছিল তখন ভেবেছিল সব আবার
নতুন করে সাজাবে। কিন্তু না, ওতো সোজা নয়। ঘর পাল্টানোর মতো মন পাল্টানো যে ওতো সহজে
যায়না তখন বুঝেছিল। আরো গুটিয়ে গিয়েছিল ভেতরে দিন দিন। রঞ্জিতদা একমাত্র তার কষ্টটা
বুঝতে পারতেন। কান্নাহীন চোঁখের জলটা যেন হাত না লাগিয়েই মুছিয়ে দিতেন। পারতেন বোধহয়
কারণ নিজেও যে ভাবে বারবার ভেঙে গিয়েও উঠেছেন, সেটা ওনার মতন নরম মানুষ বলেই পেরেছেন।যারা
সহজে আঘাত পায়,তারাই আবার সহজে উঠে দাঁড়ায়।পাথরে আঘাতের দাগ সহজে মেটে না আর মাটির
দাগ বারবার তৈরি হয়,আবার মুছেও যায়।
-মা কেও নিয়ে যাবি বললি।আর কি তাহলে ফিরবি না?
-জানিনা।কোনোদিন ছেড়ে যাব এ শহর,সেটাও তো ভাবিনি।আজ খুশি হয়েই যাচ্ছি।তবে
ওখানেও একই ভাবে তিরষ্কৃত হলে ফিরে আসবো। এখানে অন্তত তুমি তো আছ।
-আর আমার কথা।আকাশের বুকে যেমন মেঘ বয়ে যায়,মানুষের জীবনেও তেমন চরিত্রের
পর চরিত্র আসে।ছাড় এসব,বাকি সব গোছানো শেষ তোর?
-তা প্রায় শেষ।তবে যা একদম না নিলেই নয়,সেসব ই নিচ্ছি।পুরোনো কিছুই আর বইতে
চাইনা।হাল্কা হতে চাই।শুধু তোমার দেওয়া বইগুলি সাথে নিয়ে যাচ্ছি।অবসরে পড়ব।
-তা বেশ।মাটির টান ধরে রাখা ভালো।তবে ওখানে আবার সেই আগের মতন নিজের মনটাকে
আবর্জনার স্তুপ করে তুলিসনা যেন।ওসব বাজে খেয়াল আর মনে আস্তে দিসনা।
-তুমি ছিলে বলেই সামলাতে পেরেছিলাম নিজেকে। এবার আর হয়তো তোমায় হাত ধরতে
হবেনা। আর যদি হয়ও, আমি জানি,তোমায় না চাইতেই কাছে পাবো।
কথা গুলো বললো খুবই সাবলীল ভাবে পূরবী।যেন কোনো এক পুরোনো বন্ধুর সাথে বিচ্ছেদের
আগের নিয়মমাফিক স্তুতিপর্ব।কিন্তু সেটা যে নয়,গোলায় জমে থাকা চাপা কান্না বুঝিয়ে দিলো
পূরবী কে।রঞ্জিতদা যে শুধু তার সহকর্মী,সহমর্মী বা শুভকাঙ্খী তা তো নয়,উনি তার জীবনে
যেন একটা সূর্য। অত্যাচার অবহেলা এর বিষধারায় নিজেকে হারাতে হারাতে,তাকে বাঁচিয়েছেন
উনি।
-এবার তাহলে আমার হাতে অনেক সময়।আর ঘাটে গিয়েও বসবো না,বা পার্কে গিয়েও
ধর্ণা দেবনা।উফফ,বাঁচালি তুই আমায়।
"Sir, আপনার কফি।"
গরম irish কফি টা হাতে নিয়ে এক বড়ো চুমুক দিলেন রঞ্জিতদা।একদৃষ্টি টে চেয়ে
রইলো পূরবী।বুঝতে চাইলো গভীর ওই কালো দুই চোখের তল কোথায়।এভাবেই কফি তে বড়ো চুমুক দিয়ে
কথা শুরু করতেন,আর শুধু শুনেই যেত পূরবী।কারোর কথা শুনেও যে এতো নেশা হয় তা আগে কখনো
বোঝেনি সে। সত্যি সেই বিকেল গুলো বড্ড মনে পড়বে তার।সেই একলা বিকেল গুলো,যখন নির্জন
ঘাটের এক কোণে বসে,রঞ্জিতদা তাকে কবিতা পড়ে শোনাতেন। বিকেলের ক্লান্ত হাওয়া জলের ওপরে
যেন এক পায়েলের মুর্চ্ছনার মতন আওয়াজ সৃষ্টি করতে। গাছের পাতা গুলো যেন সেই কবিতা শুনে
নড়ে উঠতো।
-এমন ভাবে বলছো যেন আমি জোর করতাম তোমায়।আমি কতবার বলেছি ওসব আমি বুঝিনা।সত্যি
বলতে আমি আজও বুঝিনা তোমার সব।
-আর বুঝে কাজ নেই।নতুন জায়গায় যাচ্ছিস।এবার একটু নিজেকে নিয়ে স্বার্থপর
হওয়া শেখ।
খালি কফি mug টা সরিয়ে রেখে,ওঠার জন্য তৈরি হলেন রঞ্জিতদা। মনে মনে একটু
রাগ হলো পুরবীর। সে চলে যাবে পরশু। আর কবে দেখা হবে ঠিক নেই, অথচ রঞ্জিতদার যেন কোনো
উত্তাপ নেই। এখান থেকে বেরোতে পারলে বাঁচেন।
অন্যদিন কথাই ফুরায়না তার,আর আজকে যেন তাকাতেও চাইছেন না তার দিকে।
-কিরে ওঠ।যাবিনা?চল,তোকে উঠিয়ে দিয়ে আসি বাসে।আমার একটু অন্য কাজ আছে।দেরি
হবে ফিরতে বাড়ি।
কিছুটা রাগ নিয়েই মানা করল পূরবী।বললো তারও কিছু কাজ আছে।একটু পরে বেরোবে।
ভেবেছিল হয়তো তার অভিমান টা বুঝবেন রঞ্জিতদা।হেসে হয়তো আবার বসবেন।কিন্তু না।
"তাহলে বস,আমি বেরোলাম।" বলে চলে গেলেন। নিজেকে প্রতাড়িত মনে হতে লাগলো পুরবীর।
নিথর ভাবে চেয়ে রইলো দরজাটার দিকে। জানলার দিকে তাকিয়ে চোঁখের কোনার জলটুকু ঢাকার চেষ্টা
করল।সে হয়তো থেকে যেতনা,কিন্তু একবারও কি রঞ্জিতদা বলতে পারতোনা তাকে থেকে যাওয়ার কথা।এতটা
পাথর কৰে কিভাবে হলো মানুষটা। নাকি নিজের কষ্ট টা কঠিন বাস্তবের মোড়কে লুকিয়ে রাখলেন।
এ শহর তাকে শেষ অবধি ও আঘাত দিতে ছাড়লোনা।
২
ভিসিটিং hours বিকেল 5টা অব্দি। ক্যাফে থেকে বেরোনোর সময়, বাজছিল 2টো। রঞ্জিত
একাই auto রিজার্ভ করল, নয়তো visiting hours পার হয়ে যাবে। ইঞ্জেকশন টা খুঁজতে অনেক
দেরি হয়ে গেল। প্রায় 10টা দোকানে খুঁজে তারপর পেল। বাকি ওষুধ সকালেই নিয়ে নিয়েছিল সব,
জানত পুরবীর সাথে সময় লাগবে।
Auto এসে থামল নার্সিং হোমের গেটের একদম মুখে।ভেতরে যাবেনা আর।50টাকার নোট
টা বাড়িয়ে দিয়ে দৌড়ালো গেটের দিকে রঞ্জিত।বাকি টাকা ফেরত নেওয়ার সময় নেই।reception
কাউন্টারে নাম লিখিয়ে লিফ্টের দিকে এগোলো।বর্ষার তোড়ে গরমটা কমেছে।তবুও হেটে হেটে এতগুলো
ওষুধের দোকানে ঘুরে,ঘামে ভিজে গিয়েছে জামা,তবুও ভ্রুক্ষেপ নেই রঞ্জিতের। লিফ্ট ঢুকে
একবার পকেটে হাত দিলো, রুমাল টা খোঁজার জন্য।কিন্তু না,আজ সেটাও ভুলে গেছে। ডুবতে চলা
জাহাজের মতন,তার জীবনের সবকিছুই যেন দূরে চলে যাচ্ছে।চোখ বন্ধ করল রঞ্জিত।একরাশ বিরক্তি
আর নিজের প্রতি তীব্র ধিক্কার ঘনিয়ে উঠল তার মনে।এইটুকু অব্দি তার মনে নেই।নীলিমা বলেছিল
আজ আসার সময় কাগজে করে কয়েকগাছা কৃষ্ণচূড়া নিয়ে আসতে। বাড়ির সামনের ছোট্ট একচিলতে জায়গাটা
যেন নিজের সংসারের মতোই গুছিয়েছিল নীলিমা। ছারখার হওয়া জীবন টার অপূর্ণতা ওই গুটিকয়েক
গাছের মধ্যে দিয়ে পূরণ করেছিল সে।তার বড়ই সাধের এই কৃষ্ণচূড়া। বলেছিল কাগজে মুড়িয়ে
বালিশের পাশে রেখে সবে।কিন্তু সেটাও মনে নেই রঞ্জিতের। নিজের প্রতি এক ভয়ংকর রাগ অনুভব
হলো তার। কোনো সুখ শান্তি দিতে পারেনি নিষ্পাপ মেয়েটাকে সারাজীবন,এই টুকু শেষ আবদার
ও মেটাতে পারলোনা তার।আসলে কাল বিকেলে পুরবীর ফোনটা পাওয়ার পর থেকেই অন্যমনস্ক হয়ে
পড়েছিল।অদ্ভুত ভাবে ছটফট করছিল ক্যাফে তে আসার জন্য। লিফ্টর দরজা খুলতে চোখ মেলে তাকালো
রঞ্জিত। কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করল।
জানালার একপাশ খোলা। ভেতরে বৃষ্টির জলের ঝাপটা ঢুকে ভিজিয়ে দিয়েছে দেওয়ালের
খানিকটা।ওপরের কার্নিশ বেয়ে ছাদ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে এক অদ্ভুত শান্ত সুর করে,যেন দূরে
কেউ বাঁশি বাজাচ্ছে। ৫*৪ এর ঘরের পশ্চিম কোনে এক চিলতে জানলা। আর পূর্বদিকের দেওয়াল
ঘেঁষে, বেদে শুয়ে আছে নীলিমা। দেওয়ালের দিকে মুখ করে শুয়েছে।রঞ্জিত ঢুকলেও,টের পায়নি
বোধহয়। শীতল হাওয়ার পরশ ছোট্ট রুমটার দেওয়ালে যেন খেলা করছে। বৃষ্টির জন্য বোধহয় একটু
ঘুমোতে পেরেছে নীলিমা। জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো একবার রঞ্জিত। পরিষ্কার আকাশের বুকে
ছবির মতো কিছু মেঘ উড়ে বেড়াচ্ছে, আর তার আড়াল হতে মিঠে রোদ যেন তার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
নীচে বারিস্নাত জনারণ্যে একবার তাকালো রঞ্জিত। খুঁজতে চাইল নিজের মতোই কাওকে,আসন্ন
ঝড় যার শেষ খড়কুটোটাকেও উড়িয়ে নিয়ে যেতে চাইছে। বেডের পাশের টেবিলটায় ওষুধ আর ইঞ্জেকশনটা
রেখে নীলিমার পাশে বসল। টেবিলের ওপর অঙ্কুরের শেষ জন্মদিনে তোলা ছবিটা রাখা। ওদের জীবনের
বাগানের একমাত্র ফুল টা হারিয়ে যাওয়ার শোক কোনোদিনই কাটিয়ে উঠতে পারেনি নীলিমা।
accident এর খবর টা যেদিন এলো, সেদিন সে বাইরে গিয়েছিল। কনফারেন্স attend করতে।যখন
ফিরে এলো,তার ফেলে যাওয়া জীবনটা তছনছ হয়ে গেছে। অঙ্কুরের বিরহ বেদনা সহ্য করতে পারলেও,
যেভাবে নীলিমা এক অন্ধকার অতলে হারিয়ে ফেলছিল নিজেকে তা সহ্য করতে পারেনি সে। ছবিটার
হাতে নিয়ে একবার মুছল রঞ্জিত। অঙ্কুরের মুখটাও আর তার ভালোমতো মনে পড়েনা। আট বছর হতে
চলল সেই অভিশপ্ত দিনের। নিজেকেই সে দায়ী মনে করে তার জীবনের এই পরিণতির জন্য। নিজের
জীবন, নিজের শিক্ষকতা,নিজের ভালো লাগা এসব নিয়েই থেকেছে চিরকাল। বড়ই স্বার্থপরের মতন
কাটিয়েছে জীবনটা। নিজের প্রয়োজনই সবার আগে রেখেছে বরাবর। নীলিমা কে বিয়ের পর হতেই বড্ড
অবহেলা করেছে সে। কখনো এই মেয়েটাকে বুঝতে চাইনি, কখনো কাছেও টেনে নেয়নি। তবুও মেয়েটা
কোনোদিন কিছুই চাইনি। আর যখন চাইল, হতভাগ্য সে সেটাও এনে দিতে পারলো না তাকে। অঙ্কুরের
মৃত্যু যেন তাকে আরো জোরে ধাবিত করল নিজের দুনিয়ার দিকে। ঘরের এক কোনে নীলিমা তার অন্ধকার
মনের অতলে যে কিভাবে বেঁচে ছিল, এসবের খোঁজ কোনোদিন নিতে যায়নি সে।ভাবতো সেও তো ব্যাথায়
কাতরাচ্ছে,আবার নিজেই সামলেছে নিজেকে,তাহলে নিলিমাও পারবে।
ফটোটা রেখে,নীলিমার দিকে ঘুরে বসল। আওয়াজে বোধহয় ঘুম ভাঙল এবার নীলিমার।
আস্তে করে ফিরে তাকালো। চোখ দুটো ফ্যাকাশে হয়ে এসেছে, চোখের পাতা খোলা রাখাটাও যেন
দুঃসহ মনে হচ্ছে।
"ও। তুমি এসছো। কখন এলে? টের পেলাম না তো।"
-এই তো এখনই এলাম। তুমি একটু ঘুমাচ্ছিল দেখলাম।তাই ডাকিনি।
-ও। অনেকদিন পর চোখটা লেগে এলো একটু তাই। এনেছো ফুলটা।
রঞ্জিত কিভাবে বলবে যে সে তার এই তুচ্ছ আবদার টাও রাখতে পারেনি, বুঝে উঠতে
পারলোনা।কিছুক্ষন চেয়ে রইলো মেঝের দিকে।
-কাল এনে দেব তোমায়।
নীলিমার চোঁখের দিকে তাকাবার সাহস টুকু নেই আর তার। আবার পাশ ফিরে শুল নীলিমা।
-একটু কথা বলে নিও নীচে।কিছু একটা বলছিল ওরা।দেরি করলে আজ আসতে?
-ওই একটু কাজে আটকে গেছিলাম। কলেজের একটা ব্যাপারে। কি বলছিল ডাক্তার?
-জানিনা। তুমি শুনে নিও। কালকে কখন operation করবে এসব নিয়ে কিছু হবে।
-আচ্ছা।তুমি ঘুমও।আমি আছি।
নীলিমা পাশ ফেরাতে কিছুটা সহজ হলো রঞ্জিত। অপরাধীর চোখ নিয়ে কি করে তাকাবে
ওর দিকে। সে চাইলেই পারতো ওর জীবনে কিছুটা হলেও আসার আলো নিয়ে আসতে।কিন্তু নিজের তৈরি
পৃথিবীর নেশাতে সে এতই বুঁদ থাকত,যে এই নিষ্পাপ মেয়েটার চিৎকার সে কোনোদিন শুনতে পায়নি।
তার সারাজীবনের স্বার্থপরতার ফল এখন প্রকৃতি তাকে হয়তো ফিরিয়ে দিচ্ছে। এক এক করে সব
কটা মানুষ তাকে একা ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে। অঙ্কুর,পূরবী, নীলিমা।
মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠলো হঠাৎ করে।হুশ ফিরল রঞ্জিতের।তাড়াতাড়ি বের করল
মোবাইলটা।এসময় কে ফোন করতে পারে কেজানে।নীলিমার ঘুম না ভেঙে যায় আওয়াজে তাই জানলার
দিকে এগোলো মোবাইলটা বের করতে করতে।বেরকরে দেখে পুরবীর ফোন। খুব অবাক হল রঞ্জিত।আর
কি কথা থাকতে পারে ওর বলার। চলে যাচ্ছে, সেটা জানিয়ে দিয়েছে। এমনত নয় যে সে বললে থেকে
যেত ও।silent এই বোতাম টা টিপে বাইরে তাকালো একবার। সোনালী রঙের ছটা ধীরে ধীরে আকাশের
বুকে ছড়াতে শুরু করেছে।ঠিক যেমন অঙ্কুর রং খাতার একধার হতে পেন্সিল দিয়ে রঙ ভরতো। আবার
বেজে উঠল phone টা।আবারও silent করল রঞ্জিত।না,তার আর কিছু শোনার ও নেই,বলার ও নেই।ওর
প্রয়োজন ফুরিয়ে গিয়েছে,তাই চলে যাচ্ছে। আর সত্যি বলতে,রঞ্জিতের এখন মনে হয় তার কাছে
এই জীবনটারই প্রয়োজন ফুরিয়ে গিয়েছে।call কেটে গেলে মোবাইল টা switch off করে দিল রঞ্জিত।
ঘড়ির কাটা বলছে 5টা বাজতে 10 মিনিট বাকি। একটু পরেই বেরোতে হবে।ভিসিটিং
hours শেষ। টেবিলে phone টা রেখে নীলিমার পাশে এসে বসল রঞ্জিত। খুব ক্লান্ত লাগছে নিজেকে।সকাল
হতে ঘুরে বেড়াচ্ছে এই রোদ বৃষ্টির লুকোচুরির মাঝে। ঘামে ভিজে গিয়েছে জামা টা। ছোট্ট
বেডের বাকি অল্প জায়গায় এলিয়ে দিল শরীর টাকে।নীলিমার বালিশের কিছুটা ফাঁকা ছিল,ওটায়
মাথা দিল রঞ্জিত। নীলিমার দিকে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো। ওর নিঃশাস পড়ার আওয়াজ কানে এলো।
কাল জীবনমরণের অপারেশন হতে চলেছে তবুও কোনো তাপ-উত্তাপ নেই মেয়েটার।
জীবনের ভারে সেও ঔ বোধহয় ক্লান্ত। এই ভার থেকে মুক্তি পেলেই বোধহয় বাঁচবে
সে। শুধু অবহেলা আর বিচ্ছেদ ছাড়া সেও তো কিছু পাইনি। নীলিমার আগোছালো চুল টার ওপর দিয়ে
হাত বুলিয়ে দিল রঞ্জিত, ঠিক যেমন রাতে অঙ্কুর এর ঘুম না এলে করতে। একটু তেই ঘুমিয়ে
পড়তো অঙ্কুর। আজ নীলিমা ও একটু ঘুমোক।
"বোঝা" - অবাস্তব ডায়েরী
Edit Posted by নেট ফড়িং with No commentsবোঝা
অবাস্তব ডায়েরী
বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে সমস্ত দায়িত্ব চলে এল পঞ্চকের কাঁধে। পঞ্চক ছাড়াও
ওর পরিবারে মা আর ছোট ভাই আছে। তাই কিছুটা বাধ্য হয়ে মাঝপথে পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে কুলিমজুরের
কাজ বেছে নিল ও। ক্লাস ৬ পাশ করা পঞ্চককে এর থেকে ভালো কাজ কেউ দেবে না। তাও সুধীরকাকা
ছিল বলে রক্ষে, নইলে কে তাকে আর কাজ দিত। যাইহোক দুবেলা দুমুঠো অন্ন তো পরিবারের মুখে
তুলে দিতে পারবে।
একটু বড় হতে বেশি টাকা পাবার আশায় শহরে পাড়ি দিল সে। যে টাকা হাতে পায় নিজের
জন্যে প্রায় কিছু না রেখে ভাইয়ের কাছে পাঠিয়ে দেয়। নিজে অভুক্ত থাকলে ক্ষতি নেই ভাই
আর মা তো খেয়ে বাঁচবে।
দেখতে দেখতে ৩৫ বছর কেটে গেছে। মা মারা গেছে অনেকদিন হল। ভাইয়েরও বিয়ে হয়ে
গেছে। পরিবারের ভার সামলে বিয়ে আর করা হয়ে ওঠেনি পঞ্চকের। একটা দুর্ঘটনায় আক্রান্ত
হয়ে তার একটা পা বাদ চলে গেছে। তাই দেশের বাড়িতে ফিরে এসেছে সে, যাক ভাই তো ভালোই কাজকর্ম
করে তাকে নিশ্চই অবহেলা করবে না।
কিন্তু ভুল ভাঙলো সেদিন রাতে পাশের ঘরে থাকা ভাইয়ের কথাবার্তা শুনে। ভাই
তার স্ত্রী কে বলছে “খেয়ে দেয়ে কাজ নেই , একেই আমার কাজকর্মের এই অবস্থা, তার ওপর পা
হারিয়ে দাদা জুটেছে সংসারে। কতদিন এই বোঝা টানতে হবে কে জানে।” ভাইয়ের কথা শুনে পঞ্চকের
মনে হল “সত্যি পরিবারের বোঝা টানতে টানতে কখন যে নিজেই বোঝা হয়ে গেছে তা বুঝতেই পারেনি।”
Nov 6, 2020
"রহস্যময়ী ডাউহীল" - সৌমেন ভাদুড়ী
Edit Posted by নেট ফড়িং with No commentsরহস্যময়ী ডাউহীল
সৌমেন ভাদুড়ী
আজ আমি নিয়ে যাবো এক ঐতিহাসিক পাহাড়ে, যা পৃথিবী বিখ্যাত ভৌতিক ঘটনার জন্য।
সালটা ১৮৭০ এর আশেপাশে হবে, ইংরেজ শাসকরা নব্য ক্রিশ্চানদের দলে দলে নিয়ে
আসছে আশপাশের থেকে, আসানসোলে। সেখানে ওনারা প্রতিষ্ঠা করেছেন ইন্ডিয়ান থিয়লজিক্যাল
সোসাইটি যার কাজ নব্য খৃষ্টদের পাদ্রী বানানো (নানটা সঠিক কিনা জানিনা)।
এই সময়েই বাংলায় ব্রাহ্ম সমাজের খুব বোলবালা। ১৮৭৮ সালে নব্য ব্রাহ্ম কেশব
সেনের মেয়ে সুনীতিদেবীর সহিত কোচবিহারের মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের বিবাহ হয়। কোচবিহারের
রাজাদের নিকটবর্ত্তী পর্বতে অনেক জায়গা জমি ছিল।
ব্রাহ্ম সমাজের সহিত তদানীন্তন ব্রিটিশ সাহেবদের সখ্যতাও বেশ ভালোই ছিলো।
এই যোগাযোগের ফলস্বরুপ ইন্ডিয়ান থিওলজিকাল সোসাইটি পাহাড়ে লোকচক্ষুর আড়ালে
গিয়ে সেন্ট মেরীস সেমেটারি তৈরি করেন এবং সেখানে দর্শনার্থীদের ভ্রমণে নিসেধাজ্ঞা জারি
করেন, যা আজও বলবৎ।
আর ওদিকে বাংলার তদানীন্তন লে.গভঃ এসল্যে ইডেন সেন্ট মেরীর কাছেই ভিক্টোরিয়া
স্কুল খোলেন। প্রথমে তার উদ্দেশ্য এক হলেও পরবর্তীতে পাল্টে যায়।
যাইহোক এই ঘটনার প্রায় ১৩৫ বছর পরে আমি আমার সহকর্মীদের নিয়ে কলেজের কাজের
পরে এক বাল্যবন্ধুর আমন্ত্রণে ওই পান্ডব বর্জিত (টুরিস্ট এলাউড না) রেঞ্জার্স কলেজে
(সেন্ট মেরীর বর্তমান নাম) নিশিযাপনের উদ্দেশ্যে পৌছাই। ঘন পাইন বা স্থানীয় ধূপী গাছে
ঘেরা এই সুপ্রাচীন ব্রিটিশ স্থাপত্য ও মুহুর্মুহ মেঘের আনাগোনা আমাদের মতো শহুরে সমতলের
লোকেদের মোহিত করে তোলে। বিকেলের আলোয় পাহাড়ের ঠান্ডা পরিবেশের সাথে নিজেদের মানিয়ে
নিতে নিতে আমরা ব্রিটিশদের তৈরি করা শতাব্দী প্রাচীন গথিক নির্মাণশৈলী বিষ্ময়ের সাথে
ঘুরে দেখার সাথে সাথে প্রাচীন ইতিহাস ও রহস্যের সাথেও পরিচিত হবার সুযোগ পেলাম ওখানকার
এক খ্রিষ্টান কর্মচারী ও বাল্যবন্ধুর মাধ্যমে। তবে প্রচন্ড জোঁকের উপদ্রবে আমরা সন্ধ্যা
নামার আগেই মূল বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করি এবং জানতে পারি সেখানেই আমাদের রাত্রিবাস করতে
হবে, এতে আমার সহকর্মীরা ভীত হলেও আমি মনে মনে আনন্দিত হয়ে উঠি।
সবাই চারিদিক ঘুরে দেখার সময়ে জানতে পারে যে ক্যান্টিনে যারা খাবার বানাবেন
তা তারা আগেই বানিয়ে ক্যাসারোলে করে ডাইনিং টেবিলে রেখে যাবেন। আর ওনারা বিকালের পরে
তেঁনাদের ভয়ে কেউ ওখানে থাকেন না। শুনেই আমার সাথীরা নিজ নিজ ঘরের অন্তরালে গিয়ে সুরা
মৌতাতে এই আধিভৌতিক পরিবেশ থেকে নিজেদের সাবধানে সরিয়ে নেয়।
কিন্তু আমার উদ্দেশ্য একদম আলাদা, অবশ্য সাথে পেলাম সেই খ্রিষ্টান কর্মচারী
জোসেফকে। ততক্ষণে আমার বাল্যবন্ধু আমার সাথীদের সাথে গিয়ে ভিড়েছে।
এবার আমি জোসেফকে নিয়ে এই শতাব্দী প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাসের অনুসন্ধানে
বের হলাম বিল্ডিংয়ের ভিতরেই, সাথে অফুরন্ত ভৌতিক ঘটনার বিবরণ। তবে সবচেয়ে যেটা অবাক
করা ব্যাপার জানলাম আজ থেকে প্রায় ১৫০ বছর আগে ব্রিটিশ ফাদাররা নিজেদের বিদ্যুতের প্রয়োজন
মেটানোর জন্য একটি ছোট জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ওখানে বসিয়েছিলেন, ভারতবর্ষে সম্ভবত প্রথম,
যদিও তার সব চিহ্ন কোন অজানা কারণে বর্তমান মেঝের নীচে মোটা সিমেন্টের চাদরে ঢাকা।
এই সময় আমি উনাকে পটিয়ে মূল বিল্ডিংয়ের বাইরে নিয়ে আসি। জানতে পারি, যে
সমস্ত খ্রিষ্টানরা ফাদার হওয়ার কঠোর পরিশ্রম করতে পারতো না তাদের কিভাবে তিলে তিলে
শেষ করে দেওয়া হতো। যদিও আজ সেগুলো সব পুরু সিমেন্টের চাদরে ঢাকা। হয়তো বা সেই অতৃপ্ত
আত্মারাই এই ডাউ-হিলের আতঙ্ক।
এর পরে আমরা আবার ফিরে আসি ডিনারের জন্য। সবাইকে ডেকে নিয়ে ক্যান্টিনে খেতে
যাই। এতো সুন্দর রান্না, কিন্তু ভয়ে কেউ ভালো করে খেলোই না, তার কারণ আমার এক সহকর্মীর
ক্যামেরায় এক মনুষ্যাবয়বের কারো ছবি ধরা পড়ে, যা আমরা অনেকেই দেখেছি। কিন্তু ক্যান্টিনের
টেবিলের ওখানে কেউ ছিল না আর সেটা দেখার জন্য যখন আবার ক্যামেরাটা অন করা হয়, সেখানেও
না, অত্যন্ত রহস্যজনক।
এবার আমি আর জোসেফ মিলে আমার বাল্যবন্ধুকে তার কোয়ার্টার এ ছেড়ে আসার কথা
বললাম, কিন্তু আমার সহকর্মীরা একা থাকার ভয়ে জোসেফকে ছাড়তে ভরসা পাচ্ছিল না। কিন্তু
আমি একা ফিরব বলে ওরা জোসেফকে এলাউ করলো। তখন রাত প্রায় ৯টা বাজে, পাহাড়ে কিন্তু মনে
হবে মধ্যরাত।
বন্ধুকে তার কোয়ার্টারে ছেড়ে দেওয়ার পরে জোসেফ আমাকে সামনের এক জঙ্গল দেখিয়ে
বললো, এটাই কুখ্যাত ডাউহিল ফরেষ্ট, এই রাস্তায় কিছুটা গেলেই ভিক্টোরিয়া স্কুল, যদি
জোঁকের ভয় না পান তো চলুন ঘুরে আসি। তার বিশ্বাসে আমি যেহেতু সিংহ রাশির লোক তাই আমার
দেখার সম্ভাবনা খুবই কম। বন জঙ্গলের পথে আমরা ঘন্টাখানেক ঘুরলাম কবন্ধকাটা বা নেপালীবুড়ী
দেখার জন্য। কিন্তু আমি সমতলের মানুষ, দম কমে যাওয়ায় আর সিংহ রাশির খটকার জন্য জোসেফকে
বললাম চলো ফিরে যাই, তোমাকেও ঘুমাতে হবে।
কলেজে ফিরে আসার পরে দেখি সবাই দরজা লাগিয়ে ঘুমাচ্ছে। জুনিয়রদের রুমে ধাক্কা
দিয়ে ওদের জাগালাম, ওরা বললো কোথায় গেছিলে, আমি বললাম বাথরুমে, পেটটা প্রব্লেম দিচ্ছে
দরজাটা খালি ভেজিয়ে রাখলেই হবে, আধা ঘুমে হ্যাঁ বলেই তারা আবার ঘুমিয়ে পড়ল।
আর এদিকে আমি দুপেগ হাল্কা করে বানিয়ে ক্যামেরা নিয়ে খালি পায়ে বিল্ডিংয়ের
ভিতরে ঘুরতে বেড়ালাম, রাত তখন প্রায় ২টো। খালি পায়ে নিশব্দে আমি প্রায় ভোর ৪টা পর্যন্ত
তেনাদের খুঁজে বেড়ালাম। ক্লান্ত হয়ে এসে শুয়ে পড়লাম কারণ রাত পাতলা হওয়ার সময় হয়ে আসছে।
পরের দিন আরো অনেক কিছু দিনের আলোয় দেখে কুয়াশের চারা নিয়ে দুপুরের মধ্যেই
শিলিগুড়ি ফিরে এলাম।
তবে ভূত বা ভৌতিক বা পরাবাস্তবতা যাই বলুন না কেনো, আমার যা মনে হয়েছে সেটাই
আপনাদের কাছে জানাতে চাই। পাহাড়ের মানুষ বিকাল ৪/৫ কেই রাত্রি মনে করে শুয়ে পড়ে, তার
উপরে ভৌতিক পরিবেশ আর সেই নিশব্দ পাহাড়ে হাওয়ার ঘনত্বের কারণে বহু দূরের শব্দকেও কাছের
মনে হয়। এর আর একটা কারণ বলি বিল্ডিংয়ে মধ্যরাতে কাঠের মেঝেতে খালি পায়ে যখন হাটছিলাম
তখন অনেক রকম শব্দ শোনা যাচ্ছিল, এমনকি নিজের টিপে টিপে চলা পায়ের শব্দতেও মাঝে মাঝে
চমকে উঠছিলাম। তাই আমার মনে হয় এই নৈশব্দের নিস্তব্ধতাই এক পরাবাস্তবতার জন্ম দেয়,
তাকেই আমরা সরল ভাষায় ভূত বলি। অবশ্য আর একটা কারণও আমার মনে হয়েছে, তা হলো ওখানকার
শতাব্দী প্রাচীন দুর্মূল্য বইগুলি, ওগুলো পাচারের জন্যও মানুষের তৈরী কোন মানুষ ভূত
থাকলেও থাকতে পারে।
ছবি- সৌজন্যে লেখক
Nov 4, 2020
"অবসাদ " - দেবপ্রিয়া পাল
Edit Posted by নেট ফড়িং with 1 comment
অবসাদ
দেবপ্রিয়া পাল
সকাল থেকেই মাথাব্যাথাটা বেশ জোরালো পাখির। মোটা ফ্রেমের বাইরে অঙ্ক বইটা
ঝাপসা দেখে সে। তারপর কী যেন আপনমনে বিড়বিড় করে ওপর দিকে তাকিয়ে।
যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে সে বিছানায় শুয়ে চাদরটাকে খামচে ধরে থাকে।
বাবা রুমে ঢোকামাত্রই ঝাঁঝিয়ে ওঠে "থাক শুয়েই থাক সারাটাজীবন... কিসসু
হবে না আর তোর দ্বারা"
মাও তাতে সায় দিয়েই বলেন "পড়াশোনায় তো বিন্দুমাত্র মন নেই তোর... সারাদিন
পাগলের মত কী বিড়বিড় করিস "।
আর পেরে ওঠে না পাখি, সহ্য হয় না কথাগুলো, জগতটাকে অস্বস্তিকর দুর্বিষহ
বলে মনে হয় তার। চোখের জ্বলন্ত শিখার নীচে কালি পড়েছে বহুকাল, পিঠ ঠেলে কুঁজও বেরিয়েছে,
ওজন বেড়ে ৭১, সামনেই JEE-Mains তার...
মেজাজ চরমে পৌছায় এবার কোনোমতে উঠে টেবিল থেকে বইগুলো ছুড়ে ফেলে দেবার জন্য।
কিন্ত পা বাড়াতেই অজ্ঞান হয়ে পরে যায় সে।
দীর্ঘ ৫ ঘন্টা পর জ্ঞান ফেরে তার কিন্তু অপলক চোখে তাকিয়ে থাকে সে আর কি
যেন বিড়বিড় করে। মা-বাবা স্পষ্ট দেখতে পায় তাদের চোখের সামনে আস্ত পাখিটাকে গিলে খাচ্ছে
রাক্ষুসে অবসাদ।
"এবিসিডি" - অগ্নিমিত্র
Edit Posted by নেট ফড়িং with No comments
এবিসিডি
অগ্নিমিত্র
এক অদ্ভুত জায়গায় কাজ করতে এসেছি আমি। একটা ফাইল এ ঘর থেকে ও ঘরে যেতে দু
মাস লাগে, কখনো বা তারও বেশি। আমারও একটা ফাইল আটকে গেল। ভাবি, কী করা !?
করণিকদের জিজ্ঞাসা করলাম, কী ব্যাপার ! তারা তো নেতাগিরি নিয়ে ব্যস্ত। সব
অ্যাসোসিয়েশন করে কিনা। তাই তেমন সুরাহা হলো না।
ক্যাশ কাউন্টারে বসা এক ভদ্রলোক বললেন - 'এখানে তো এই রকমই। আসলে ফাইল তাড়াতাড়ি
চলতে গেলে একটু নীলচে কিছু তার সাথে জুড়ে দিতে হয়।'
ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে একশো টাকা ঘুষ চাইছেন এমন ভাবে, যে কষ্ট হল।
এক অভিজ্ঞ পুরনো করণিক ছিল, নাম মুখার্জি । সে বললো- 'আরে স্যার, এখানে
তো সবাই এবিসিডি করে। '
'এবিসিডি !? সে কেমন ?' অবাক হই ।
'ও মা, জানেন না ! দেখুন, এ মানে avoid, যতটা পারে আজ হবে না, কাল হবে করে
কাজটা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা।'
'হুম। আর বি দিয়ে?'
'ওটা সোজা। বাইপাস । এই তুই করে দে, ও করে দেবে বলে বাইপাস করা। তারপর সি।
সি দিয়ে confuse। এটাতে এই চিঠি লাগানো নেই, এই ডকুমেন্ট নেই, এটার নিয়ম নেই বলে
confuse করা।'
'আচ্ছা। আর শেষে ডি !?'
'হুম। ওটাই মর্মান্তিক। ডি দিয়ে delay, এই করতে করতে কাজটা দেরী হয়ে পন্ড
হয়ে যায়। আপনারটাও হবে।'
আমি শঙ্কিত, বিচলিত হই। কী যে করবো !?
এই এবিসিডির চাপে ছোটবেলায় শেখা এবিসিডিই না ভুলে যাই !!