Apr 27, 2021

"অসুখ" - পহেলী পাল

Edit Posted by with No comments

 


অসুখ

পহেলী পাল

 

একদিন কোনো সুখপাখি ডাক দিলে

চলে যাব, ফিরে ফিরে আসব না,

একদিন এই অসুখ যাবে সেরে

একদিন তোমায় আর ভালোবাসবো না।

আজ এ জীবন জাপটে রাখে খুব ?

গলার কাছে কাঁটার মত বাজে ?

অভিমানে ঘরছাড়া যেই পাখি

সব ভুলে রোজ খাঁচায় ফেরে সাঁঝে-

একদিন সেও নিয়মভাঙার খেলায়

মাতবে যখন ভুলে শেকল টান

বুঝবে তোমার অবহেলার গল্প

পেরিয়ে গেছে তিন সীমানার গান।

এখন যেমন আদর যত্নে মেখে

সম্পর্কের মমিটাকে রাখি

কোনো একদিন দ্বিধাহীন হাতে

ছুঁইয়ে আগুন মুক্তিও দিতে পারি।

এখন যেমন দিনের আলো গেলেই

চোখ থাকে সেই চেনা পথের বাঁকে,

এখন যেমন প্রহর গুণে মন

তোমার ডাকের আশায় বসে থাকে-

জানবেইনা কোন তমশার কালো

একদিন তারও বদলে দেবে ছক

কোন উজানে গা ভাসাবে সেও

মুক্তিবেগে পেরিয়ে যাবে পথ।

সাঁঝের বাতি ফুরিয়ে এলে পরও

যেদিন তোমার অপেক্ষাতে থাকব না,

বুঝবে সেদিন অসুখ গেছে সেরে

সেদিন আর তোমার জন্যে ভাববো না।

কোনো একদিন দিনটা আসবে ঠিক

কথায় মায়ায় পড়ব না বাঁধা

মুক্ত তোমার আকাশপাড়ির স্বপ্ন

আমি তখন শুধু একটা ধাঁধা।

আজ তো আমার অসুখ মনের মাথার

তাই তো দেখো কত্তো কথা বলি

হিজিবিজি এঁকে ভরাই খাতা

তোমার নামে লিখি সুরের কলি।

আজ আমার চাঁদ-পাহাড়ের দেশে

অমাবস্যা, একশো তিন জ্বর

মনের ভিটের কাঁপছে মাটি তাই

প্রেমের ঘরে বিষ-বোশেখী ঝড়।

সত্যি বলছি বুঝতে পারিনি গো

হয়তো আমি পাগল একটু বেশি,

তোমায় বোঝার অভিযানের মাঝে

কখন নিজেই বোঝা হয়ে গেছি।

তবে একদিন পেরিয়ে যাব সবটা

এড়িয়ে যাব, ফেলব না চোখ চোখে,

অপরিচিতের ভিড়ে ঠাসা গলি

যেমন এগোয় দেখেও না দেখে।

যেদিন বারেক ভাঙলে সবই ঝড়ে

রাত করে ভোর আবার সে ঘর বাঁধবো না,

বুঝবে সেদিন অসুখ গেছে সেরে

সেদিন আর তোমার কথায় কাঁদবো না।


লেখিকা- পহেলী পাল

Apr 25, 2021

নেট ফড়িং সংখ্যা - ১৯০

Edit Posted by with 2 comments

Apr 18, 2021

নেট ফড়িং সংখ্যা - ১৮৯

Edit Posted by with 2 comments

Apr 11, 2021

নেট ফড়িং সংখ্যা - ১৮৮

Edit Posted by with No comments

Apr 7, 2021

"গোলাপ" - অনাদি মুখার্জি

Edit Posted by with No comments

 


গোলাপ

অনাদি মুখার্জি

 

লাল গোলাপ হলো নাকি সৌন্দর্য ও প্রেমের প্রতিক ! বহু গল্পের মধ্যেই নাকি বার বার ঘুরে ফিরে আসে সেই রক্ত গোলাপে কথা ! সময়ের সাথে সাথে প্রেমের ধরন বদলে গেলেও কিন্তু প্রেম নিবেদনের ভাষা হিসাবে লাল গোলাপের আবেদন চিরন্তন ! তাই তো আজ শুভ সেই লাল গোলাপ কিনে তার প্রিয় সাথি রিয়া হাতে দিয়ে তার মনের কথা বলবে ! রিয়ার সাথে তার অনেক দিনের সম্পর্ক ,সেই সম্পর্ক আসতে আসতে কত গভীর চলে গেছে তবুও তারা দুই জনে মুখে কিছু বলেনি ! লাল গোলাপ যদি ভালোবাসা প্রতিক হয় তবে এই লাল গোলাপ দিয়ে রিয়ার মনের কথা জানতে হবে তার সাথে শুভ ও তার ভালোবাসার কথা জানাবে ! প্রেম হলো এমন একটা জিনিস যা চোখের ভাষায় মনের অনুভূতি গুলো বুঝে নিতে হয় এই সব অনুভূতি গুলো মুখে বলা যায় না !  সত্যিই তাদের ভালোবাসা ছিল এক অন্য ধরনের কিন্তু কি ভাবে সেই ভালোবাসা তাদের কে জড়িয়ে ফেললো এক অন‍্য অনুভূতি ছোঁয়ায় ! আজ খুব মনে পড়ে সেই দিনের কথা !

শুভ তখন কলেজের পড়ে ,একদিন কলেজের লাইব্রেরি তে বই আনতে গিয়েছিল শুভ ,সেই খানে রিয়ার সাথে তার দেখা ! প্রথমে রিয়ার বলে উঠলো আপনি কি এই কলেজের নতুন ? রিয়ার মুখে এই কথা শুনে শুভ বললো কি যে বলেন আমি নতুন কেন ? আপনি মনে হয় নতুন ! রিয়া বলে উঠলো না আমি নতুন নয় কিন্তু আপনাকে তো আগে দেখেনি ! শুভ বললো দেখবেন কি করে চোখে তো চশমা লাগিয়ে থাকলে ! রিয়া তখন তার চোখের চশমা খুলে বললো কিন্তু আমি আপনাকে চিনি আপনি তো সোমার দাদা তাই না ! শুভ অবাক হয়ে বললো আপনি সোমার বনধু ! হুম রিয়া বলে তার হাতে একটা বই দিয়ে বললো এই বইটা জন‍্যই আপনি লাইব্রেরী তে এসেছেন তাই না ! কি আশ্চর্য এই বইটা জন্য আমার আসা কি করে জানলেন শুভ জানতে চাইলো তখন ,রিয়া হেসে বললো আমি সব কিছুই বুঝতে পারি বলে রিয়া চলে গেলো ! তারপর থেকে তারা কলেজের দেখা হলে কথা হতো ,টিফিনের ফাঁকে একসাথে ফুচকা খেতো বা কখনো মাঠে বসে গল্প করে সময় কাটাতো ! একসময় শুভর কলেজের শিক্ষা শেষ করে সেই একটা ভালো কোম্পানি তে চাকরি পেলো ! সেই খানেও রিয়া কে দেখতে পেয়ে বলে আরে তুমি রিয়া ! রিয়া বলে হুম এই কোম্পানি তো আমার বাবার ,তাই আমি আছি বুঝেছো ! একদিন শুভর মায়ের অবস্থা খুবই খারাপ হলো, শুভর তার মাকে নিয়ে ডাক্তারের কাজে গেল তখন ডাক্তার বললো তোমার মায়ের হার্টের অবস্থা ভালো নেই এখুনি অপারেশন দরকার ! এই অপারেশন করতে  প্রায় লাখ টাকা লাগবে ! সেই সময় রিয়া তার কাছেই ছিল সব শুনে রিয়া বললো বেশি চিন্তা করো না আমি আছি যা টাকা লাগবে আমি দেব ! শুভর মায়ের অপারেশন হবার পরেও রিয়া সব সময় তার মায়ের দেখাশোনা করতে লাগলো ! শুভর মা ভালো হয়ে উঠলো এই সব দেখে একদিন শুভ রিয়াকে বললো সত্যিই তুমি যা করেছো তা কল্পনা করা যায় না ,তোমার টাকা টা কি ভাবে শোধ করবো তা ভাবছি ! রিয়া তখন তার মুখে উপর হাত টা চেপে ধরে বললো এই সব থাক না ! আমার খুব ভালো লেগেছে তোমাকে তাই তোমার কষ্ট দেখে আমি করলাম সব ! তখন শুভ রিয়ার হাত টা টেনে নিজের হাতের ওপর রেখে বললো তোমার কাছ থেকে টাকা নেওয়া টা আমার ভুল ছিল না কারন আমি ও তোমাকে খুবই ভালোবাসি ! তাই দেখো বিধাতা মানুষ কে কিছু সমস্যায় ফেলে দেয় আর যে মানুষ টা তার পাশে থেকে সব সমস‍্যা সমাধান করে দেয় আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আমি জানি তুমি ও আমাকে সেই রকম ভাবে ভালোবাসো কিন্তু আমরা কেউ কাউকে বুঝতে দিইনি ! আমার জীবনের তোমার ভালোবাসা কতটা তা আজ বুঝলাম ভাবেনি কোনোদিন তোমার কাছে এত ভালোবাসা পাবো ! আজ তোমাকে একটা কথা বলতে চাই যা কোনোদিন তোমাকে বলতে পারেনি ! যেদিন তোমাকে আমি প্রথম দেখেছি সেই দিন মনের মধ্যেই একটা অনুভূতি পেয়েছি আজ তোমাকে বলে দিতে চাই ! রিয়ার তখন শুভর হাত খানি ছেড়ে বললো তোমার মুখ থেকে এই কথা গুলো শুনে আমার মন খুব আনন্দ হচছে কিন্তু এই ভাবে শুনতে চাই না ! আমার ইচছে এক গুচ্ছ লাল গোলাপ এনে দিয়ে আমাকে বলো শুভ বলে রিয়া চলে গেলো ! রিয়ার মুখে এই কথা শোনার পর ভাবলো আজ রোজ ডে ভালো দিন তাই সেই মনের আনন্দে এক গুচ্ছ লাল গোলাপ এনে রিয়ার হাতে দিয়ে বলবে আমি তোমাকে ভালোবাসি রিয়া !

কিছুক্ষণের মধ্যেই শুভ বাজার থেকে এসে রিয়া দিকে তাকিয়ে বললো দেখো তোমার জন্য কি এনেছি ! রিয়ার হাতে লাল গোলাপ দিয়ে বললো হ‍্যাপি রোজ ডে ,

রিয়া এক হাতে লাল গোলাপ নিয়ে অন্য হাতে শুভর হাত ধরে ধরে রইলো তার চোখে উপর চোখ রেখে !  একে অন‍্যের মাঝে হারিয়ে গেলো ! অনেক ক্ষণ পর বললো রিয়া সত্যিই গোলাপ ফুলের কি গুণ আমার অনুভূতি গুলো এই ফুলের মাঝে আছে , তখন শুভ এক হাতে গোলাপ নিয়ে অন্য হাত দিয়ে রিয়াকে জড়িয়ে ধরে বললো তুমি তো আমার গোলাপ তাই তো আমার সব অনুভূতি প্রকাশ গুলো তোমার কাছে ধরা পড়ে !

 


লেখক- অনাদি মুখার্জি

Apr 5, 2021

"পরিণীতা" - শৌভিক রায়

Edit Posted by with No comments

 


পরিণীতা

শৌভিক রায়

 

জীবনের ক্যানভাস জুড়ে কতো স্বপ্নেরা জোনাকির আলোর মতো কতো রঙের খেলায় আঁকিবুঁকি কাটে। তাদের পাখায় ভর দিয়ে ইচ্ছেরা ডানা মেলে। তাদের মৃদু আলোয় অনেক স্মৃতিতে ভরা রূপকথার গল্পেরা ফুটে ওঠে বাস্তবের পটে। আলো-আঁধারির বুকে তারা এঁকে চলে বিচিত্র রঙের আলপনা। মনের মাধুরী মেশা কল্পনায় তারা ফুটে ওঠে আলোর পালক হয়ে। এমনই রঙিন প্রেম-কাহিনী ছিল টিকলি আর বাপ্পার। কিন্তু, এই মধুর প্রেমের এমন করুণ পরিণতি হবে তা কে জানতো!

ভালোবেসে কি তবে ভুল করেছিলো টিকলি !

কিন্তু ভুলটা ঠিক কোন জায়গায় ছিল তা কখনো স্পষ্ট করে বোঝাতে পারেনি বাপ্পা। আজ প্রায় আট বছর হয়ে গেলো ওদের সম্পর্কের। এই আট বছরে বাপ্পার ভালোবাসা টিকলির জীবনকে করেছে পরিপূর্ণ। কিন্তু এই আট বছর পর বাপ্পার এই কঠিন সিদ্ধান্ত টিকলিকে করেছে দিশেহারা।

টিকলির ভাই পিকলুকে পড়াতো বাপ্পা। সেই সূত্রে আলাপ হয় দুজনের। ধীরে ধীরে একটা সুন্দর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে ওদের। কিন্তু সেই বন্ধুত্ব খুব বেশীদিন কেবলমাত্র বন্ধুত্বের জায়গায় সীমাবদ্ধ রইলোনা। টিকলি আর বাপ্পার বন্ধুত্বের সম্পর্ক কখন কিভাবে যে প্রণয়ের বন্ধনে জড়িয়েছিল তা বোঝেনি দুজনের কেউই। সম্পর্কের কয়েকমাসের মধ্যেই বাপ্পা অনুভব করতে থাকে যে তার এবং টিকলির জীবনশৈলির মধ্যে বিস্তর ফারাক। প্রথমদিকে এই তফাৎগুলো কখনো ধরা পড়েনি। তখন কেবলই মিলগুলিই চোখে পড়েছিল। যেগুলি বেঁধেছিল দুজনের দুটি মনকে। ক্রমে যতই অমিলগুলি ধরা পড়তে লাগলো, সেই পার্থক্যগুলোকে বাপ্পা কখনোই মন থেকে মেনে নিতে পারেনি। সে সবসময় এই সম্পর্কে একটা হীনমন্যতা অনুভব করতো। তার নিজেকে কেবলই টিকলির অযোগ্য মনে হতে লাগলো। সে চেয়েছিল এই সম্পর্কের ইতি টানতে কিন্তু টিকলি বাঁধা দিয়েছিলো বারবার। বাপ্পাকে ছাড়া বেঁচে থাকা তার পক্ষে অসম্ভব। আর বেঁচে থাকলেও সেই বাঁচার অর্থ হবে একটা মৃত মন নিয়ে বেঁচে থাকা। টিকলির মনে তিলতিল করে জন্ম নেওয়া একরাশ স্বপ্নের হত্যাকারী হতে চায়নি বাপ্পা। বহুবার বহুভাবে চেষ্টা করেছে সে এই সম্পর্ক ভেঙ্গে বেড়িয়ে আসতে। টিকলিকে চরম মানসিক যন্ত্রণা দিয়েছে। সেই যন্ত্রণা থেকে শারীরিকভাবে দুর্বল ও অসুস্থ হয়ে পড়েছে টিকলি। ভালোবাসার মানুষকে কি ঘৃণা করা যায়? তার থেকে দুরে চলে গিয়ে তাকে চিরতরে ভুলে থাকা যায়? নাহ, পারেনি দুজনের কেউই একে অপরকে ছেড়ে থাকতে। অনেক ঝগড়া হয়েছে দুজনের। আবার তারা সেসব মিটিয়েও নিয়েছে। আসলে বাপ্পা একটু মাথাগরম প্রকৃতির হলেও টিকলি ছিল ভারী মিষ্টি আর শান্ত স্বভাবের মেয়ে। টিকলি বাপ্পাকে অনেক বুঝিয়ে সবকিছু সামলে নিতো। বাপ্পার অনেক অপমান সহ্য করেও টিকলির মন থেকে ভালোবাসা একচুল পরিমাণও কমেনি। তবে বাপ্পা টিকলির অনেক ইচ্ছেপুরণ করতো। ওকে শহরের অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যেত। ছোট ছোট অনেক ইচ্ছে পূরণ করতো। টিকলির খুব খেয়াল রাখতো। খুব আগলে রাখতো টিকলিকে। কোনোদিন টিকলির অযত্ন করেনি বাপ্পা। টিকলির অনেক সময় রাতে ঘুম না এলে বাচ্চাদের মতো গল্প বলে, গান করে ঘুম পাড়িয়ে দিতো। টিকলি বলতো যে ওর মায়ের পর কেউ যদি ওকে সবচেয়ে ভালো বোঝে, সবচেয়ে ভালো বন্ধু হয় আর সব বাচ্চামো সহ্য করে তবে সে হলো একমাত্র বাপ্পা। টিকলি ছবি তুলতে খুব ভালোবাসতো। কোথাও ঘুরতে গেলে ছবি তুলতে বলে পাগোল করে দিতো বাপ্পাকে। তবে বাপ্পা পরম ধৈর্য সহকারে তার সব ছেলেমানুষি সহ্য করতো। কখনো রাগতো না। আবার অনেকসময়ে টিকলির কিছু ভুলের জন্য সাংঘাতিক রেগে যেত বাপ্পা। কথা বলা বন্ধ হয়ে যেতো বেশ কিছুদিন। আবার সব ঠিক হয়ে যেত ধীরে ধীরে। এইভাবেই সুখে-দুখে, ঝগড়ায়-ভালোবাসায়, শাসনে-সোহাগে কেটে গেল আট আটটা বছর।

এই আট বছরে কোন চাকরী জোটাতে পারেনি বাপ্পা। প্রতিষ্ঠিত না হয়ে কি করে সংসার করবে টিকলিকে নিয়ে ? কিছু ঘর বাঁধার স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে যায়। বাপ্পা পারেনি টিকলিকে তার স্ত্রীর মর্যাদা দিতে। এক আকাশ ভালোবাসা দিতে পারলেও এক ছাদের নীচে একটা ছোট্ট সংসার দিতে সে ব্যর্থ। বাপ্পার মনের কিছু জটিল ভাবনা এর জন্য দায়ী। যার কাছে হার মানতে বাধ্য হলো টিকলির সংসার করার ইচ্ছে। মনের মিল থাকলেও ওদের মতের অমিল ছিল মাত্রাছাড়া। তাছাড়া, টিকলির বেশ কিছু সখ, অভিরুচি ও মনোভাব বাপ্পার খুব অপছন্দ ছিল। সেগুলো সে কখনো মন থেকে মেনে নিতে পারেনি, আবার ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হবে ভেবে কখনো বাঁধাও দিতে পারেনি টিকলিকে। তাই প্রণয় কখনো পরিণয়ের রূপ পেল না ওদের। প্রেয়সী হয়েও টিকলি আজীবন বাপ্পার অপরিণীতা হয়ে রইলো।

কিন্তু, এখানেই এই গল্পের শেষ নয়।

এক বছর বাদে বাপ্পা হঠাৎ জানতে পারলো টিকলির শরীরে বাসা বেঁধেছে এক দূরারোগ্য ব্যাধি।। টিকলির হাতে সময় মাত্র কয়েক মাস। টিকলি চলে যাওয়ার আগে বাপ্পাকে জানায় তার শেষ ইচ্ছা, সে চায় তাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পাক। টিকলির শেষ ইচ্ছে রাখতে বদ্ধপরিকর বাপ্পা কারণ টিকলি যে তার প্রাণাধিক প্রিয়।

অবশেষে সেই মধুর ক্ষণ উপস্থিত। কোন জাঁকজমক নেই, আড়ম্বর নেই, আছে শুধু সীমাহীন অপেক্ষা আর ভালোবাসা। লাল বেনারসি আর চন্দনে খুব সুন্দর করে সেজেছে টিকলি, কিন্তু মারণ রোগের কাছে হার মেনেছে তার সৌন্দর্য, তবুও সে বাপ্পার কাছে অপরূপা। এই প্রথম বার কনের সাজে টিকলিকে দেখে বাপ্পা যেন চোখ সরাতে পারছে না। পানপাতা সরিয়ে টিকলির ওই ম্লান, বিবর্ণ মুখ দেখেও মোহিত বাপ্পা, সে চোখ সরাতে পারছে না। ক্রমে ক্রমে সব রীতি পালন করা হল। অপেক্ষার অবসান হল। টিকলি আর বাপ্পার জীবনের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ উপস্থিত। বাপ্পা রাঙিয়ে দিল টিকলির সিঁথি। কিছুটা সিঁদুর এসে পড়েছে টিকলির নাকের উপর। কথায় বলে সিঁদুর নাকে পড়লে নাকি বর একটু বেশিই ভালোবাসে। টিকলি তো জানতোই বাপ্পা তাকে কতটা ভালোবাসে। লজ্জাবস্ত্রের আড়ালে টিকলির সিঁদুরে রাঙা মুখটা দেখার বড্ড লোভ হচ্ছে বাপ্পার। নিজের ইচ্ছে সম্বরণ করতে না পেরে লজ্জাবস্ত্র সরিয়ে যেই মুহুর্তে টিকলিকে দেখতে গেল অমনি টিকলি লুটিয়ে পড়ল বাপ্পার গায়ে।

আজ টিকলির জীবনে সবচেয়ে সুখের দিন। আজ সে বাপ্পার স্ত্রী। শেষবারের মতো বাপ্পার হাত দুটো ধরে টিকলি বাপ্পাকে বলল, "তোমায় যে বড্ড ভালোবাসি গো। আজ যে স্বীকৃতি তুমি আমায় দিলে তা আমার জীবনে পাওয়া তোমার তরফ থেকে শ্রেষ্ঠ উপহার"। টিকলি চোখ বুজলো। বাপ্পার কোলে মাথা রেখে সে চলে গেলো চিরনিদ্রার দেশে।

আজ এই ফেলে আসা দীর্ঘ সময়ের ভাবনারা বাপ্পার চেতনাকে রাতদুপুর আচ্ছন্ন করে রাখে। সেই স্মৃতিরা তাকে তাড়া করে ফেরে। টিকলির পায়ের পরিচিত নুপূরধ্বনি অনুরণিত হয় বাপ্পার মস্তিষ্কের অন্তঃপুরে। ভোরবেলা যখন রবির কিরণ পৃথিবীর বুকে এসে পড়ে, তখন সচকিতে ঘুম ভেঙে সে চেয়ে দেখে সেই এলোমেলো সপ্নিল রঙের আঁকিবুঁকি তেমনিই আছে তার কল্পনায়। কেবল তার মনের ডায়েরীর পাতা থেকে সেই অফুরন্ত প্রেমের অগণিত শব্দভাণ্ডার হারিয়ে গেছে বাপ্পার হৃদয়ের পটে চিরবিচ্ছেদের ছবি এঁকে। তারা অলীক আবেশে বাপ্পার মনকে সাময়িক ভুলিয়ে রাখলেও সে ভালো করেই জানে যে ওই স্মৃতির রাশি আর কখনো ফিরবেনা বলেই নিরুদ্দেশের পথে, না ফেরার দেশে হারিয়ে গেছে চিরতরে। আজও বাপ্পার রুদ্ধপ্রাণের বোবাকান্না ওইসব স্মৃতিগুলিকে খুঁজে মরে পরিচিত শহরের পথে পথে। তাদের একসাথে কাটানো মুহূর্তেরা টিকলির স্মৃতির ছুরিকাঘাতে বাপ্পার হৃদয়কে পূর্ণ ও পরিতৃপ্ত করে বিরহবেদনার অজস্র ক্ষতচিহ্নে।

তবে বাপ্পার আর কখনো মনে হবে না যে সে টিকলির স্বপ্নের হত্যাকারী। কারণ, টিকলি শেষপর্যন্ত হতে পেরেছিল বাপ্পার পরিণীতা ।।


"আবদারে" - পহেলী পাল

Edit Posted by with 1 comment

 


আবদারে

পহেলী পাল

 

আমি ঠান্ডা চায়ে চুমুক দিয়েও ঠোঁট পুড়িয়ে ফেলতে পারি

যদি তুমি মলম হয়ে আলতোভাবে ঠোঁট ছুঁয়ে যাও।

রুক্ষ মরুর বালির মাঝে বান নামিয়ে আনতে পারি

তৃষ্ণাকাতর হয়ে যদি এক বিন্দু জল চাও।

তবে চাইতে হবে শর্ত এটাই, যেমন খুশি যতখানি,

তোমার মনের গোপন কথা যদিও আমি ভালোই জানি

তবু তোমার আবদারে যে সঞ্জীবনী মন্ত্র আছে

তার জন্যে ভীষণ অসম্ভবের মাঝেও স্বপ্ন বাঁচে।

তার জন্যে সব সীমানার তারকাঁটাতে বিঁধতে রাজি

তার জন্যে সব ভুলে প্রেম নতুন করে শিখতে রাজি।

তার জন্যে আমি পারি যা পারে না অনেক জনে

গলা ছেড়ে বলতে সেসব যা থেকে যায় সবার মনে।

মন ভোলাতে বলছি না যে, সময় এলেই বুঝিয়ে দেব

হোক না জীবন এলোমেলো, ঠিক চার হাতে গুছিয়ে নেব।

শুধু তুমি সময় করে লিখো আমায় মনের আশা

নোনতা খামে মিষ্টি চিঠি তোমার হাতের, ভালোবাসা।


লেখিকা- পহেলী পাল

Apr 4, 2021

নেট ফড়িং সংখ্যা - ১৮৭

Edit Posted by with No comments