Jun 28, 2020
Jun 27, 2020
হারানো সম্পর্ক- (এস্ট্রিক্স)
Edit Posted by নেট ফড়িং with No comments
হারানো সম্পর্ক
এস্ট্রিক্স
আজ থেকে ঠিক দুই মাস আগে আমার আর
আমার স্ত্রীর ডিভোর্স এর জন্য কোর্টে হাজির হওয়ার তারিখ ছিলো। কিন্তু এই লকডাউনের
দৌলোতে কোর্ট কাছারি তো সবই বন্ধ, তাই আর হলো না। কবে
যে সব ঠিক হবে আর কবেই যে এই ঘর বন্ধি থাকার থেকে নিস্তার পাবো, সেটাই বোঝা যাচ্ছে না।
আমি একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে
কর্মরত চাকরিজীবী, বাড়ি কলকাতাতেই
তবে কাজের সূত্রে থাকতে হয় নয়ডাতে। আমি আর আমার বউ, বিবাহিত প্রায় আট বছর, আমাদের একটা মেয়েও
আছে,
তিন্নি, এইবার জুলাই তে
পাঁচ বছর পূর্ণ হবে তার। তিন্নি আর ওর মা কলকাতা তেই থাকে। আসলে তিন্নির মা, মানে আমার স্ত্রী ঋতিকা, একটা বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকা। আমার আর ওর কিন্তু লাভ ম্যারেজ হয়েছিল, তবে সময়ের সাথে সাথে ভালোবাসা বা ওই লাভ টা যেনো হারিয়ে
গেছে কোথাও। কলেজেই পরিচয় আমাদের। আমি অন্তিম স্নাতকের ছাত্র আর ওর প্রথম বৎসর।
সম্পর্কটা গড়ে উঠে খুব কম সময়েই। বিয়ে টা একটু দেরিতেই হয় আমাদের। এমনি কোনো
রোমাঞ্চকর গল্পো নেই এর পেছনে, ওই দুজনের পড়াশোনা
শেষ করে,
চাকরি তে ঢুকে নিজেদের একটু স্থাই করে তারপর বিয়ে টা করি।
ওই ধরুন বিয়ের আগে পাঁচ বছরের সম্পর্ক। ওর বাড়িও কলকাতা তেই। আমি ওই দক্ষিণ দিকে
থাকতাম আর ওর বাড়ি পশ্চিম দিকে। বিয়ের পর চার বছর আমরা এক সাথেই থাকতাম, আমাদের কলকাতার বাড়িতেই। ও তখনও ওই স্কুলেই চাকরি করতো আর
আমি অন্য একটা বেসরকারি কম্পানিতেই ছিলাম। বিয়ের তিন বছর পর তিন্নি এলো। আমরা
খুবই খুশি ছিলাম। আমার মা বাবা, আমি, ঋতিকা আর আমাদের পরিবারের ছোটো সদস্য তিন্নি, এটাই আমাদের সংসার ছিলো। এক সাথে বেশ ভালোই কেটেছে চারটে
বছর। তারপর একটা অফার পাই আমি ব্যাঙ্গালোর থেকে, ভালো মাইনে ছিল, তাই ঠিক করি যে এই
কাজেই যোগ দিবো।
একটা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে
আমি। পড়াশোনাতে আগা গোড়া ভালো ছিলাম তাই একটা সংকল্প ছিলো, যে অনেক টাকা উপার্জন করবো। তাই একটু ভালো থাকার আর সবাই কে
ভালো রাখার চেষ্টায় ঋতিকা আর এক বছরের তিন্নি কে বাবা মার সাথে ছেড়ে চলে যাই
ব্যাঙ্গালোর। ভেবেছিলাম ঠিক ঠাক ভাবে সব চললে, সবাই কে নিয়ে আসবো কলকাতা থেকে এখানেই। প্রথম প্রথম কষ্ট হতো সবাই কে ছেড়ে
একা একা থাকতে। আর প্রথম ছয় মাস কোনো ছুটিও দায়নি যে বাড়ি যেয়ে ঘুরে আসবো।
কলকাতা থেকে কারো ব্যাঙ্গালোরে আমার সাথে দেখা করতে যাওয়াও সম্ভব হতো না কারণ
ঋতিকার চাকরি ছিলো তারপর তিন্নিও ছোটো আর সাথে মা বাবা কেও একা ফেলে আসা সম্ভব
ছিলো না। যাই হোক, ছয় মাস পর যাই আমি
বাড়িতে,
তখন সবাই খুব খুশি, প্রথম বার বাড়ির থেকে এতদূর এতদিন ধরে থেকে এলাম। দশ দিনের ছুটি কাটিয়ে আবার
ফিরে যাই। এই ভাবেই বছর কেটে যায় আর মাঝে এক দুবার এসেছিলাম বাড়ি। তারপর
ব্যাঙ্গালোরে দেড় বছর চাকরি টা করার পর নয়ডা তে বর্তমান প্রতিষ্ঠান টাতে যোগ দেই।
এক বছর পর বাড়িতে বলি সবাই মিলে এসে পরতে আমার এখানে, তবে বাবা আর ঋতিকা কেউ রাজি হয়নি, যদিও মা চেয়েছিল আসতে। তারপর তিন্নিও স্কুলে ভর্তি হয় আর
ব্যাস কাউকেই আনা হয়নি আমার ওখানে, মাঝে ঘুরতে এসেছে কয়েকবার ঠিকই। আমিও বাড়ি আসতাম মাঝে মাঝে তবে সময়ের সাথে
সাথে যাওয়া আসা টা কমে গেছে। যেখানে থাকি আর যেমন স্তরে আমার কাজ, সেই জাগজমোকে নিজের জিবনটা সাজিয়ে নিয়েছিলাম। আর কাজের
চাপও বাড়তে থাকে আসতে আসতে। ঋতিকার সাথে ফোনে কথা বলাটাও কমে গেছিলো। আগে দিনে দু
একবার ফোন তো হতই সবার সাথে কথা বলার জন্য আর সময় পেলেই ঋতিকা কে ফোন করে
কিছুক্ষন কথা বলে নিতাম। এখন তো সেই সব কিছুই কমে গেছে। হয়ত দুদিনে একবার ফোন
করতাম আর ওটাতেই সবার সাথে কথা আর মাঝে মাঝে তো সেটাও করা হয়েনা। তবে হ্যাঁ তিন্নি
ফোন করলে আমার কথা বলতেই হতো।
আসতে আসতে সময় পেরিয়ে যাচ্ছিলো আর
আমি দূরে সরে আসছিলাম ঋতিকার থেকে। কেমন যেনো একটা বিরক্তি এসে পরেছিল। এমন না যে
আমি অন্য কোনো সম্পর্কে জড়িয়ে পরে ছিলাম তবে এই সম্পর্কটাও এখন বাঁধন মনে
হচ্ছিলো। আর এক সাথেও তো থাকা সম্ভব হচ্ছিলো না। ও আমার কাছে এসে থাকতে রাজি না
নিজের চাকরি ছেড়ে আর আমার কাছেও কোনো উপায় নেই কলকাতা তে স্থায়ী ভাবে থাকার।
তাই ভাবলাম বিবাহ টা ভেঙ্গে দেওয়াটাই উচিত হবে। তাই বললাম একদিন ফোনেই ওকে।
জিজ্ঞেস করলো "কেনো, হটাৎ কি হলো যে এতো
বড়ো পদক্ষেপ?" বুঝিয়ে বললাম সব কারণ। জিজ্ঞেস
করলো "বাবা মা আর তিন্নির কি হবে?" তখন এই প্রশ্ন টার উত্তর ছিলো না আমার কাছে আসলে অতদুর ভাবিনি তখনও তাই বললাম
"সে নয় একটা কোনো উপায় করা যাবে।" তখন ও বললো "ঠিক আছে আগে সব
ভেবে নাও তারপর জানিও, আমারও একটু সময়
চাই ভাবতে।" আমার মন বদলানোর চেষ্টা ও করেনি ঠিকই তবে ওর গলার আওয়াজটা এবার
একটু ভাঙ্গা ভাঙ্গা হলো, বুঝলাম হয়েতো চোখ
দিয়ে ওর জল পরছে, মনটা খারাপ হয়েছে
কিন্তু বুঝতে দিচ্ছে না আমায়।
তিন দিন ভেবে একটা নির্ণয় নিয়ে
ফোনে কথা বললাম ঋতিকার সাথে। জানালাম ওকে যে ডিভোর্সের পর বাবা মা কে আমি নিয়ে
আসবো আমার কাছে নয়ডা তে আর রইলো তিন্নির কথা, সে নয়ে ওর সাথেই থাকবে আর বললাম যে ও চাইলে আমাদের কলকাতার বাড়িতেই থাকতে
পারে,
মাঝে মাঝে তিন্নি কে দেখতে আসবো কলকাতা তে। আসলে ওই বাড়িতে
বিয়ে হয়ে এসেছিলো প্রথম, এতো বছর ওই
বাড়িতেই কাটিয়েছে, একটা আলাদা মায়া
তে জড়িয়ে পড়েছে তাই আর আলাদা করতে চাইলাম না। সব চুপ করে শুনে উত্তর দিলো
"সবই তো শুনলাম, তোমার ইচ্ছে মতনই
হোক সব শুধু আমার একটা অনুরোধ আছে, সেটা রাখা গেলে ভালো হতো।" আমি জিজ্ঞেস করলাম "বলো কি চাও? চেষ্টা করবো যথা সাধ্য।" ও বললো "বাড়ি টা তুমি
রেখে নিও,
আমি ভাড়া বাড়ি নিয়ে খরচা চালিয়ে নেবো, শুধু বাবা মা কে আমার সাথে থাকতে দাও।" আমি শুনে অবাক
হলাম,
জিজ্ঞেস করলাম "এটা আবার কি ধরনের আর্জি হলো? আমার বাবা মা তোমার সাথে কেনোই বা থাকবেন?" তখন ও বললো " আজ আমাদের বিবাহ ভাঙচ তুমি, বুঝতে পারছি সেটাতে তোমার অধিকার হতেই পারে। তবে গতো ১২-১৩
বছর ধরে আমার বাবা মার সমান স্থানেই এই দুজন মানুষ কে রেখেছি আর আমার বাবা মা চলে
যাওয়ার পর, এই দুটি মানুষ কে জড়িয়ে আছি আমি।
আমার কি এই মানুষ গুলো, এই সম্পর্ক গুলোর
উপরে কোনো অধিকার নেই?" শুনলাম ওর কথা গুলো, কিছুটা বোঝার চেষ্টাও করলাম তবে মা বাবা কে ওর কাছে দিতে
পারলাম না। তাই বলে দিলাম "না এটা সম্ভব না।" তখন ও বলে উঠলো "তবে
এই ডিভোর্স টাও সম্ভব না।" আর ফোন টা রেখে দিলো। মা বাবা অথবা তিন্নি কেউই এই
সবের বিষয়ে জানতো না। জানাইনি কারণ বাবা মার শরীর টা ঠিক থাকে না তাই অযথা
চিন্তায় ফেলতে চাইনা আর তিন্নি তো ছোটো, বুঝবেই বা কি! যাই হোক, আরো এক দুইবার ওকে
বোঝানোর চেষ্টা করলাম তবে ও আর মানলো না তাই নিজের আইনজীবী দিয়ে কাগজ পাঠালাম
ডিভোর্সের ওর কাছে, সই করেনি তাই শেষ
মেষ কেস টা উঠলো কোর্টে। আর সেই সূত্রেই এলাম কলকাতা আর ব্যাস আটকে পরলাম এই
লকডাউনে।
জানি এই লকডাউন টা জরুরি ছিলো খুবই, মানুষ কে সুস্থ রাখতে, ভালো রাখতে। তবে আমার জন্য যেনো এটা একটা বিরক্তিকর দন্ড ছিলো, বন্দী হয়ে গেছিলাম সেই মানুষটার সাথে যার থেকে আলাদা হোওয়ার
জন্যই আমার এখানে আশা। খুব বিরক্ত লাগতো, সারাদিন তাকে চোখের সামনে দেখতে তবে তিন্নি কে সারাক্ষণ কাছে পেতাম তাই সহ্য
হয়ে যেত এই সব। আর বাড়িতে খুব একটা কাজও ছিলো না, সারাদিন ওই মোবাইল, ল্যাপটপ আর মেইল
চেক,
মাঝে মাঝে ছাঁদে জেয়ে ফুল গাছ গুলো কে একটু জল দিতাম আর
একটু সেকটু বাড়ির কাজ করতাম ব্যাস। এই ভাবেই দিন কাটছিলো, হটাৎ একদিন ঘুম ভাঙ্গল একটা চিৎকারের আওয়াজ শুনে, দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে দেখি ঋতিকা পরে আছে সিড়ির শেষে।
তারাহুরো করে গেলাম ওর কাছে, বুঝতে পারলাম ভালই
চোট পেয়েছে বাম পায়ে আর ডান হাতটা তে। হেঁটে যাওয়ার অবস্থায় ছিলো না তাই আমি
কোলে করেই নিয়ে গেলাম ওকে ওর ঘরে। ডাক্তার ডাকলাম, আমার বন্ধুই ছিলো সে, আমাদের পারিবারিক
চিকিৎসক। এলো দিব্যেন্দু আধা ঘন্টার মধ্যেই। দেখেই বললো এক্সরে আর কিছু পরীক্ষা
করাতে। নিয়ে গেলাম আমি আর দিব্যেন্দু মিলে ওকে। তিন্নি আর মা বাবা বাড়িতেই ছিলো।
সব করে ফিরতে ফিরতে তখন প্রায় দুপুর দেড়টা। রিপোর্ট এলো বিকেলে, যা ভেবেছিলো দিব্যেন্দু সেটাই হোয়েছে। ডান হাতের হাড় টা
ভেঙেছে আর বাম পায়ের হাঁটুতে চির ধরেছে। সব মিলিয়ে দাড়ালো যে দুই জায়গা তেই
প্লাস্টার করতে হবে আর ঠিক হতে হতে মোট এক মাস তার আগে কোনো রকম ভারী কাজ করা বারণ
আর বিছানায় সজ্জাসাই থাকতে হবে কম করেও আড়াই সপ্তাহ। সব ওষুধ লিখে দিয়ে আর
খাওয়ানোর পদ্ধতি বলে দিব্যেন্দু চলে গেলো বাড়িতে নিজের। সেদিন দুপুরের রান্না টা
আমিই করেছিলাম। আর তো কেউ নেই করার। আর সেদিন থেকেই ঋতিকা যেই সব কাজ গুলো করতো
সারাদিন,
যত সব ওর দাইত্ব ছিলো সবার প্রতি, সব এলো আমার ঘাড়ে আর সাথে ওর দেখা শোনাও করতে হতো।
আগামী দিন থেকে সময়তালিকা পাল্টে
গেলো আমার। সকালে উঠেই গেলাম ঋতিকার ঘরে। দেখলাম ও জেগে আছে আর মা বসেছিলো ওর
পাশে। কথা বলে জানতে পারলাম, ভোর পাঁচটা থেকেই
নাকি ও জেগে আছে। ওটাই আসলে ওর রোজকার ওঠার সময় আর ওর ওঠার পর, এই সাড়ে পাঁচটা নাগাদ মা ও উঠে পড়েন তবে আজ একটু
তাড়াতাড়ি উঠেছেন। আর ওঠার কারণ টা হলো ঋতিকা। সকালে জেগেই নাকি কাউকে না জানিয়ে
বাথরুম যাওয়ার চেষ্টা করেছিল আর পরে গেছে মেঝে তে আর সেই আওয়াজই মার ঘুম ভেংগে
যায় আর মা ওকে নিয়ে যায় বাথরুমে। এটা দেখে ঠিক করলাম আজ রাত থেকে ওর আর তিন্নির
সাথেই ঘুমাবো নইলে মা কে অযথা বিরক্ত হতে হবে। যদিও মা একটুকুও বিরক্ত হয়নী, বরঞ্চ চিন্তিত ছিলো ওকে নিয়ে। তারপর কিছু ওষুধ দেওয়ার
ছিলো ওকে,
সেগুলো দিয়ে নিয়ে নিজে একটু ফ্রেশ হয়ে ঢুকলাম রান্নাঘরে, মা ও এলো সাহায্য করতে মানা করাতে বললো যে এটুকু সাহায্য
উনি সব সময়ই করেন রান্না করতে। দুজনে রান্নার কাজ টা সেরে তিন্নি কে উঠালাম আর
ওকে ফ্রেশ করিয়ে সবাই মিলে সকালের খাওয়ার টা খেয়ে নিলাম। এরপর বাসন মাজা, কাপড় ধোয়া, ঘর মোছা সবই এক এর পর করতে লাগলাম, আর মা কে বললাম ঋতিকা কে খেয়াল রাখতে নইলে মা কোনো কাজই পুরো পুরি করতে দিতো
না আমাকে। সব কাজের মাঝে হটাৎ নজর চলে যেতো ওর দিকে আর দেখতাম ও তাকিয়ে আছে আমার
দিকে,
মন খারাপ নিয়ে, কারণ ও কোনোদিন আমাকে কিছু করতে দিতো না আর যেই আমার নজর ওর উপর যেত, অন্য দিকে তাকানোর ভান করতো। এই ভাবেই সারাদিন কেটে গেলো।
রাতে খাবার এর পর ঘুমোতে যাই, তিন্নি কেও নিয়ে
আশি আমাদেরই ঘরে, ওকে মাঝে শুইয়ে
দুপাশে সুলাম দুজনে। আজ প্রায় দুই বছর পর এক বিছানায় আমরা। খুব ক্লান্ত ছিলাম
তাই বিছানা তে মাথা রাখতেই ঘুমিয়ে পড়ি। পরে সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখি মাঝে তিন্নি
নেই চলে গেছে ঠাম্মা আর ঠাকুর্দার কাছে, বিছানায় ছিলাম শুধু আমি আর ও। উঠে পরলাম দেরি না করে আর শুরু একই সেই
সময়তালিকা হিসেবে কাজ করা। আজ রাত থেকে তিন্নি ঘুমাতো না আমাদের সাথে, শুধু আমি আর ওই শুতাম একসাথে। এই ভাবেই দিন গুলো পেরোতে
থাকলো,
একদিন, দুইদিন, তিনদিন করে এক সপ্তাহ। রোজ ভোরে ওঠা, সবার জন্য কাজ করা আর ক্লান্ত হয়ে বিছানায় পড়ে যাওয়া।
খুব বিষণ্ণ লাগতো মাঝে মাঝে। আর বুঝলাম আসতে আসতে এই কিছুদিনেই আমার এই অবস্থা আর
মানুষটা তো কতো বছর থেকে এই সব করছে আর সাথে নিজের চাকরি টাও সামলাচ্ছে। জানেন
সেদিন থেকে একটা আলাদা শ্রদ্ধা জন্মালো ওর প্রতি। সেই যে আমাদের কলেজের অপরিপক
ভালোবাসাটা ছিলো, তারপর বিয়ে তারপর
সেই ভাবে সম্পর্কটাকে সময় টাই দিয়ে ওঠা হয়নী পূর্ণতা পাওয়ার, যদিও বেশির ভাগ দোষ টা আমারই ছিলো, সেই সময় টা মনে হলো যেনো সম্পর্কটা এখন পাচ্ছিলো।
দিন পেরোতে রইলো আর তার প্রতি
ভালোবাসা টা যেনো ফিরে ফিরে আসছিল আমার মনে। সেই দিন গুলো, সেই সময়গুলো ভেসে আসছিলো যখন ভালোবাসায় মিলে মিশে একাকার
ছিলাম দুজনে। মনে মনে ঠিক করলাম ফিরবো না নয়েডা তে আর। ওই কাজটা ছেড়ে, কলকাতাতেই কোনো কাজ খুঁজে নেব। সময় লাগবে একটু আর বেতন টাও
হয়তো মনের মতন পাবো না তাও যেটুকু ব্যাংকের খাতায় আছে সেটুকু তে চলে যাবে। আর এই
লকডাউন এটাও শিখিয়েছে যে আমাদের রোজকার জীবিকা তে জরুরি জিনিস গুলোর আর্থিক মূল্য
যথেষ্ট কম, অর্থ তো আমরা খরচ করি নিজেদের
সদাম্ভিক জীবিকার সামগ্রী গুলোতে। এটা মনে ভেবে রাখলাম তবে ওকে বলার সাহস টা
যোগাতে সময় লেগেছে অনেক। ভালোবাসা যখন ছিলোনা এই ভয়টাও ছিলো না আর এখন ভয়টা এসেছে
কারণ ভালোবাসা টা ফিরে পেয়েছি। ভয় টা ওর থেকে না, ওকে হারানোর ভয় এটা।
দেখতে দেখতে ঠিক হয়েগেলো ও। এখন
যথেষ্টই ভালো, নিজের সব কাজ আবার সামলে নিচ্ছে, তবুও যেটুকু পারি হাতে হাতে ওর সাহায্য করি, ও মানা করে তবে এই সাহায্যর ছলেই হোক, ওর কাছাকাছি থাকতে পারি আর ওর কিছুটা আরাম হয় তাই করি। এখনো
এক সাথেই সুই। হটাৎ একদিন সোয়ার সময় আর নিজের মনের কথা আটকাতে পারলাম না, ভেঙ্গে পরলাম, কেঁদে ফেললাম, আর আমার চোখে জল
দেখে জড়িয়ে ধরলো ও আমাকে, জিজ্ঞেস করলো
"কি হয়েছে? কাঁদছো কেনো এই ভাবে হটাৎ?" আমি বললাম "আর পারছি না, তোমাকে ছেড়ে, তোমার পাশে থেকেও
তোমার থেকে কতো দূরে সরে গেছি আমি নিজের ভুলে। পারছি না আর।" আমার মাথায় হাত
বুলিয়ে বললো "তোমার জীবন, তুমি যেই ভাবে চাও
বাঁচতেই পারো, তুমি বিয়ে করেছ বলেই যে আমার সাথে
সারাজীবন থাকতে হবে সেটাতো জরুরি না, তুমি আলাদা হতে চাও যেতেই পারো। সেটা তো দোষের কিছুনা।" ওর কথা গুলো শুনে
যেনো আরো ভেঙ্গে পরলাম নিজেকে আরো ছোটো মনে হলো এই মানুষটার কাছে। শেষে বললাম ওকে
"আমি তোমাদের সাথে থাকবো, চাইনা আমার ডিভোর্স, চাইনা টাকা, শুধু তোমাদের নিয়ে থাকতে চাই। এখানেই একটা কাজ খুঁজে থেকে যাবো। একসাথে থাকবো, বলো রি তুমি থাকবে
তো আমার সাথে?" এটা শুনেই ও আমায় ছেড়ে একটু
দূরে সরে বসলো। ওর চোখটাও ভেজা তবে মুখে কিছুই বললো না। জিজ্ঞেস করলাম আবার
"বলো না রি তুমি থাকবে তো আমার সাথেই?" কিছুক্ষন পর উত্তর দিলো "না। আমি থাকতে পারবো না তোমার সাথে।" আমি
কারণটা জিজ্ঞেস করতেই বলে উঠলো "তুমি যা বলেছ, যেই নির্ণয় নিয়েছো এই সম্পর্ক টা নিয়ে নিজের ব্যাপারে ভেবে আমি সেটাতেই রাজি
ছিলাম। আর আজ আমি নিজের জীবনের নীর্ণয় নিয়ে নিয়েছি আর আমি চাইনা এই সম্পর্ক টা
রাখতে। আশা করি তুমিও জোর করবে না আমায়।" এই কথা টা শুনে আর কি বা বলতাম ওকে
আমি। ঠিকই তো বলছে ও, আমার জীবনের
নির্নয়গুলো নেওয়ার অধিকার আমার থাকলে ওর ও অধিকার আছে নিজের জীবনের মির্ণয় গুলো
নেওয়ার। যদিও জানি ও খুব অভিমান করে আছে আমার উপর, এটাও হতে পারে যে ওর আত্মমর্যাদাতে অনেক খানি আঘাত লেগেছে আমার কথায় অথবা ওর
আমার প্রতি ভালোবাসাটা আজ কোথাও হারিয়ে গিয়েছে। কারণ টা যেটাই হোক, অসম্মান করবো না ওর কথার আমি শুধু প্রার্থনা করছি ওর আমার
সাথে থেকে যাওয়ার। আর যদি না থাকে তাহলে এই লকডাউন টা যতদিন আছে, নিজের এই সুবর্ণ মুহূর্ত গুলো উপভোগ করে নেই। শেষে কি হবে
এই সম্পর্কটার পরিণতি আমি জানিনা তবে ঋতিকা কে আজীবন ভালোবেসে যাবো আর থাকবো ওর
আসে পাশেই, নিজের সব দাইত্ব গুলো পালন করবো ওর
প্রতি। ভালো রাখবো ওকে।
চুম্বক- (মিষ্টু ঘোষ)
Edit Posted by নেট ফড়িং with 1 comment
চুম্বক
মিষ্টু ঘোষ
সুখ সুখ কষ্টের শিকার হতে হতে মনে উই পোকার ঢিবি তৈরী হয়েছে,
হেমন্তের রেশ কেটে গিয়ে রাতে শীতের চাদর মুড়ি দিয়ে সকালের শিশির চুমু খায়
ঘাসের বুক,
দাম্ভিক সূর্যের অহংকার ফিকে হয়েছে কুয়াশার আড়ালে,
সুদীপ্ত নরম ব্ল্যাঙ্কেট ছেড়ে কোনদিন শীত অনুভব করেনি,করতে চায়নি,
খেয়া রোজ ভোরে শিশির দেখে,গানের রেয়াজ সেড়ে ছাঁদে গিয়ে ভোরের আলো মাখে গায়ে।
এই সাদামাটা মেয়েটা ঠিক সুদীপ্ত র বিপরীত।
পছন্দ,স্বভাব কিছুই মেলে না তাদের।
তবুও চুম্বকের মতো আকর্ষণ তীব্র তাদের।
Jun 24, 2020
"পাপি তারা" (স্বপন কুমার রায়)
Edit Posted by নেট ফড়িং with No comments
পাপি তারা
স্বপন কুমার রায়
আজ বড়ো একা লাগে,
রাতটাও বেশ বড়ো
অন্ধকারের ঘনত্ব আগের চেয়ে অনেকটাই ভারী,
আকাশে যে কয়টা তারা দেখে অনুপ্রেরনা পেয়েছিলাম।
সে গুলো যে পাপি তারা বুঝতে একটুও অসুবিধা হচ্ছে না ;
বর্ণমালা সাজিয়ে মায়ের অব্যক্ত কথা গুলো বলতে চেয়েছিলাম,
আজ মায়ের চোখে জল !
বলা হল না-
বর্ণমালা ঠিকরে বের হওয়া শব্দে ডিনামাইট ফাটানোর
আওয়াজ,
নতুন সূর্য্যের অপেক্ষায় থাকা বৃথা।
ভোর হতে না হতেই নতুন সূর্য্যের গর্ভপাত,
রক্তে ভেজা মায়ের আভরন ;
আমি দুহাতে অন্ধকার ঠেলে দেখি একসঙ্গে অজস্র কালো হাত ধেয়ে আমার দিকে,
আমি সখ্যতা করি শামুকের সাথে,
বেঁচে যাই পাপি তারা হয়ে।
Jun 23, 2020
"তুই-আমি" (সৌগত রাণা কবিয়াল)
Edit Posted by নেট ফড়িং with No commentsJun 22, 2020
পুরুষ- (তমালিকা গাঙ্গুলী)
Edit Posted by নেট ফড়িং with No comments
পুরুষ
তমালিকা গাঙ্গুলী
সব পুরুষেরা সমান হয় না।
হাতে গোনা কয়েকটা পুরুষের কিছু ভুল
এর জন্যে;
আমরা নির্ভয়ে কটুক্তি করি সেই
"জাত"কে।
আমাদের সৃস্টিতে যাদের সমান অবদান,
ভুলে যাই সেই মানুষগুলোকে,
যারা সম্পর্কে আমাদের সন্মান, পিছুটান, কর্তব্য।
সত্যি কি এর দায় আমরা এরাতে পারি?
বাস্তবটা হল এড়িয়েই তো যাই,
৯মাস গর্ভে ধারণ করে,
যেমন আমরা মেয়ে রা, "মা" হই।
তেমনি আঙুল ধরে হাটতে শিখিয়ে
একজন ছেলেও "বাবা" হয়।
কই তবু ওদের নিয়ে তো কবিতা লেখা হয় না
!
আসলে যেই শব্দ গুলো চোখ দিয়ে অনুভব
করি,
সেগুলো দিয়ে নারীসত্বা বিচার হয়।
আর যেই শব্দেরা লুকিয়ে থাকে আন্তরিক
শ্রদ্ধায়।
তা দিয়ে রোজ লেখা হয়
"পুরুষ" নামক কবিতা।
Jun 21, 2020
নেট ফড়িং সংখ্যা- ১৪৬
Edit Posted by নেট ফড়িং with No commentsJun 18, 2020
স্ব-জন- (আবির গাঙ্গুলী)
Edit Posted by নেট ফড়িং with No comments
স্ব-জন
আবির গাঙ্গুলী
টুকরো কাগজে লেখা এক ছোট্টো চিরকূট
ফেলে দিয়েছি আজ।
যেন কিছুটা শান্তি পেলাম,
খুব অদ্ভুত এই পৃথিবী !
যেখানে পরিবারের শুরু দুজন-
একটি পুরুষ ও নারী।
জীবনের যাত্রাটাও যেন অদ্ভুত !
মাতৃক্রোড়ে জন্ম কোনো পোশাক ছাড়াই
আবার চিতার জ্বালানি,
কবর বা কফিনে
এই নগ্ন শরীর মৃত্যুর পূর্বেও।
যদিও বা জ্বালানিতে নিঃশেষ হয় মৃতদেহ।
তবুও কিছু স্মৃতি ও স্পর্শ তো রয়েই যায়।
ভাবলে অদ্ভুত লাগে যে,
এখানে প্রত্যেক প্রাণীরই অধিকার ও কর্তব্য দুইই আছে।
কিন্তু নিজের জন্য নয়
তার পরিবারের জন্য।
এই পৃথিবী বা বিশ্বে
নিজের বলতে কিছুই নেই
সবকিছুই অপরের জন্য।
আদুরে আলাপ- (মিষ্টু ঘোষ)
Edit Posted by নেট ফড়িং with No commentsJun 12, 2020
অন্ধকার রপ্ত করে নিয়েছি- ( মিষ্টু ঘোষ )
Edit Posted by নেট ফড়িং with No comments
অন্ধকার রপ্ত করে নিয়েছি
মিষ্টু ঘোষ
রোজই রাতে ঘুমাতে দেরি হয়।
মাঝে মধ্যে ভাবি এতো কম ঘুমিয়ে মানুষ বাঁচে ?
নিশ্বাস গুলো প্রশ্বাসের চেয়ে দ্বিগুণ গতিতে।
এতোটা অন্ধকার রোজই আমায় গিলে খায়,ওদের ছুটিছাটা নেই নিয়মিত।
নাইট বাল্বের আলোটা আমার অসুখ গুলোকে স্পষ্ট করে দেখায়।
ঐ ঘড়ির কাটার শব্দটা বড্ড একঘেয়ে,
মাঝে মাঝে সেটাকে হাতুড়ির প্রহার বলে মনে হয়।
টিকটিক করে যেন চিৎকার দিয়ে আমার ঘুমহারা রাতের জয়ধ্বনি করে।
মাঝে মাঝে স্বপ্ন আসে যদিও সেটাকে দুঃস্বপ্ন বলাই শ্রেয়।
আরও অন্ধকার আমায় গ্রাস করেছে,
গিলে নিচ্ছে রোজ একটু একটু করে আমার নিশ্বাস প্রশ্বাস,আমার সুখ।
আর অসুখ গুলো শরীর টাকে নিংড়ে রোজ আমায় ভোগ করছে।
সব থমকে যাবার আগে কলম তুলে নি।
ওখানেই যে আমার মুক্তি,
শক্তি।
একটা টাটকা সকাল,অনেক আলো,পাখির ডাক,সব বলে ওঠে সুখি হ,আরও বেঁচে থাক।
সব অসুখ আর অন্ধকার রাতকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দীর্ঘজীবি হ,
জানলা খুলে যে বাতাসটা মুখে এসে লাগে সেটা ক্যাপসুল আর অসুখের মুখে ঝামা
ঘষে দেয়।
Jun 7, 2020
নেট ফড়িং সংখ্যা- ১৪৪
Edit Posted by নেট ফড়িং with No comments
Subscribe to:
Posts (Atom)