Jun 11, 2021

"তা সে যতই কালো হোক" - মিলন পুরকাইত

Edit Posted by with 2 comments

 


তা সে যতই কালো হোক

মিলন পুরকাইত

 

আমাকে দেখতে বড্ড খারাপ ছিল। বেশ কালো আর মুখশ্রী... না না কালো মেয়ের রূপ গুণের বিচার আলাদা দাঁড়ি পাল্লায় হয় তাই সে কথা থাক।

দুই বোন এক ভাই ছিলাম আমরা। দিদি রূপে গুণে একেবারে লক্ষী সরস্বতীর মতো ছিল। দাদাই তো ছেলে তাও সে খুব ফর্সা খুব লেখাপড়ায় ভালো ছিল।

বাকি আমি !! তো সবাই বুঝিয়েই দিতো কিন্তু কি আর করা যায়।

একমাত্র বাবাই আমাকে বড্ড ভালোবাসতো। আমাদের সংসারটা মোটামুটি বাবার আয়েই চলতো।

বাবার সব চেয়ে বড় দিদি বিধবা হবার পরে এ সংসারে তখন এসেছিল যখন আমি খুব ছোট। জেঠু-জেঠিমা একতলায় থাকতো, আলাদা রান্না খাওয়া হলেও তাদের ভারও বাবার ওপরই বেশিটা ছিল।

কারণ জেঠু যে কারখানায় ক্যাশিয়ারের কাজ করতেন সেটা বছরের ছ'মাস বন্ধ থাকতো কেন কে জানে। পিসি নিঃসন্তান ছিল  আর সারাদিন সংসারের কাজে মার সাথেই লেগে থাকতো।

বাবা খুব গুরু গম্ভীর মানুষ ছিল। অফিস যাওয়া আর বাড়ি আসা আর ফিরেই খবরের কাগজ বা বই মুখে বসে থাকা।

কেউ বিশেষ ঘেঁষতো না বাবার কাছে। অথচ আমি হা পিত্যেস করে বসে থাকতাম কখন ফিরবে বাবাই। আমার সারাদিনের গল্প, স্কুলের, দিদি-দাদার নামে নালিশ, সব নিয়ে আমি বসে থাকতাম বলবো বলে।

সব শুনে ডাক পড়তো তাদের।

কিছুই তেমন বলতো না বাবাই। শুধু যেদিন আমি লাল ফ্রক নেবার জন্য বায়না করেছিলাম আর জেঠি হেসে বলেছিল "এখানে যা করছিস করে নে, বিয়ের পর যেন শাশুড়ির কাছে আবদার করিস না আমাকে লাল শাড়ি কিনে দাও যেমন আমার কাছে করেছিলি" আর বলে খুব হেসেছিল ওরা সবাই মিলে সেদিন বাবাকে সব বলার পরে কেমন থমকে গেছিলো বাবা।

আর একটু পরে নিজের স্বভাব-বিরুদ্ধ কাজ করেছিল। চটি পরে আমার হাত ধরে নিজের বড় দাদার ঘরের দরজায় পৌঁছে গেছিলো।

জেঠিমা শাঁখ হাতে ঠাকুরের সামনে বসেছিল আর জেঠু কি জানি কি বলছিল। আমার বুকের মাঝে ধড়াস ধড়াস করছিল আর মন বলছিল কিছু একটা খারাপ হতে চলেছে।

জেঠুর মেয়ে অনেক বড় ছিল আমার থেকে। কলেজের শেষ পড়া চলছিল তার তখন। কিন্তু কে জানে কেন ঝুমদি আমাকে খুব ভালোবাসতো। আমাদের দেখে একলাফে বাইরে এসে আমার হাত ধরে টেনে ভেতরে নিয়ে যেতে বললো "ও মা ও বাবা, কাকাই এসেছে আর তোমরা নিজেদের মধ্যে কি জানি কি কথা বলে চলেছো"

জেঠু-জেঠিমা মনে মনে কতটা বাবাকে পছন্দ করতো তা জানতাম না কিন্তু সামনে খুব ভালো ব্যবহার করতো।

বাবা কিন্তু এক পাও ভেতরে না রেখে খুব আস্তে আস্তে বললো "আচ্ছা বৌদি কোনদিন কি আমি বা আমার ছেলে-মেয়েরা তোমাকে কোন অসম্মান করেছে। সত্যি করে বলো তো ! আর মিতা ও তো তোমাকে নিজের বড় দিদির মতো ভালোবাসে। আজ তুমি মিমিকে যা বলেছো সেটা ও তোমার মেয়ে নয় বলে তাই না! আর একটা কথা বৌদি তুমি যেদিন বিয়ে করে এ বাড়ি এসেছিলে আমার মাকে তো সবাই বলেছিল, ওমন ফর্সা ছেলের এই এত শ্যামবর্ণ মেয়ে ! তোমার মনে আছে বৌদি আমার মা কিন্তু তীব্র প্রতিবাদ করেছিল সেদিন "বলেছিল মানুষের রং রূপ কতদিন থাকে, থাকে তার গুণ, তার স্বভাবের মিষ্টতা তাই না !

আজ বড্ড কষ্ট পেলাম তোমার ব্যবহারে"

দাঁড়ায়নি বাবাই আমার হাত ধরে ফিরে এসেছিল নিজের ঘরে।

জেঠি আর জেঠু তারপর অনেক কিছু বলেছিল যদিও কিন্তু বাবা তারপর থেকে আর কোনদিন স্বাভাবিক হয়নি সেটা সবাই জানতো।

ধীরে ধীরে বড় হচ্ছিলাম আমরা আর ঝুমদি সবার বড় হওয়ায় বিয়ে হয়ে যখন শ্বশুরবাড়ি চলে গেলো তখন আমি স্কুলের পড়া সবে শেষ করেছি।

রিয়া আমার দিদি আর ঝুমদি কিছু ছোট বড় ছিল বয়েসে।

জেঠিমা, জেঠু দু’জনেই ছেলেদের ভালোবাসতো। মেয়েরা যতই লেখাপড়া করে নিক আর কত বড় বড় চাকরি করুক না কেন তবু মেয়েরা তো মেয়েই হয়, ছেলেদের সাথে তাদের তুলনা করা একেবারে বৃথা এটাই মত ছিল দু’জনেরই।

আমার মা আর দিদি যদিও ওই আলোচনায় তেমন থাকতো না তবু কেমন যেন মনে হতো ওরা ওটাকেই সমর্থন করছে।

ঝুমদি বিয়ে হয়ে চলে যাবার পরে জেঠিমা বড্ড একা হয়ে গেছিলো। আমার দিদি নিজের পড়া আর আসন্ন বিয়ের কথা ভেবে নিজের রূপচর্চার পেছনেই বেশী সময় দিতো।

আমার কলেজে ভর্তির পরেও তখন ক্লাস তেমন শুরু না হওয়ায় আমি যখন তখন "ও মামণি কি করছো" বলে পৌঁছে যেতাম। খুব ছোট থেকেই কেন জানি না আমি জেঠিকে মামণি বলেই ডাকতাম।

ঝুমদি চলে যাওয়ার পরে কেমন যেন মনে হতো জেঠিমা আমার পথ চেয়ে বসে থাকতো।

প্রথম প্রথম যদিও তেমন কিছু বলতো না, নিজের মনে কাজ করতো, পরে একটু একটু করে বদলে গেছিলো জেঠি।

আমার পছন্দের খাবার বানিয়ে রাখতো, কখনো বা আমি গেলেই বলতো "যা না তোর মা আর দি'কেও ডেকে আন, আজ চা'টা সবাই মিলে এখানেই খাবো ভেবেছি !"

বাবা কিন্তু সেই সেদিনের পর থেকে মোটেই আর বদলায়নি। নিজের দায়িত্ব কর্তব্য সব করলেও বাবা একটু দূরে দূরেই থাকতো নিজের বৌদির থেকে। এমন নয় যে কথা বলতো না, বলতো কিন্তু তাতে প্রচ্ছন্ন অভিমান লুকিয়ে থাকতো।

বিয়ের পর ঝুমদির আসা যাওয়া একেবারেই ছিল না বললে চলে।

ফোনেও তেমন কথা হতো না কারো সাথে। আমাকে মাঝে মাঝে ফোন করে কথা বলতো দি। যেই বলতাম "কবে আসবি 'দি !"

একটু চুপ করে থেকে বলতো

"মা-বাবা তো নিজের ছেলেকেই ভালোবাসে, কই আমাকে তো একবারও ফোন করে না তারা !"

এমন দিনেই জেঠির বড্ড শরীর খারাপ হলো। কি যে হলো কেউ বুঝতে পারছিল না। ডাক্তার ওষুধ সব চলছিল আর আমি সেই প্রথম দিন থেকেই জেঠির কাছে থেকে গেছিলাম।

মা, বাবা কোনদিন আমাদের কোন কাজে বাধা দেয়নি এবারও দিলো না।

ওপর থেকেই রান্না করে মা সব পাঠিয়ে দিতো। রিয়া'দি মাঝে মাঝেই আসতো কিন্তু আমি নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে ওই জেঠির পাশেই থাকতাম।

দিন কাটছিল আর আমার কলেজ যাবার দিন এগিয়ে আসছিল। মা দেখা শোনা তেমন ভাবে করতে পারবে না বলে পিসির ওপর জেঠিকে দেখার ভার এসে পড়লো।

ভালো ছিল পিসি কিন্তু দু'জনের একদম বনি-বনা হতো না।

হাঁড়ির মতো মুখ করে পাশ ফিরে শুয়ে থাকতো জেঠি, পিসিও অন্যমনে নিজের বই বা সেলাই নিয়ে বসে থাকতো।

আমি কলেজ থেকে ফিরেই কিছু না খেয়েই পৌঁছে যেতাম জেঠির কাছে। পিসি যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচতো। সোজা উঠে ওপরে নিজের ঘরে পৌঁছে যেত।

বছর ঘুরে আবার নতুন বছর আসার আগেই আমার বিয়েটা হঠাৎ ঠিক হয়ে গেলো।

আমি শুধু না আমার বাড়ির লোকেরাও খুব অবাক হলো যখন অভিমন্যুর মতো এত হ্যান্ডসাম ছেলে রাজি হয়ে গেছিলো আমাকে বিয়ে করতে।

ছোট্ট পরিবারে অভিমন্যু ওর বাবা মা আর ওর ঠাকুমা থাকতো।

মেয়ে দেখতে ওর ঠাকুমা এসেছিল ওর বাবার সাথে।

সেদিন জেঠির শরীরটা বড্ড খারাপ ছিল। ঝুমদি এসেছিল আমাকে দেখতে আসবে শুনে। মা আর রিয়া'দি বারবার তাড়া দিচ্ছিলো আমাকে

"মিমি চল, ফেসপ্যাকটা লাগিয়ে নে, আর সময় নেই, ওরা পাঁচটা বাজলেই এসে পড়বে"

কিন্তু আমি যতবার জেঠিকে ঘুম পাড়িয়ে ঝুমদি আর পিসিকে বলে উঠতে যাচ্ছিলাম, জেঠি আমার আঙ্গুল শক্ত করে ধরে বলে উঠছিলো

"যাস না আমাকে ছেড়ে মামণি"

জ্বরের ঘোরে ভুল বকছিলো জেঠি। আজকাল রাতে দিনে যখনই বেশি শরীর খারাপ হতো জেঠি আমাকে মামণি বলেই ডাকতো কেন কে জানে !

একটু পরেই বাবাইকে দৌড়ে আসতে দেখেই বুঝে গেছিলাম, ওরা এসে গেছে কিন্তু আমার তো কিছুই করার উপায় ছিল না।

আমি কোন মেকআপ ছাড়াই বসে ছিলাম জেঠির পাশে।

আমার কালো কোঁচকানো চুল এলোমেলো হয়ে আমার কপালকে প্রায় ঢেকে রেখেছিল। চান করে সেদিন চার বছর আগে জন্মদিনে বাবাইয়ের দেওয়া লাল কুর্তি আর সাদা স্কার্ট পরেছিলাম আমি।

মা আর ঝুমদি মিলে আমার জন্য রানী রঙের সিল্কের শাড়ি আর গয়নাগাটি বের করে রেখেছিল পাত্রপক্ষের সামনে পড়ার জন্য। কিন্তু সেসব কিছুই আর পরা হয়ে ওঠেনি।

আমার কানে সব সময়ের পরে থাকা সেই লাল ডালিম পাথরের অল্প ঝোলা দুল আর গলায় তেমনই পেন্ডেন্ট ছিল। হাতে সেই ঠাম্মির দেওয়া সরু সোনার বালা ব্যস আরেক হাত একেবারে খালি।

বাবাইয়ের পেছনে এক এক করে সবাই ঢুকলো ঘরে। আমি জেঠির হাত ছাড়িয়ে উঠতে যাবার আগেই অভির ঠাম্মি বারণ করলো আমায়

"না না উঠো না। ওনার ঘুম ভেঙে যাবে !'

অভি দেখলো আমায় এক পলক। কে জানে কেন আমাকে তো এর আগেও কেউ পছন্দ করেনি তাই জানতাম এটাও তেমনই কিছু হবে।

আমি তো বড্ড কালো, আমি সাজতেও ভালোবাসি না।

তাই আমি নির্দ্বিধায় জেঠির হাতের থেকে হাত একটু ছাড়িয়ে হাত জুড়ে নমস্কার করেছিলাম।

কিন্তু পরে জেনেছিলাম শেষ বিকেলের কনে দেখা আলো সেদিন জেঠির ঘরের পশ্চিমের জানলার পর্দা ছুঁয়ে ছুঁয়ে আমার মুখে নাকি কি একটা অপরূপ আলো ছুঁইয়ে দিয়েছিল।

আমার খোলা এলোমেলো কোঁচকানো চুলের মাঝে অভির ঠাম্মি নাকি নিজের কমবয়সের 'আমি'টাকে খুঁজে পেয়েছিল।

বিয়েটা হলো আমার ঠিক একবছর পরে কারণ রিয়া'দির বিয়েটা অনেক বছর ধরেই ঠিক ছিল ওর কলেজের বন্ধুর সাথে। বাবাই শেষ পর্যন্ত রাজি হতেই দি আর শুভাশিসদার বিয়েটা হয়ে গেলো।

জেঠি সুস্থ হলেও আমাকে কাছ ছাড়া করতে চাইতো না তেমন করে ।

"আর কদিন পরেই তো চলে যাবি আমাদের ছেড়ে তোর ওই নতুন সংসারে, আর তো এসে থাকবি না এমন করে, এই কটা দিন আর ওপর নীচ না করে আমার কাছেই থাক না হয় !" সারাক্ষণ এটাই বলতো জেঠি।

বিয়ের কেনাকাটা দিদিরা আর বাবাই করেছিল। গয়না মা আগেই তৈরি রেখেছিল নিজের দুই মেয়ের জন্য।

বিয়ের আগের দিন জেঠির ঘরেই আইবুড়ো ভাত খেয়েছিলাম আমি।

নিজে বসে সমস্ত রান্না করেছিল জেঠি আমার জন্য। কারোকে হাত লাগাতে দেয়নি তাতে তেমন করে রিয়া'দি ছাড়া।

সবার খাবার শেষে বাবাইয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল জেঠি। হাতে মস্ত বড় দু দুটো প্যাকেট দেখে বাবাই অবাক হয়ে সব ভুলে সেই আগের মতোই বলেছিল

"কি আছে গো বৌদি, আমার জন্য উপহার এনেছো তুমি !"

কেঁদে ফেলেছিল জেঠি আর প্যাকেট বাবাইয়ের হাতে ধরিয়ে বলে উঠেছিল

"ক্ষমা করে দিও ঠাকুরপো। সেই একদিনের কথা শূল হয়ে বিঁধে আছে তোমার বুকে জানি। কিন্তু বৌদিরা তো মা হয় তাই না। ক্ষমা করে দিও আমাকে !'

প্যাকেটে কি ছিল তা বিয়ের দিন আমি জেনে ছিলাম...

লাল টুকটুকে বেনারসি শাড়ি আর অন্য প্যাকেটে জেঠির নিজের বিয়ের জড়োয়ার হার। লাল ছোট ছোট পাথরে সাজানো সে হার আমার ছোট থেকেই খুব পছন্দ ছিল।পাশে এসে বলেছিল জেঠি " মিমি পছন্দ হয়েছে তো !"

সাজাতে সাজাতে ঝুমদি ফিসফিস করে কানে কানে বললো

"ইশ এই হারটা মা তোকে দিয়ে দিলো, আমাকে দিলো না"

আমি গলা থেকে খুলতে যাচ্ছিলাম, মারলো দি আর ঝুম'দি আমার পিঠে।

"সব সময় খুব ভালো সাজতে ইচ্ছে হয় তাই নারে ! চুপ করে বসে থাক, বর এলো বলে !'

বিয়ে করে চলে আসার আগে কাঁদিনি আমি, আসলে কোন মেয়েরাই কাঁদে না মনে হয়। ওটা কান্না নয় আসলে...

একটা গাছকে নিজের চেনা চেনা জায়গা ছেড়ে শুধু একটা অচেনা জায়গায় নতুন মাটিতে বসিয়ে দেওয়া !

একটা একটা করে শেকড় ছিঁড়ে যায় কেউ জানতে পারে না, কেউ স্পর্শ করতে পারে না তার কষ্ট।

অন্য জায়গায় আলো হাওয়া ভালোবাসা পেয়ে কেউ কেউ খুব সুন্দর হয়ে যায় আর কেউ বা কিছুদিন বেঁচে একটু একটু করে শুকিয়ে মরে যায়।

অভিকে প্রশ্ন করে ছিলাম বৈ কি

"এত সুন্দর সুন্দর মেয়ে থাকতে এই কালো মেয়েটাকে কেন পছন্দ করেছিলে তুমি ! জানো সত্যি বলছি আমি খুব অবাক হয়েছিলাম "

অভির বাড়ির ছাদে, বারান্দায় গাছের ভিড়ে আমি নিজের একটা কোনা বানিয়ে নিয়েছিলাম আমার মতো করে, শেকড় ধীরে ধীরে ছড়িয়ে আমি নাকি সুন্দর হয়ে উঠছিলাম...

গোধূলির আলো সেদিনও আমার মুখে পড়েছিল বোধহয়। আলতো হাতে আমার কপাল থেকে চুল সরিয়ে অভি বলেছিল

"সেই ছোট থেকেই ঠাম্মির মুখে শুনে এসেছি রঙ রূপ সে তো মনের আয়না। অন্তরের আলো যখন হৃদয়ে নিজের জলছবি আঁকতে থাকে, সেই আলো মানুষের চোখে মুখে তার ছাপ ফেলে , তুমি যে কত সুন্দর তা তুমি আমার চোখে দেখে নিও !"

দূর ! আমি এত সব বুঝি না !

আমি শুধু জানি, নিজের মনের আলোয় অন্যকে একটু পথ দেখানো গেলে তাতে ক্ষতি কি !

আমি কালো, বড্ড কালো কিন্তু কি করি ওই ভালো হবার ইচ্ছেটা যে সেই ছোটথেকেই।

এই দেখো না বলতেই ভুলে গেছি ওই লাল বেনারসি আর জড়োয়ার হার পরে জেঠির পা ছুঁয়ে যখন বলেছিলাম " সাবধানে থেকো মামণি, আমি কিন্তু খুব চিন্তায় থাকবো তোমাকে নিয়ে!"

জেঠি কেঁদেছিল খুব, খুব জোরে।

বলেছিল "মামণিকে ক্ষমা করে দিস সোনামা !"

আমি কিন্তু দেখছিলাম, তিন বছরের একটা কালো মেয়ে পুজোর অষ্টমীতে লাল বেনারসী আর জড়োয়ার হার পরা জেঠির গলা জড়িয়ে কোলে বসে বলছে

"তুমি তো আমার মামণি, ঠিক এমন লাল শাড়ি আর হার দেবে গো আমাকে "

বড় হয়ে সবার মুখে হাজার বার শুনেছিলাম সে কথা।

সব ভাবতে ভাবতে

আমি হাত ছাড়িয়ে ধীরে ধীরে চৌকাঠ ডিঙ্গিয়ে বাইরে বেরিয়ে বাগানের অনেক গাছের মাঝখান দিয়ে আলতা পায়ে চলে গেছিলাম টুকটুকে লাল বেনারসী পরে অভিমন্যুর সাথে... অনেক গুলো শেকড় নিঃশব্দে ছিঁড়তে ছিঁড়তে...

শত সহস্র হাজার হাজার মেয়েদের মতো... একটা ছায়া ছায়া মাটির সন্ধানে... বাকি জীবনটার জন্য !


2 comments: