May 31, 2020

ভাগ‍্য

Edit Posted by with No comments


ভাগ‍্য
আবদুস সাত্তার বিশ্বাস

আজ দুপুরে ডাকে একটা চিঠি পেয়েছে শেফালি।তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিঠি। শেফালি ডাকে আগেও অনেক রকম চিঠি পেয়েছে।সেগুলোর চাইতে এটার গুরুত্ব তার কাছে অনেক বেশি।খামের মুখ কেটে চিঠিটা বের করে পড়ে দেখার পর সেটা বুঝতে পারল শেফালি।তারপর তার মনে আনন্দ ধারা বইতে শুরু করল।একটা মহকুমা হাসপাতালে তার  চাকরি হয়েছে।মাস সাতেক আগে সে একটা নার্সের চাকরির পরীক্ষা দিয়েছিল।এটা তারই চিঠি।সুতরাং এর চাইতে গুরুত্বপূর্ণ চিঠি তার জীবনে আর কি হতে পারে?
এপ্রিল মাসের আজ ঊনত্রিশ তারিখ হল। আগামী মাসের দশ তারিখ পর্যন্ত শেফালির চাকরিতে জয়েন করার কথা চিঠিতে লেখা আছে। কিন্তু শেফালি অত দূর গেল না।পরের দিন ত্রিশ তারিখেই সে চিঠিটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল।ব‍্যাগের ভিতর ভরে নিয়ে।কিন্তু বাসে সিট না পেয়ে ব‍্যাগ নিয়ে দাঁড়াতে তার ভীষণ কষ্ট হল।দেখে কন্ডাক্টর বলল,"ম‍্যাডাম,ব‍্যাগটা নিয়ে অত কষ্ট না করে বাঙ্কারের উপর তুলে রাখুন না!বাঙ্কারে জায়গা যখন ফাঁকা রয়েছে।"
শেফালি কন্ডাক্টরের কথা শুনল।তারপর তার নামার সময় হলে বাস থেকে নামল।কিন্তু ব‍্যাগটা নামাতে ভুলে গেল।এতক্ষণ তার ব‍্যাগের কথা একবারও মনে পড়েনি।হাসপাতালে এসে পৌঁছনোর পর মনে পড়ল।শেফালি তখন হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে সোজা বাসস্ট্যান্ডের দিকে দৌড়াতে লাগল।কারণ বাসটা যদি এখন পেয়ে যায় তাহলে বাসে উঠে সে টপ করে বাঙ্কার থেকে ব‍্যাগটা পেড়ে নিতে পারবে।বা না পেলেও কাউকে ওখানে জিজ্ঞেস করে বাসের নামটা অন্তত জেনে নিতে পারবে।তখন সে অন্য কোন বাস থেকে ওই বাসের কন্ডাক্টরের ফোন নম্বর নিয়ে ফোন করে ব‍্যাগের কথাটা বলতে পারবে। খানিকক্ষণ পরপর লাইনে বাস।সুতরাং ফোন নম্বর পেতে অসুবিধা হবেনা।কিন্তু বাসস্ট্যান্ডে এসে শেফালি বাসটা দেখতে পেল না।না পেয়ে সে ওখানে একটা কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে এক ফল বিক্রেতাকে দেখতে পেয়ে তার কাছে গিয়ে দাঁড়াল।তাকে কিছু কথা জিজ্ঞেস করবে ভাবল। তার আগে ফল বিক্রেতা তাকে বলল,"কি লাগবে বলুন,ম‍্যাডাম!"
শেফালি তাকে বলল,"কিছু লাগবে না,দাদা। আপনার কাছে আমি একটা জিনিস জানতে এলাম।"
"কি জিনিস জানতে এলেন,বলুন!"ফল বিক্রেতা তাকে শুধাল।
শেফালি বলল,"খানিক আগে এদিক থেকে একটা বাস এসেছিল।আমি ওই বাসে ছিলাম। কিন্তু বাসের নামটা আমার তখন দেখা হয়নি। বাসটার নাম কি বলতে পারেন?"শেফালির বলা 'এদিক' হল দক্ষিণ দিক।তারপর বলল,"বাসের নামটা আমার জানা খুব দরকার।নামটা একটু বলবেন,প্লিজ!"শেফালি তাকে অনুরোধ করল।
ফল বিক্রেতা তখন শেফালিকে বলল,"খানিক আগে তো এদিক থেকে পর পর অনেক গুলো বাস গিয়েছে,ম‍্যাডাম।সুতরাং আপনি কোন বাসের কথা বলছেন কি করে বলব,বলুন!"
শেফালি বলল,"বাসটায় আমার একটা মূল্যবান জিনিস রয়ে গেছে,দাদা।"
"কি বলছেন!"
"হ‍্যাঁ,দাদা।বাসের বাঙ্কারে আমার একটা ব‍্যাগ তুলে রেখেছিলাম।কিন্তু তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে ব‍্যাগটা নামাতে ভুলে গেছি।আমার ব‍্যাগটা এখন বাসে রয়ে গেছে।মূল্যবান জিনিসটা ব‍্যাগে।"
ফল বিক্রেতা বলল,"কি সেটা?"
শেফালি বলল,"এপয়েন্টমেন্ট লেটার।"
ফল বিক্রেতা অমনি সঙ্গে সঙ্গে,"ও গড!"বলে মাথায় হাত দিল।দিয়ে বলল,"কি সর্বনাশ করে ফেলেছেন আপনি!"
অসহায় মুখে শেফালি বলল,"করেই তো ফেলেছি।এখন কি করবো,বলুন!"
ফল বিক্রেতা বলল,"ব‍্যাগটা বাঙ্কারে না রেখে আপনার নিজের কাছে রাখতে হত।তাহলে ভুলটা হত না।"
শেফালি বলল,"ব‍্যাগটা আমার কাছেই ছিল। কিন্তু ভিড়ে খুব কষ্ট হচ্ছিল বলে কন্ডাক্টরের কথায় উপরে তুলে রেখেছিলাম।"
ফল বিক্রেতা তবু বলল,"ভুল করেছেন।যত বড় ভিড়ই থাকুক আর যত কষ্টই হোক তবু আপনার নিজের কাছেই রাখতে হত।কারণ ব‍্যাগে কোন সাধারণ জিনিস থাকলে রাখলেন ঠিক ছিল।না,ব‍্যাগে আপনার চাকরির এপয়েন্টমেন্ট লেটার রয়েছে।কম কথা!আজকাল চাকরির কি দাম বলুন তো!চাকরি পাওয়ার আশায় মানুষ কত হাজার হাজার টাকা খরচ করে ফেলছে।তবু পাচ্ছে না।আমরাও ফেলেছি। পাইনি।আর আপনি পেয়ে হারিয়ে ফেললেন!ইস্,আপনার কি কপাল গো!"
শেফালি বলল,"আমার কাছ থেকে এমনিতে কোন জিনিস হারায় না।বা ভুল হয়না।কিন্তু আজ কিভাবে যে ভুল হয়ে গেল আমি সেটা বুঝতেই পারছিনা।"
ফল বিক্রেতা তখন বলল,"আপনি কি তখন ইমোশনালি কিছু ভাবছিলেন?নাহলে তো এতবড় ভুল হওয়ার কথা নয়।যাইহোক,আপনাকে আবারও বলছি,আপনি ভুল করেছেন।"
শেফালিও সেটা পরে বুঝতে পারল যে,তার এটা ভুল হয়েছে।পরে সে তাই কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল,"হায়!আমি এখন কি করবো?"
শেফালির এই অসহায় অবস্থা দেখে ফল বিক্রেতার মনে কষ্ট হল।হলে সে বলল,"আপনার জন্য আমারই খুব কষ্ট হচ্ছে।আপনার তো কষ্ট হওয়ারই কথা।"তারপর বলল,"ব‍্যাগে আপনার নাম,ঠিকানা,ফোন নম্বর এসব রয়েছে তো?"
শেফালির চোখ দুটো এতক্ষণ শুকনো থাকলেও এবার ভিজে গেল।ভেজা চোখ দুটো মুছে নিয়ে সে বলল,"আছে।চিঠিতে আমার ফুল অ্যাড্রেস রয়েছে।আর একটা কাগজে ফোন নম্বর লেখা রয়েছে।ব‍্যাগ খুলে তাকালেই ভেতরে ওটা দেখতে পাওয়া যাবে।"
ফল বিক্রেতা তখন শেফালিকে আপ্তবাক্যে বলল,"আপনার যদি কপাল ভাল হয় আর কোন সুহৃদ ব‍্যক্তি যদি আপনার ব‍্যাগটা পেয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে উনি নিশ্চয়ই ফোন করবেন। অথবা আপনার বাড়ি বয়ে আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আসবেন।কিন্তু এখন আপনার আমার কারোই কিছু করার নেই।একমাত্র ওই উপর অলার উপর ভরসা করা ছাড়া।উনি কি করেন সেটা দেখুন!"
শেফালি বলল,"ব‍্যাগটা যে পাবে তার অবশ্য কোন কাজে লাগবে না।হয়ত ব‍্যাগটা কোন কাজে লাগতে পারে।কিন্তু ভিতরের জিনিস গুলো কোন কাজে লাগবে না।তবু সমাজে খারাপ মানুষের তো কোন অভাব নেই।এমন মানুষের হাতে হয়ত ব‍্যাগটা পড়ে গেল দেখা গেল কাগজপত্রের কোন মূল্যই সে বোঝে না।ব‍্যাগটা রেখে দিয়ে কাগজপত্র গুলো সে কেটে কুটিকুটি করে ফেলে দিল।অথবা জলে ভাসিয়ে দিল।অথবা আগুনে পুড়িয়ে দিল। আর আমার জীবনটা তখন শেষ হয়ে গেল।"
শেফালির কথায় ফল বিক্রেতা এবার ঈষৎ বিরক্ত হল।হয়ে বলল,"সমাজে কিন্তু ভাল মানুষও কম নেই।আপনি শুধু সমাজের খারাপ মানুষদের কথাই ভাবছেন কেন?ভাল মানুষদের কথাও ভাবুন না!মনে করুন,আপনার ব‍্যাগটা কোন সুহৃদ ব‍্যক্তি পেয়েছেন।উনি আপনার জিনিস আপনাকে ঠিক পৌঁছে দেবেন।মনে এরকম প্রবল জোর রাখুন!"
শেফালি তখন বলল,"ভগবানের কাছে সেই প্রার্থনাই করুন দাদা,যেন উনি আমার প্রতি করুণা করেন।"
"অবশ্যই করব।আর আপনি কোন চিন্তা করবেন না।আপনার জিনিস আপনি ঠিকই ফিরে পাবেন।..."
দুই
শেফালি এবার ওখান থেকে সরে এসে একটা ফাঁকা জায়গায় দাঁড়াল।দাঁড়িয়ে তার এবার ভাবনা শুরু হল।বাড়ি গিয়ে সে কথাটা বলবে কিভাবে?বাড়িতে যে তাহলে মরা কাঁদন শুরু হয়ে যাবে।এত বড় সাংঘাতিক ঘটনা যে গোপন রাখাও ঠিক হবে না।নানান ধরনের কথা ভাবতে ভাবতে শেফালির হাতের সেল ফোনটা হঠাৎ বেজে উঠল।শেফালি তখন ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরল,"হ‍্যালো!"
একটা পুরুষ কণ্ঠ তখন শেফালিকে জিজ্ঞেস করল,"আপনি কি শেফালি মুখার্জি বলছেন?"
"হ‍্যাঁ,বলছি।আপনি কে বলছেন?"শেফালি উত্তর দিয়ে তাকে শুধাল।
"আমার নাম দিব‍্যেন্দু।দিব‍্যেন্দু মুখার্জি।মানে আমি দিব‍্যেন্দু মুখার্জি বলছি।"পুরুষ কণ্ঠটা বলল।
"বেশ,কি ব‍লছেন বলুন!"শেফালি কণ্ঠটার কাছে শুনতে চাইল।
দিব‍্যেন্দু বলল,"মিস মুখার্জি,আপনার সঙ্গে আমার কিছু জরুরি কথা আছে।এখন বলা যাবে কি?"
"কি কথা,বলুন!"শেফালি বলতে বলল।
দিব‍্যেন্দু বলল,"আপনার মনে কি এই মুহূর্তে কোন প্রশ্ন জাগছে না যে,আপনার ফোন নম্বর আমি কোথায় পেলাম?বা আমি আপনাকে কেন ফোন করেছি?"
শেফালি বলল,"আমার ফোন নম্বর কোথায় পেলেন?আর কেনই বা ফোন করেছেন?"
দিব‍্যেন্দু বলল,"আমি বললাম তবে?ঠিক আছে বলছি,আপনি এখন কোথায়?"
"কেন,বলুন তো!"
"বলুন না!বলছি।"
"না,আগে বলুন!আপনি না বললে আমি বলব না।"
দিব‍্যেন্দু তখন বলল,"বাসে আপনার আজ কি কোন জিনিস হারিয়েছে?"
শেফালি অমনি বলতে লাগল,"হ‍্যাঁ হ‍্যাঁ,হারিয়েছে।হারিয়েছে।"
দিব‍্যেন্দু জিজ্ঞেস করল,"কি জিনিস হারিয়েছে?"
শেফালি বলল,"ব‍্যাগ হারিয়েছে।"
"কি ব‍্যাগ?"
"চামড়ার ভ‍্যানিটি ব‍্যাগ।"
"কি রং?"
"খয়েরি।"
"ঠিক আছে।ব‍্যাগের ভিতর কি ছিল,বলুন!"
শেফালি বলল,"ব‍্যাগের ভিতর অন্য কোন জিনিস ছিল না।একটা এপয়েন্টমেন্ট লেটার ছিল।একটা এডমিট কার্ড একটা মার্কশিট ছিল। আর আমার ফোন নম্বর লেখা একটা ছোট চিরকুট।ব‍্যাগটা এখন কোথায়?"
দিব‍্যেন্দু বলল,"আছে।"
শেফালি বলল,"কোথায় আছে?"
দিব‍্যেন্দু বলল,"আমার কাছে আছে।"
"আপনার কাছে আছে!আপনি ব‍্যাগটা আমায় দিন,প্লিজ!আমি হসপিটাল মোড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছি।আপনি একটু আসুন,প্লিজ!
দিব‍্যেন্দু বলল,"উঁহু!"
শেফালি বলল,"কেন?"
"কারণ,আপনার এগুলো দিয়ে আমি কাগজের নৌকা তৈরি করব।আপনার এগুলোতে খুব সুন্দর কাগজের নৌকা হবে।হ‍্যাঁ,সত্যি বলছি। জানেন তো,ছোট বেলায় কাগজের নৌকা তৈরি করে জলে কত ভাসিয়েছি।কত নৌকা নৌকা খেলেছি।নৌকা নৌকা খেলতে আমার তখন খুব ভাল লাগত।খুব ভাল লাগত।বেশ মজা পেতাম। তাই ভাবছি,এখন আবার---"
"কিন্তু আপনি কি এখন আর আগের সেই ছেলেমানুষটি আছেন?আপনার কি এখন এসব আর মানাবে?"
"মানাবে না বলছেন?তাহলে এক কাজ করব।"
"কি কাজ করবেন?"
"পাশের বাড়ির কোন বাচ্চা ছেলেকে তাহলে বানিয়ে দেব।ওরা খেলবে।আমি দেখব।ওরা আনন্দ পেলে আমারও আনন্দ পাওয়া হবে।কি বলেন,হবে না?"
শেফালি তখন বারবার অনুরোধ করতে লাগল,"আপনার দুটো পায়ে ধরি,আপনার দুটো হাতে ধরি,আপনি ওটা নষ্ট করবেন না,প্লিজ! আপনি ওটা নষ্ট করবেন না।ওটা নষ্ট করলে আমার জীবনটাও নষ্ট হয়ে যাবে।জীবনটা একদম মাঠে মারা যাবে।"ও খুব দুঃখ করল।তার দুঃখ করা দেখে দিব‍্যেন্দু বলল,"বেশ,বলছেন যখন নষ্ট করব না।কিন্তু একটা কথা দিতে হবে।"
মেয়েরা তাদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের দ্বারা অনেক কিছু বুঝতে পারে।এবং উপলব্ধি করতে পারে। সুতরাং কি কথা দিতে হবে শেফালি সেটা মনে মনে অনুমান করে নিল।একটা পুরুষ মানুষ একটা সুন্দরী যুবতীর কাছে এছাড়া আর কি-ই বা বেশি চাইতে পারে?কথা দিয়ে যদি সে তার ব‍্যাগের জিনিস সহ ব‍্যাগটা ফিরে পায় তো সে পিছ-পা হবেনা।অনেক ভাল ভাল মেয়ে আজকাল স্বার্থের জন্য শরীর দিচ্ছে।শরীর দেওয়াটা তাদের কাছে এমন কিছু ব‍্যাপার নয়।বা খারাপ কাজ নয়। মামুলি কাজ মাত্র।ফ‍্যাশানও বলা চলে।শরীর তাদের কাছে শুধুই শরীর।ওরা ওসব কিছু মনে করেনা।ওদের মতো প্রয়োজনে সে-ও আজ কিছু মনে করবে না।চাইলে শরীর দেবে।হ‍্যাঁ,দেবে। কেননা বাড়িতে শুনলে পরে তার মা-বাবা যে ভীষণ চিন্তা করে হার্ট অ্যাটাক করে ফেলবে।তার বাবা যে ভীষণ গরিব মানুষ।তার মা-ও।আর তারা পাঁচ বোন।সব ক'টা বোন আবার বিয়ের বয়সের। শুধু গানের মাস্টার হয়ে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া যে আজকাল সমাজে খুবই কষ্টের।আজকাল বিনা পয়সায় কোন ছেলেই মেয়েদের বিয়ে করতে চাইনা।দেখতে অতীব সুন্দরী হলেও না।তবে প্রেম করতে চাওয়া ছেলের অভাব নেই।সুতরাং তার চাকরি হওয়াটা যে খুবই জরুরি।খুবই জরুরি। তাহলে তার বৃদ্ধ গরিব বাবা কিছুটা স্বস্তি পাবে। তাছাড়া শেফালির জীবনেও এখন কেউ নেই যে,তার জন্য শেফালি নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখবে। তার কথা ভাববে।সেই কবে তাদের পাড়ার জয়দা কিছুদিনের জন্য তার জীবনে এসেছিল।তার বাবার কাছে রবীন্দ্র সংগীত শিখতে আসত জয়দা।শেফালিও রবীন্দ্র সংগীত শিখত তার বাবার কাছে।রবীন্দ্র সংগীতে জয়দার গলা ভীষণ ভাল ছিল।তার বাবা জয়দার গলার খুব খুব প্রশংসা করত।শেফালি তার গলার টানেই তার প্রেমে পড়েছিল।কিন্তু বছর না ঘুরতে তাদের প্রেম ভেঙে যায়।ফলে জয়দা তার বাবার কাছে গান শেখাও ছেড়ে দিয়েছিল।অন্য মাস্টার ধরেছিল।সে এখন বিখ্যাত রবীন্দ্র শিল্পী জয় গাঙ্গুলি।গানের অনেক অ্যালবাম বেরিয়েছে তার।কিছুদিন হল সে বিয়ে করেছে।শেফালি একদিন তার বউ দেখতে গিয়েছিল।গিয়ে জয়দার সঙ্গে তার দেখাও হয়ে গিয়েছিল।হলে পরে অনেক দিন বাদে জয়দার সঙ্গে সেদিন তার ক'টা কথা হয়েছিল।জয়দা ভাবতেই পেরেছিল না যে,সে তার নতুন বউ দেখতে আসবে।যেকারণে জয়দা এক রকম অবাকই হয়েছিল,"আরে,শেফালি তুই!"জয়দা তাকে বরাবর 'তুই' করেই কথা বলত।সেদিনও তাই 'তুই' করেই বলেছিল।শেফালি কথা বলেছিল না।বেমুখ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
"কি হল,কথা বলছিস না কেন?কথা বল।"
"কি কথা বলব?"
"কেমন আছিস?"
"ভাল আছি।"
"চিন্তা করিসনা।আমি তোকে এখনও খুব ভালবাসি।আগামীতেও ভালবাসব।ভবিষ্যতেও ভালবাসব।"
শেফালির পায়ে তখন হাই হিল জুতো পরা ছিল।জয়দার কথা শুনে তার মনে হয়েছিল পা থেকে এক পাটি জুতো খুলে এক্ষুনি সে তার দুই গালে বসিয়ে দিবে।কিন্তু সেটা হলে অতিরিক্ত হয়ে যাবে।এবং খুব বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে বলে শেফালি কাজটা করেছিল না।রাগ সামলে নিয়েছিল।তবে সে যে তাকে ঘৃণা করে এবং ভীষণ ভীষণ ঘৃণা করে সেটা বোঝাতে তার সামনে 'ওয়াক্ থু' করে এতখানি থুতু ফেলেছিল।.....
"কি কথা দিতে হবে বলুন!"স্মৃতির অতল তল থেকে উঠে এসে শেফালি দিব‍্যেন্দুকে জিজ্ঞেস করল।
দিব‍্যেন্দু বলল,"বাড়িতে আমরা মোটে তিনটে মানুষ।আমি।মা।ও বাবা।"
"তো আমাকে কি করতে হবে বলুন!"
"আপনাকে এখন কিছু করতে হবে না।আগে আমার পুরো কথা গুলো শুনুন!"
"বেশ,বলুন!"
দিব‍্যেন্দু তখন বলল,"আমার মা শিক্ষিকা। আর বাবা শিক্ষক।"
"আর আপনি?"
দিব‍্যেন্দু বলল,"আপনি জিজ্ঞেস না করলেও আমি সেটা আপনাকে বলব।কারণ আমার সম্পর্কে আপনার এগুলো জানা দরকার আছে। তারপর আপনার যদি মনে ধরে তো কথা দেবেন মনে না ধরে কথা দেবেন না।এরজন্য আপনাকে কোন জোর জুলুম বা অত‍্যাচার করব না।আপনার জিনিস আপনাকে ঠিকই ফিরিয়ে দেব।চিন্তা করবেন না।আমি আপনার জীবন নষ্ট করব না। কারণ কি জানেন,জীবন নষ্ট করতে খুব সহজেই মানুষ পারে।কিন্তু জীবন দিতে ক'টা মানুষ পারে বলুন!আমি কিন্তু পুরো আলাদা মানুষ।জীবনের মূল্য আমার কাছে অপরিসীম।জীবনকে আমি যে অনেক অনেক ভালোবাসি।তাই আমি আপনার জীবন নষ্ট করব না।বা নষ্ট হোক এটা আমি চাইব না।"
দিব‍্যেন্দুর কথা শেষ হলে শেফালি বলল,"আমি কিন্তু আপনার এই কথা বিশ্বাস করব না।"
"কেন বিশ্বাস করবেন না?"দিব‍্যেন্দু বলল।
শেফালি বলল,"কারণ আপনি তো আমার জীবন নষ্ট করতেই চেয়েছিলেন।হ‍্যাঁ,নষ্ট করতে চেয়েছিলেন।নাহলে আপনি তখন আমায় এই বলে ভয় দেখালেন কেন যে,আপনি আমার পেপারস গুলো দিয়ে কাগজের নৌকা বানাবেন?..."
দিব‍্যেন্দু অমনি খিলখিল করে হাসতে লাগল।শেফালি বলল,"কি হল,হাসছেন যে?"
দিব‍্যেন্দু বলল,"আপনি তো খুব ভীতু আছেন দেখছি।ওই সামান্য কথায় নাহলে কেউ ভয় পায়? আপনি যে এতখানি ভয় পাবেন আমি কিন্তু সেটা বুঝতে পারিনি।আর এরজন্য আমি ভীষণ ভাবে দুঃখিত।এবং ক্ষমাপ্রার্থী।আমি কিন্তু আপনাকে ভয় দেখাবো বলে কথাটা বলিনি।আমি আপনার সঙ্গে স্রেফ একটু মজা করেছি।বিশ্বাস করুন,আপনাকে আমি ভয় দেখাতে চাইনি।যাইহোক,আপনি আমায় ক্ষমা করলেন তো?"
শেফালি বলল,"করলাম।তারপর বলুন!"
দিব‍্যেন্দু তারপর বলল,"আর আমি হলাম অধ্যাপক।"
"কি!আপনি অধ্যাপক!"শেফালি চমকে উঠল।
"কেন,বিশ্বাস হচ্ছে না!"
"হচ্ছে হচ্ছে।"
"তাহলে চমকে উঠলেন যে?"
"না,মানে এমনি।"
"ঠিক আছে।"
শেফালি তখন বলল,"আপনি কি এখন কলেজে?"
দিব‍্যেন্দু বলল,"না।আমি এখন বাড়িতে।"
"আজ আপনার অফ ডে বুঝি!"
"না।আজ আমি কলেজ যাইনি।"
"কলেজ কামাই করে শুধু শুধু বাড়িতে? আপনার তো কর্তব্যে খুব অবহেলা আছে দেখছি।"
দিব‍্যেন্দু বলল,"মোটেও না।আমি কোনদিন কলেজ কামাই-ই করিনা।অথচ দেখুন,আমার সহ অধ্যাপকদের মধ্যে অনেকেই কামাই করেন। কারণে অকারণে কামাই করে বাড়িতে বসে থাকেন।"
"তাহলে আজ কামাই করলেন কেন?আজ তো আপনার অফ ডে নয়।"
এর উত্তরে দিব‍্যেন্দু বলল,"আসলে আমার মায়ের শরীরটা খুব খারাপ।তাই কলেজ থেকে ছুটি নিয়ে কিছু দিনের জন্য বাড়ি আছি।"
শুনে শেফালি বলল,"ও,সরি!"তারপর বলল,"কি হয়েছে আপনার মায়ের?"
দিব‍্যেন্দু বলল,"হঠাৎ ব্লাড প্রেসার হাই হয়ে গিয়ে দুই নাক দিয়ে রক্ত ঝরতে শুরু করে। তারপর বাবা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে অমনি ভর্তি করে।দু-দিন ভর্তি থাকার পর এখন বাড়িতে আছে।এবং আগের চাইতে সুস্থ আছে।তবে ফুল বেড রেস্ট।"
শেফালি বলল,"এই ধরনের পেশেন্টের ফুল বেড রেস্ট-ই হল একমাত্র ট্রিটমেন্ট।আপনি কোন চিন্তা করবেন না,সেরে যাবে।"শেফালি তাকে সাহস দিল।দিয়ে বলল,"আপনার কি কথা এখনো বললেন না তো?বলুন!আমি সেটা চেষ্টা করব রাখতে।বলুন!"
'বলুন' কথাটা শেফালি দু'বার বলল।বললে পরে দিব‍্যেন্দু বলল,"আমি এখন টোয়েন্টি নাইন ইয়ারস রানিং।আমার মা এবং বাবা দু'জনেরই তাই খুব ইচ্ছা আমি এবার একটা মেয়ে দেখে তাকে আমার লাইফ পার্টনার বানাই।আমি তাদের বলেছি যে,আমি এখনো দু'বছর কাউকে আমার লাইফ পার্টনার বানাবো না।সিঙ্গেল আছি সিঙ্গেলই রব।কিন্তু আজ বাসে আপনাকে দেখার পর আমার মনে হল,না,আমি আর সিঙ্গেল রব না।যত তাড়াতাড়ি পারি আমি একে মানে আপনাকে আমার লাইফ পার্টনার বানাবো। হ‍্যালো!"
শেফালি চুপ করে কথা গুলো শুনল।শুনতে শুনতে বলল,"হ‍্যাঁ,শুনছি।বলুন!"
দিব‍্যেন্দু বলল,"সত্যি কথা বলতে কি জানেন,বাসে আপনাকে দেখার পর আপনাকে আমার ভাল লেগে গেছে।আমি আপনার একরকম প্রেমে পড়ে গেছি।আমি তাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি যে,আমি আপনাকে আমার লাইফ পার্টনার বানাবো। শুধু আপনাকে।আর কাউকে নয়।এখন আপনি বলুন,আপনি কি আমার লাইফ পার্টনার হবেন? সরাসরি জানতে চাইলাম বলে কিছু মনে করবেন না।আমি কিন্তু এই রকমই।যাকে যা বলি মনের কথা এইভাবে অকপটে বলে ফেলি।"
হাস‍্য মুখে শেফালি বলল,"আপনার মতো অকপটে মানুষই আমার পছন্দ।"
দিব‍্যেন্দু বলল,"আমাকে তাহলে আপনার পছন্দ তো?"
শেফালি বলল,"জানিনা।"তারপর বলল,"আপনাকে আমার একটা কথা বলার ছিল।"
"বেশ,কি কথা বলুন!আমার মতো অকপটে বলুন।আমি যেমন অকপটে কথা বলতে ভালবাসি অকপটে কথা আমি তেমনি শুনতে ভালবাসি।কি বলুন!"
শেফালি বলল,"আপনি হলেন সমাজে একজন সুপ্রতিষ্ঠিত এবং বিখ‍্যাত ব‍্যক্তি।আর আমি হলাম কোথাকার গ্রামের একজন সাধারণ মহিলা।আমার মা-বাবা দু'জনই ভীষণ গরিব।সুতরাং আপনার মতো বিখ্যাত মানুষের লাইফ পার্টনার হওয়ার যোগ‍্যতা কি আমার আছে?আপনি আমাকে শুধু শুধু মিথ্যা স্বপ্ন দেখাচ্ছেন।আপনার কলেজেই তো কত কত সুন্দরী মেয়ে রয়েছে।তারা যে শুধু দেখতেই সুন্দরী তা নয়।বড়লোকও।আপনার স্ট্যাটাসের সঙ্গে তাদের দারুণ মানাবে।"
দিব‍্যেন্দু অমনি বলে ফেলল,"আপনার ধারণাটা কিন্তু ঠিক নয়,মিস মুখার্জি।কারণ আপনার কি ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই?"
শেফালি বলল,"থাকবে না কেন?ঈশ্বরে বিশ্বাস না থাকলে হয়?উনিই তো হলেন এই পৃথিবীর নিয়ন্তা।এবং পরিচালক।"
"তাহলে শুনুন!"দিব‍্যেন্দু বলতে লাগল,"আমার যেহেতু লাইফ পার্টনার বানানোর এখন কোন ইচ্ছাই ছিল না।কিন্তু বাসে আপনাকে দেখার পর যখন সেই ইচ্ছাটা জেগে উঠল।তখন ধরে নেওয়া যেতেই পারে যে,এর পিছনে ঈশ্বরের কোন অদৃশ্য হাত রয়েছে।তাহলে এখানে এসবের প্রশ্ন কোত্থেকে আসছে শুনি!"
শেফালি আর কোন কথা না বলে সোজা উপর দিকে তাকাল।তাকিয়ে মনে মনে যে ঈশ্বরের সম্পর্কে কথা হচ্ছিল সেই ঈশ্বরকে স্মরণ করল,"প্রভু,তুমি সব করতে পারো।তোমার যা ভাল লাগে তুমি তাই করো!..."
"হ‍্যালো!"
"কি বলুন!"
"কিছু ভাবছেন নাকি?কথা বলছেন না যে।"
শেফালি বলল,"কই,কিছু ভাবছি না তো।"
দিব‍্যেন্দু বলল,"ভাবছেন না তো আমাকে তাহলে কথা দিন যে,আপনি----"
শেফালি বলল,"কিছু মনে করবেন না। আপনাকে একটা কথা বলব।"
দিব‍্যেন্দু বলল,"বলুন!"
শেফালি বলল,"আপনাকে আমি তো চোখেই দেখলাম না।চোখে না দেখে তাহলে কি করে কথা দিই,বলুন তো!"
দিব‍্যেন্দু তার উত্তরে শেফালিকে তখন বলল,"যদি বলি আপনি আমায় দেখেছেন?"
"দেখেছি!"
"হ‍্যাঁ,দেখেছেন।"
"কোথায় বলুন তো!"
"আপনি আমায় বাসে দেখেছেন।একবার মনে করবার চেষ্টা করুন,তাহলেই পেয়ে যাবেন।"
শেফালি তখন মনে করতে চেষ্টা করল যে,সে মোনাইকান্দরা বাসস্ট‍্যান্ডে বাসে চাপে।বাসের ভিতর তখন প্রচুর ভিড় ছিল।ভিড়ে শেফালি দাঁড়াতে পারছিলনা দেখে এক ব‍্যক্তি তাকে তার সিটটা ছেড়ে দিয়ে বলেছিল,"ম‍্যাডাম,আমি অনেকক্ষণ বসে আছি।এবার আপনি একটু বসুন!"
শেফালি ইতস্তত করেছিল,"না,আপনি বসুন!"
সেই ব‍্যক্তি শুনেছিল না,"আমি বলছি,বসুন না!"
শেফালি সেই ব‍্যক্তির সিটে তখন বসে যায়। আর সেই ব‍্যক্তি শেফালির জায়গায় শেফালি যেভাবে দাঁড়িয়ে ছিল ওই ভাবে দাঁড়িয়ে রয়। এরপর মোটে দুটো স্টপেজ এসে শেফালি সিট থেকে উঠে দাঁড়ায়,"এবার আপনি বসুন!"
"আপনি কি এখানেই নামবেন নাকি?"সেই ব‍্যক্তি তখন শেফালিকে শুধায়।
"না।আমার নামতে আরো দেরি আছে।"
"তাহলে উঠছেন কেন,বসুন!"
"আমি বসব আর আপনি দাঁড়িয়ে থাকবেন? আপনি বসুন!"
"অসুবিধা নেই।আপনি বসুন!"
শেফালিকে তখন ফের বসতেই হয়।...তাহলে কি ইনিই হলেন সেই সুহৃদ ব‍্যক্তি?শেফালির মনে প্রশ্ন জাগল।আর তখনই দিব‍্যেন্দু বলল,"হ‍্যালো!"
"হ‍্যাঁ,বলুন!"শেফালি সাড়া দিল।
"কিছু মনে করতে পারলেন?"
"হ‍্যাঁ হ‍্যাঁ,পেরেছি।"শেফালি বলল,"ভিড়ের মধ্যে আপনি আমায় আপনার সিটটা ছেড়ে দিয়ে তখন বড় মনের পরিচয় দিয়েছিলেন।আপনার প্রতি আমি চির কৃতজ্ঞ।নারী জাতির প্রতি আপনার এই মহানুভবতার কথা আমি কোন দিন ভুলব না।"
"যাক,মনে করতে পেরেছেন তাহলে।"
শেফালি বলল,"আপনার মতো ভাল মানুষ আজকাল খুব কম দেখা যায়।বাসে ট্রেনে কেউ তো একটু জায়গা দিতেই চায়না।"
"আমি কিন্তু দিই।কারো খুব অসুবিধা হচ্ছে বুঝতে পারলেই দিই।যেমন আপনাকে দিলাম।"
"আপনি ভাল মানুষ তাই দেন।"
"তাহলে তো আমাকে আপনার ভাল লাগার কথা।"
"আপনাকে আমার ভাল লেগেছে তো।"
দিব‍্যেন্দু অমনি বলে উঠল,"রিয়েলি!"
শেফালি বলল,"রিয়েলি।"তারপর বলল,"বাসে আপনাকে তখন খুব ভেবেছিলাম।এক কথায়,বাস থেকে নামার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত।ভাবতে গিয়েই তো ব‍্যাগটার কথা বিলকুল ভুলে যাই।নাহলে এমনিতে আমার কোন জিনিস ভুল হয় না।"
দিব‍্যেন্দু হেসে ফেলল,"তাই?"
"হ‍্যাঁ।"
"খুব ভাল।"
"আচ্ছা?"
"বলুন!"
"ব‍্যাগটা আপনি কিভাবে পেলেন একটু বলবেন কি?"
"ব‍্যাগটা আমি বাঙ্কারে পেয়েছি।"খুব সহজ ভাবে দিব‍্যেন্দু বলল।
"বাঙ্কারে তো পেলেন।কিন্তু ব‍্যাগটা যে আমারই আপনি সেটা জানলেন কিভাবে?"
দিব‍্যেন্দু বলল,"ব‍্যাগটা আপনি বাঙ্কারে রাখার আগে আপনার ঘাড়ে দেখেছিলাম।তাছাড়া বাঙ্কারে যখন রাখেন তখনও দেখেছিলাম।সুতরাং আমার বুঝতে কোন অসুবিধা হয়নি যে,ব‍্যাগটা আপনারই।আপনি ভুলে গেছেন।ব‍্যাগটা অন্য কেউ পেয়ে গেলে হয়ত আর দেবেনা।আপনার খুব কষ্ট হবে।ভেবে আমি তাই আমার নামার সময় হলে আমার ব‍্যাগটা নামাতে গিয়ে আপনার ব‍্যাগটাও নামিয়ে নিই।এবং নিজের কাছে রেখে দিই।আমি কি কিছু অন‍্যায় করেছি?"
"না,খুব ভাল করেছেন।খুব ভাল করেছেন। আপনি কি মহান!"
দিব‍্যেন্দু বলল,"আপনি তো কিছুক্ষণ আগে  হসপিটাল মোড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বললেন। এখনও কি ওখানেই আছেন?"
শেফালি বলল,"হ‍্যাঁ।ওখানেই আছি।"
দিব‍্যেন্দু তখন বলল,"আপনি তাহলে এক কাজ করুন,সামনের দিকে আর একটু এগিয়ে চলে আসুন।এসে আপনার ব‍্যাগটা নিয়ে যান। আপনার ব‍্যাগ আমি নিয়েই বসে আছি।কুইক চলে আসুন।"
শেফালি বলল,"কোথায় আসতে হবে,বলুন!"
দিব‍্যেন্দু বলল,"আমি এখন আমার বাড়িতে রয়েছি।আপনি আমার বাড়িতেই চলে আসুন।"
"আপনার বাড়ি আমি চিনি না যে।তাহলে আপনার বাড়ি আমি যাবো কি করে?তার থেকে আপনি একটু আসতে পারবেন না?এলে খুব ভাল হয়।"
দিব‍্যেন্দু বলল,"গেলেই যাওয়া হয়।কিন্তু আপনার কথা আমি মাকে বলেছি তো।মা আপনাকে দেখতে চেয়েছে।আপনিই আসুন!"
শেফালি বলল,"যাবো কেমন করে?"
"কেন?"
"আমার ভীষণ লজ্জা করছে যে।"
দিব‍্যেন্দু শেফালির কথা উড়িয়ে দিয়ে তখন বলল,"ধুর লজ্জা,চলে আসুন!"
শেফালি বলল,"দেখছি,অ্যাড্রেসটা বলুন!"
"দেখছি না।চলে আসুন!"বলে দিব‍্যেন্দু বলল,"সোনা ডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে নেমে যেকোন দোকানে বলবেন,অধ্যাপক দিব‍্যেন্দু মুখার্জির বাড়ি যাবেন।কোনটা?সবাই আঙুল দিয়ে আপনাকে দেখিয়ে দেবে,ওই যে সুন্দর বাড়িটা দেখছেন,ওটা।কুইক চলে আসুন,আমি আপনার জন্য ওয়েট করছি।আসছেন তো?"
"আসছি।"শেফালি বলল।
"আচ্ছা,আসুন!"দিব‍্যেন্দু বলল।
কথা শেষ করে শেফালি এবার ফোনটা রেখে দিয়ে সেই ফল বিক্রেতার কাছে আবার গেল,"দাদা,আপনার প্রার্থনা ভগবান মঞ্জুর করেছেন।আমি আমার ব‍্যাগটার সন্ধান পেয়েছি। যিনি পেয়েছেন উনি একজন ভদ্রলোক মানুষ। কলেজের প্রফেসর।ফোন করেছিলেন।ব‍্যাগটা উনার কাছে রয়েছে।আমি এখন আনতে যাচ্ছি।"
খবরটা শুনে ফল বিক্রেতা দারুণ খুশি হল। বলল,"তাহলে আর চিন্তা কি?চলে যান।গিয়ে নিয়ে আসুন!"তারপর জিজ্ঞেস করল,"ভদ্রলোকের বাড়ি কোথায় বললেন?"
শেফালি দিব‍্যেন্দুর বাড়ির ঠিকানা বলল।
ফল বিক্রেতা তখন বলল,"এই তো সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড।দশ মিনিট লাগবে।আপনি এখানেই দাঁড়ান।এক্ষুনি মৈনাক আসবে।আপনি চেপে নেবেন।"বলতে বলতে মৈনাক নামের বাসটা তক্ষুনি চলে এল।ফল বিক্রেতা তখন শেফালিকে বাসটায় চেপে নিতে বলল।শেফালি বাসটায় তাড়াতাড়ি চেপে নিল।এরপর সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে শেফালি নামল।নেমে ওখানে খুব সুন্দর একটা বাড়ি দেখতে পেল।তাজমহলের আদলে তৈরি একটা বাড়ি।অত সুন্দর বাড়ি ওখানে আর দু'টি নেই।অতএব বাড়িটা যে দিব‍্যেন্দুরই হতে পারে শেফালি সেটা খুব সহজেই অনুমান করে নিল।নিয়ে সে কাউকে জিজ্ঞেস না করে নিজেই বাড়িটার কাছে গেল।গিয়ে বাড়িটার সদর গেটের সামনে দাঁড়াল।দাঁড়িয়ে গেটের উপর একটা নৃত‍্য রত ময়ূরের ছবি আঁকা রয়েছে সেটা তাকিয়ে দেখতে লাগল।দেখতে দেখতে শেফালির ফোনটা এইসময় আবার বেজে উঠল।শেফালি ফোনটা রিসিভ করল,"হ‍্যালো!"
"আপনি এখন কত দূর?"
"চলে এসেছি।এসে আপনার বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছি।ময়ূরের ছবিটা দেখছি।"
"কেমন দেখছেন?"
"খুব সুন্দর!কে এঁকেছে?"
"আমি এঁকেছি।মিস্ত্রিরা শুধু..."
"অপূর্ব!"
"আপনার আসা কতক্ষণ হল?"
"এক্ষুনি এলাম।"
ফোনটা কেটে দিয়ে দিব‍্যেন্দু এবার ভিতর থেকে বেরিয়ে এল।সঙ্গে তার মা-ও।শেফালি দেখল,দিব‍্যেন্দুর পরনে এখন আগের সেই সাদা শার্ট,কালো প‍্যান্ট নেই।সে এখন পরে রয়েছে নীল জিনসের সঙ্গে ছাপা পাঞ্জাবি।
দিব‍্যেন্দু বলল,"আসতে কোন অসুবিধা হয়নি তো?"
শেফালি বলল,"কোন অসুবিধা হয়নি।"
দিব‍্যেন্দু তখন শেফালিকে দেখিয়ে তার মাকে বলল,"মা,ইনিই হলেন মিস শেফালি মুখার্জি। আমার সঙ্গে দারুণ মানাবে বলো।"
মুখের উপর এভাবে বলায় শেফালি দারুণ লজ্জায় কুঁকড়ে গেল।তার মা তখন দিব‍্যেন্দুকে হালকা বকল,"মুখের উপর এভাবে কেউ বলে? দেখছিস না মেয়েটা কেমন লজ্জা পেয়ে গেল?" তারপর শেফালির কাছে এগিয়ে এসে বলল,"আমার দিব‍্যর সাথে তোমাকে সত্যিই দারুণ মানাবে।তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে।আমার দিব‍্যকে তোমার পছন্দ তো?"
শেফালির তো তাকে আগেই পছন্দ হয়েছে। তবু সে এখন একবার সম্মতি সূচক ঘাড় নাড়ল। শেফালির ভাগ‍্যটা কি সুন্দর!

----সমাপ্ত----


বিধ্বংসী কলিযুগ

Edit Posted by with 4 comments


বিধ্বংসী কলিযুগ
নবনীতা দে

সবাই বলে প্রকৃতি নাকি শান্ত
সত্যি কী শান্ত?
আচ্ছা! তুমিও তো অবিক্ষুব্ধ
তোমার বারবার সতর্ক বার্তা দেওয়া সত্ত্বেও যদি কেউ তোমায় বারংবার প্রহার করে
ভাবো তো কেমন হবে তখন?
প্রকৃতি বহু যুগ পূর্বে এক বিবেকবোধ সম্পন্ন মনুষ‍্যত্ব পূর্ণ মানবজাতির সৃষ্টি করেছিল।
কিন্তু হায়রে মানবজাতি
সে তার আত্মম্ভরিতার কারনে
আত্মবিস্মৃতই করে গেলো যে
তার প্রণেতা কে?
হাজার বছর ধরে মানুষ পথ হাঁটছে পৃথিবীর বুকে
তবে কী মানুষ সবটা বুঝেও অবিবেচকের ন‍্যায় নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছিল?
এড়িয়ে যাচ্ছিল তাদের উদ্দেশ্য?
আজীবন মানুষ প্রকৃতিকে
নির্দিধায় নির্বিচারে ধ্বংস করে গেছে
শান্ত যখন অশান্ত হয়
তখন যে ঠিক কতটা ভয়ংকর হতে পারে তা আজ প্রকৃতি সমগ্র বিশ্বের মানবজাতিকে বুঝিয়ে দিচ্ছে হারে হারে।
প্রকৃতির কাছে মানুষ যে কতটা অসহায় এই বছর ২০২০ তা বুঝিয়ে দিয়েছে।
প্রকৃতি আজ যেন করূন খেলা খেলছে আমাদের সাথে।
এ বছর নতুন করে কিছুই দেয়নি আমাদের বরং কেড়ে নিয়েছে সব
বছরের শুরুতেই আরম্ভ দুরারোগ্য ব্যাধি অর্থাৎ ভয়ংকর মহামারী।
এই মহামারীর ধ্বংসলীলায় প্রাণ হারাচ্ছে বহু রোগী তার সাথে বেঘোরে প্রাণ দিতে হচ্ছে অধিকাংশ পরীযায়ী শ্রমিককে।
কিছু মাস যেতে না যেতেই শোনা গেল ভাইজ‍্যাক গ‍্যাসলিক
সেখানেও প্রাণ যায় আরও কিছু মানুষের।
এতো কেড়ে নিয়েও থামেনি প্রকৃতি।
বিষে বিষে বিষক্ষয় টা বেড়েই চলেছে
দুটো বিশে রক্ষে নেই তারপরে আবার তিনখানা বিশ।
আজ আবার কেড়ে নিতে এলো বিধ্বংসী ঝড় যার নাম আম্ফান।
আম্ফান শব্দটির আক্ষরিক অর্থ দৃঢ়তা বাড়াতে স্বাধীন চিত্ত।
দৃঢ়তার সাথেই বটে, এসে একে একে সব ধ্বংস করে দিয়ে গেলো তার তান্ডবলীলায়।
সে সহসা উন্মত্তের মতো নৃত্য করে লন্ডভন্ড করে দিয়ে গেল সবকিছু প্রাণ নিয়ে গেল ২ মাসের শিশু থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত।
তার দমকা বাতাসে উপড়ে নিয়ে গেল বৈদ‍্যুতিক পোল সাথে গরীব মানুষের গৃহ।
পেট ছিল ফাঁকা , ঘরেও ছিল না টাকা গৃহের চাল উড়ে গেছে প্রকৃতির রোষে।
ফুঁসে উঠেছে দিঘার সমুদ্র,হলদি নদী
ছারখার হলো কাকদ্বীপ, নামখানা,মিনখা, বসিরহাট আরও কতো জেলা,কতো রাজ‍্য
গৃহহীন হল হাজার হাজার মানুষ।
প্রার্থনা একটাই, হে প্রকৃতি!
মুর্খ মানবজাতি ভুল করেছে ক্ষমা করে দাও আর শাস্তি দিও না।
যা কেড়ে নিয়েছো ,তার চেয়েও বেশি দিও ফিরিয়ে।
ফিরিয়ে নাও এই অভিশাপ।
শান্ত কর নিজেরে ।
এই প্রার্থনা মোর।


লেখিকা- নবনীতা দে

নেট ফড়িং সংখ্যা-১৪৩

Edit Posted by with No comments

May 26, 2020

উপস্থিতি

Edit Posted by with No comments


উপস্থিতি
দেবদর্শন চন্দ

রাত তখন ১.৩৭ কি ৩৮ হবে...
চারপাশ শুনশান,
রাস্তা দিয়ে বড়োজোর ২/১টা গাড়ি চলছিল,
গল্পের বইটা পড়তে পড়তেই হাঁটছিলাম ছাদে...
ব্র্যান্ড না দেখেই সিগারেটটা জ্বালিয়ে বইটা টেবিলে উলটে রেখেছিলাম,
ফোনে বন্ধু থাকলেওগল্পে ছিলিস তুই....
নেশাটা মারাত্মক!!!!

May 24, 2020

নেট ফড়িং সংখ্যা-১৪২ (ঈদ সংখ্যা)

Edit Posted by with No comments

May 20, 2020

ই-বুক কাব্য সংকলন "পাণ্ডুলিপির আহ্বানে" কল্পতরু প্রকাশনী

Edit Posted by with 1 comment


নির্বাচিত কিছু কবিতা দিয়ে সাজানো কল্পতরু প্রকাশনীর কাব্য সংকলন "পাণ্ডুলিপির আহ্বানে"
সম্পাদনা- শুভাশীষ গোস্বামী
প্রকাশক- বিক্রম শীল
প্রচ্ছদ- শর্মিষ্ঠা বণিক

May 17, 2020

নেট ফড়িং সংখ্যা ১৪১

Edit Posted by with No comments

May 10, 2020

নেট ফড়িং সংখ্যা ১৪০

Edit Posted by with No comments

May 8, 2020

হৃদয়ের এ কূল ও কূল

Edit Posted by with No comments


হৃদয়ের এ কূল ও কূল         
দ্বীপজ্যোতি গাঙ্গুলি

                                        
     "খেলাঘর বাঁধতে লেগেছি আমার মনের ভিতরে।
          কত রাত তাই তো জেগেছি বলব কী তোরে॥
     প্রভাতে পথিক ডেকে যায়, অবসর পাই নে আমি হায়--
            বাহিরের খেলায় ডাকে সে, যাব কী ক'রে॥"

থেমে গেলি কেন মোহর? কি সুন্দর গাইছিলি। পুরো অন্য দুনিয়ায় চলে গিয়েছিলাম।
ওই ছেলেটাকে দেখনা রে। বেশ অনেকক্ষণ থেকে আমাদের ফলো করছেI চিনিস তুই ছেলেটাকে?
 ওকে তো এর আগেও দেখেছি। তোকে সারাক্ষণ লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে।  গণযোগাযোগ এর ছাত্র। আমাদের সমবয়সী। নাম ধাম জানিনা। যাবি কথা বলতে? কি সুদর্শন!
বাব্বাহ পৃথা! গণযোগাযোগ! সুদর্শন! তুই ই যোগ্য বাংলা বিভাগের স্টুডেন্ট রে। সে যতই সুদর্শন হোক, আমার খুব বিরক্ত লাগে। চল এখান থেকে।
এই মোহর চলনা একটু ঘেটে দেখি ছেলেটাকে। একটু ক্যাবলা ক্যাবলা আছে। দেখবি একটুতেই ঘাবড়ে যাবে। চল চল এই সুযোগে নাম ধাম ও শুনে নেওয়া যাবে।
না রে এতো রস নেই আমার। আর তুই তো জানিস আমি এসব পছন্দ করিনা। কে না কে চিনিনা জানিনা। তোর ইচ্ছে হলে তুই যা আমাকে এসবে টানবিনা।
তুই না মোহর এক্কেরে আটপৌরে। তোর দ্বারা কিচ্ছু হবেনা। এভাবে একটা ছেলে পিছু নিচ্ছে আর মহারাণী ফুটেজ নিচ্ছেন। কাকুকে বলিস রবীন্দ্রনাথের সাথে বিয়ে দিতে। তাছাড়া তো আর কারোর প্রেমে তুই পড়বিনা!
বেশি বাজে না বকে চল এখান থেকে। ছেলেটা এখনো এইদিকেই দেখছে। চলে না আসে আবার। তার চেয়ে বরং ক্লাসে চল।
আচ্ছা চল। আর কি করা যাবে। তোর যখন এতই আপত্তি তখন তো আর জোর করে লাভ নেই। চল।
এই যে শুনছেন। মোহার। হ্যালো। মিস মুখার্জী। দু মিনিট সময় হবে?
                                            
না মানে ইয়ে আই মিন টু সে দ্য থিং ইস দ্যাট.......
দ্য থিং ইস দ্যাট ইউ আর ওয়েস্টিং ইওর টাইম। কারণ তুমি এমন একটা মেয়েকে ভালোবেসে ফেলেছো যার সাথে তোমার কালচারের কোনো মিল নেই। একটা মেয়েকে সম্পূর্ণভাবে চিনলেই না তার ভালো লাগা খারাপ লাগা জানলে না। সোজা এসে প্রপোজ করে দিলে হাউ ফুল!
মোহার আমি অবাঙালী হলেও আমি ক্যালকাটায় জন্মেছি। আর আমি কিন্তু বাংলা বলতে পারি। আর আমি এও জানি যে তুমি রবীন্দ্রনাথের খুব বড়ো ফ্যান।
হা হা হা। ২০০১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ক্যালকাটা নাম পরিবর্তন করে কলকাতা করে দিয়েছিলেন। সেটা হয়তো তোমার জানা নেই। আর দেখো তোমার আর আমার কালচারের অনেক ফারাক। তোমরা পুরোদস্তুর নিরামিষাশী আর আমাদের ডিসে অ্যাকোয়ারিয়াম।
না না মোহার আমি নন ভেজ খাই তো। আর আমি মাছ খেতে ভালোবাসি। হিলসা , রোহু সব। আর আমি সত্যজিৎ রবীন্দ্রনাথ সব পড়েছি।
অনুবাদের রবীন্দ্রনাথ পড়ে বাঙালী হওয়া যায়না মিস্টার পৃথ্বী রাই। আর ওগুলো হিলসা রোহু না ওগুলোর নাম ইলিশ আর রুই। সে সব না হয় পরে খাবে। কিন্তু এখন তুমি যেরকম ঘাবড়ে আছো তাতে আর কিছুক্ষণ পর এই ঠাণ্ডাতেও ঘাম ঝরবে। তাই মেঘ না চাইতেই এই নিন জল। আর প্রেম অনেক দূরের কথা আমাদের গল্প বন্ধুত্ব অবধিও এগোবেনা। তাই
এসব ছাড়ো আর ক্লাসে মন দাও।
মোহার প্লিজ একটা সুযোগ দাও। দেখো আমি তোমার কালচার আর আমার কালচার মিলিয়ে দেব।
ওহ তাই! সত্যি! প্রথমত আমার নাম মোহার না মোহর। আর যদি তুমি সত্যিই কোনোদিন ও আমাদের কালচার মিলিয়ে দিতে পারো। তাহলে সেদিন এসো ভেবে দেখবো। তার আগে প্লিজ ডিস্টার্ব করোনা।
                                             
তিন বছর পর,
                মাল্য যে দংশিছে হায়
              তব শয্যা যে কণ্টকশয্যা
                       মিলনসমুদ্রবেলায়
              চির- বিচ্ছেদজর্জর মজ্জা
                 প্রাণ চায় চক্ষু না চায়......
                   সুন্দর এসে ফিরে যায়
            তবে কার লাগি মিথ্যা এ সজ্জা
                    প্রাণ চায় চক্ষু না চায়
                 মরি একি তোর দুস্তরলজ্জা
                      প্রাণ চায় চক্ষু না চায়
আপনারা শুনছিলেন রবি ঠাকুরের আরো একটি অসাধারণ গান কিন্তু এবার আমাদের বিদায় জানানোর সময় এসে গিয়েছে। আবার ফিরে আসবো আগামী রবিবার সাথে নিয়ে রবি অন এয়ার উইথ আর জে মোহর অনলি অন টিংগো রেডিও। টিল দেন স্টে টিউনড। গুড নাইট শুভ রাত্রি।
মোহর ম্যাডাম আপনার সাথে দেখা করতে কয়েকজন লোক এসেছেন। বলছেন রুলিং পার্টি কিশলয় থেকে এসেছেন।
আমার সাথে দেখা করতে? আচ্ছা বেশ আমার চেম্বারে পাঠাও ওনাদের.
ম্যাডাম আমার নাম শম্ভু। আর এরা আমার দলের লোক। আমি শুনলাম আপনার শো এখন খুব জনপ্রিয়। আমরা চাই আপনি আপনার শো এ আমাদের পার্টির হয়ে প্রচার করবেন। বুঝতেই তো পারছেন সামনেই ইলেকশন। গত বিশ বছর ধরে আমাদের সরকার রয়েছে পশ্চিমবাংলায়, আমরা চাই এবারেও যেন। তাই আর কি। আপনাকে আমরা এর জন্য হিউজ এমাউন্ট দেব।
আচ্ছা সেসব ঠিক আছে। কিন্তু আমি যেই শো টা অপারেট করি সেটা রবীন্দ্রনাথের গানের উপর সেখানে রাজনীতির আলোচনা অবান্তর আর আমি সেটা কখনই করবো না। তাই আমায় মাফ করবেন। আপনারা আমার কাছে এসেছেন এতে আমি খুবই খুশি। কিন্তু আমি আপনাদের সাহায্য করতে পারবোনা, সরি।
আরো একবার ভেবে দেখুন। আপনার যত টাকা দরকার আমরা তত টাকা দেব। শুধু আপনি একবার প্রচার করবেন।
না দাদা। আমি ভেবে নিয়েছি। এরকম একটা শো এর মাঝে এমন একটা প্রচার করলে খুব বোকা বোকা শোনাবে।
আপনি কাজটা ভালো করলেন না। রুলিং পার্টিকে মুখের উপর না করে দিলেন। দেখবেন আবার পরে পচতাতে না হয়।চলি ম্যাডাম।
সেদিন রাতে,
কিরে মোহর তুই ঠিক আছিস তো? তোর বাবার কাছে কার যেন একটা কল এসেছিল। বললো তোকে সাবধানে সামলে রাখতে।
                                              
ডাক্তারবাবু মেয়েটা বেঁচে যাবে তো?
দেখুন। খুব বাজে ভাবে এক্সিডেন্ট হয়েছে। অপারেশন সাকসেসফুল, কিন্তু ৭২ ঘন্টা অবসার্ভাশনে রাখতে হবে। তার আগে কিছু বলা যাচ্ছেনা। মুখের কিছুটা অংশ জ্বলে গিয়েছে। ওটা আর ঠিক হবেনা। কিন্তু খুবই অল্প অতো বোঝা যাবেনা আশা করি।
মোহর মুখার্জীর বাড়ি থেকে কে আছেন? ডক্টর এই জিনিস গুলো ইমিডিয়েট নিয়ে আসতে বলেছেন। আর হসপিটালের বাকি পেমেন্ট গুলোও মেনশন করা আছে।
হ্যাঁ হ্যাঁ এই যে দিন। এক্ষুণি এনে দিচ্ছি সব। জ্ঞান ফিরেছে ওর?
এখনো না। কিন্তু আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি জ্ঞান ফিরে আসবে। আপনারা আর দেরী করবেননা দয়া করে।
নার্স চলে যাবার পর, ভৈরব বাবু পকেট থেকে চশমাটা বের করে চোখে লাগালেন।
মাথায় আঠারোটা সেলাই, বাঁ চোখটা বেশ খানিকটা চোট পেয়েছে, চোয়ালের হাঁড় ভেঙেছে আর মাথায় কিছুটা ইন্টারনাল ব্লিডিং।
ডাক্তার বেশ কিছু জিনিস আনতে বলেছিলেন। ভৈরববাবু ইতিমধ্যে সেসব এনে দিয়েছেন। কিন্তু প্রায় ষোলো ঘন্টা হয়ে গেল এখনো জ্ঞান ফেরেনি মোহরের।
"মিস্টার মুখার্জী" নার্স ডাকলো ভৈরব বাবুকে, "আমাদের ব্লাড ব্যাংকে যা বি নেগেটিভ ব্লাড ছিল তা প্রায় শেষের দিকে। ডক্টর বলেছেন ইমিডিয়েট ব্লাড জোগাড় করতে। আর হার্ডলি দু বোতল এফোর্ড করা যাবে আমাদের ব্লাড ব্যাংক থেকে।"
"কিন্তু এখন তো ভোর পাঁচটা এতো সকালে কি করে আর আমাদের দুজনেরই তো বি পজিটিভ।"
"মিস্টার মুখার্জী" আওয়াজ টা শুনেই পিছনে ঘুরে তাকালেন ভৈরববাবু। একটা অল্পবয়সী ছেলে। চোখে কালো চশমা, পরনে ডেনিম জিন্স আর কালো শার্ট। ছেলেটা সামনে এসে দাঁড়ালো।
"বেশ অনেকক্ষণ থেকে আপনাকে বেশ চিন্তিত দেখছিলাম। তাই পুরোটা খোঁজ করে জানলাম ব্যাপারটা। চিন্তা করবেন না, সকালের মধ্যেই জ্ঞান ফিরে আসবে। যদি কিছু মনে না করেন একটা কথা বলি?"
কথা গুলো শুনে কিছুটা থেমে ভৈরববাবু বললেন, "হ্যাঁ হ্যাঁ বলো তুমি। আসলে এমন সময় রক্তের দরকার পড়লো। খুব চিন্তায় পড়ে গিয়েছি।"
"কাকু আমি পেশায় সাংবাদিক। আপনি যদি চান তাহলে আমি আমার বেশ কিছু সোর্স কাজে লাগিয়ে বি নেগেটিভ রক্তের জন্য আবেদন করতে পারি। অনেক লোকের কাছে খবর পৌঁছলে আমরা অবশ্যই রক্তের জোগাড় করতে পারবো।"
"অনেক ধন্যবাদ তোমাকে। তুমি এভাবে আমাদের সাহায্য করতে এলে।"
" না না কাকু। এসব বলবেন না। আপনি ভগবান কে ডাকুন। দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে। আর ভয় পাবেন না। রবি ঠাকুর বলেছেন,
           বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থনা–
             বিপদে আমি না যেন করি ভয়।
           দুঃখতাপে ব্যথিত চিতে নাই-বা দিলে সান্ত্বনা,
              দুঃখে যেন করিতে পারি জয়।।
দু দিন পর,
মিস মোহর মুখার্জীর বাড়ি থেকে কে আছেন? ওনার জ্ঞান ফিরে এসেছে। এখন অনেকটা স্টেবল। আপনারা যে কেউ
দুজন গিয়ে দেখে আসতে পারেন।
কিছুটা নিদ্রাচ্ছন্ন ভৈরব বাবু কথাটা শুনেই এক লাফে সোজা উঠে দাঁড়িয়ে বললেন," কত নম্বর কেবিন এ?"
আই. সি.ইউ এর বেড এ শুয়ে মোহর। অক্সিজেন মাস্ক সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভেতরটা শীততাপ নিয়ন্ত্রিত। মোহরের চোয়ালের অংশটা প্লাস্টার করা, বাঁ পাশের দিকে কিছুটা অংশ ড্রেসিং করা, বাঁ চোখটা এখনো বন্ধ হয়ে ফুলে রয়েছে।
"কিরে মা এখন কেমন লাগছে?" ভৈরববাবু জিজ্ঞেস করলেন।
মোহর ঘাড় নাড়িয়ে কিছু একটা বোঝাতে চাইলো।
এখন মাস খানেক কথা বলতে পারবেনা ও। যতদিন না অবধি প্লাস্টার খোলা হয়।
ভৈরববাবু বললেন, "জানিস মা, একটা ছেলে খুব সাহায্য করলো রে আমাদের। নাহলে যা বিপদে পড়েছিলাম। রক্ত জোগাড় করা ওষুধ আনা, ও না থাকলে যে কি হতো! খুব ভালো ছেলেটা। বললাম তোর সাথে দেখা করতে, করলো না। শুধু বললো এই রবিবার তোকে টিংগো রেডিওটা শোনাতে।"
মোহর বেশ কিছুটা অবাক হলো। মনে মনে ভাবলো, রবিবারের শো তো ও নিজে কন্ডাক্ট করতো। ওটা কেন শুনতে বলল? কি হবে ওই শো তে।
নার্স এসে চলে যেতে বলল ভৈরববাবুকে।মোহরের ঘুমানো দরকার।
সেই রবিবার,
আমি আকাশে পাতিয়া কান
শুনেছি শুনেছি তোমারি
গান,
আমি তোমারে সঁপেছি
প্রাণ ওগো বিদেশিনী।
ভুবন ভ্রমিয়া শেষে আমি
এসেছি নূতন দেশে,
আমি অতিথি তোমারি
দ্বারে ওগো বিদেশিনী॥

আমি চিনি গো চিনি
তোমারে ওগো বিদেশিনী।।

আপনারা শুনছেন রবি অন এয়ার উইথ আর জে পৃথ্বী। হ্যাঁ বিশেষ কারণ বশতঃ আজ আর জে মোহর এর জায়গায় আমি আর জে পৃথ্বী সাথে নিয়ে রবি ঠাকুরের বেশ কিছু অনবদ্য সৃষ্টি।
                                              
মাস দেড়েক পর,
"ম্যাডাম, আসতে পারি?"
নিজের ঘরের বিছানায় শুয়ে আছে মোহর। একটা সাদা আলোর পি এল জ্বলছে। আওয়াজটা শুনেই  দরজার দিকে তাকালো ও।
"তুমি! মানে আপনি! কি দরকার?"
"এখানে দাঁড়িয়েই বলবো?"
"না মানে আসুন ভেতরে। টিউব লাইট টা...."
"আমি জ্বালিয়ে নিচ্ছি। তুমি বেশি নড়াচড়া করোনা। এখনো মাস খানেক লাগবে বলেছে ডাক্তার।" এই বলে ছেলেটা টিউবলাইট টা জ্বালিয়ে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বিছানার পাশে গিয়ে বসলো।
"এখন কেমন অবস্থা শরীরের? কথা বলতে অসুবিধা হচ্ছে না তো?"
"আগের থেকে অনেকটা বেটার। কিন্তু ওই একটু তো কষ্ট হচ্ছেই কথা বলতে।"
"তাহলে আর কিছু বলতে হবেনা। আমি বলছি তুমি শোনো।" এই বলে একটানা কথা গুলো বলতে থাকলো ছেলেটা।
"দু দিন আগে স্টুডিওতে এসে থ্রেট, তারপর উড়ো ফোন করে বাড়িতে থ্রেট, আর তার দু দিন পর রোড এক্সিডেন্ট। পুরো ঘটনাটা লিঙ্কড কিনা জানার জন্য আমি বেশ কিছুদিন থেকে বেশ কিছু খোঁজ চালাচ্ছিলাম। আর এই কয়েকদিনে আমার হাতে এসে পৌঁছেছে একটা সি সি টিভি রেকর্ডিং, যেটা এক্সিডেন্ট স্পট এর সামনের বাড়ির সি সি টিভি থেকে পেয়েছি। যেটা তে গাড়িটা স্পষ্ট কিন্তু অন্ধকার থাকায় নাম্বার প্লেট বোঝা যাচ্ছেনা। আর উড়ো ফোনের ফোন নাম্বার ট্রেস করা হয়েছে। আরো বেশ কিছু তথ্য আছে। যেটা আমাদের উকিল মিস্টার রক্ষিতের কাছে পৌঁছে গিয়েছে।"
"কিন্তু তুমি এত কিছু হঠাৎ কেন আর কিভাবেই বা...." মোহরের কথা শেষ করতে দিলোনা ছেলেটা বলল,
"বলেছি না তুমি কিছু বলবেনা। এবার সময় এসে গিয়েছে। লড়াইটা শুরু করার। তৈরি তো?"
মোহর ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।
ছেলেটা বলল, "আচ্ছা বেশ! এখন তাহলে চলি। আবার একটু অফিস ঢুকতে হবে। তোমার জন্য বেশ কিছু বই দিয়ে যাবো। পড়ে দেখো, সময় কাটবে।"
মোহরের চোখের কোণের জল চিকচিক করে উঠলো। ও বলল, "বাংলার উচ্চারণ একদম স্পষ্ট দেখছি। তো কোন কাগজে আছেন মিস্টার পৃথ্বী"
আবারও কথাটা শেষ করতে দিলোনা ছেলেটা। বললো "দিনের খবর পত্রিকা। আর কথা বলোনা। এখনো সম্পূর্ন সুস্থ হওনি কিন্তু। গান শুনবে?"
মোহর আবার ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।
পৃথ্বী ঘর থেকে বের হবার আগে হোম থিয়েটারটা চালিয়ে দিলো।
গান বাজতে থাকলো রবি ঠাকুরের,
                  " মুখে হাসি তবু চোখে জল না শুকায় রে
                              হায় ভীরু প্রেম হায় রে।
                    জয় করে তবু ভয় কেন তোর যায়না
                               হায় ভীরু প্রেম হায় রে।"

আর চোখ দিয়ে অঝোরে জল ঝরতে থাকলো মোহরের।
                                                
"মোহর মা, জেগে আছিস? দেখ কে এসেছেন তো সাথে দেখা করতে!" ভৈরব বাবু মোহরের ঘরে ঢুকে টিউবলাইটটা জ্বালালেন। সাথে এক মাঝবয়সী ভদ্রলোক, চোখে রিমলেস চশমা আর গায়ে কালো ব্লেজার।
"ও মিস্টার রক্ষিত আপনি! আসুন প্লিজ।"
"তুমি আমায় এক দেখায় চিনে গেলে? কিভাবে?"
"হা হা। একচুয়ালি পৃথ্বী আপনার ফটো দেখিয়ে বলেছিল আপনি আসবেন। কেসটা নিয়ে আলোচনা করতে। তাই আর কি!" সামান্য হেসে বললো মোহর।
"ওহ! তাই বলি। তো এখন শরীর কেমন আছে তোমার?"
 "ওই আর কি আছে এক রকম। আগের চেয়ে অনেকটা বেটার।"
"আজ মঙ্গলবার। আগামী শুক্রবার আমাদের কোর্টের প্রথম ডেট। তুমি জানো তো তোমাকে কি কি বলতে হবে? তুমি তোমার স্টেটমেন্টে স্টেবেল থেকো। বাকি আমি সামলে নেবো।"
সেই শুক্রবার,
"সেদিনের ঘটনায় যে ফুটেজ গুলো পাওয়া গিয়েছে সেগুলির কোনোটিতেই আমার মক্কেল শম্ভু মন্ডলের কোনো চিহ্ন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তারপর ও কিভাবে....."
"অবজেকশন মাই লর্ড। এই ফুটেজগুলো থেকে গাড়ি ছাড়া আর কিছুই বোঝা যাচ্ছেনা। আর গাড়ির ভেতরে যদি কেউ থাকেও তাহলে সেটা কালো কাঁচের ভেতর দিয়ে কোনো ভাবেই বোঝা সম্ভব নয়। আর পুলিশের জেরায় তো শম্ভু নিজেই স্বীকার করেছে যে গাড়িতে ও-ই ছিল।"
"নো মাই লর্ড। আমার মক্কেল পুলিশের থার্ড ডিগ্রির চাপ নিতে পারেনি। তাই ওই সব বলেছে।"
নিজের উকিলের কথার সাথে সম্মতি জানায় শম্ভু।
"শম্ভু মন্ডলের ফোন ট্রেস করে জানা যায় সে সময় উনি ঘটনার স্পটেই ছিলেন। আমি মহামান্য আদালতকে তার চার্ট আগেই জমা করে দিয়েছি।" মিস্টার রক্ষিত বললেন।
আজকের আদালত এখানেই স্থগিত থাকলো।
মোহর বাইরে বেরিয়ে গাড়িতে গিয়ে উঠলো। পৃথ্বী আসেনি আজ। "আসলো না কেন আজ? কি প্রমাণ করতে চাইলো না এসে?" মনে মনে খুব রাগ রাগ হলো ওর।
গাড়ি চলতে শুরু করলো। মিউজিক প্লেয়ারে গান চালিয়ে বাইরে তাকালো ও। গান বাজতে থাকলো। রবি ঠাকুরের গান,

            হৃদয়ের এ কূল, ও কূল, দু কূল ভেসে যায়
                    হায় সজনি, উথলে নয়নবারি
             হৃদয়ের এ কূল, ও কূল, দু কূল ভেসে যায়
                    হায় সজনি, উথলে নয়নবারি

                                         
ছয় মাস পর,
"সকল সাক্ষ্য প্রমাণ থেকে আজকের আদালত এই সিদ্ধান্তে এসেছে যে, মোহর মুখার্জীকে হত্যার চেষ্টা করার জন্য আদালত দোষী শম্ভু মন্ডলকে আই. পি. সি সেকশন ৩০৭ এর আওতায় রেখে দশ বছরের কারাদন্ড আর পঁচিশ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়ার আদেশ জানালো।"
ভৈরব বাবু আনন্দে জড়িয়ে ধরলেন মোহরকে। টানা ছয় মাসের লড়াইয়ের পর অবশেষে জয়।
"কাকু চলুন আপনাদের বাড়িতে ড্রপ করে দেই।" ভৈরববাবুকে বলল পৃথ্বী।
"আচ্ছা বেশ। কিন্তু আজ কিন্তু খেয়ে যেতে হবে।"
"না কাকু। আজ না।  আবার তো আসবোই। একটা জরুরী কাজ আছে।"
"আবার কি কাজ?" ভৈরববাবু বেশ চিন্তিত ভাবে বললেন।
"আছে। ওটা সারপ্রাইজ।"
গাড়িতে উঠেই মোহর এফ এম চালাতে গেল। পৃথ্বী বাঁধা দিলো। বললো,
"গাড়ির গ্লোভ বক্সটা খুলে দেখো একটা গিফ্ট আছে।"
মোহর গ্লোভ বক্সটা খুললো। একটা সিডি। নির্বাচিত রবীন্দ্র সঙ্গীত। মোহর চালালো সিডিটা। গাড়ি চলতে থাকলো, সাথে রবি ঠাকুরের গান,
                 আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে,
                  আমার মুক্তি ধুলায় ধুলায় ঘাসে ঘাসে॥
             দেহ মনের সুদূর পারে হারিয়ে ফেলি আপনারে,
                গানের সুরে আমার মুক্তি উর্ধ্বে ভাসে॥
তিন দিন পর,
কলিং বেল বাজলো।
"নমস্কার। আমার নাম প্রীতিনাথ রায় চৌধুরী।"
"আরেহ! আসুন আসুন ভেতরে আসুন।" ভৈরববাবু বললেন।
"এতো কিছু আনার কি দরকার ছিল। আপনারা তো নিজের লোকই।"
"কি যে বলেন। আপনারা আপন তার সাথে মিষ্টির কি সম্পর্ক। একটা সম্পর্কের সূচনা মিষ্টি দিয়েই তো করা উচিত।"
"ঠিক বুঝলাম না দাদা। সম্পর্কের সূচনা বলতে?"
"আমার ছেলে পৃথ্বীরাজ আপনার মেয়েকে ভালোবাসে। যদি আপনি সম্মতি দেন তো একটা শুভ দিন দেখে...."
"অবশ্যই। আমরা তো রাজি। পৃথ্বী আমাদের জন্য যা করেছে। ও তো আমাদের ছেলের মতো। আপনি শুভ দিন দেখুন।"
"বাহ! তাহলে তো হয়েই গেল। কিন্তু ওরা একবার নিজেদের মতো কথা বলে নিক"
মোহর এতক্ষণ স্থির হয়ে ছিল। কি হচ্ছে ওর কিছুই মাথায় ঢুকছিলনা। এবার মনে মনে ভাবলো, যাক এবার সবটা খোলসা করবে।
ওদেরকে মোহরের ঘরে পাঠিয়ে দিলো ভৈরববাবু।
"কি ব্যাপার? এসব কি? পৃথ্বী রাই থেকে পৃথ্বীরাজ রায় চৌধুরী! কি হচ্ছে কিছুই তো বুঝতে পারছিনা।
"তখন যদি বলতাম আমি সম্ভ্রান্ত বনেদি বাঙালি পরিবারের ছেলে তাহলে এই পাগলী মেয়েটার কথার দৃঢ়তাই তো বুঝতে পারতাম না। জানো সেদিন তোমার ওই কথা গুলো আমাকে আরো বেশি করে বাধ্য করেছিল তোমাকে ভালোবাসতে।"
"তাহলে মাঝে এত বছর কোথায় ছিলে তুমি? তখন কেন এলেনা?"
"কলেজ পাশ করে আমি চলে গিয়েছিলাম ফ্রাঙ্কফুর্ট, জার্মানি।  ওখান থেকে যখন ফিরে আসি দেশে তখন তুমি রেডিওতে কাজ করছো। ভেবেছিলাম আসবো। সব ঠিক ও করে ফেলি আর তখনই এক্সিডেন্ট।"
"যাহ! আমি আরো ভাবলাম সকালে উঠে ধোকলা খেতে পারবো। সেই অ্যাকোয়ারিয়ামে ডুবেই মরতে হবে।" মুখ টিপে হাসলো মোহর।
"ইন্ডিয়ান সাউথ ইন্ডিয়ান বা বিদেশী সব ডিশ বানানোর সম্পূর্ণ স্বাধীনতা আছে। বানিয়ে নিয়ো। হা হা হা।"
"তাহলে বিয়েটা করতেই হবে? আচ্ছা বেশ তাহলে ভালোভাবে প্রপোজ করো।"
"আচ্ছা বেশ তাই সই।" মোহরের সামনে এসে ওর হাতটা ধরলো পৃথ্বী। তারপর বলল,
"পথ বেঁধে দিলো বন্ধনহীন গ্রন্থি। আমরা দুজন চলতি হওয়ার পন্থী।"
"এ আবার কেমন প্রপোজাল! হঠাৎ শেষের কবিতা কেন?"
পৃথ্বী একটানে মোহরকে নিজের একদম কাছে টেনে নিলো। তারপর কানে কানে বলল,
"শেষ থেকে শুরু করবো বলে...."
                                      ।।।সমাপ্ত।।।

(গল্পের সমস্ত ঘটনাই কাল্পনিক। বাস্তবের সাথে কোনো মিল থাকলে তা সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত।)




লেখক- দ্বীপজ্যোতি গাঙ্গুলি