কবিতা- অভিসার
কবি- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
নাট্যরূপ- বিক্রম শীল
দৃশ্য- ০১
প্রেক্ষাপট- বোধিসত্তাবদান-কল্পলতা সন্ন্যাসী উপগুপ্ত একদিন মথুরাপুরীর প্রাচীরের নীচে ধ্যানমগ্ন ছিলেন, নগরের দীপ বাতাসে নিভে
গেছে, পৌর ভবনের দুয়ারও
বন্ধ, শ্রাবণের রাতের তারা ছিল মেঘে ঢাকা। হঠাৎ কারো নূপুর পায়ে হেঁটে
আসার শব্দ শোনা গেল! সন্ন্যাসী চমকে
জেগে উঠলেন, স্বপ্ন জড়িমা এক পলকে ভেঙ্গে গেল, আবছায়া দীপের আলোতে তার ক্ষমাসুন্দর চোখে তিনি দেখলেন নগরীর
এক যৌবনমত্তা নটী তার নির্দিষ্ট অভিসারে
হেঁটে চলছেন। তার অঙ্গে সুনীল বরণ এর আঁচ, রুনুঝুনু শব্দে তার শরীরের অলঙ্কারগুলো শব্দ করছে। সন্ন্যাসীর কাছে
এসে পা থমকে গেল বাসবদত্তার।
প্রদীপ ধরে সন্ন্যাসীর নবীন গৌরকান্তি মুখের দিকে তাকালো সেই রমণী- সন্ন্যাসীর উজ্জ্বল মুখমণ্ডল, দু’চোখ থেকে যেন করুনার আলো
ছড়িয়ে পড়ছে, সাদা কপালে যেন চাঁদের মতো স্নিগ্ধ
শান্তি ছড়িয়ে পড়েছে।
চোখে লজ্জা জড়িয়ে নরম কণ্ঠে, রমণী বললেন- “আমায় ক্ষমা করুন কুমার কিশোর,
যদি দয়া কর আমার গৃহে চলেন। এই
কঠিন ধরণীতলে থাকা খুব কষ্টকর, এখানে আপনি থাকতে পারবেন না।’’
সন্ন্যাসী করুণ সুরে রমণীর
দিকে তাকিয়ে বললেন- "এখনো আমার যাওয়ার সময় হয়নি, তুমি যেখানে যাচ্ছ সেখানে যাও, যেদিন সময় আসবে আমি নিজেই
তোমার কাছে যাবো।"
হঠাৎ সেখানে বজ্রপাত হল, ঝড়-ঝঞ্জা
শুরু হল, রমণী ভয়ে কেপে উঠলেন, বাতাসে যেন প্রলয়শঙ্খ বেজে উঠলো। সারা আকাশ জুড়ে বজ্রপাতের মাধ্যমে কেউ যেন অট্টহাসি দিতে লাগলো।
দৃশ্য-২
প্রেক্ষাপট- বছর তখনও শেষ হয়নি, সেদিন ছিল চৈত্র মাসের
এক সন্ধ্যা। বাতাস উতলা আকুল হয়ে উঠেছিল সেদিন। পথের ধারের গাছগুলোতে মুকুল এসেছে। রাজার বাগানে বকুল, পারুল, রজনীগন্ধা
ফুল ফুটেছে। অনেক দূর থেকে বাঁশির মধুর সুর ভেসে আসছিল। আজ নগর একেবারে জনহীন, নগরের সবাই মধুবনে ফুল-উৎসবে যোগ দিতে গেছেন। শূন্য নগরের আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ যেন নীরবে হাসছে। নির্জন পথে জ্যোৎস্না-আলোতে এক সন্ন্যাসী একাকি পথ চলছেন। মাথার ওপরে গাছের ডালে
থাকা কোকিল কুহু কুহু রবে বারবার ডাকছে। এতদিন পরে আজ হয়তো সেই অভিসাররাত্রি
এসেছে।
নগরের সীমানা পেরিয়ে সন্ন্যাসী
বাইরের প্রাচীরপ্রান্তে এসে পৌঁছুলেন। এসে দাঁড়ালেন পরিখার পাড়ে, হঠাৎ আম্রবনের ছায়ায় গাছের নীচের আঁধারে কোন এক রমণীকে তিনি পড়ে থাকতে
দেখলেন। কাছে গিয়ে দেখলেন নিদারুণ রোগে মারীগুটিকায় তার অঙ্গ ভরে গেছে। তার প্রায় সারা শরীর রোগে কালো হয়ে গেছে। সেকারণে
নগরের প্রজারা তাকে পরিখার বাইরে ফেলে দিয়ে গেছে। তাকে বিষাক্ত ভেবে সবাই তার সঙ্গ
ছেড়ে দিয়েছে।
সন্ন্যাসী নীচে বসে রমণীর আড়ষ্ট মাথা নিজের কোলে
তুলে নিলেন। তার শুষ্ক গলায় জল ঢেলে দিলেন। মন্ত্র পড়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে
দিলেন। রমণীর সারা দেহে চন্দন লেপে দিলেন।
সেদিন জোস্না রাতে গাছের মুকুল ঝরছে,
কোকিলের কুহু কুহু ডাক শোনা যাচ্ছে।
রমণী বললো- “ওগো দয়াময় তুমি কে?”
সন্ন্যাসী বললেন- “আজ রাতেই সেই সময়
এসেছে, আমি তোমার কাছে এসেছি বাসবদত্তা!”
(নাট্যরূপটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর এর চরণতলে একটি শ্রদ্ধার্ঘ্য মাত্র, কবির লেখনীর নাট্যরূপ দেওয়ার ধৃষ্টতা
মার্জনা করবেন, যেকোনো ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখবেন এই নিবেদন রইলো-
বিনীত লেখক)
0 comments:
Post a Comment