Aug 30, 2020
Aug 24, 2020
"এই তো এভাবেই" - লগ্নজিতা দাশগুপ্ত
Edit Posted by নেট ফড়িং with No comments
এই তো এভাবেই
লগ্নজিতা দাশগুপ্ত
১
ফ্রিজ থেকে গত পরশুর বানানো চিঙড়ির মালাইকারিটা বের করে টেবিলে রাখলো মোহর।
তাঁর পর গরম ভাতের সাথে মেখে খাওয়া শুরু করলো। মোহরের শাশুড়ি মা তো অবাক। যে মেয়েকে
একদিন মাছ খাওয়াতে তাঁর কালঘাম ছুটেছে সেই মেয়ে কিনা মাছ খাচ্ছে তাও চিংড়ি মাছ, একাদশীর
দিন।
"মতি ফিরেছে তবে"...
'পাত্রপক্ষকে আসতে বলে দাও"...
হার্ট এট্যাক আসবে তো এবার আমার, তুই সব শুনছিস আমার কথা।"
"সেইদিন অ্যাকসিডেন্ট এর সময় আলেখ্য সাথে মন্দারমণি থেকে ফেরার পথে
ওর পি.এ কাম সুন্দরী বান্ধবীও মারা যায়।"
"বলিনি, তবে কৈফিয়ত হিসেবে যদি বলিস তবে বলবো কেউ না থাকা কষ্টের কিন্তু
বিশ্বাসভঙ্গ বেশী ক্ষত তৈরী করে..."
"তবে তুমিও বলোনি..."
"সন্তানের প্ৰিয় জিনিস হারিয়ে গেলে সন্তানের কষ্ট মা সহ্য করে নেয়
কিন্তু সেই সন্তানের বিশ্বাস ভাঙলে কিভাবে জোড়া লাগাতে হয় আমার জানা ছিল না রে মা..."
"তুমি মা না হয়ে শাশুড়ি হলেই ভালো হতো আমাকে অন্তত নতুন শ্বশুরবাড়ি
যাওয়ার সময় কাঁদতে হতো না..."
"পাগলী মেয়ে আমার..."
২
প্রাসাদসম বাড়িটা থেকে বেরিয়ে এলো কেকা। একদিন সাধ করে নিজের ডাক্তারী বিদ্যা,
মা-বাবাকে ছেড়ে সৈকত এর হাত ধরে এই বাড়িতে ঢুকেছিল। ওর ডাক্তার বাবা-মা এর সৈকতকে পছন্দ
ছিল না কারণ সৈকত এর দাবি ছিল গোল্ড মেডেলিস্ট ডাক্তার কেকা ভট্টাচাৰ্য প্র্যাক্টিস
করতে পারবে না কারণ এতে সে সংসার-সন্তানকে সময় দিতে পারবে না। ছোটবেলার থেকে আয়ার কাছে
মানুষ হওয়া কেকা রাজি হয়ে গিয়েছিলো। শুধু বাড়ির থেকে বেরোনোর আগে বাবা বলেছিলো
"কখনও ফিরতে ইচ্ছে করলে ফিরিস, তোর মা আমি বিনামূল্যে যেখানে চেম্বার করি ওখানেই
তুইও রোগী দেখিস"। একবুক স্বপ্ন নিয়ে হাত ধরেছিলো সৈকত এর। সবটা সত্যি হয়েছিল
কিন্তু পাপের পাহাড়ের ওপরে দাঁড়িয়ে। তাই নিজেদের অ্যানিভার্সারির রাতে যখন নেশাতুর
সৈকত পার্টনার এর সাথে নার্সিংহোমের সমস্ত বেআইনি কাজের আলোচনা করছিল অলক্ষ্যে সবটা
শুনে বিদ্রোহ করেছিল কেকার মন। সাতপাঁকের মন্ত্রগুলো খুব ফিকে হয়ে গিয়েছিলো ডাক্তারী
ডিএনএ আর ডাক্তার হওয়ার সময় কেকার শপথ বাক্য এর সামনে। তাই আজ প্রমাণ এর সাহায্যে সৈকত
ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা জেলে আর কেকার আজ নিজের বাড়ির পথে।
ঘরে ফেরার গান গাইছে যেন কেউ।
৩
সার্টিফিকেটে আর নিজের জমানো অর্থে কেনা কিছু বই নিয়ে বাড়ি ছাড়লো আলোলিকা
মুখার্জী। বাবা বললো আমার একটাই পুত্র সন্তান, কন্যাটি আজ থেকে মৃত, জেঠু-কাকা বললো
চিরকাল এর জন্য বাড়ির দরজা বন্ধ, দাদা জানিয়ে দিলো ভুলেও এ রাস্তায় পা মারাস না। আর
লোকজন বললো স্বার্থপর।
পেছনে পরে রইলো মুখার্জীবাড়ি, আলোলিকার আজন্ম নারী হয়ে জন্মানোর অপরাধে
গুমরানো কান্না। লোকে আলোলিকা স্বার্থপর বললো ঠিকই কিন্তু সে নিজে জানে এই সুবিশাল
পৃথিবীতে সে সম্মান-ভালোবাসা যদি কখনও কারও কাছে পেয়ে থাকে সেটা শেখর। কিন্তু তাঁদের
অপরাধ, শেখর দত্ত কখনও মুখুজ্জ্যদের জামাই হতে পারবে না, একে জাতে নীচু তাঁর ওপর কলেজ
এ মাস্টারি করা মেয়ে কিনা নাটক লেখা ছেলেকে বিয়ে করবে। কিন্তু ওই যে বিদ্রোহী মন, আর
প্রেমের জন্য তো সে বারবার বিদ্রোহ করেছে। তাই আলোলিকা জীবনে প্রথমবার বিদ্রোহটা করেই
বসলো।
৪
এবার আর মা কাকিমার কথা না শুনে নিজের প্ৰিয় আসমানী জামদানীটা পরেই পাত্রপক্ষের
সামনে বসবে বলে ঠিক করলো কোপাই। কারণ জানো এবারও রঙের জন্য সে রিজেক্ট হবে। তাঁর ইউনিভার্সিটি
কিংবা গান-নাচের ডিগ্রী আর ইউটিউব এ রান্নার চ্যানেল এর সামনে পাহাড়প্রমাণ উচ্চতা নিয়ে
দাঁড়াবে তাঁর গায়ের রং। তাই এবার নিজের প্ৰিয় রঙটাই পরলো সে।
কিন্তু চায়ের কাপ নিয়ে পাত্রপক্ষের সামনে ঢুকতেই পাত্রকে দেখে চক্ষুচরক
গাছ। সেই হরলিক্স এর বোতল। মানে এই নামেই আলোককে ডাকতো ওদের ক্লাসের মেয়েরা। পড়াশোনায়
তুখোড় হলেও এক ক্লাস সিনিয়র আলোকের হাই পাওয়ারি চশমা আর শান্তশিষ্ট আচরণ এর জন্যই তাকে
সবাই খ্যাপাতো । ঠিক যেমন কোপাইকে কালা কাক বলতো ওরা সবাই।
আজ রিমলেস চশমার আড়ালে সেই সরস্বতী পুজোয় আসমানী কোপাইকে যে চোখ জোড়া আটকে
রাখতো তাকে চিনতে অসুবিধে হলো না কোপাই এর। সে যতই ক্লাস টেনের আলোক আজ ডক্টর আলোক
রায় হোক, প্রেমিক এর মন তো তাই ঠিক কোপাই এর তীরে ঠিক চলে এসেছে।
আর ওদিকে একজন ওপর থেকে আসমানী বেনারসী পরা কোপাই এর বিয়ের ফ্রেম সাজাতে
ব্যস্ত তখন যখন গোধূলি লগ্নে ছাতে একান্তে আলাপচারিতায় উঠে ছিল আলোক আর কোপাই।
কণে দেখা আলো কী তবে এটাই,কোপাই যে বড়ো লজ্জা পাচ্ছে ক্লাস নাইন এর কিশোরীর
মতো।
৫
প্ৰিয় দক্ষিণী কালো পোশাক আর লাল লিপস্টিকটা ঠোঁটে লাগিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে
এলো শুভ্রশ্বেতা। অন্তরীক্ষ এর একদম পছন্দ না পশ্চিমী সাজ আর গাড় লিপস্টিক। কিন্তু
পশ্চিমী দেশে অর্থ কামাতে যাওয়ার ইচ্ছেটা তাঁর বরাবর এর আছে। তাই সাত বছরের সম্পর্কটাকে
বিদায় জানালো শুভ্রশ্বেতা। কারণ এতদিন সে শুধুই সে অন্তরীক্ষ এর জন্য বেঁচেছে, কিন্তু
আজ থেকে সে শুধুই নিজের জন্য বাঁচবে। তিলোত্তমায় তাঁর জীবন এর সুর বাজে তাই গানের স্কুল
ছেড়ে সে কিছুতেই বিদেশে সংসার পাতবে না।
৬
ট্যাক্সিটাকে ফুচকার দোকানের সামনে দাঁড়াতে বললো মৃণালিনী, অনেকদিন সে রাস্তায়
দাঁড়িয়ে ফুচকা খায় না সেই স্কুলবেলার মতো। কারণ একটাই ওয়েট মেইনটেইন আর আনহাইজেনিক
ওর উচ্চবৃত্ত শ্বশুরবাড়ির স্ট্যাটাস এর সাথে মেলে না। আজ মন ভরে ফুচকা খেলো সে, এইসময়
নাকি টক খেতে ভালো লাগে। পাশের দোকান থেকে এক প্যাকেট বিরিয়ানিও নিয়ে নিলো। রাতে হোস্টেল
এ গিয়ে প্রথম দিন আর কোথায় খাওয়ার আনতে যাবে এত দিন শুধুই স্যালাড আর জুস খাইয়ে রাখতো
ওর শাশুড়ি কারণ বডি ফিটনেস। আজ অনেকদিন পর সে মন ভরে খাবে।
ও হ্যাঁ বলা হয়নি আজ মৃণালিনী সেন থুড়ি মৃণালিনী গুহ উচ্চবৃত্ত শ্বশুরবাড়ি
ছেড়েছে। শ্বশুরবাড়ির লোকের কোনো দোষ নেই, সব অপরাধ মৃণালিনীর। কারণ একে তো গর্ভে কন্যাসন্তান
তায় সে গর্ভপাত করতে রাজি হয়নি। তাই আজ গার্লস হোস্টেলমুখী মৃণালিনী। আবৃত্তির স্কুলটা
নতুন করে শুরু করবে সে।
৭
আট বছরের সম্পর্কটা থেকে বেরিয়ে এলো শুদ্ধসত্তা। বিশেষ কিছুই না সংসার করতে
হলে ওর সাধের ঘুঙুরগুলোকে ছাড়তে হবে, এমনটাই শর্ত ছিল রণিত এর মায়ের। নির্লিপ্ত ছিল
রণিত। কারণ ভদ্র বাড়ির মেয়ে বউরা নাচে না। কিন্তু আঠারো বছরের ছন্দময় সম্পর্কের সামনে
আট বছরের সম্পর্ক এর তাল কেঁটে গেলো।
৮
ডিভোর্স পেপারে সই করে কোর্ট থেকে বেরিয়ে এলো মুকুলিকা। রণর দোষ বিশেষ কিছুই
ছিল না শুধুই রাগের মাথায় ফুলদানি ছুঁড়ে মেরেছিল মুকুলিকার দিকে আর কপালটা একটু ফেঁটে
গিয়েছিলো মুকুলিকার। দাগটা মিশে গেছে কিন্তু বুকের ভেতরের ক্ষতটা সারেনি। মা-শাশুড়ি
মা বলেছিল পুরুষ মানুষের অমন একটু-আধটু রাগ থাকেই বাপু, তাই একটু মানিয়ে নিতে হয়। কিন্তু
না মুকুলিকা এই পুরুষমানুষের একটু-আধটু রাগ মেনে নিতে পারেনি। কারণ তাঁর কাছে পুরুষ
ওর মতোই মানুষ সিংহ নহে।
Aug 23, 2020
নেট ফড়িং সংখ্যা- ১৫৫
Edit Posted by নেট ফড়িং with No commentsAug 19, 2020
"স্বীকারোক্তি" - সময়ীতা ঘোষ
Edit Posted by নেট ফড়িং with No commentsস্বীকারোক্তি
সময়ীতা ঘোষ
"পলাশবাবু আপনার কী মনে হয়, সে রাতে কে এসেছিল? লতিকাদেবীর সাথেই বা
তার কীসের শত্রুতা? আপনার ছেলের মুখে শুনলাম সে রাতে তিনি বাড়িতে ছিল না। উনি মাঝরাতে
দরজাটা হয়তো ছেলে এসেছে ভেবেই খুলেছিলেন।"
"আমি কিচ্ছু জানি না স্যার। আমি খবরটা পেয়েই কলকাতা ফিরলাম। আপনি অপরাধীকে
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খুঁজে বের করুন। লতুর যে এই অবস্থা করেছে তার যেন শাস্তি হয়।"
"না" বলে চিৎকার করে উঠলাম আমি। আমি নিজেই যে দায়ী আমার এই অবস্থার
জন্য। জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে আমার মনে হয়েছিল আমিই ঠিক কিন্তু সত্যিটা উপলব্ধি করাও
জরুরী ছিল।
বসুধা'র কথা আজ ভীষণ মনে পড়ছে। তোমার মনে আছে পলাশ, সেদিন আমাদের ঠিক কতটা
অপমানিত হতে হয়েছিল? তুমি ঠিকই বলেছিলে শুধুমাত্র জন্ম দিলে মা হওয়া যায় না। তখন অভিমান
করে কতদিন তোমার সাথে বলিনি কিন্তু তুমি ভুল কিছু তো বলোনি। সেবার আমার ম্যালেরিয়া
না হলে হয়তো তখন'ই পথ দুটো আলাদা হয়ে যেত।
"রিদমকে বোঝাও লতু। এভাবে গুরুজনদের সাথে কথা বলা যায় না। তোমার ছেলের
জন্য আমার লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে।"
"ভুল কি বলেছে? আমরা ভদ্রতার খাতিরে যা বলতে পারিনা বাবু সেটাই খুব
সহজে বলে দিয়েছে। ভুল কিছু তো করেনি।"
"তুমি পাগল হয়ে গেছো লতু, অন্ধ হয়ে গেছো তুমি।"
তুমি সেদিন ঠিকই বলেছিলে পলাশ। আমি সারাজীবন যা ঠিক মনে হয়েছে তাই করেছি।
আমি ভালো স্ত্রী, ভালো মা দুটোর কোনোটাই হয়ে উঠতে পারিনি।
তোমার নীলের কথা মনে আছে পলাশ? সেবার যখন বাবু নীলের মাথা ফাটিয়ে দেয়, রক্তিমাদে বী বলেছিলেন আমি একজন মা হিসেবে ব্যর্থ; আমি পারিনি
আমার সন্তানকে মানুষ করতে। কিন্তু পলাশ তুমি'ও যে ব্যর্থ বাবা হিসেবে। যখন তোমার আমাদের
ছেলের পাশে থাকা উচিত ছিল, বাবুকে বোঝানো উচিত ছিল তখন শুধুমাত্র তোমার খ্যাতি ধূলিসাৎ
হয়ে যাওয়ার ভয়ে তুমি আমাদের থেকে অনেক দূরে সরে গেলে। তুমি বদলি নিয়ে চলে গেলে উত্তরবঙ্গে।
ডিভোর্সটা দাওনি সেটাও হয়তো তোমার ভয়ের কারণেই।
তোমায় আমি কখনো কিছু বলিনি কিন্তু আজ সব বলবো। বাবু ধীরে ধীরে নেশাগ্রস্ত
হয়ে পড়েছিল, পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিল। তোমার মনে আছে আমরা চাইতাম বাবু বড় হয়ে মস্ত বড়
ডাক্তার হোক? কিন্তু... বাবু সারাদিন ওই ঘরের মধ্যেই পড়ে থাকতো। বেশীরভাগ দিন খেতো
না। আমার সাথে কথা বলা প্রায় ছেড়ে দিয়েছিল। ওর বন্ধুরা সঠিক সময়ে ঠিক যেভাবে তুমি সরে
গিয়েছিলে সেভাবেই সরে গিয়েছিল। কিন্তু আমি পারিনি সরে যেতে, আমি তো মা, আমার সাথে তো
বাবুর নাড়ির টান। সত্যি কথা বলতে কখনো চেষ্টাও করিনি। কিন্তু বাবু'ই আমায় শাস্তি দিতে
অনেক অনেক দূরে পাঠিয়ে দিল। তবে আমি জানি এটাই আমার প্রাপ্য ছিল।
সেদিন বাবু হঠাৎ করে এসে বললো কিছু টাকা লাগবে, হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছো, নেশা
করার জন্যেই। টাকা থাকলে হয়তো দিয়ে দিতাম কিন্তু টাকা ছিল না। এ'মাসের বাজারটা করার
জন্যেও আমায় বৌদির কাছে হাত পাততে হয়েছিল। তুমি মনে করে বৌদিকে টাকাটা দিয়ে দিও।
জানো তো পলাশ, ছেলেটা আমার ভীষণ কাঁদছিল। বারবার ভগবানকে ডাকছিল। আমি জানি
এতক্ষণ আমি যা যা বললাম তুমি তার কিছুই শুনতে পাওনি। একদিন শুনতে চেয়েছিলে কিন্তু আমি
বলিনি। জানি তোমাদের মাঝে একটা অদৃশ্য দেওয়াল রয়েছে, সেই দেওয়ালটা তোমার ভালোবাসা দিয়ে
ভেঙে ফেলো। ভালো থেকো পলাশ; দেখে রেখো বাবুকে।
"বিদ্যাচুরি" - মনামী সরকার
Edit Posted by নেট ফড়িং with No commentsবিদ্যাচুরি
মনামী সরকার
অনেককাল আগের কথা। অবোধ কুমার নামে এক রাজকুমার ছিল। পড়াশোনায় অবোধ কুমারের
একেবারেই মন ছিল না। সারাদিন খেলাধুলা আর দুষ্টামি করে সে দিন পাত করত। তার সহপাঠী
ছিল গ্রামের গরীব ব্রাহ্মণের ছেলে বিদ্যাধর। ছোট থেকেই তার ধ্যান-জ্ঞান ছিল পড়াশোনা।
পাঠশালার অন্যান্য বাচ্চারা যখন খেলাধুলা করত, বিদ্যাধর তখন একের পর এক পুঁথি মুখস্ত
করে চলত। তাতে কুমার বেশ বিরক্ত বোধ করত। তাই নানান কৌশলে বিদ্যাধার কে বিপদে ফেলার
চেষ্টা করত। নানা কৌশলে তার বিদ্যাচর্চায় ব্যাঘাত ঘটাত। স্কুলের মাস্টার মশাইরা সবটা
বুঝতে পেরেও রাজার ছেলে বলে চুপ করে থাকতো। আর যদিও বা কেউ সাহস করে রাজামশাই এর কাছে
ছেলের নামে নালিশ করত, তাহলে উল্টে রাজামশাই তাকে শাস্তি দিতেন। বাবার আশকারায় কুমার
দিনে দিনে অবাধ্য হয়ে উঠেছিল। একটা সময় এলো যখন রাজামশাই নিজেও আর ছেলেকে সামলাতে
পারছিলেন না। ওর যা চাই সেটা যদি বাবা না দিত তাহলে সেটা হয় জোর করে না হয় চুরি করে
নিজের কুক্ষিগত করত। এদিকে বিদ্যাধর বিদ্যা অর্জন করে জ্ঞানী ও চরিত্রবান হয়ে উঠেছে।
রাজ্যে চারিদিকে সবাই তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তাই দেখে কুমারের খুব হিংসে হতো। সে মনে
মনে ভাবল রাজপুত্র আমি, আর জ্ঞানী হবে ওই গরিব ব্রাহ্মণের ছেলেটা ? লোকে ওর প্রশংসা
করবে এটা কিছুতেই হতে দেওয়া যায় না। তাই সে মনে মনে ঠিক করল যে করেই হোক বিদ্যাধর
এর সমস্ত জ্ঞান বুদ্ধি সে কুক্ষিগত করবে। কিন্তু কিভাবে সে সেটা করবে কিছুতেই বুঝে
পাচ্ছিল না। বন্ধুরা বুদ্ধি দিল, বিদ্যাধর এর বাড়িতে যে বইগুলি আছে সেগুলো যদি কোনভাবে
নিয়ে আসা যায় তাহলেই কুমারও জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান হতে পারবে। যেমন কথা তেমন কাজ। একদিন
রাতে কুমার বিদ্যাধর এর বাড়ির সমস্ত বই চুরি করে নিজের বাড়িতে নিয়ে এলো, আর মনে
মনে ভাবল এবার সে জ্ঞানী হয়ে উঠবে। সে বইগুলো নিজের বাড়ির আলমারিতে তালা বন্ধ করে
রেখে দিল। বেশ কিছুদিন কেটে গেল, কিন্তু কুমার কোন বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে পারল না।
কুমার খুব চিন্তায় পড়ে গেল। বিদ্যাধর এর বাড়ি থেকে সমস্ত বইতে চুরি করে নিয়ে এসেছে,
তবু কেন বিদ্যাধর কে জ্ঞানশূন্য করতে পারল না ? এবার আরেক বন্ধু বলল শুনেছি পন্ডিতের
বুদ্ধি নাকি তার টিকির মধ্যে থাকে। একদিন রাত্রিবেলা কুমার বিদ্যাধর এর টিকিটা কেটে চুরি করে নিয়ে এল।
লাভ তাতেও কিছু হলো না। বিদ্যাধর এর জ্ঞানের এতটুকুও কমতি হলোনা তাতে। এবার আরেক বন্ধু
বলল সব জ্ঞান বুঝি ব্যাটা মাথার ভিতরে লুকিয়ে
রেখেছে। রাজকুমারের এবার বিদ্যাধরের মাথাটাই চাই। ও ভাবল বিদ্যাধরের মাথা কেটে ফেললেই
ও সর্বজ্ঞানী হয়ে উঠবে। বিনা অপরাধে বিদ্যাধরের মৃত্যুদণ্ড ঘোষিত হলো। বিদ্যাধর মনে
মনে বিষয়টি বুঝতে পারল। রাজার সেপাই বিদ্যাধর কে ধরে নিয়ে এলো। পরদিন বিদ্যাধর কে
মৃত্যুদণ্ড দেবার আগে কুমার বলল তোমার শেষ ইচ্ছা কিছু থাকলে বলতে পারো। বিদ্যাধর বলল
আমি কটা কথা বলতে চাই। তাকে অনুমতি দেওয়া হল। বিদ্যাধর বলল কে যেন আমার সমস্ত বই চুরি
করে নিয়ে গেছে এমনকি আমার টিকিটাও। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমাকে জ্ঞানশূন্য করতে পারেনি।
তাহলে কি আমার প্রাণনাশ করে সেটা করা সম্ভব ? কারণ পৃথিবীতে জ্ঞান এমন একটা জিনিস যা
কেউ কারো থেকে চুরি করতে পারে না। এটা শুধুমাত্র অধ্যবসায় দ্বারা অর্জন করা যায়।
আর একবার এটা অর্জন করে নিলে সারা জীবন কেউ এটাকে আপনার থেকে আলাদা করতে পারবে না।
কেউ চুরি করেও নিতে পারবে না। বিদ্যাধর এর কথা শুনে আবোধ কুমারের বোধোদয় হল।
Aug 18, 2020
"সিঁদুর শোভা" - ফুল ভৌমিক
Edit Posted by নেট ফড়িং with No comments
সিঁদুর শোভা
ফুল ভৌমিক
অধ্যাপক শৈবাল চক্রবর্তী। বাড়ির ভিতর থেকে বেরিয়ে গেটের কাছে একজন ভিক্ষুক
লোককে দেখতে পেলেন। পেয়ে তিনি তাকে বাড়ির ভিতর নিয়ে গিয়ে পাখার তলায় বসালেন। বসিয়ে
তাকে দেখিয়ে পরমপূজনীয়া মা মীনাক্ষী দেবীকে বললেন, "মা, একে কিছু খেতে দাও!"
তাঁর কথায় মীনাক্ষী দেবী তাকে কিছু খেতে দিলেন। ও তিনি অন্য ঘরে গিয়ে বসলেন।
এরপর ভিক্ষুক লোকটার খাওয়া শেষ হলে পরে অধ্যাপক চক্রবর্তী তাকে পকেট থেকে একটা পাঁচশো
টাকার নোট বের করে দিয়ে বললেন, "তোমাকে তোমার মতো একটা মানুষের ছবি দেখাবো। তুমি
তাকে দেখে চিনতে পারবে?"
"কেমন ছবি দেখান দেখি!"
তিনি মোবাইলে তোলা ছবিটা তখন বের করে দেখালেন। দেখিয়ে বললেন, "এই ছবিটা।
দেখে চিনতে পারছ !"
"চিনতে পারছি।" ছবিটা দেখে ভিক্ষুক লোকটা বলল।
"পারছ!"
"হ্যাঁ, পারছি।"
তিনি তখন বললেন, "লোকটা কোথায় থাকে বলতে পারো? লোকটাকে আমার খুবই দরকার।"
ভিক্ষুক লোকটা তখন বলল যে, সে যে লোকের ছবি দেখল সে লোক আর নেই।
"নেই মানে!" তিনি চমকে উঠলেন।
"মারা গেছে।"
"মারা গেছে!"
"হ্যাঁ, মারা গেছে। মারা যাওয়া তা-ও এদিকে অনেক দিন হয়ে গেল।"
"কিভাবে মারা গেছে?"
"ভিক্ষা করে ফিরছিল। সেইসময় একটা লরির সাথে ধাক্কা লেগে।"
"ইস্!" সঙ্গে সঙ্গে তিনি চোখ বন্ধ করে ফেললেন। তারপর চোখ খুলে
পরে বললেন, "তুমি এসো!" তিনি তাকে আসতে বললেন।
দুই
খবরটা শোনার পর হঠাৎ বিষণ্নতায় তাঁর মনটা কেমন মরে গেল। চেয়ারে বসেছিলেন
বসেই রইলেন। উঠলেন না। মীনাক্ষী দেবী তখন ঘর থেকে বেরিয়ে এসে তাঁকে দেখার পর বললেন,
"কি রে, ভিক্ষুকটা চলে যাওয়ার পর তুই ওভাবে মন খারাপ করে বসে রইলি কেন? কি হয়েছে?"
মীনাক্ষী দেবীর প্রশ্নের উত্তরে তিনি তখন বললেন, "মা, আমি একটা লোককে
অনেক দিন ধরে খুঁজছিলাম। এই ভিক্ষুকটার মুখে আজ শুনলাম যে, সেই লোক আর নেই। মারা গেছে।
হঠাৎ তার এই মৃত্যু সংবাদটা শোনার পর মনটা কেমন খারাপ হয়ে গেল। তাই এইভাবে আমি বসে
রয়েছি।"
মীনাক্ষী দেবী জিজ্ঞেস করলেন, "লোকটা কে?"
তিনি বললেন, "এই ভিক্ষুকটার মতো সে-ও একটা ভিক্ষুক। তা হলেও ভিক্ষুকটার
কথা আমি কোনোদিন ভুলব না। সারাজীবন ভিক্ষুকটা আমার মনে বেঁচে থাকবে। ভিক্ষুকটা যদি
বেঁচে থাকত আর আমি যদি তাকে পেতাম তাহলে আমার বাড়িতে এনে তাকে স্থান দিতাম। হ্যাঁ
মা, সত্যি বলছি। আমি বাড়িতে এনে তাকে স্থান দিতাম।"
মীনাক্ষী দেবী তখন বললেন, "ওই ভিক্ষুকটা তোর জন্য কি এমন মহৎ কাজ করেছে
যার জন্য তুই ভিক্ষুকটার প্রতি এতটা উদার মনোভাব দেখাতে চাইছিস!"
তিনি এর উত্তরে তখন বললেন যে, তিনি যেদিন চাকরির পরীক্ষা দিতে বাড়ি থেকে
কলকাতা গিয়েছিলেন সেদিন বাসস্ট্যান্ডে ওই ভিক্ষুকটাকে তিনি দেখেছিলেন। খালি গায়ে ভিক্ষুকটা
সেদিন ভিক্ষা করছিল। তবে লজ্জা স্থান ঢাকার জন্য পরনে তার শত ছিন্ন একটা গেরুয়া কাপড়
পরা ছিল। ভিক্ষুকটাকে দেখে প্রথমে তাঁর কিছুটা পাগল পাগল বলে মনে হলেও সে যে আসলে পাগল
ছিল না পরে সেটা বোঝা গিয়েছিল। আর হ্যাঁ, বাসস্ট্যান্ডে তখন অনেক ভদ্রলোক আর ভদ্রমহিলা
দাঁড়িয়েছিল। তাদের কাছে ভিক্ষুকটা ভিক্ষা করছিল। "একটা পয়সা দেবে! একটা পয়সা দেবে!..."
কিন্তু একটা পয়সা কোনো ভদ্রলোক অথবা ভদ্রমহিলা তাকে ভিক্ষা দিয়েছিল না। উপর দেখে চকচক
করা মানুষ গুলোর হৃদয়ে ভিক্ষুকটার জন্য একটুও সহানুভূতি বা দয়া জাগ্রত হয়েছিল না। বরং
ভিক্ষুকটার সঙ্গে তাদের মধ্যে অনেকে চাতুরী করেছিল।
"চাতুরী করেছিল!" মীনাক্ষী দেবী শুনতে শুনতে হঠাৎ প্রশ্ন করলেন।
"হ্যাঁ, চাতুরী করেছিল। চাতুরী নয়তো কি! পয়সা দেবেনা কিছু না পকেটে
শুধু হাত ঢুকিয়ে বলেছিল, "খুচরো পয়সা নেই গো!"এটাকে চাতুরী ছাড়া কি বলবে
বলো?"মীনাক্ষী দেবীর প্রশ্নের ওই উত্তর দেওয়ার পর তিনি এবার বললেন, "তাদের
ওই চাতুরী দেখে সেদিন আমার খুবই খারাপ লেগেছিল। খুবই খারাপ লেগেছিল। একি! ভিক্ষা দিবি
না দিবি না। তোদের স্বভাব কেন এরকম। একটা অসহায় ভিক্ষুকের সঙ্গে এত চাতুরী কেন!"
"তুই ভিক্ষা দিয়েছিলি?"
"হ্যাঁ, দিয়েছিলাম। শহরের বাবুদের বাড়ি বাসন ধোওয়ার তুমি তখন কাজ
করতে। আমার সব কথা মনে আছে, মা। সব কথা মনে আছে। কিচ্ছু ভুলিনি। বাবা ছিলেন না বলে
তুমি ওই কাজ করেই আমাকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করেছ। তোমার মতো মাকে পেয়েছিলাম
বলেই আজ আমি অধ্যাপক। হ্যাঁ মা,ফলে আমাদের জীবনে তখন খুব দারিদ্র্য ছিল। কষ্ট ছিল।
দুঃখ ছিল। আর অভাব ছিল। এসব ছিল বলে তুমি সেদিন আমাকে আমার যাতায়াতের জন্য খুব বেশি
পয়সা দিতে পেরেছিলে না। দেওয়ার হয়তো তোমার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু উপায় ছিল না বলে দিতে
পেরেছিলে না। শুধু রাস্তা খরচটা দিয়েছিলে। আর খিদে পেলে সস্তার হোটেল থেকে যাতে দু-বার
ডাল ভাত খাওয়া যায় তার জন্য আলাদা কিছু পয়সা দিয়েছিলে। কয়েন পয়সা। ভাগ্যিস আমার ধূমপানের
নেশা ছিল না। তাহলে কিন্তু ওই পয়সায় হতো না। যাইহোক। আমি পয়সা গুলো আলাদা করে আলাদা
পকেটে ভরে রেখেছিলাম। কিন্তু অসহায় ভিক্ষুকটা যখন আমার কাছে এসে হাত পেতেছিল আমি তাকে
আর সবার মতো শূন্য হাতে ফিরিয়ে দিতে পেরেছিলাম না। তার করুণ মুখটা দেখে আমার খুব মায়া
হয়েছিল। আমার পরনের ফুল প্যান্টের বাম পাশ পকেট থেকে আমি তখন তাকে একটা পাঁচ টাকার
কয়েন বের করে দিয়ে বলেছিলাম, "এত মানুষের মধ্যে কেউ তোমাকে একটা পয়সা দিল না!
আমি তোমাকে একটা পয়সা দিলাম। নাও! "ভিক্ষুকটা তখন পয়সাটা বারকয়েক কপালে ঠেকিয়ে
তার ঘাড়ের মলিন ঝোলাটার ভিতর ভরে নিয়ে আমার গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলেছিল,
"তোর মনটা খুব বড় রে! তোর মনটা খুব বড়! "তারপর বলেছিল, "যা তুই একদিন
খুব বড় দরের মানুষ হবি! খুব বড় দরের মানুষ হবি!" ও উপরে চোখ তুলে ভগবানের উদ্দেশ্যে
বলেছিল, "ভগবান, তুমি একে একদিন একটা মানুষ বানিয়ে দিও। খুব বড় দরের একটা মানুষ
বানিয়ে দিও।" এরপর বাসস্ট্যান্ডে একটা বাস চলে এলে হুড়মুড় করে সবাই বাসে উঠে পড়েছিল।
ভিক্ষুকটার আশীর্বাদ গায়ে মেখে আমিও বাসে উঠে পড়েছিলাম। আমিও বাসে উঠে..."বলতে
বলতে ছবিটা তিনি দেখালে পরে মীনাক্ষী দেবী চমকে উঠে কাঁদতে লাগলেন। কারণ পেশায় ইঞ্জিনিয়ার
এই মানুষটার স্মৃতি আঁকড়ে ধরেই তিনি বেঁচে আছেন। মানুষটা ছিলেন বাউণ্ডুলে। পেশার প্রতি
তিনি কোনোদিনই খুব একটা যত্নবান ছিলেন না। সাধু সন্ত ও ফকির দরবেশদের সঙ্গেই তিনি মেলামেশা
করতে বেশি পছন্দ করতেন। শেষের দিকে সেটা যখন খুব বেশি হয়ে গেল তিনি আর বাড়িতে থাকলেন
না। বাড়ি থেকে হঠাৎ একদিন কোথায় উধাও হয়ে গেলেন। গেলেন তো গেলেনই। ঘরে আর ফিরলেন না।
অনেক খোঁজাখুঁজি করে তাঁরাও আর তাঁর সন্ধান করতে পারলেন না।পারলেন না তো আজও পারলেন
না। আজও না। একমাত্র ছেলেটা তখন কোলে ছিল।...
পুনশ্চঃ মীনাক্ষী দেবীর সিঁথিতে আর সিঁদুর শোভা কোনোদিনই পাবেনা। আজ থেকে
সেটা বন্ধ হল।
"গণপিটুনি"- বরুণ মোহরী
Edit Posted by নেট ফড়িং with 1 commentগণপিটুনি
বরুণ মোহরী
গলির মোড়ে বেশ জটলা দেখেই আন্দাজ করা গেলো কিছু একটা ঝামেলা হয়েছে।
জনা পাঁচেক মাঝ বয়েসী লোক তেড়েফুঁড়ে এসে মারছেন এক বৃদ্ধকে। পরনের আধ ময়লা
ধুতিটা রক্তে লাল । শুনলাম তার ব্যাগ থেকে অনেক টাকা পাওয়া গেছে, সবাই বলছে চোর । অনেকে
আটকাবার চেষ্টা করছেন, অনেকে আবার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা দেখছেন । আমার যা বয়স তাতে আটকাবার
সামর্থ নেই, তাই ঝামেলা এড়িয়ে বাড়ি চললাম ।
রাত্রে ঘুমাবার সময় মনের মধ্যে বার বার ওই বৃদ্ধের করুন আর্তি, চিৎকার দাগ
কাটতে লাগলো । এবার মা কে বলেই ফেললাম আচ্ছা মা মানুষ কেন চুরি করে? মা এক কথায় বললো
বাবা কেউ স্বভাবে কেউ অভাবে চুরি করে । তবে আজকের ওই বৃদ্ধ কী স্বভাবের বশেই চুরি করেছে
! আমার ছোট মাথায় ঘুরপাক খেলো অনেক প্রশ্ন ।
পরদিন সকালে দাদু বাজার থেকে ফিরে পত্রিকা হাতে পড়তে লাগলো 'চোর সন্দেহে
গণপিটুনিতে মৃত্যু বৃদ্ধের' রামগড়, কসবা । গাঁ শিউরে উঠলো আমার ।' নাতনির বিবাহের নগদ
কুড়ি হাজার টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তুলে বাড়ি ফেরার পথে চোর সন্দেহে দুষ্কৃতীদের বেধড়ক মারে
মৃত্যু হয় বৃদ্ধের।
শুনে দম বন্ধ হয়ে গেলো ইশ কত নির্মম মানুষ ! শুধু মাত্র সন্দেহের বশে মেরেই
ফেললো লোকটিকে । মৃদু বাতাসে ভেসে এলো তার করুন আর্তি 'আমায় বাঁচান আমি চোর নই' ।
Aug 16, 2020
"হৃদয়ের এপিটাফ থেকে মাহি"- (রাজ আরিফ)
Edit Posted by নেট ফড়িং with No comments
হয়তো তুমি থেমে যাবে,
বন্ধ করবে তোমার দুয়ার..
বুঝবে সেদিন কাঁদবে ওরা,
খুঁজবে তোমার হেলিকপ্টার..
২২ গজের এই উপন্যাসে,
সবাই যখন দেখছে চেয়ে…
বুঝছে সেদিন ভাবছে ওরা
সমাপ্তি টা করবে কে...?
এই লাইন গুলো কিছু দিন আগে লিখেছিলাম ভাবিনি এতো তারাতাড়ি
ক্রিকেটের এই রূপকথার সবুজ ঘাসগুলোকে আপনি বিদায় জানাবেন, ভাবিনি এটা মেনে নিতে হবে
যে আপনি এই সবুজ ঘাসে আর রূপকথার গল্প লিখবেন না। কিন্তু জীবন তো এটাই যেটা রোজ কিছু
না কিছু শেখায়, যেমনটা এতদিন ধরে আপনি শিখিয়েছেন আমাকে, আমাদেরকে।
আপনি এমনই একটি অধ্যায়ের নাম, দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার
পরেও ঘুরে দাঁড়ানো একটা উপন্যাসের নাম, প্রজন্মকে বাকরুদ্ধ করে দাঁড়িয়ে রাখা একটা প্রতিভার
নাম।
যার চেষ্টার কোন শেষ নেই যার মধ্যে হেরে যাওয়া নেই।
আপনি ছিলেন বলেই ক্রিকেটের এই সবুজ ঘাসে হার না মানা
মানসিকতা গুলো ছিলো, আপনি ছিলেন বলেই কোটি কোটি মানুষগুলোর স্বপ্ন গুলো ছিলো,
যতদিন ভারতবর্ষের ক্রিকেট জয় থাকবে ততদিন আপনিও থাকবেন
সবার আড়ালে যেমন টা ছিলেন এতকাল,
যতদিন ভারতবর্ষের ক্রিকেটে হেরে যাওয়া গল্প গুলো থাকবে
ততদিন আপনিও থাকবেন ঠিক যেমনটা আগে ছিলেন, সবার সম্মুখে,
আর যতদিন আমার জীবনের হেরে যাওয়া গল্প গুলো থাকবে,
ততদিন একটা মহেন্দ্র সিং ধোনি এসে ইন্সপিরেশন হিসেবে
আপনাকে জিতিয়ে দিয়ে চলে যাবে নিঃশব্দে..
প্রিয় শিরোনাম দিয়ে শুরু করা আপনার জীবনের গল্প টা
যখন পরিণাম না পেয়ে ভেংচীকেটে বিপক্ষে ছুটবে,
রোজকার চলতে থাকা কলমের (জীবনের) নিপটাও যখন মুখ থুবড়ে
পড়বে,
স্বপ্নসিঁড়ির ধাপগুলো যখন একে একে অতর্কিতে ভেঙে পড়বে,
জীবন টাকে আপনার যখন মাঝসমুদ্রে দিকভ্রষ্ট কোনো জাহাজের
একলা নাবিকের সঙ্গে তুলনা করা যাবে, যার কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্য নেই শুধু আছে বাঁচবার
ইচ্ছে আর জেদ টুকু।
ঠিক সেই সময়ে,
আপনার পরিণামহীন জীবনের গল্পটায় একটা মহেন্দ্র সিং
ধোনি এসে আপনাকে মাথা উঁচু করে বাঁচতে শেখাবে,
বাঁচিয়ে রাখবে।
হৃদয়ের এপিটাফ থেকে শেষবারের মতো এই কলম শুধু তোমার
জন্য মাহি..
বিদায় ক্যাপ্টেন, ভালো থাকবেন, ক্রিকেটে থাকবেন।