Jul 12, 2020

ফড়িং সাক্ষাৎ

Edit Posted by with No comments

অতিথি- “সপ্তদ্বীপা চৌধুরী (মডেল ও অভিনেত্রী)”
সাক্ষাৎকার ও অণুলিখন- দীপজ্যোতি গাঙ্গুলী 


নেটফড়িং অনলাইন ম্যাগাজিনের পক্ষ থেকে একটি নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কোচবিহার তথা বাংলার বেশ কিছু মানুষ যারা নিজ নিজ কাজে অত্যন্ত পারদর্শী ও পরিচিত মুখ, তাদের মুখে তাদের জার্নি শুনে সেটা নেটফড়িং এর পাঠকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। গত সংখ্যার পর এই সংখ্যায় থাকছে আরও এক বিশেষ মানুষের সাক্ষাৎকার। মডেলিং থেকে অভিনয় সব ক্ষেত্রেই সে অনবদ্য। আজ আমাদের সাথে আছেন, মডেল, অভিনেত্রী, কোচবিহারের "ক্রাশ" সপ্তদ্বীপা চৌধুরী।

দীপজ্যোতি- নমস্কার দিদি, শুরুতেই তোমাকে স্বাগত জানাই নেটফড়িং আয়োজিত ‘ফড়িং সাক্ষাৎ’ এ।
সপ্তদ্বীপা- অনেক ধন্যবাদ।
দীপজ্যোতি - দিদি, তোমার কাছে আমার প্রথম জিজ্ঞাসা, এখন তো লকডাউন চলছে, মানে অনেকেই বলছিল একটা লম্বা ছুটি। কিভাবে কাটাচ্ছো এই লম্বা ছুটি?
সপ্তদ্বীপা - প্রথমত এই "লকডাউন" পিরিয়ডটাকে আমি "হলিডেস" এর তকমা দিতে রাজি নই।
আমরা একটা খুবই বাজে সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি বিগত ৩ মাস ধরে। আবার অনেক সাধারণ জনগণের কাছে এটা হয়তো "লম্বা ছুটি" কারণ ফেসবুক টাইমলাইন থেকে শুরু করে ইন্সটা স্টোরি এমনকি হোয়াটসঅ্যাপ স্ট্যাটাসেও রীতিমতো উইথ ক্যাপশন "হ্যাসট্যাগ হলিডে টাইমপাস" পোস্ট আমরা দেখতে পাই।
কিন্তু স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে এই "লকডাউন হলিডেস"টা "ওভারটাইম" এ পরিণত হয়েছে। হয়তো এই "সো-কল্ড" হলিডে শেষ হলেই তাদের রিলিফ হবে।
যাই হোক আশা করছি খুব তাড়াতাড়িই আমরা একটা করোনা-মুক্ত সুস্থ সকাল দেখতে পাবো।

এবারে আসি আমি কিভাবে কাটাচ্ছি এই সময়গুলো। শ্যুটের কারণে সাধারণত বাড়িতে খুব একটা সময় পেতাম না। তাই প্রথম যেটা করছি সেটা হল, বাবা-মায়ের সাথে প্রচুর আড্ডা দেওয়া, তাদেরকে সময় দেওয়া, তাদের সাথে নিজের সব কথা শেয়ার করা, আর তাদের কথাগুলো জানা। আর তাছাড়া আমি খুবই শৌখিন প্রকৃতির, তাই ঘর গোছানো আমার একটা বড় হবি। বিশেষ করে যথাস্থানে সব গুছিয়ে রাখতে আমার খুব ভালো লাগে। সেইজন্যে নিজের ঘর থেকে শুরু করে ড্রয়িং-রুম সবখানেই আমার গোছানো চলতে থাকে। 
তারপর মায়ের সাথের বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্টাল রান্নায় উঁকিঝুঁকি মেরে মাকে সাহায্য করা। এখন প্লিজ এটা জিজ্ঞেস কোরোনা যে আমি কি কি রান্না করেছি বা পারি কারণ এই কুকিং প্যাশনটা এখনও ঠিক আমার মধ্যে আসেনি...।।
এছাড়া আরও সময় কাটাচ্ছি ওয়েব সিরিজ, সিনেমা দেখে।

দীপজ্যোতি - মডেলিং থেকে অভিনয় দুটোতেই তুমি অনবদ্য। এই যে তোমার এতো সাকসেস এটা কি তোমার মধ্যে কখনো কোনো নেগেটিভ প্রেসার তৈরি করে?
সপ্তদ্বীপা - কখনই না। বেসিক্যালি আমি একজন খুবই পজিটিভ মানুষ। (হ্যাসট্যাগ স্টে-পজিটিভ)। নিজেতো পজিটিভ থাকিই আর তার সাথে সাথে আমি যে সার্কেলে যখন থাকি সেখানেও পজিটিভ ভাইবস দেই। আমি নেগেটিভিটির মধ্যেও পজিটিভিটি খুঁজি। সেটা আরও মজাদার।

দীপজ্যোতি - একটা কথা খুব শোনা যায়, যারা অভিনয় করছে বা মডেলিং করছে, তাদের অনেক রকম চরিত্র নিয়ে ঘাঁটতে হয়, অনেক চরিত্রকে আত্মস্থ করতে হয়। কখনো কি মনে হয়েছে এইসব চরিত্রের মাঝে তুমি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছো?
সপ্তদ্বীপা - প্রত্যেকটি চরিত্রের একটা আলাদা সত্তা থাকে। চরিত্রের সাথে সাথে সেই চরিত্রের সত্তাটারও বদল হয়। কারণ আমরা যখন আলাদা আলাদা চরিত্রে অভিনয় করি তখন আমাদের সেই সত্তা তার মধ্যে প্রবেশ করতে হয়, অভিনয়কে আরও ফুটিয়ে তোলার জন্য। চরিত্রের মধ্যে প্রবেশ না করলে দর্শকের মনে সেই চরিত্রটি কখনই দাগ কাটতে পারেনা।
গ্রামের একটি মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করতে গেলে তার ওই গ্রাম্য ভাব, সেই চরিত্রের সারল্য, তার কথা বলার ধরণ, হাঁটাচলা, আদব-কায়দা এগুলো আমাকে অবগত করতে হবে। আর তাতেই সেই চরিত্রটির সফলতা।
একটি চরিত্রকে যথাযথ ভাবে তুলে ধরার জন্য সেটা আত্মস্থ করা আবশ্যক। কিন্তু তাই বলে এটা নয় নিজেকে হারিয়ে ফেলা। কারণ আমি একটি অন্য সত্তার মানুষ। আর আমি যে চরিত্রটি করছি সেটা সম্পূর্ণ বিপরীত সত্তার, আর সেটা অন ক্যামেরা।
আর অভিনয় হল সেটাই নিজের থেকে বেরিয়ে সেই নির্দিষ্ট চরিত্রে ঢোকা। বাট এট দ্য এন্ড অফ দ্য ডে আমি কিন্তু আমিই থাকি। কারণ আমি আজ হয়তো একটা গ্রাম্য মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করছি, কাল হয়তো আধুনিক কোনও মেয়ের চরিত্রে করবো। আর আগের চরিত্র থেকে না বেরোতে পারলে আমি পরের চরিত্রে কখনই অভিনয় করতে পারবো না।

দীপজ্যোতি - মডেলিং এ আসা কাকে ফলো করে? মানে তোমার ইনস্পিরিশন কে?
সপ্তদ্বীপা - আমার ইনস্পিরিশন আমি নিজেই। কারণ আমি নিজের ভুল থেকে নিজে শিখি। নিজে কোনও কিছুতে বাধা পেলে সেটা থেকে নিজেই বেরিয়ে আসার চেষ্টা করি। আমার মতে আমি নিজেই আমার বড় কম্পিটিটর। নিজের সাথে নিজের দ্বন্দ্ব আমাদের এগিয়ে যেতে আরও সাহায্য করে।
প্রথমত ছোটবেলা থেকে কোনদিনও মডেলিং বা অভিনয়ের স্বপ্ন দেখিনি। তাই কাউকে ফলো করে এই প্রফেশনে আসাটা একদমই না।
ছোটবেলা থেকে নাচ, গান, কবিতাপাঠ, নাটক এসব নিয়ে উৎসাহী ছিলাম। এমনকি টেবিল টেনিস খেলাও শিখেছি। কিন্তু যা হয়, পড়াশোনার চাপে ক্লাস ১০ এর পর সব কিছুই কমে যায়। আর চর্চা না থাকলে মানুষ সেটা ভুলতে বসে। ক্লাস ১২ এর পর কলকাতায় কলেজ লাইফ শুরু হয়। গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করি মাস-কমিউনিকেশন নিয়ে। বরাবরই খুব ভালো স্টুডেন্ট ছিলাম। তাই মা বাবা ভেবেছিল হয়তো এম.এ শেষ করে সাংবাদিকতায় পিএইচডি করবো বা এই লাইনেই এগোবো। কিন্তু হঠাৎই চলে আসা মডেলিং এর প্রফেশন এ। আর সেখান থেকে অভিনয়। তারপর দু’বার ভাবতে হয়নি যে কোনটাকে আমার ক্যারিয়ার করবো। আর সব থেকে বড় পাওনা মা বাবার সাপোর্ট সেটা না হলে এই প্রফেশনে এতটা সাফল্য সম্ভব ছিলো না।

দীপজ্যোতি - এমন কোনো স্বপ্ন আছে জীবনে, যা কখনো পূরণ হবার মতো না? 
সপ্তদ্বীপা - এরকম আজব স্বপ্ন একটা নয় অনেকগুলোই আছে। তার মধ্যে দুটো মেনশন করছি।
একটা হল, চাঁদ থেকে পৃথিবীকে দেখা।
আর বারমুডা ট্রাই অ্যাঙ্গেলে যাওয়া। আসল সত্যিটা জেনে রহস্য উদঘাটন করতে।

দীপজ্যোতি - ওয়েব সিরিজ নিশ্চয়ই দেখো। প্রিয় ওয়েব সিরিজ কি?
সপ্তদ্বীপা - শুধু একটা নয় পছন্দের তালিকায় আছে পাঁচটি ওয়েব সিরিজ।

১ পাতাল লোক
২ স্পেশাল অপস
৩ পঞ্চায়েত
৪ অসুর
৫ আর্য


দীপজ্যোতি-  টলিউডে বা ওয়েবসিরিজগুলোতে কাজ করার ইচ্ছে আছে?
সপ্তদ্বীপা - অফার যে পাইনি সেটা বললে ভুল বলা হবে। আসলে ভালো চিত্রনাট্য না হলে সেই কাজের জায়গাটা কতটা খাঁটি সেটা না জেনে আমার পা বাড়ানোর ইচ্ছে নেই। সেটা সিরিয়ালই হোক বা ওয়েব সিরিজই হোক না কেন।

দীপজ্যোতি - আগামীতে যারা মডেলিং বা অভিনয় করতে চাচ্ছে তাদের জন্য কি বার্তা দেবে?
সপ্তদ্বীপা - Be focused on your own path...
Stay Positive always...
Ignore all kind of negativity...
Make bold Choices...
Increase your patience level...
Do whatever you want...
Always remind one thing -
“Criticism is an indirect form of self-boasting...
Criticism is like rain, should be gentle enough to nourish a man’s growth without destroying his roots.”

দীপজ্যোতি - তুমি তো মিউজিক ভিডিওতেও কাজ করেছো। মডেলিং নাকি অভিনয় কোনটা বেশি চ্যালেঞ্জিং? 
সপ্তদ্বীপা- দুটো দু-ধরণের ফিল্ড। একটার সাথে আরেকটার তুলনা করা যায় না।
মডেলিং ফিল্ডটা মেইনলি কনসেপ্ট, লুকস, ড্রেস-আপ, সেটআপ, মডেলের এক্সপ্রেশান এগুলোর ওপর নির্ভর করে। আর অভিনয়ের জন্য দরকার "অভিনয় করতে পারা"।

দীপজ্যোতি - একটা প্রশ্ন এটা শুধু আমার না এটা অনেকেরই প্রশ্ন। বলা যায় জাতি জানতে চায়। পরিচিতি পাওয়ার আগেও কি এতো প্রেম নিবেদন আসতো?
সপ্তদ্বীপা - এই প্রশ্নটা এক্সপেক্টেড ছিল। ফ্র্যাঙ্কলি স্পিকিং ক্লাস ৭-৮ থেকেই প্রপোজাল পাওয়া শুরু করেছিলাম। 
আমাদের সময় এই ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ জিনিসগুলো তো আর ছিলোনা। তাই চিঠিতে আর স্কুলের খাতার পেছনের পাতা ছিঁড়ে লিখে দিতো আর কি।
তারপর যত বড় হয়েছি প্রপোজাল এর সংখ্যাও বেড়েছে।
আর এখন বলে না, শেষ তিন বছর থেকে পরিচিত মুখ হবার পর সেটা আরওই বেড়েছে। ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, ইন্সটাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ এর মাধ্যমে।
যা হয় না চিনে, না জেনেই প্রপোজ করে বসে। ইভেন, এখন তো সিনও করিনা। কারণ এত্ত মেসেজ বা ফ্রেন্ড-রিকোয়েস্ট আসে, নরমাল মেসেজেরও রিপ্লাই করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। তুলনামুলক বলতে পারো, আগের থেকে এখন অনেকটাই বেশি প্রপোজাল পাই।

শেষ কয়েকটা প্রশ্ন যেকোনো একটা অপশন বেছে নিতে হবে, বলতে পারো একটা র‍্যাপিড ফায়ার রাউন্ড।

  ফ্যাশন শুট নাকি ব্রাইডাল শুট ?
- ফ্যাশন শুট

  অনির্বাণ নাকি আবীর ?
- আবীর (আহঃ, দ্যাট স্মাইল)

৩ বাঙালিয়ানা নাকি ওয়েস্টার্ন ?
- দুটোই (এটা আসলে নির্ভর করে কোথায় যাচ্ছি বা কি রিলেটেড কনসেপ্ট তার ওপর)

৪ উইথ মেকআপ নাকি মেকআপ ছাড়া ?
- উইথ আউট মেকআপ বাট অনলি লাইট টাচ আপ। আমি হেভি মেকআপ পছন্দ করিনা। সেটা শুটেই হোক বা নরমাল আউটিং।

  মডেলিং না অভিনয় ?
- অভিনয়

  ইন্ডোর শুট না আউটডোর শুট ?
- আউটডোর শুট

৭ ফেসবুক লাইভ না ইনস্টা লাইভ ?
- ফেসবুক লাইভ

৮ কোচবিহার না কলকাতা ?
- অবশ্যই নিজের শহর কোচবিহার। (যদিও ৫ বছর) কলকাতায় থাকায় অই শহরটার প্রতিও একটা মায়া আছে)।

  বলিউড না টলিউড ?
- রিয়াল ট্যালেন্ট। (সেটা বলিউড হোক বা টলিউড)

১০  বই না সিনেমা ?
- সিনেমা।
  
অনেক ধন্যবাদ তোমাকে আমাদের সাথে থাকার জন্য, আমাদের কে এতটা সময় দেওয়ার জন্য। ভালো থেকো। তোমার আরোও সাফল্য কামনা করি।

প্রতিবেদনের-
ছবি- তন্ময় দে 
রুপ- সজ্জা- দেবলিনা

0 comments:

Post a Comment