অতিথি- “গৌর
সাহা (চিত্রগ্রাহক)”
সাক্ষাৎকার ও অণুলিখন- দীপজ্যোতি গাঙ্গুলী
নেটফড়িং অনলাইন ম্যাগাজিনের পক্ষ
থেকে একটি নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কোচবিহার তথা বাংলার বেশ কিছু মানুষ যারা নিজ
নিজ কাজে অত্যন্ত পারদর্শী ও পরিচিত মুখ, তাদের মুখে তাদের অভিজ্ঞতা শুনে সেটা নেট ফড়িং এর পাঠকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া।
আর সে জন্যই এই সংখ্যায় থাকছে এই বিশেষ বিভাগ “ফড়িং সাক্ষাৎ”। আজ আমাদের সঙ্গে আছেন কোচবিহার শহরের সেরা চিত্রগ্রাহকদের
মধ্যে একজন, গৌর সাহা।
দীপজ্যোতি- নমস্কার দাদা, শুরুতেই তোমাকে স্বাগত জানাই নেট ফড়িং আয়োজিত ফড়িং সাক্ষাৎ এ।
গৌর- অনেক ধন্যবাদ তোমাদের।
দীপজ্যোতি- দাদা, এখন তো লকডাউন চলছে, মানে অনেকেই বলছিল একটা লম্বা ছুটি। কিভাবে কাটাচ্ছো এই লম্বা ছুটি?
গৌর- প্রথম প্রথম লম্বা ছুটি হবে
ভেবে বোর হচ্ছিলাম। প্রথম কয়েকদিন মুভিস, ওয়েব সিরিজ দেখে কাটিয়েছি। তারপর একমাস ফটোগ্রাফি স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য
নিজেকে সময় দিয়েছি। আমি বরাবর ডাইরি মেইনটেন করতে পছন্দ করি। তারপর লকডাউনের শেষের
দিকে নতুন ফটোগ্রাফারদের কথা ভেবে একটা খুব সহজ ভাবে উদাহরণ সহ ফটোগ্রাফি কোর্স
বানিয়েছি। এতে আমার এক্সপেরিয়েন্সও শেয়ার করেছি। আশা করি এতে সবাই অনেক কিছু শিখতে
ও জানতে পারবে। আমি যা জানি আমি সবাইকে শেখাতে ও জানাতে পছন্দ করি।
দীপজ্যোতি- আচ্ছা, এখন তো তোমার শুটিং নেই, অন্যান্য কাজগুলোও নেই এই সময় নিজেকে কিভাবে এক্সপ্লোর করছো।
গৌর - কাজ নেই। শুধু ব্রাইডাল ডেমোনেস্ত্রেশন
ফটোশুট হচ্ছে। তাও খুব কম। নিজেকে এক্সপ্লোর বলতে অনেকটা সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজেকে
মেলে ধরার চেষ্টা, আর কিছু ভিডিও করার
চেষ্টা করছি। এখন ফটোগ্রাফি শেখার, জানার, ও নতুন নতুন কিছু টেকনিক রপ্ত করার
চেষ্টা করছি।
দীপজ্যোতি - এমন কিছু যা তোমার আগে
করা হয়নি সময়ের অভাবে এখন করছ।
গৌর - সময়ের অভাবে কম্পিউটার ফাইল
ম্যানেজমেন্ট, আর নতুন ভাবে এডিটিং টেকনিকের উপর
সময় দেওয়া সেভাবে হতোনা। এখন সেগুলো করছি।
দীপজ্যোতি - এই যে তুমি দিন দিন এত
ভালো ভালো শুট করছো, এখন তো দত্ত জুয়েলার্সের হয়েও ফটো শুট করলে। এই যে সাকসেস এটা
কি তোমার মধ্যে কখনো নেগেটিভ প্রেসার তৈরি করেছে ?
গৌর - আমার ব্যাক্তিগত কিছু কথা আছে।
এই যে সবাই ফেমাস সাক্সেস এসব বলে। আমি বুঝে উঠতে পারি না এখনও সেগুলো। এখনও মনে
হয় হয়তো আমি পারিনি কিছু করে উঠতে। আমার তোলা ফটো যাতে সবার ভালো লাগে সেটাই চাই।
আসলে সত্যি কথা মাঝে মাঝে অবসাদে ভুগি। আবার সেটাকে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করি।
ফটোগ্রাফি আমার জীবনের একটা এমন জিনিস যা আমার জীবন পাল্টে দিয়েছে। নিজের তোলা ছবিতে
কখনও সন্তুষ্ট হইনা, মনে হয় আর ভালো
তুলতে পারতাম।
দীপজ্যোতি - এখন বেশির ভাগ মানুষ
মডেল শুট মানেই ব্রাইডাল শুট বোঝে তাহলে
কি ফটোগ্রাফির পরিসর দিন দিন কমতে কমতে ব্রাইডালএ সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে? এ বিষয়ে কি বলবে।
গৌর - মডেল শুট মানেই ব্রাইডাল শুট এটা
অনেকেই ভেবে থাকেন। কিন্তু কলকাতা, মুম্বাই, দিল্লি ওখানে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, মডেল শুট ই-কমার্স, ক্যাম্পেইন শুট, ফ্যাশন স্টোর বেসড।
ফ্যাশন কোম্পানি বেশি হবার কারণে ওখানে মডেল শুট ঠিক মতো চলছে। আর ইনডোরের
ক্ষেত্রে এখানে ব্রাইডাল শুট চলছে। তো এটাকে মডেল শুট বলা যায় না। সঠিক আলোর
ব্যাবস্থা না থাকার কারণে আমিও এখানে করতে পারছি না। তবে আশা রাখছি একদিন নিশ্চয়ই
করবো। তবে কোচবিহারে কিছু স্যার রয়েছেন। তারা খুব সুন্দর ফ্যাশন শুট করছেন। সত্যি
এগুলো দেখলে বোঝা যাবে, ব্রাইডালের বাইরেও
ফ্যাশন শুট হয়। আর আসল ফ্যাশন শুট আসলে কি...
দীপজ্যোতি - দাদা তোমার ফটোগ্রাফির ইনস্পিরিশন কে মানে বাজারি ভাষায়
কাকে দেখে এই লাইনে আসা?
গৌর - লাইনে আসা বলতে, সেদিন থেকে এই লাইনে এসেছি যেদিন আনন্দবাজার পত্রিকাতে আমার
তোলা রাজবাড়ী’র ফটো সেরা হয়েছিল। সেই সম্মান আর সেই দিন আমি কোনদিনও ভুলবনা। দিনটা
ছিল,
১৯শে আগস্ট, ২০১৫,
ওয়ার্ল্ড ফটোগ্রাফি ডে। আর তাছাড়া ফ্যাশন শুটের ক্ষেত্রে
ডাব্বু রতলানি স্যার বা আর যারা যারা ইউটিউবে রয়েছেন তাদের ভিডিও দেখে রপ্ত করেছি
অনেকটা। আর তাছাড়া আমার বন্ধু তমোজিতের তোলা ছবি দেখে এতো ভালো লাগে, আমিও চাই সেরকম শুট কোচবিহারের মডেলদের জন্য সহজলভ্য হোক।
আর একটা কথা, সেই প্রথম দিনের পর হয়তো কিছু কিছু
সম্মান পেলেও অ্যাওয়ার্ড পাইনি। যাই হোক, না পেলেও ঠিক আছে। জীবনে শেখার ইচ্ছে আর বেড়ে যায় তাতে।
দীপজ্যোতি - একদম ঠিক বলেছ। আচ্ছা, তুমি ওয়েব সিরিজ দেখো?
গৌর - ওয়েব সিরিজ সেভাবে কোনদিনও
দেখতাম না। কিন্তু লকডাউনে দেখা দেখা শুরু করেছি। তবে পেইড কিছু নেইনি। (হাসি)
দীপজ্যোতি - তোমার প্রিয় ওয়েব সিরিজ কোনটা?
গৌর - প্রিয় বলতে অনেক গুলোই আছে।
সেভাবে একটা বলা মুশকিল।
দীপজ্যোতি- এর পরে তোমার কি প্ল্যান
ফটোগ্রাফিকে নিয়ে?
গৌর - প্ল্যান যা করেছিলাম, করোনা এসে শেষ করে দিয়েছে। আশা করি ঠিক হবার পর করতে পারবো।
প্ল্যান বলতে আরো ভালো কাজ করার। আমি সবাইকে বলবো যদি আমার কাজ সবার মন থেকে ভালো
লেগে থাকে তাহলে আমাকে কাজের জন্য বলতে পারো।
দীপজ্যোতি - টলিউড বা ওয়েবসিরিজগুলোতে
কাজ করার ইচ্ছে আছে?
গৌর - টলিউড কাজ নিয়ে একটা দারুণ
ঘটনা আছে। নাম নেবো না। তিনবার গিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। প্রথম সুযোগ এসেছিল
সেলিব্রিটিদের পার্সোনাল ফটোগ্রাফার হবার। আমি না করি পড়াশোনার জন্য। তারপর
দ্বিতীয়বার চেষ্টা করি কিছুদিন আগে কিন্তু হয়নি। যাই হোক, যতটুকু পাওয়া যায় ততটুকুতেই সন্তুষ্ট থাকা উচিত।
দীপজ্যোতি - তোমার প্রিয় সিনেমা ?
গৌর- প্রিয় সিনেমা আয়রন ম্যান। আই লাভ রবার্ট
ড্রাউনি জুনিয়র।
দীপজ্যোতি - আগামীতে যারা ফটোগ্রাফি
করতে চাচ্ছে তাদের জন্য কি বার্তা দেবে?
গৌর - মন থেকে ফটোগ্রাফি এলে সেটাকেই
বেছে নাও। নিঃস্বার্থ ভাবে যদি এটাকে ভালো লাগে তবে ঠিক আছে। তবে একটাই শর্ত
পড়াশোনা শেষ করে আসো। আমি পড়াশোনা করার জন্য টাকার প্রয়োজনে ওয়েডিং ফটোগ্রাফি করে
পড়াশোনা করেছি। তাই পড়াশোনাটা সবচেয়ে জরুরি। আর ব্যবহার ভালো রাখবে সবার সাথে,
সবাই তাহলে মান্যতা দেবে। আর ফটোগ্রাফি নিয়ে কিছু প্রয়োজন হলে আমার সাথে যোগাযোগ
করবে আমি সবসময় তোমাদের সাথে আছি।
শেষ কয়েকটা প্রশ্ন যেকোনো একটা অপশন
বেছে নিতে হবে, বলতে পারো একটা র্যাপিড ফায়ার
রাউন্ড।
১
স্ট্রিট ফটোগ্রাফি নাকি মডেল শুট ?
- মডেল শুট
২
হইচই নাকি নেটফ্লিক্স ?
- হইচই
৩ বাঙালিয়ানা নাকি ওয়েস্টার্ন ?
-সেটা যাকে যেটাতে মানায় তাকে সেটাই পরতে
বলি। আমার পছন্দ ওয়েস্টার্ন।
৪ ক্যানন নাকি নিকন ?
-সবসময় নিকন।
৫ তরুণ খৈয়াল নাকি ডাব্বু রতলানি?
-ডাব্বু রতলানি
৬ ইন্ডোর শুট না আউটডোর শুট ?
-ইনডোর। যদিও আমি আউট ডোরটা বেশি
করি।
৭ ফেসবুক না ইনস্টাগ্রাম ?
-ফেসবুক
৮ কোচবিহার না কলকাতা ?
-কোচবিহার।
শেষ প্রশ্ন...
৯ নেটফড়িং না ক্যামেরানা ?
-ক্যামেরানা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। হ্যাঁ
নেপটিজম আছে ওখানে। তাই নেটফড়িং কেই সিলেক্ট করবো।
অনেক ধন্যবাদ তোমাকে আমাদের সাথে
থাকার জন্য, আমাদের কে এতটা সময় দেওয়ার জন্য।
ভালো থেকো।
0 comments:
Post a Comment