Nov 26, 2020

"আগমনী" - সায়রী লাহা

Edit Posted by with No comments

 


আগমনী

সায়রী লাহা

 

পবিত্রতা, শুভ্রতার প্রতিমূর্তি মা দুর্গা, অন্যদিকে তাঁর মূর্তি তৈরিতেই দরকার হয় তথাকথিত ‘অশুচি’, ‘অপবিত্র’ এলাকার মাটির ৷ এক পুজো চলে যেতেই শুরু হয়ে যায় পরের বছরের পুজোর প্রস্তুতি ৷ পুজোর কয়েক মাস আগে থেকেই কুমোরপাড়ায় ব্যস্ততা ওঠে তুঙ্গে ৷ কাদা মাখা শিল্পী হাত থামতেই চায় না ৷ মৃন্ময়ীরূপে জেগে ওঠেন মা দুর্গা ৷ একমেটে, দোমেটে থেকে ধাপে ধাপে পূর্ণ অবয়বে ফুটে ওঠেন তিনি।

নিষিদ্ধপল্লীর মাটির মিশ্রণে তৈরি হবে দেবীমূর্তি ৷ আর সেই কারণেই সেই পুরাকাল থেকে আজও দেবীর মূর্তি তৈরিতে দরকার হয় বেশ্যালয়ের মাটি ৷ কিন্তু কেন এই রীতি ?

এই সমস্থ কিছু নিয়ে নানান মানুষের ভিন্ন ভিন্ন মতামত চলছে প্রাচীন কাল থেকেই…

খবর সংগ্রহের উদেশ্যে নিজের টিমকে নিয়ে পতিতালয়ে উপস্থিত হয়েছে অভিরূপ।

অনুমতি নেওয়া হয়েছে সংবাদ পত্রের তরফ থেকে। হবে কিছু আলাপচারিতা এবং ফোটো শুট।

অভিরুপ এক সংবাদ পত্রের রিপোর্টার, নিউজ এডিটর এবং ফটোগ্রাফার।

মহালয়ার পূণ্য লগ্নে প্রকাশ হবে এই আগমনী প্রজেক্টটি তাই জোর কদমে চলছে প্রস্তুতি।

পতিতালয়ের প্রধান আম্মা দেবিকারানীর সাথে সকাল থেকে ইনফরমেশন কালেক্ট করছে টীম।

কিছু ভিডিও ফুটেজ, কিছু ভয়েস নোট আর কিছু বক্তব্য খাতায় নোট করে রাখছে ওরা।

আম্মার বক্তব্য অনুযায়ী " পুরুষ-মানুষ পতিতালয়ে গিয়ে যখন বীরাঙ্গনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন, তখন তিনি জীবনে সঞ্চিত সমস্ত পুণ্য সেখানেই ফেলে আসেন ৷ আর সংগ্রহ করেন ঘড়া ভর্তি পাপ।

চিরাচরিতভাবে মানুষ বিশ্বাস করেন যে, মানুষের মধ্যে যে কামনা, বাসনা, লালসার বাস। পতিতারা তা নিজেদের মধ্যে নিয়ে নেন। তাঁরা নিজেদের অশুদ্ধ, অপবিত্র করে সমাজকে শুদ্ধ রাখতে চান। পবিত্র রাখতে চান। ফলে হাজার হাজার পুরুষের পুণ্যে বেশ্যাদ্বারের মাটি হয়ে ওঠে পবিত্র ৷ সে কারণেই এই মাটি দিয়ে গড়তে হয় দেবী মূর্তি ৷ এই আচার থেকে বোঝানো হয় যে, নারী মায়ের জাতি।" নথিভুক্ত হয় আম্মা দেবিকারানীর সমস্ত কথাই।

" অনেক সকালে এসেছ, তোমরা চা বিস্কুট কিছু নেবে?" আলাপচারিতা শেষ হলে বলে ওঠেন আম্মা।

" না, আমরা খেয়েই বেড়িয়েছি। ফটো শুট করে নিয়ে একেবারে চলে যাবো।" জানায় অভীরূপ।

" কিন্তু ভেতরে ফটো তোলা তো নিষিদ্ধ। তাছাড়া ওখানে এভাবে তোমাদেরকে আমি যেতে দিতে পারবো না।" বাধা দিলেন আম্মা।

" আমাদের বেশিক্ষণ সময় লাগবে না। আধ ঘন্টা নেবো… চার্জ দেবো। রাজি? " প্রজেক্ট শেষ না করে অভীরুপ ছেড়ে যাওয়ার পাত্র নয়।

" আচ্ছা চলো ঠিক আছে। তবে একজন কে অ্যালাও করতে পারি।" বলে উঠে দাঁড়ালেন আম্মা।

" ঠিক আছে তাই হবে। রায়ান ট্রাইপড,লাইট,লেন্স আর ক্যামেরাটা দে,তোরা চলে যা। আমি ফটো শুট কমপ্লিট করেই আসছি।" বলেই ঘড়িটা দেখলো অভীরুপ, দুপুর একটার মধ্যে কাজ সেরে বেরিয়ে যেতে হবে। নয়তো শ্রেয়া রেগে যাবে, আজ ওর সাথে লাঞ্চ সেরে শপিংয়ে যাবে কথা দিয়েছে। হাতে এখনও ঘণ্টা দুই, আরামসে হয়ে যাবে।

" দেখো বাবা, সব মেয়ের ছবি তুলতে দেওয়া যায় না।

ওরা নিজের কাজে, কোনো না কোনো ক্লাইন্টের সাথে আছে। ওদের কাজ নষ্ট মানে, চার্জ না পাওয়া।" আবার বাধা দেয় আম্মা…

" এক জনের ছবি তুলতে বা কথা বলতে পারি কি?" বিরক্তির সাথে গলা ঝাঁকিয়ে বলে অভিরুপ।

" হ্যাঁ তা পারো,তা পারো.." বিনয়ীর সুরে আম্মা বলে উঠলে অভীরূপ জানায় " তবে আপনার এখানে সব চেয়ে সুন্দরী মহিলাটিকে পাঠিয়ে দিন।"

কথা মতো কাজ শুরু হয় " জি আমার নাম অপর্ণা, আপনি কাজ শুরু করতে পারেন।"

মেয়েটাকে দেখলে মনে হয় যেন মাটি দিয়ে নিখুঁত ভাবে গড়েছে কেউ… এত সুন্দর চোখ দুটো। এত বছর ধরে সাংবাদিকতা করেও অভিরুপ এমন মোহময়ী কাউকে দেখেনি আজ পর্যন্ত। বাইরে এত কাজ থাকতে কেন যে মানুষ এসবে জড়িয়ে পড়ে কে জানে? যাক গে ফটো শুট শুরু করা যাক।

" আপনার একটা ভিডিও ফুটেজ নেবো, কবে থেকে এখানে আছেন? প্রতি বছর দুর্গা পুজো কেমন কাটে? এসবই..." ক্যামেরা সেট করতে করতে জানায় অভীরুপ।

" আমাকে আপনি বলতে হবে না, তুই করেই বলুন।

আমি অপর্ণা, এখানে এসে পৌঁছাই মা মারা যাওয়ার পর সৎ মা বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয় যখন। মাধ্যমিক দিয়ে ছিলাম, তার কয়েক মাস পরেই... মাধ্যমিকে ফার্স্ট ডিভিশন ছিল। কিন্তু পড়াশোনাটা আর হলো না... যাই হোক এখানে আছি প্রায় দশ বছর হলো। আম্মা আমাকে মেয়ের মতোই রেখেছেন, অসুস্থ হলে খেয়াল রাখেন। এই আর কি... অনেক কথা বলে ফেললাম আসলে এমন প্রশ্ন কেউ কখনো করেনি।" বলেই মাথা নিচু করে চুপ করে বসে মেয়েটি।

" তুমি পড়াশোনা করতে ভালবাসো? জীবনে কি হতে চেয়েছিলে? কিছু ইচ্ছে আছে জীবনে।" মুখের দিকে না তাকিয়েই প্রশ্ন করে অভীরূপ।

" আমাদের স্বপ্ন বলে কিচ্ছু হয় না। আপনাদের আর আমাদের পৃথিবী সম্পূর্ণ আলাদা। আমি শুধু মুক্তি চাই, এই চার দেওয়ালের ভিতর থেকে মুক্তি। স্বাধীনতা চাই, সম্মান চাই এক মুঠো… দম বন্ধ হয়ে আসে এই জীবনে... যেগুলো কোনোদিন পাওয়া সম্ভব নয়।" চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে অপর্ণার ময়ূখের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে " আপনি মনে হয় সকাল থেকে কিছু খাওয়া দাওয়া করেননি।" বলে উঠে গিয়ে বিস্কুট আর চা নিয়ে আসে।

না খেয়েই বেরিয়েছিল সে, কাজ সেরেই এক্কেবারে লাঞ্চ করবে ভেবে… লাঞ্চ কথা মনে করতেই মনে পড়লো। আরে একটা বাজতে চললো শ্রেয়াকে কথা দিয়েছে ও।

ফোনটাও সাইলেন্ট করা আছে, ব্যাগ থেকে ফোন বের করতেই দেখে ১১ টা মিস কল। আজ তো ও শেষ। চা, বিস্কুট ফেলে রেখে ফোন করে শ্রেয়াকে।

" হ্যালো, শুনতে পাচ্ছো… ভেরি সরি, আমি একদম..." কথা শেষ করতে পরে না অভীরুপ।

" এই শোনো, তুমি কি মনে করো হ্যাঁ? এত কাজ তোমার? আমি কিছু বুঝি না? এতবার ফোন করলাম... তুমি কোথায় ছিলে কি করছিলে? ডোন্ট মেক এনি এক্সকিউজ। ফোনটা রাখো, আর হ্যাঁ আজ আমি তোমার সাথে কোথাও যাচ্ছি না। একটা বাজতে চললো, আমি লাঞ্চ করে নিচ্ছি... তোমার জন্য আমি নিজের হেলথ খারাপ করতে রাজি নই " বলেই ফোনটা কেটে দিল শ্রেয়া। কিছু বলার সুযোগটুকুও পেলো না অভীরুপ...

ধপ করে বসে পড়লো চেয়ারে " একটু জল হবে?" বলে অপর্ণার দিকে তাকালো।

" হ্যাঁ আনছি। আপনি চা, বিস্কুট খান.." বলে উঠে গেলো সে।

এত বছরের সম্পর্ক তাও অভীরূপকে চিনলো না শ্রেয়া। আগে এমনটা ছিল না… কথায়-কথায় দোষারোপ রাগ, ভরে উঠছে দিন দিন… ওর বাবা একটা সম্বন্ধ এনেছিল ছেলে ডাক্তার, বিদেশে থাকে অনেক বড়ো ব্যাপার, সেখানে অভীরূপ কিছুই না। কি বা দিতে পারে সে শ্রেয়াকে?

" জলটা… একটা কথা বলবো?" বললো অপর্ণা।

সে কখন এসে দাঁড়িয়েছে খেয়াল করেনি অভীরূপ।

" কিছু বললেন?" জিজ্ঞেস করে অপর্ণাকে...

" উনি মানে, ফোনে যার সাথে আপনি কথা বলছিলেন উনি আপনার স্ত্রী?"

" না প্রেমিকা... কেন বলুন তো?" আর কোনো কথা না বাড়িয়ে ক্যামেরা, ট্রাইপড সব গুছোতে শুরু করে অভিরুপ।

" উনি আপনাকে ভালবাসেন না। চিৎকারের শব্দ পাচ্ছিলাম, একবারও শুনলাম না উনি জিজ্ঞেস করছেন আপনি খেয়েছেন কি না…"বলেই থেমে গেলো অপর্ণা।

" হাউ ডেয়ার ইউ? আপনাকে সাহস কে দিল এ কথা বলার? নষ্ট মেয়ে একটা... আপনার কাছে ভালবাসার জ্ঞান শুনতে হবে? নিজের জায়গাটা ভুলে যাবেন না। আপনি জানেন শ্রেয়া কে?" তীব্রস্বরে কথা গুলো বলতে বলতে সমস্ত কিছু গুছিয়ে নিয়ে বেরিয়ে গেলো অভীরূপ।

আজকের মতো কাজ শেষ তার, অফিসে সব কিছু জমা করে...

বাড়ি ফিরে স্নান, খাওয়া করে শ্রেয়ার কাছে গেলো ওকে মানাতে।

" দেখো অভি, আমাদের সম্পর্কটা বাড়ি থেকে এমনিতেই মেনে নিচ্ছে না। তুমি সাংবাদিকতা করো, কোনো চিরস্থায়ী চাকরি তো নয়। তার উপর তোমার এমন বেআক্কেলে হাবভাব, ফোনটা রিসিভ করে একবার জানতে তো পারতে আমাকে…"

" আই অ্যাম সরি বেবী, আর হবে না পাক্কা। কাজে ফেসে গেছিলাম একটু... চলো আজকে শপিং করে আসি তুমি যা বলবে তাই হবে.." বলেই কান ধরে অভীরূপ।

" এই গরমে তোমার বাইকে উঠতে ইচ্ছে করছে না। এসি ট্যাক্সি বুক করো…" বলে ফ্রেশ হতে যায় শ্রেয়া।

ঠাণ্ডা ঘরে বসে ভাবতে থাকে অভীরূপ, ওই অপর্ণা মেয়েটির সাথে বড্ড খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছে রাগের মাথায়। এভবে বলাটা ঠিক হয়নি, একবার কি গিয়ে সরি বলে আসা উচিৎ? এমনিতেও এসব মানুষের জীবনে কিছু নেই। আঘাত করাটা উচিৎ হয়নি...

শ্রেয়ার সাথে শপিং সেরে ডিনার করেই ফিরেছে, মাস মাইনেটা প্রায় শেষ… এখনও মা-বাবার জন্য শপিং বাকি।

ভাবতে ভাবতেই সোফায় মাথাটা ঠেকিয়ে দিল।

ফোনের স্ক্রিনে আম্মার নম্বরটা পেয়েই ফোন করে জানাল " কাল সকালে একবার আসবো, প্রজেক্টের জন্যই..বেশি সময় নেবো না।"

" একটা গোলাপ ফুলের তোড়া নিলে কেমন হয়?

হয়ত মনটা ভালো হয়ে যাবে মেয়েটির " ভাবতে ভাবতেই গোলাপ ফুল নিয়ে হাজির হলো আম্মার দরজায়।

" একি তুমি এসব নিয়ে?" আম্মা বলতেই, অভিরুপ জানায় " একটু দরকার আছে, অপর্ণাকে পাওয়া যাবে? "

" ওরকম ভাবে এখানে কিছু পাওয়া যায় না। চার্জ দিতে হবে।" বলতে বলতে আম্মা ঘুরে তাকায় অভিরুপের মুখের দিকে " এই নিন, এবার তো ভিতরে যেতে পারি? "

" দু ঘন্টা…"

" অপর্ণা... কোথায় আছো? একটু কথা বলবো.."

ডাক দিতেই ভিজে চুল মুছতে মুছতে ঘরের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে অপর্ণা, ভিজে চুল থেকে টপ টপ করে জল পড়ছে, উজ্জ্বল কপালের লাল টিপ.. কোনো অপ্সরার থেকে কম কিচ্ছু না।

" কালকে কিছু কথা বলেছিলাম,তার জন্য ক্ষমা চাইতে এসেছি। আসলে মাথার ঠিক ছিল না একদম।" গোলাপ ফুল হাতে নিয়ে কাঁচু মাঁচু মুখ করে বলে অভীরুপ ।

" এসব ছাড়ুন, অভ্যাস আছে শোনা। কি জন্য এসেছেন বলুন? নিজের কাজ মিটিয়ে চলে যান।"

" তুমি যেটা ভাবছো, আমি সেটা নই। আমি সত্যিই ক্ষমা চাইতে এসেছি। আমি কারুর সাথে সজ্ঞানে অন্যায় করতে চাই না। আই অ্যাম সরি.." বলেই অপর্ণার হাতে গোলাপ ফুলের তোড়াটা দেয় অভীরূপ।

চোখ ছল ছল করে ওঠে মেয়েটার…

" আমি তবে আজ থেকে আপনার বন্ধু হলাম।

আপনার যে কোনো সমস্যায় আমাকে ফোন করতে পারেন " বুক পকেট থেকে পেন বের করে হাতে নম্বরটা লিখে দেয় অভিরুপ।

" আপনার মত মানসিকতার মানুষ আমার বন্ধু হবে ভেবে আমার জীবনটা… জানেন আমার সাথে মন খুলে কথা বলার কেউ নেই… কেউ না।

আমার তো ফোনও নেই, আপনাকে ফোন করবো কি করে? আপনি আমাকে একটা ফোন এনে দেবেন?" বলে অভিরূপের হাতে কিছু টাকা ধরায়।

" তুমি কোনোদিন এখান থেকে বাইরে বেরোও না?

এই ভাবে বছরের পর বছর আছো? কি সাংঘাতিক… আমি তোমাকে ফোন এনে দেবো।"

" না, অনুমতি নেই যে… এখান থেকে বেরোলে, আর কোনোদিন ফিরতে পারবো না। আমাকে মেরে ফেলবে ওরা… আমি মুক্তি চাই।

কিন্তু কোথায় যাবো? আমার যে কেউ নেই…"

দেখতে দেখতে দুঘন্টা কেটে গেলো, আজকের দিনেও মানুষ কতটা অসহায়। নিজের জীবনটা তিল তিল করে শেষ করছে… অথচ জীবনে কতকিছু করতে পারতো…

এদিকে অভিরুপ আর শ্রেয়ার সম্পর্কের তিক্ততা বেড়েই চলেছে।

" এই কোনো দায়িত্ব জ্ঞান নেই না তোমার? মা-বাবাকে পুজোয় যে কিছু দিতে হয় সেটাও জানো না নাকি? তোমার থেকে ওই ডক্টর অনিমেশ ঢের ভালো। সম্বন্ধ হতেই এত গিফটস দিয়ে গেছে.. তোমাকে কি দেখে পছন্দ করবে আমার বাড়ির লোক? " রাত তিনটের সময় তারস্বরে ফোনের ওপার থেকে চিৎকার করছে শ্রেয়া।

" দেখো শ্রেয়া কদিন আগেই তোমার শপিং করে এনেছি। এখনও আমার মা - বাবার জন্য কিচ্ছু কেনা হয়নি। আমার কাছে আর টাকা নেই.. আর তোমায় একটা কথা বলি আমার সাথে থাকতে গেলে এভাবেই থাকতে হবে.. নয়তো তুমি ডক্টর অনিমেশ কেই পছন্দ করে নাও.. আমি আর পারছি না।" বলে ফোনটা কেটে দেয়।

সারারাত একটা অশান্তির মধ্যে হাঁসফাঁস করে।

কোথাও যেন পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।

সকাল হতেই এসে পৌঁছোয় আম্মার দরজায়।

"যদি সারাদিন অপর্ণা কে বুক করি কত চার্জ নবেন?" বলে পকেট থেকে মোটা নোটের বান্ডিল বার করে…

আম্মা টাকা দেখেই অনুমতি দেয়।

" কিন্তু আমি যাবো না আপনার সাথে, এত টাকা আপনি কোথায় পেলেন? বলুন আগে.. এত গুলো টাকা এভাবে নষ্ট করবেন না।" বলে বিছানায় মুখ ঘুরিয়ে বসে অপর্ণা।

" আমি আমার পুরনো ফোনটা বিক্রি করে দিয়েছি। ওটার আর দরকার নেই, ঠিক আমার সম্পর্কটার মতই। বাদ দিন এসব.. আপনি বেরোবেন এখান থেকে, আমি জীবনে কখনো ভালো কাজ করিনি। আপনাকে স্বাধীন দেখতে পেলে মনে হবে জীবনে কিছু করেছি। আপনি আপনার বন্ধু হন, এইটুকু আপনার জন্য করতে পারলে আমার ভালো লাগবে। না করবেন না.."

দুজনে সারাদিন ফুচকার দোকান থেকে, ধাবা খুব ঘুরলো।

দুজনের বন্ধুত্ব জমে উঠলো, সমস্ত যন্ত্রণা ভুলে দুজনে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলো… সারাটাদিন কেটে বিকেল হতে চললো।

এত কমদামী উপহারে কোন মানুষ যে এতটা খুশি হতে পারে, আগে কখনো দেখেনি অভিরুপ।

একটা গাড়ি ওদের দুজনকে ক্রস করে সামনে এসে দাঁড়ায়, গাড়িটাকে খুব ভালো করেই চেনে অভীরূপ।

গাড়ির ভিতর থেকে নামে শ্রেয়া, মুখের উপর একটা কাগজের টুকরো ছুঁড়ে মারে " এটা আমার আর ডক্টর অনিমেশের বিয়ের কার্ড। তুমি ভুল করেও এসো না। তোমার স্ট্যান্ডার্ড, তোমার ক্লাস আজকে আমার চোখের সামনে এসে গেলো। কোথা থেকে জোটালে এটাকে? সাজ পোশাক দেখে তো পুরো ভিখারী লাগছে… একে তুমি ভালবাসো এটা বলে আবার লোক হাসিও না।যদিও তোমার জন্য এই ঠিক আছে।এর থেকে বেশী খরচ তুমি বহন করতে পারবে না।" বলে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে শ্রেয়া।

" হ্যাঁ আমি একে ভালবাসি, এটা শুনতে চাও তুমি?

তোমার থেকে অনেক ভালো এ, কেন জানো? তোমার মত চাহিদা নেই ওর। তোমার মতো টাকা দেখে মানুষকে ভালবাসে না। তোমার মতো লোভী নয়।

চলো অপর্ণা..." বলে অপর্ণার হাতটা চেপে ধরে এগিয়ে যায় অভিরুপ।

হাউ মাউ করে কেঁদে ওঠে অপর্ণা।

" আমার বাড়িতে কেউ থাকে না। মা-বাবা গ্রামের বাড়িতে থাকেন, মাঝে মাঝে যাই। ছোটো একটা ফ্ল্যাট,সাংবাদিকতা করি। বেশি রোজগার নয়। কোনো স্থায়ী চাকরিও না। তুমি আমার স্ত্রী হয়ে থাকতে পারবে আমার সাথে?"

" আমি নষ্ট মেয়ে,কারুর স্ত্রী হতে পারি না। আপনার জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে। আম্মা জানতে পারলে ক্ষতি করার চেষ্টা করবে.." চোখে একরাশ জল অপর্ণার।

" কেউ কিচ্ছু করতে পারবে না। আমি আছি তো..

চুপ আর একটা কথা নয়, বাড়িতে চলো রেস্ট নেবে… কাল সকালে কোনো মন্দিরে গিয়ে বিয়ে করবো।"

দুজনের চোখে জল, মুখে অব্যাক্ত হাসি... একটা অদ্ভুত পূর্ণতা গ্রাস করছে দুজনকেই, চাঁদের আলোয় চোখের জল চকচক করছে দুজনের…

একটা অসহায় মেয়ে, মাথা রাখে একটা মধ্যবিত্ত ছেলের কাঁধে।

রাত পেরোলেই মহালয়া, শুরু হবে দেবীপক্ষ।।

 

0 comments:

Post a Comment