Nov 28, 2020

"ফুরফুরে" - ধ্রুবজ্যোতি সরকার

Edit Posted by with No comments

 


ফুরফুরে

ধ্রুবজ্যোতি সরকার

 

আর একটু দেরি হলেই মিস করে ফেলত বাসটা। একপ্রকার দৌড়ে এসে বাস ধরলেন অবিনাশ বাবু। আজও অফিসে দেরি হলে আর রক্ষে ছিল না। অফিসে কদিন ধরে মাঝে মাঝেই বসের কথা শুনতে হচ্ছে। কেমন হাফ ধরে গেছে বুকে, যেন একটু চিন চিন করে ব্যথাও করছে। বুকের বামপাশটায় হাত রেখে এগিয়ে গেলেন পেছনের দিকে একটা ফাঁকা সিট লক্ষ করে।

সিটে বসতেই বাড়ির চিন্তা মাথায় ভিড় করে এলো। সাংসারিক অশান্তি তো আছেই তারপর বছর খানেক আগে একমাত্র ছেলের মৃত্যুর পর থেকে তার গিন্নি কেমন যেন বদলে গেছে। না ঠিক করে খায়, না ঠিক করে কোনো কাজ করে। বাড়িতে নিজেকে তার একেবারেই নিঃসঙ্গ মনে হয় আজকাল। তার নিজের বয়স হচ্ছে, কি জানি আর কদিন এই শরীরে এরকম ধকল সইবে।

না, আজ ঠিক সময়েই পৌঁছেছেন অফিসে। নিজের রুমে বসে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। কিন্তু বুকের বাম পাশটা এখনও কেমন যেন চিন চিন করে ব্যথা করে চলেছে। না লক্ষণ ভালো নয়। আজ বিকেলে ডাক্তার দেখিয়ে ইসিজিটা না করালেই নয়। সামনে ফাইল খুলে বসে একটু কাজে মন দেওয়ার চেষ্টা করলেন। কিন্তু পারলেন না, মাথায় নানা চিন্তা ভিড় করে এল। বোতল খুলে ঢকঢক একটু জল খেলেন। বুকের ব্যথাটা চেপে ধরে মাথাটা উপুড় করে একটু চোখ দুটো বন্ধ করার চেষ্টা করলেন।

কখন ঘুমিয়ে পড়েছেন নিজেও জানেন না। হাত ঘড়িতে তাকিয়ে দেখেন বিকেল হয়ে গেছে। তড়িঘড়ি উঠলেন। অফিসের দাড়োয়ান বাদে আর কেউ নেই। যাইহোক নিঃশব্দে তিনি বাইরে বেরিয়ে এলেন। এদিকে বুকের ব্যথাটাও আর একেবারেই নেই। বেশ লাগছিল শরীরটা। আর মনটাও একদম ফুরফুরে লাগছে। উফ, অনেকদিন যেন এরকম শান্তির ঘুম হয়নি। আজ তবে ডাক্তার না দেখালেও চলবে। ইচ্ছে হলো আজ হেঁটেই বাড়ি ফিরবেন। খুব বেশি হলে মিনিট ত্রিশ লাগবে, তা লাগুক বেশ একটু হাঁটাও হয়ে যাবে।

গোটা রাস্তা হেঁটে এলেন বেশ নিশ্চিন্ত ও ফুরফুরে মনে। কিন্তু বাড়ির কাছে যেতেই কেমন চেনা কান্নার আওয়াজ, গিন্নির গলা মনে হচ্ছে। একটু এগোতেই দেখলেন বেশ ভিড়, তার বাড়ির সামনে একটা অ্যাম্বুলেন্সও দাড়িয়ে আছে। কি হলো ব্যাপারটা দেখতে এগিয়ে যেতেই নজরে পড়লো তারই দেহ শোয়ানো রয়েছে। সবাই কি যেন একটা হার্ট অ্যাটাক নিয়ে আলোচনা করছে । এক ঝটকায় যেন আরও হালকা হয়ে গেল শরীরটা...


0 comments:

Post a Comment