বোঝা
অবাস্তব ডায়েরী
বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে সমস্ত দায়িত্ব চলে এল পঞ্চকের কাঁধে। পঞ্চক ছাড়াও
ওর পরিবারে মা আর ছোট ভাই আছে। তাই কিছুটা বাধ্য হয়ে মাঝপথে পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে কুলিমজুরের
কাজ বেছে নিল ও। ক্লাস ৬ পাশ করা পঞ্চককে এর থেকে ভালো কাজ কেউ দেবে না। তাও সুধীরকাকা
ছিল বলে রক্ষে, নইলে কে তাকে আর কাজ দিত। যাইহোক দুবেলা দুমুঠো অন্ন তো পরিবারের মুখে
তুলে দিতে পারবে।
একটু বড় হতে বেশি টাকা পাবার আশায় শহরে পাড়ি দিল সে। যে টাকা হাতে পায় নিজের
জন্যে প্রায় কিছু না রেখে ভাইয়ের কাছে পাঠিয়ে দেয়। নিজে অভুক্ত থাকলে ক্ষতি নেই ভাই
আর মা তো খেয়ে বাঁচবে।
দেখতে দেখতে ৩৫ বছর কেটে গেছে। মা মারা গেছে অনেকদিন হল। ভাইয়েরও বিয়ে হয়ে
গেছে। পরিবারের ভার সামলে বিয়ে আর করা হয়ে ওঠেনি পঞ্চকের। একটা দুর্ঘটনায় আক্রান্ত
হয়ে তার একটা পা বাদ চলে গেছে। তাই দেশের বাড়িতে ফিরে এসেছে সে, যাক ভাই তো ভালোই কাজকর্ম
করে তাকে নিশ্চই অবহেলা করবে না।
কিন্তু ভুল ভাঙলো সেদিন রাতে পাশের ঘরে থাকা ভাইয়ের কথাবার্তা শুনে। ভাই
তার স্ত্রী কে বলছে “খেয়ে দেয়ে কাজ নেই , একেই আমার কাজকর্মের এই অবস্থা, তার ওপর পা
হারিয়ে দাদা জুটেছে সংসারে। কতদিন এই বোঝা টানতে হবে কে জানে।” ভাইয়ের কথা শুনে পঞ্চকের
মনে হল “সত্যি পরিবারের বোঝা টানতে টানতে কখন যে নিজেই বোঝা হয়ে গেছে তা বুঝতেই পারেনি।”
0 comments:
Post a Comment