অভিনয়
সমর্পিতা সরখেল
রাতের লাস্ট লোকাল টাও মিস হয়ে গেলো রিনির। একে বাড়ি ফেরার তাড়া তার
উপর যদি এহেন অবস্থা হয় কার না মাথা ঠিক থাকে। এখন যেতে হবে সেই অটো স্ট্যান্ড এ।
স্টেশন থেকে যা প্রায় হাফ কিমি মতন। কিন্তু অতটা সময় আজ হাতে নেই রিনির। ঘড়িতে সময়
দেখলো প্রায় আট টা চল্লিশ । এদিকে বাড়িতে কথা দিয়েছে আজ 9টায় ঢুকবেই। রিনিকার বাবার
বন্ধু রমেন বাবু আর ওনার স্ত্রী রীতা দেবী দিল্লি থেকে কলকাতা শিফট করেছেন দু সপ্তাহ
হলো। রিনিকার বাবার দেশের বাড়ির লোক রমেন বাবু। রমেন বাবুর ছেলে রনি বিদেশে পড়াশুনা করে এখন নামী বহুজাতিক সংস্থায়
কর্মরত। সেই বাল্যকালে নাকি দুই বন্ধু ঠিক করেছিল তারা আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হবেন
ছেলে মেয়ের বিয়ে দিয়ে। তারপর কাজের সূত্রে দিল্লি চলে যাওয়া।আজ বহু বছর পর রমেন
বাবু ও রীতা দেবী আসছেন রিনিকাদের বাড়ি। সাথে তাদের ছেলে। ডিনারের নিমন্ত্রন। তাই
রিনিকাকে পই পই করে বলেছিলেন রিনিকার বাবা
"আজ অন্তত তাড়াতাড়ি ফিরিস মা। "
কিন্তু পরিস্থিতি যা তাতে মনে হয়না আর সেটা হবে বলে।
সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে হাঁটা দিল
রিনি। মনে মনে বস কে আচ্ছা গালি দিতে দিতে রিনি চললো অটো স্ট্যান্ড এর উদ্দেশ্যে। বাবার
কথা কোনদিন ফেলেনি রিনি। সেই ছোট থেকে দেখে আসছে মানুষটা কত পরিশ্রম করে আজ দুই ভাই
বোনকে মানুষ করেছে। সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে বি টেক করে ভালো এম এন সি তে জব
পেয়েছে রিনি আর রিনির ভাই ফিজিক্স এ পি এইচ ডি রিসার্চ স্কলার। সব তাই তো বাবার জন্যই।
তাই কলেজ ইউনিভার্সিটি তে প্রেমের প্রস্তাব নির্দ্বিধায় ফিরিয়ে দিয়েছে কতবার। কারণ
তার বাবা একটাই কথা বলেছেন ছোট থেকে ' দেখ মা আমরা সাধারণ মানুষ। মান সন্মানটাই আমাদের
সম্পদ ।" আজ বাবার কথা রাখতেই তো তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ফিরতে চেয়েছিল রিনি। কিন্তু
ওই খারুস বস। প্রজেক্ট কমপ্লিট করার ডেড লাইন ছিল আগামী কাল । বসের নিজস্ব কিছু কারণে
আজই তা কমপ্লিট করতে হলো ওভার টাইম খেটে ! বস লোকটা কে ঠিক পছন্দ নয় রিনির। কেমন যেন
একটা গায়ে পরা ভাব। সব কিছুতেই যেন মনে হয় রিনির প্রতি অতিরিক্ত যত্ন বান। অফিসের
কলিগ অনিতাও সেদিন বলছিলো। এসব একদম পছন্দ নয় রিনির। অফিস এ ওকে নিয়ে গসিপ ভালোই চলছে। সেদিন তো শ্রীনন্তী একপ্রকার বলেই ফেললো
" কি করে বশ করলি রে রিনিকা । আমরাও তো দিন
রাত অফিস এর কাজ করে চলেছি কই special treatment তো তোর মতো পাইনা। আমাদের বার্থডে তো মনেই থাকে না
স্যার এর অথচ তোর বার্থডে তে হাফ ডে। কিছু লুকোচ্ছিস নাতো।" শুনে
লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছিল রিনির। সেদিন সটান গিয়ে বস এর রুম এ হাজির হয়ে দু কথা
শুনিয়েছিল। নিজেকে ঠিক রাখতে না পেরে বলেছিল,"দেখুন
স্যার। আমি একদম সাধারণ পরিবারের মেয়ে। অনেক সংগ্রাম করে আজ এই জায়গাটা পেয়েছি।
দয়া করে এমন কিছু করবেন না যাতে আমি বাধ্য হই চরম পদক্ষেপ নিতে।" কিন্তু কিসের
কি! অদ্ভুত একটা মুচকি হাসি। রাগে গা জ্বলে যাচ্ছিল
রিনির। এই অদ্ভুত আচরণ গুলোই রিনির সহ্য হয় না।
এসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে অটো স্ট্যান্ড এ এসে পৌঁছল রিনি। কপাল জোরে একটা অটো তে ঠাসাঠাসি
করে বসে বাড়ি ফিরল। ঘড়িতে তখন সাড়ে নয়টা। এদিকে রমেনবাবু ও রীতাদেবীও অনেক ক্ষণ হলো এসেছেন। রিনিকার অপেক্ষায় সবাই। সাত তাড়াতাড়ি ফ্রেশ
হয়ে সালোয়ারটা পরেই ড্রইং রুম এ এসে রমেনবাবু-কে
প্রণাম করে পাশের সোফায় তাকাতেই চক্ষু চড়ক গাছ হবার জোগাড় রিনির। একি দেখছে রিনি।
রোহিত সেন !
এখানে !
সোজা বসের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন বাণ ছুড়ে দিল রিনি" আপনি এখানে কি মনে
করে?" পাশে থেকে রিনিকার মা সোমা দেবী মেয়ের হাত চেপে ধরে বলছেন " এসব কি
বলছিস রিনি? ওই তো রনি।
তোর মনে নেই ছোট বেলায় সারাবাড়ি জুড়ে হুট পুটি করতি দুটিতে মিলে। ওই
তো রমেন কাকুর ছেলে রে।" ঘটনার আকস্মিকতায় বাকরুদ্ধ হবার মত অবস্থা রিনির।
শুধু বেরোনোর সময় অস্ফুটে বললো
রিনি
" এতদিনের এই অভিনয়টা না না
করলেই কি হতো না?"
ওপাশ থেকে উত্তর এলো
" সব বলে দিলে কি আর রিনরিনের ওই মিষ্টি মুখের আড়ালে থাকা ঝাঁসির
রানীর তেজময় রূপ চাক্ষুষ করতে পেতাম ?"
Oshadharon
ReplyDeleteধন্যবাদ
DeleteThis comment has been removed by the author.
Delete