শুধু তুমি আর আমি
অনাদি মুখার্জি
মেঘনা ঠিক করেছে আজ বিয়েবাড়িতে শাড়ি পড়ে যাবে। দরজা লাগিয়ে সেই দুই ঘন্টা
ধরে শাড়িটা খুলছে আর পড়ছে ! কিছুতেই শাড়িটা ঠিক মতো গুছিয়ে পড়তে পারছে না, শেষে বিরক্ত
হয়ে বলে- ‘ধুর !’
এমন সময় শুভ দরজা ঠেলে ভেতরে এসে বললো- ‘কি হল মেঘনা? এখনও তুমি রেডি হওনি
?’
মেঘনা বললো- ‘এই শাড়িটা কিছুতেই গোছ করে পড়তে পারছি না !’
সেই কথা শুনে শুভ খুব হাসতে লাগলো, মেঘনা শুভর মুখের হাসি দেখে বললো- ‘শয়তান,
বলেই তার মুখের উপর শাড়িটা ছুড়ে বললো- যাও তুমি একা, আমি যাবো না।’ শুভ তার কাছে এসে
বললো- ‘মেয়েদের আসল রুপ শাড়িতেই প্রকাশ পায়। নাও তুমি পড়ে নাও আমি দেখিয়ে দিচ্ছি
!’
মেঘনা আবার শাড়িটা পড়লো তা দেখে শুভ বললো- ‘এমন করে কেউ শাড়ি পড়ে ? খোলো
আমি তোমাকে পড়িয়ে দিচ্ছি।’ বলে শুভ বেশ সুন্দর করে তাকে শাড়িটা পড়িয়ে দিল। তা দেখে
মেঘনা শুভর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললো- ‘তুমি তো দেখি সব কিছুই জানো।’
শুভ মেঘনাকে কাছে টেনে জড়িয়ে বললো- ‘হুম গো !’ মেঘনা বললো- ‘ছাড়ো চলো, বিয়ে
বাড়িতে দেরি হচ্ছে না?’ তারা যখন বিয়েবাড়িতে এসে খেতে বসলো, মেঘনার দুই হাতে মেহেন্দি
লাগানো। তাই সে খেতে পারছে না ! শুভ তখন তাকে খাইয়ে দিতে লাগলো, সেই সময় টুম্পা বলে
উঠলো- ‘এই মেঘনা তোর কি ভাগ্য ভাল, তোর বর তোকে খাইয়ে দিচ্ছে !’
রাতেরবেলায় যখন তারা বাড়ি এল তখন শুভ মেঘনাকে বললো-‘দাও তোমার শাড়িটা খুলে
দিই।’ তা শুনে মেঘনা বললো- ‘তুমি খুব দুষ্টু। এক নম্বর !’ শুভ বললো- ‘কেনো গো?’ মেঘনা
মুচকি হাসি দিয়ে বললো- ‘সবসময় তুমি আমার খুলে দেখতে চাও তাই না? খুবই দুষ্টু তুমি
!’ শুভ তখন মেঘনা কে বললো- ‘জেনে রাখো তুমি আমার সন্তানের মা হতে যাচ্ছো, তোমার সব
কিছুই আমার, আমি দেখবো না তো কে দেখবে?’ শুভ মেঘনাকে বললো- ‘জানো আমাদের বিয়ের আগে
যেদিন তুমি খুব বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছিলে ! সেই দিন তোমার পোশাক খুলে আমার জামাটা তোমাকে
পড়তে দিয়েছিলাম !’ মেঘনা বললো জানি- ‘তুমি তখন দুষ্টু চোখে আমার দিকে তাকিয়েছিলে !
এই, তোমার এই কথাটা মনে আছে? যেদিন তোমার বাবা
মারা যায় হাসপাতালে, সেদিন তোমার সাথে সারারাত আমি হাসপাতালে ছিলাম তোমার পাশে ! পরেরদিন
তোমার মন খুব খারাপ ছিল সেই সময় আমি তোমার পাশে সারাদিন বসেছিলাম !’
‘জানি’ বলে শুভ মেঘনাকে বুকে মধ্যে টেনে বললো- ‘তুমি আমার আর আমি তোমার
! তুমি যদি মেঘ হয়ে ওঠো আমি হবো বৃষ্টি।’ বলে একটি চুমু খেতে চাইলো, মেঘনা বললো- ‘এই
অসভ্য আজ ছাড়ো ঘুমাতে চলো !’ বিছানায় শুয়ে শুভ ঘুমিয়ে পড়লো শান্ত ছেলের মতো। মেঘনা
তার পাশে শুয়ে দেখছে শুভকে ! আর ভাবছে শুভ তুমি শুধু আমার ! আমি খেলে তুমি খাবে, আমি
হাসলে তার কারণ তুমি হবে ! তোমার খুশিতে আমি সুখি ! আজ জানো শাড়ি কেন পড়লাম ? শুধু
তোমার জন্যই ! তুমি শুধু আমার।
0 comments:
Post a Comment