দায়িত্ব
দীপজ্যোতি গাঙ্গুলী
বাসুদেববাবুর স্ত্রী হঠাৎই মারা
গেলেন আজ ভোরে। গতকাল রাতেও বেশ স্বাভাবিক ছিলেন। ঘুমের মধ্যেই স্ট্রোক। বাসুবাবুর
সাথে ওনার যে খুব মিল ছিল তা নয়। বাসুবাবু ব্যাবসায়ী মানুষ সারাদিনই প্রায় বাইরে
বাইরে থাকতে হয়। আর তাছাড়াও দীর্ঘ পঁয়তাল্লিশ বছরের বৈবাহিক জীবনে ওনারা ছিলেন
নিঃসন্তান। তাই কানাঘুষোয় একবার শুনেছিলাম ওনারা নাকি ইদানীং আলাদা ঘরে শোন।
সরকারী হাসপাতাল থেকে ডেথ
সার্টিফিকেট নিয়ে বডি রিলিজ করার পর বাসুবাবুই বডি নিয়ে আসেন বাড়িতে। আত্মীয়-স্বজন
বলতে মীরা দেবীর দুঃসম্পর্কের এক ভাই আর এক মামাতো বোন। খবর পেয়ে ওনারাও এসেছিলেন
শেষ দেখা দেখতে।
এখন বিকেল চারটা। শেষকৃত্য করে সদ্য
বাড়ি ফিরলেন বাসুবাবু। যারা এসেছিলেন তারাও ফিরে গিয়েছেন। হঠাৎই কেমন যেন একা মনে
হল ওনার। দীর্ঘদিন কথা না হলেও পাশে পেতেন মীরা দেবীকে আজ কেমন যেন খালি খালি
লাগছে। ওনাদের সম্পর্কে মধুরতা না থাকলেও স্ত্রী হবার দায়িত্ব সবসময় পালন করে
গেছেন মীরা দেবী। এসব ভাবতে ভাবতে ডাইনিং রুমে গিয়ে ফ্রিজটা খুললেন বাসু বাবু। আর
তখনই থমকে গেলেন, ফ্রিজে পড়ে আছে
গতরাতের রান্না করা বাসি খাবারগুলো। হঠাৎ মনে হল কেউ যেন পাশ থেকে বলল, "সারাদিন কিছুই তো খেতে পারোনি। এগুলোই গরম করে খেয়ে নাও।
এখন তো নিজেকেই সবটা সামলাতে হবে।" ওখানেই আটকে গেলেন বাসুবাবু। গলাটা নিজের
অজান্তেই ভারী হয়ে আসলো।
তাহলে কি মরে গিয়েও স্ত্রী এর
দায়িত্ব পালন করে গেলেন মীরা দেবী?
0 comments:
Post a Comment