Sep 14, 2020

"সুচেতনা" - শাহীন ইমতিয়াজ

Edit Posted by with No comments


 

সুচেতনা

শাহীন ইমতিয়াজ

 

কতদিন কবিতা লেখা হয়না সুচেতনা।

আমি ভুলে গেছি শেষবার তোমার খোঁপায় জুঁইফুল নাকি শিউলি ফুল ছিলো ! এবার দেখা হলে মনে করে ঘাসফুল খোঁপায় গুঁজে দেবো। কী বা আর দিতে পারি। দেওয়ার বলতে ওই সামান্য ফুল, গঙ্গা নদীর স্রোত, রাষ্ট্র আর একটি কবিতা। বাড়ির পাশের গাছটি, পা ভাঙা কুকুরটি, অনাথ শিশুটির কথা জানতে চাই।

প্রায় একটা দীর্ঘকায় চিঠি সমাপ্ত করলো সন্দীপ।

সন্দীপ সীমান্তের আর্মি। চারমাস হলো পাহাড়ে পোস্টিং পরেছে। ছোটোবেলায় একবার বাবা রাষ্ট্র, মানচিত্রে কাটাকুটি খেলার গল্প শুনিয়েছিল। বাবাকে প্রশ্ন করেছিলো, "বাবা গোটা পৃথিবীটা তো একটাই মানচিত্র। বসুধৈব কুটুম্বকম্"। পাহাড়ের সবথেকে উঁচুতে দাঁড়িয়ে রোজ পৃথিবী দেখার চেষ্টা করে। দু-চোখ যতদূর যায় বগলের রাইফেল মাটিতে রেখে দুহাত প্রসারিত করে শূন্যতা আগলে নেয়। নেশা বলতে সময় পেলেই কবিতা লেখে কিংবা চিঠি। সন্ধ্যা নামলে ক্যাম্পে চা, সিঙ্গারা অবসরের ডাক পরে। সন্দীপ রোজ চারদিকের ছোট্ট ছোট্ট ঘটনাগুলো দেখে। শাহনাওয়াজ তার নতুন বিবির একজোড়া চুড়ি এনেছে তাই বারবার চায়ের কাপের পাশে রাখে আর চোখ বুলিয়ে নেয়। রাজেন্দ্র সিং সারাদিনের পাগড়ির ধুলো মুছতে থাকে। কুমারামান গলা ছেড়ে তেলেগু ভাষার একটি লোকগীতি হবে হয়তো! গাইছে। এমন ছোটো ছোটো কথা সবার।

সন্দীপের মনে পড়ে একদিন বিকেলে গঙ্গার পাড়ে সুচেতনা ও সে কোনো এক অজ্ঞাত মাঝির কন্ঠে মানব জনম নিয়ে একখানি বাউল গান শুনেছিলো। সুরটি এখনও কানে বাজে। সুরটি ভারতবর্ষের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত পর্যন্ত একটি সরলরেখা এঁকে দেয়। সারাটাদিন কতকিছুই ভাবতে ভাবতে ট্রিগারের লোহাটুকুকে গোলাপের পাপড়ি মনে হতে থাকে। রাইফেলের নলা থেকে একঝাঁক পাখিরা রোজ সকাল সন্ধ্যা অনায়াসে এদেশ থেকে ওদেশ ঘুরে বেড়ায়। পাখিদেরও বুঝি জাতিপুঞ্জের বৈঠক হয় নয়তো কাঁটাতার কি চোখে পড়েনা। "খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়" গানটি সন্দীপ গুনগুন করতে করতে নিজেই পাখি হয়ে যায়।

সকালে আয়নার সামনে নিজেকে দেখে চমকে গেছে। শরীরটা কলকব্জা, নাটবল্টু দিয়ে ঘেরা একটা আস্ত রোবোট। হৃদয়হীন একটা যন্ত্রের মত। সকালে নিজেকে আর দেখে না। এমন প্রতিজ্ঞা সংবাদপত্রের ওপরেও হয়েছিল। প্রথমপাতা থেকে শেষপাতা শুধু হিংস্রতা, রাহাজানি, খুনোখুনি, ধর্ষণ, রাজনীতি কোথাও একটি কবিতা নেই।

সুচেতনার হাতে সংবাদ পত্র, "গতরাত্রে বেয়নেটের আঘাতে এক যুবক আর্মির মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। বেয়নেটের ধারালো চকচকে ইস্পাতের মাথায় একটি চিঠি পাওয়া গেছে-কতদিন কবিতা লেখা হয়না সুচেতনা...।"

0 comments:

Post a Comment