May 8, 2020

রবিঠাকুরের রসিকতা

Edit Posted by with No comments


রবিঠাকুরের রসিকতা
বিক্রম শীল

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কে শ্রদ্ধা জানিয়ে রইলো তার কয়েকটি রসিকতার গল্প-
একদিন সন্ধেবেলা রবীন্দ্রনাথ হে মাধবী দ্বিধা কেনগানটি শেখাচ্ছিলেন। এমন সময় ভৃত্য বনমালী আইসক্রিমের প্লেট নিয়ে ইতস্তত করছিল, আসবে কি আসবে না? রবীন্দ্রনাথ বনমালীকে দেখেই আবার গেয়ে উঠলেন: হে মাধবী দ্বিধা কেন?’
শান্তিনিকেতনে খুব মশা ছিল। তাই কবি হাতে পায়ে একবার তেল ব্যবহার করতেন। কখনো কোন আগন্তুক উপস্থিত হলে মজা করে বলতেন, ‘ভেব না যে আমি বুড়ো মানুষ, বাত হয়েছে বলে পায়ে তেল মালিশ করছি। এ মশার ভয়ে। শান্তিনিকেতনের মশারা ভারী নম্র। তারা সারাক্ষণই পদসেবা করে।
কবিগুরু কথা প্রসঙ্গে দিনুবাবুকে (তার নাতি দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর) একবার বলেছিলেন, ‘বুঝলি দিনু, সেদিন অমুক লোকটা আমার কাছ থেকে দশ টাকা ধার নিয়ে গদ গদ কণ্ঠে বললেন, ‘আপনার কাছে আমি চিরঋণী হয়ে রইলুম। দিনুবাবু আতকে উঠে বললেন, ‘তুমি দিলে ওকে টাকাটা? ও তো একটা জোচ্চোর’ !
তা মানি, কিন্তু লোকটার শত দোষ থাকলেও একটা গুণ ওর ছিল’—কবিগুরু শান্ত স্বরে বললেন। লোকটা সত্যভাষী। কথা রেখেছিল, চিরঋণী হয়েই রইল’!
মংপুতে মৈত্রেয়ী দেবী কবিগুরুকে বেশ কয়েক দিন ধরে নিরামিষ খাওয়াচ্ছিলেন। তো একদিন মৈত্রেয়ী দেবী কিছু খাবার নিয়ে এসে বললেন, ‘এটা একটু খাবেন?রোজ রোজ আপনাকে কি নিরামিষ খাওয়াব ভেবে পাই না।
কবিগুরু বললেন, ‘ও পদার্থটা কি?’
মৈত্রেয়ী দেবীর উত্তরব্রেইন।
কবিগুরু বললেন, ‘এই দেখ কাণ্ড, এ তো প্রায় অপমানের শামিল। কি করে ধরে নিলে যে, ওই পদার্থটার আমার প্রয়োজন আছে? আজকাল কি আর আমি ভালো লিখতে পারছিনে?’
সুনয়নী তাঁর রবিকাকাকে নাতনি (শিবানী) ও নাতজামাই দেখাতে নিয়ে এসেছেন। কবি তখন বাঁকুড়ায়। সন্ধ্যায় গানের আসর বসল। শিবানী গান গাইলেন। গান শুনে কবি খুশী হলেন। এরপর প্রতিদিনই শিবানী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পায়ের কাছে গিয়ে বসতেন।
প্রদৌহিত্রী হিসেবে শিবানীর সাহস এবং কৌতূহল একটু বেশিই ছিল। একদিন বলেই ফেললেন, আচ্ছা দাদাভাই, আপনি কখনও প্রেমে পড়েছেন?
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হেসে বললেন, হ্যাঁ গো নাতনি, তবে তা শুধু পড়াই হয়েছিল, ওঠা আর হয়ে ওঠেনি।
শান্তিনিকেতনের জন্য টাকা প্রয়োজন। উপস্থিত অনেকেই গুরুদেবকে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিচ্ছেন। সবার চোখে-মুখে উৎকণ্ঠা। হঠাৎ গুরুদেব বলে উঠলেন, আহা তোমরা এত ভাবছ কেন? টাকা পাবার একটা অতি সহজ উপায় আছে।
সবাই কৌতূহল নিয়ে জানতে চাইলেন, কী সে উপায়?
গুরুদেব এবার রানী চন্দকে আড়চোখে একবার দেখে নিয়ে সবার দিকে ফিরে বললেন, মাত্র সোয়া পাঁচ আনা খরচ।
আসল ঘটনা হলো, রানী চন্দ একবার খুব আগ্রহ নিয়ে গুরুদেবকে মঙ্গলচণ্ডীর ব্রতের কথা বলেছিলেন। বাংলাদেশে এর প্রচলন রয়েছে। তিনি আরও বলেছিলেন, এই ব্রত করলে নির্ধনেরও ধন হয়। এবং খরচও বেশি নয়, মাত্র সোয়া পাঁচ আনা।
সেই থেকে গুরুদেব যখনই আশ্রমের জন্য অর্থ কষ্টে পড়তেন তখনই ঠাট্টা করে বলতেন, তা নন্দলাল, ভাবছ কেন এত? মাত্র তো সোয়া পাঁচ আনার মামলা।


 

লেখক- বিক্রম শীল

0 comments:

Post a Comment