Mar 6, 2019

অনন্যা

Edit Posted by with No comments

অনন্যা
মনোয়ার হোসেন

পড়াশুনা নিয়ে থাকাটাই ভালো এটাই বরাবর শুনে এসেছি। সেইমতো বই ছিলো আমার একমাত্র বন্ধু বাবা মা চাকরী করতেন। আমার মামা যিনি আমাদের আদর্শ। উনি ছিলেন WBCS অফিসার। প্রতি সপ্তাহে মামা আমাদের বাড়ী আসতেন আর সব থেকে বেশী সময় আমার সঙ্গে কাটাতেন। আর্থসামাজিক, রাজনীতি অনেক কিছু আলোচনা হত আমি মামার সঙ্গে ডিবেট করতাম। এতে মামা খুব খুশি হতেন। উনি বুঝতেন আমিও সব খবর রাখি।
তারপর আমি M.Sc তে ভর্তি হলাম। মামার ইচ্ছে ছিলো আমি IAS পড়ি দিল্লি গিয়ে। কিন্তু মায়ের আপত্তি মাষ্টার ডিগ্রি আগে। কোনো একদিন বৃষ্টিভেজা দুপুরে আমি ক্লাসরুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। পাশে একজন ছেলে IAS পড়া নিয়ে ফোনে কথা বলছে। আমি নার কথা বলা শেষ হওয়ার পর জিজ্ঞেস করলাম আপনি কি IAS এর জন্য দিল্লি যাচ্ছেন? উনি বললেন ইচ্ছে আছে কিন্তু অনেক খরচ যেটা আমার পক্ষে এখন সম্ভব নয়। উনি এখন MA করছেন।নার সঙ্গে অনেকটা সময় কথা বললাম। বেশ ভালো লাগলো।
নেক্সট উইক ইউনিভার্সিটি আসার সময় বাসে ভাড়া দেবার সময় আমার কাছে খুচরো ছিলো না। কন্ডাক্টর একটু ভৎসনা সুরে বললেন খুচরো নিয়ে বাসে উঠবেন। তখন পাশের থেকে উনি বলে উঠলেন ভাড়াটা কি আমি দিয়ে দেবো??? আমি ঘুরে দেখি সেই উনি। আমি বললাম হ্যাঁ দিন প্লিজ, আমি নেমে আপনাকে দিচ্ছি। যথারীতি আমরা সকলে ইউনিভার্সিটি গেটে নামলাম। আমি বাস থেকে নেমে নাকে খুঁজছি। কিন্তু নার ক্লাস থাকায় খুব তাড়াতাড়ি হেটে অনেকটা আগে চলে গেছেন। আমিও একটু এগিয়ে গিয়ে জোরে ডাকলাম দাদা, উনি পিছন ফিরে দেখে দাঁড়ালেন। কাছে যেতেই আমি বললাম, আমি তো বাস থেকে নেমে আপনাকে খুঁজছি। উনি বললেন হ্যাঁ,আমার ক্লাস আছে। আমার মোবাইল নম্বরটা নিন। আজ আমি সারাদিন আছি। ফ্রী হলে ফোন করবেন। আমি নম্বরটা নিয়ে বললাম ওকে। উনি আবার খুব তাড়াতাড়ি হাঁটতে লাগলেন।
ঘড়িতে 1pm, লাঞ্চ টাইম, আমি নাকে ফোন করলাম। কিছু সময় পর উনি আমার বলা জায়গাতে এলেন মানে পাশের রুমে। বাস ভাড়াটা দিয়ে আমি জিজ্ঞেস করলাম কি নাম আপনার? সেদিন আপনার নামটাই জিজ্ঞেস করা হয়নি উনি বললেন আমার নাম মনিরুল হক। আমি আমার নামটা জিজ্ঞেস না করার আগেই বলে দিলাম মৌমিতা খাতুন। এরপর অনেকক্ষণ কথা বললাম। কথা বলে ভীষণ ভালো লাগলো। উনি খুব বিনয়ী আর শান্ত স্বভাবের। কিন্তু মামার মতো কথাবার্তা
সেদিন বাড়ী ফিরে রাতে নার কথাগুলো খুব মনে পড়ছিলো ভাবলাম একটা ফোন করি কিন্তু সাহস হল না। পরের দিন সকাল হলো, ভাবলাম উনি তো আমাকে গুড মর্নিং ম্যাসেজ দিতে পারতেন। কিন্তু সেটাও এলো না। আমি কি পাঠাবো? এটা ভাবতে ভাবতে সারাদিন কাটলো। সন্ধ্যের সময় মায়ের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দিলাম। তারপর 10টা নাগাদ ঘরে গেলাম। দেখি ফোনে ম্যাসেজ এসেছে ভাবলাম নারই হবে। কিন্তু না,মোবাইল নম্বর আধার কার্ডের সঙ্গে লিংক করানোর ম্যাসেজ এসেছে তখন 10টা বেজে 5,আমিই কল করলাম, অনেকক্ষ রিং হওয়ার পর ফোনটা রিসিভ হলো, কে? আমি বললাম মৌ,উনি বললেন কে মৌ? আমি বললাম মৌমিতা। তারপর হালকা হেসে বললেন হ্যাঁ, বলুন,নম্বরটা সেভ করা হয়নি। কেমন আছেন? কি করছেন? ডিনার হলো? এতো গুলো কথা একসঙ্গে বললেন। আমি উত্তর দিয়ে এই প্রশ্নগুলোর আমিও উত্তর চাইলাম। তারপর উনি বললেন ,আপনি না বললেই ভালো আমার নাম ধরে আর তুমি বলে কথা বললে ভালো হবো। আমরা তো বন্ধু আমি বললাম ওকে। এরপর অনেকক্ষ কথা বললাম। বললো কাল আমার ক্লাস আছে তোমার আছে নাকি? আমার ক্লা ছিলো না তাও বললাম আছে। এটা শুনে বললো আচ্ছা তাহলে কাল কে হয়তো দেখা হবে। রাখি কাল অনেক কথা বলবপরের দিন আমি ইউনিভার্সিটি গেলাম এবার ফোনটা করলো,কোথাআছো? ক্যান্টিনে আসবে? আমি বললাম হ্যাঁ,কেনো নয়,আসছি।ক্যান্টিনে অনেক্ষ কথা বললাম। ওর সবকিছু শুনে বুঝলাম খুব সাধারণ ঘরের ছেলে। পড়াশোনা নিয়ে খুব সিরিয়াস। আমার সব কিছু শুনে বললো ম্যাডাম তুমি তো হাই ফাই ঘরের মেয়ে। আমি একটু বিরক্তবোধ করে বললাম এটা কেমন কথা মনিরুল? সঙ্গে সঙ্গে বললো আরে মজা করছিলাম তারপর আমরা একসঙ্গে ইউনিভার্সিটি পেছনে নির্জন রাস্তা দিয়ে হেঁটেছিলাম। আসার সময়ও,আমার নম্বরে Whats App আছে কিনা জানতে চাইলো। আমি বললাম হ্যাঁ, ফেসবুকও করি। রাস্তা চলার সময় খুব দূরত্ব বজায় রাখছিল জানি না কেনো? কিন্তু ওর প্রাণবন্ত কথা যেনো আমি আর প্রকৃতি কান দিয়ে শুনছিলাম।
সেদিন রাতে ঘুমানোর আগে একটা ম্যাসেজ করবো ভাবছি আর সেইমাত্র ওর ম্যাসেজ এলো,মৌ,কি করছো? গুড নাইট। আমি রিপ্লাই করলাম কিন্তু তারপর আর কোন ম্যাসেজ নেই কি ব্যাপার কি হল, এই ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম জানি নাপরের দিন সকালে ম্যাসেজ এলো গুড মর্নিং। কাল ফিরছি টা নাগাদ ফ্রী থাকবে। ফোনে আবার অনেকক্ষ কথা হলো। ওর লাইব্রেরি যাবার দরকার ছিলো সেটা বলছিলো। আর আমিও যাবো টে নাগাদ। আমরা লাইব্রেরি পৌঁছে বাকি কাজ করে একটু বসলাম। সেদিন আমি ওর কোলে আমার হাতটা রেখেছিলাম। আর বলেছিলাম আমি তোমায় ভালোবাসি ণি জানি না অকপটে আমাকে বললো আমিও। কিন্তু অন্তিম যাত্রাটা ভালো হবে না। আমি বললাম মানে, বললো বিয়ে, তুমি বড়ো লোকের মেয়ে আর তোমার স্ট্যাটাস আমার স্ট্যাটাস আসমান জমিন ফারাক। আমি ওকে নিশ্চিত করে ছিলাম ,এটা নিয়ে ভাবতে হবে না। সঙ্গে সঙ্গে ওর একটা ফোন এলো। বুঝলাম কাল নাকি ওদের রেজাল্ট। রেজাল্টের কথা শুনে একটু চুপ হয়ে বললো দেখি কি হয়।আমি বললাম ভালোই হবে। আর হ্যাঁ,আমার জন্মদিন আগামী রোববার মামা আসবে তুমিও আসবে আমাদের বাড়ীতে। শুধুমাত্র হুমম বললো। তারপর কিছুক্ষণে মধ্যে দুজনে বাড়ী চলে এলাম বাড়ী গিয়ে খুব খুব ভাবছিলাম আজকের দুজনের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। ওইসময় মোবাইলে ম্যাসেজ টোন, ম্যাসেজ খুলে দেখি Mou,I love you too much.আমার রিপ্লাই দিতে দেরি হওয়ায় আবার ম্যাসাজ এলো, আমিও লিখলাম I love you so much...
পরের দিন সকাল ১০টা, আমার ফোনটা বেজে উঠলো মৌ আমি ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট। আমি চিৎকার করে উঠেছিলাম আনন্দে। আমার আওয়াজ শুনে মা আমার কাছে চলে এসেছিলেন। কি হলো মৌ? আমি আমি বলেছিলাম মনিরুল আমার খুব খুব প্রিয় একজন, ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েছে। মা আমি ওকে বাড়িতে ডাকবো। আমি ওকে আমার বাড়িতে এনে মিষ্টি খাওয়াতে চাই মা। প্লিজ মা, তুমি বলো ওকে আমাদের বাড়ি আসতে। জানো মা, খুব খুব ভালো ছেলে। এই কথাগুলো সেদিন মা শুনে বুঝছিলো আমাদের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক আছে। কিছুক্ষ পর মা,বললেন, আচ্ছা বল আসতে। তৎক্ষণাৎ আমি ওকে ফোন করে বললাম আমাদের বাড়ী আসতে, মা বলেছেন। রাজি হয়ে বললো আগামীকাল সকাল ১১টায়, তারপর ওখান থেকে স্যার এর বাড়ী যাবো। পরের দিন, এলো বাড়ীর সকলের সঙ্গে কথা হলো ঐদিন মামাও ছিলেন। মামা ওর সঙ্গে কথা বলে খুব খুশিওইদিন কে আমারও রেজাল্ট আউটের দিন ছিলো কিন্তু আমি জানতাম না। এমনকি সেদিন স্কুল সার্ভিস কমিশনেরও রেসাল্ট আউট হয়েছিলো। আমি কোয়ালিফাই করেছিলাম আমার সাবজেক্টে কিন্তু মনি কোয়ালিফাই করতে পারেনি ওর সাবজেক্টে। কিছুদিন পর ইন্টারভিউ হলো। তারপর প্যানেলে আমার নাম উঠলো আর সৌভাগ্যব আমি আমার টাউনের গার্লস স্কুলে চাকরি পেলাম। বাড়ীর সকলে খুব খুশি। মনিও খুশি। আমি জানি মনি আজ না হলেও কাল আরও ভালো কিছু পাবে। আমার প্রথম স্যালারিতে আমি মনি-কে অনেক কিছু কিনে দিয়েছিলাম। এভাবে দুবছর কাটলো। বাড়ীতে আমার বিয়ের জন্য অনেক প্রস্তাব আসতে লাগলো কিন্তু শেষমেষ আমি বলে ছিলাম আমি মনি-কে ছাড়া কাকে বিয়ে করবো না। বাবা একটু অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। কারণ মনি এখনো চাকরি পাই নাই। আমার স্যালারি টাকা আমি কি করছি তাতে কারোর কোনো মাথাব্যাথা ছিলো না। বাড়ীর চরম অমত আর আমার চরম মতে দুটো বাড়ী মিলে আমাদের রেজিস্ট্রি ম্যারেজ হলো কিন্ত কন্ডিশন ছিলো মনি চাকরি পাবার পর অনুষ্ঠান হবে। এভাবে কিছুদিন কাটলো আমাকে ইনডিরেক্টলি অনেক কথা শুনতে হতো কিন্তু আমি সময়ের অপেক্ষায় ছিলাম।হঠাৎ একদিন মামী মা এসে আমাদের বাড়ীতে সবার সামনে বললেন যে আমি মনি কে প্রত্যেক মাসে কতো টাকা পাঠা আমি বললাম কেনো, এটা তো আপনার জানার বিষয় নয়। বাবা সঙ্গে সঙ্গে কথাটা শুনে বললেন এটা কি সত্যি? আমি বললাম হ্যাঁ, ওর যতো টাকা প্রয়োজন হবে আমি দিতে বাধ্য থাকবো বাবা। তখন উনি রাগান্বিত হয়ে বললেন, না। আমি কথা না বাড়িয়ে আমার রুমে গেলাম। আর আমাকে সবার সামনে বলা হয়েছিল আমার ব্যাংক Atm কার্ড আর passbook বাবাকে দিয়ে দিতে আর প্রয়োজন হলে টাকা চেয়ে নিতে।প্রত্যেকদিন রাতে খাবার পর আমাদের বাড়ীর সকলে একসঙ্গে বসে গল্প করে,সেদিনও আমি সেইমতো চুপ করে বসে আছি সবার গল্প শুনছি। কিছুক্ষ পর বাবা আমাকে বললেন, এই নাও হাজার টাকা এই মাসের তোমার খরচ ,আর লাগলে বলবে। Atm card আর bank pass book আমাকে দাও। আমি চুপ থাকলাম। কিছুক্ষ পর আবার বললেন। তখন আমি বললাম Atm Card আমার কাছে নেই কিন্তু bank pass book আছে। বাবা বললেন তাই??,তাহলে তোমার অর্জিত ইনকাম সবটাই এখন মনির হাতে আমি বললাম বাবা ,আমি নিজে ওকে দিয়েছি যাতে , ওর প্রয়োজনের টাকাটা সবসময় আমার থেকে নিতে পারে এমনকি সব টাকা। আপনি বলুন আপনার কি লাগবে আমি তাই এনে দেবে। আমি তাড়াতাড়ি উঠে আমার রুমে গেলাম। মা আমার পিছনে এসে বললেন ছাড় এসব কথা, জানিস তো তোর বাবা টাকা পয়সা নিয়ে একটু কেমন করে।
সেদিন রাতে আমি ফোন অফ করে রেখেছিলাম।পরের দিন সকাল টা,মনি আমাদের বাড়ীতে। আমি অবাক। আমাকে দেখেই বললো ফোন অফ কেনো? শরীর খারাপ? এই বলে ডাইনিং বসলো। বাড়ির সকলে এসে মনির সঙ্গে কথা বললো। বাবা বাদে। মনিকে দেখে মা খুব খুশি। মনি বাবাকে খুঁজতে লাগলো, আমি বললাম উনি অসুস্থ রুমে আছেন পরে কথা হবে। বললো না,একটা সুখবর আছে যেটা আমি উনাকেই প্রথম দিতে চাই। মৌ বললো কি সেটা? গতকাল appoinment letter পেয়েছি, আমি BDO হতে চলেছি তোমাদের ব্লকে। বাবা পাশের ঘর থেকে সব শুনছিলেন। তারপর বেরিয়ে এসে মনি কে জড়িয়ে ধরে বললেন an extream achievment.
বাবা আমার কাছে এসে আমাকে বললেন আমাদের মৌ " অনন্যা"
Top of Form


0 comments:

Post a Comment