মাতৃরূপেণ সংস্থিতা
সায়নী ঘোষ
অন্যান্য বারের মতো
এবারের শারদীয়ায়
যে অপু
নতুনভাবে সাজবে
তা একেবারেই
নয়।
এবারের দেবীপক্ষ
একটু আলাদাই
একটু অন্যরকম
সজীবতায় ভরা। কিন্তু এতোদিন মায়ের অপেক্ষায়
যেন তার
দিনগুলো ফ্যাকাশে
হয়ে ছিল। আগে ছোটবেলায় কত মজা
হতো সকাল
থেকে রাত
পর্যন্ত মায়ের
পুজো হতো
আর মায়ের
হাতের প্রসাদের
সুগন্ধে মেতে
উঠতো সারাটা
দালানকোঠা।
সেই মায়ের
সাথে আজ
বাইশ বছর
দেখা হয়
না।
মায়ের আলতা
পায়ের ছাপে
কাশ শিউলির
আঘ্রাণও পায়না
অপু।
মা যে
কবে আসবে
তা ভেবেই
একাকার সে। তাই তার দেবীপক্ষের সূচনায়
আমাদের দেবীপক্ষ
নাও হাতছানি
দিতে পারে।
সেবার মায়ের সাথে
যখন পুজোমন্ডপে
বেড়াতে বেরিয়েছিল,
এতো আলো
আর মহিষাসুরটা
দেখে বেজায়
ভয় পেয়েছিল
অপু।
কিছুটা ভয়
পেয়ে কাঁচুমাচু
হয়ে মায়ের
আঁচলের ফাঁকা
দিয়ে তাকাচ্ছিল
সে।
মা বলছিল
"ওরে বোকা ছেলে আমার! মা
কে দেখে
কেউ ভয়
পায় বুঝি!
বেড়িয়ে এসে
দ্যাখ ওই
মৃন্ময়ী মূর্তিতে
কত শক্তিই
না নিহিত
আছে।
কিন্তু প্রতিবারের
অষ্টমীর অঞ্জলি
আর ধুনুচি
নাচের মহড়াটা
ও আজও
মিস করে। মা কি সুন্দর সবটা
হাসিমুখে সামলে
নিত।
কিন্তু কি
এমন অপরাধ
মাতৃরূপের জন্ম দেওয়া যার জন্য
ঘরের লক্ষী
কে তার
ভাঁড়ার থেকে
উৎখাত করা
যায়? বড়
আশ্চর্য লাগতো
অপুর...
প্রশ্নটা কুঁড়ে কুঁড়ে
খায় অপুকে। তার দুগ্গা কে জন্ম
দিয়ে মা
কি ভুল
করেছিল যার
জন্য আজ
দেবীপক্ষেও মার আসার অনুমতি নেই
তাঁর সন্তানের
কাছে!!
কিন্তু অপু আজ
বুঝতে শিখেছে,
নিজের লড়াই
নিজে লড়তে
জেনেছে তাই
আজ বাইশ
বছর পর
মা কে
নিয়ে দেবীপক্ষের
সূচনায় অপু। আজ মুখুজ্জে বাড়ি তাকে
কন্যারত্নের জন্মের দোষে দোষারোপ করবে
না তাকে
চিনবে মেজর
দুর্গা মুখার্জির
মা হিসেবে। যাকে তিল তিল করে
অপু শিখিয়েছিল
মা হওয়ার
দায়িত্ব, মা
হওয়ার কর্তব্য,
আর মেয়ে
হওয়ার আসল
উদ্দেশ্য!...
তাই আজ আবার
অষ্টমীতে মায়ের
হাতের ভোগ
পেয়েছিল মাটির
আর মানবতনু
দুর্গা।
তার চোখের
আনন্দাশ্রু তে ধুয়ে গেছিলো পুরোনো
বাইশটা বছরের
শঙ্কা।
আর শক্তিরূপেণ
দুর্গার জয়ডঙ্কা
ঢাকের মহড়ায়
শুনিয়েছিল অপু। তাকে "মাতৃরূপেণ সংস্থিতা" করতে।
0 comments:
Post a Comment