অন্যরূপে পুরুষ
লগ্নজিতা দাশগুপ্ত
ঘটনা-১
মেয়ে দিতি, ছেলে তাতাইকে স্কুলবাসে তুলে দিয়ে এসে দেবুর ব্রেকফাস্ট
করতে লাগলো রণিত| ব্রেকফাস্ট নিয়ে নিজের
বেডরুমে ঢুকে স্ত্রী দেবপ্রিয়ার কপালে চুমু খেয়ে ঘুম ভাঙালো রণিত,"ওঠো বাবু, অফিসে লেট হয়ে
যাচ্ছে, আজ না তোমার প্রেজেন্টেশন
আছে"|
"উমম উঠি",
আলতো করে রণিতের গাল ছুঁয়ে বাথরুম এ ঢুকে গেলো
দেবু|
দেবু অফিস যেতেই দুপুরের
লাঞ্চ বানাতে লেগে পরলো রণিত, হ্যাঁ ঠিক পড়ছেন
রণিত একজন "হাউস হাসব্যান্ড";
হ্যাঁ আজকাল পুরুষরা সব
পারে, ওদের মেল ইগো কম, ওরা স্ত্রীকে সন্মান দিতে জানে আর হ্যাঁ বুদ্ধি আর
ভালোবাসার মিশ্রণে ওরা সংসার করতে জানে।
ঘটনা-২
হোটেলের রুম থেকে বেরিয়ে
ওষুধের দোকানে ঢুকলো রায়ান। আজকে মালিনী ম্যাডাম ওকে ছিঁড়ে খেয়েছে পাঁচতারা
হোটেলের বিলাসবহুল রুমে কিন্তু দামি জিন্স এর পকেট এ মোটা দু’হাজারের বান্ডিলটা কিছুটা নিস্তার দিলো, কারণ এই সপ্তাহে প্রেমিকা অপর্ণার কেমোর টাকাটা সে জোগাড়
করে ফেলেছে।
হ্যাঁ রায়ান শরীর বিক্রি
করে যাকে "জিগালো" বলে, না পুরুষ
বেশ্যাদের নিয়ে ঔপন্যাসিকরা উপন্যাস লেখে না, তারা কাঁদতে পারে না কিন্তু তাদেরও ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে
শরীর বিক্রি করতে হয় অচেনা হাতে।
ঘটনা-৩
পাঁচবছরের প্রেমিকা,
চার বছরের স্ত্রী দূর্বা আজ ঐশিককে ডিভোর্স
দিয়ে চলে গেছে। কারণ হিসেবে ভরা কোর্টের মধ্যে জানিয়ে গেছে ওর পৌরুষত্বহীনতা কথা।
আজ বোধ হয় দূর্বার মেডিকেল রিপোর্ট আর ঐশিক এর মনোভাব দুটোই অলক্ষে হাসছে। কারণ
প্রেমিক ঐশিক ভেবেছিলো অক্ষম নারীদের সমাজে অনেক কটুকথা শুনতে হয় তাই স্ত্রীর
অক্ষমতা নিজের অক্ষমতা ভেবে চালিয়ে ছিল, না ঐশিক ভুল অক্ষম পুরুষদেরও শুনতে হয় "না মর্দ, কাপুরুষ"।
ঘটনা-৪
ইউ.এস যাওয়ার টিকিটটা
ছিঁড়ে কুটিকুটি করে উড়িয়ে দিলো রঙ্গন ওর অফিসের পাঁচতলা বিল্ডিং এর ওপর থেকে। কারণ
দিদি জানিয়ে দিয়েছে তার দিল্লীর বাংলোতে মা এর মতো ব্যাকডেটেড একজনকে দু’বছরের জন্য সে রাখতে পারবে না ওদের পার্সোনাল স্পেস নষ্ট
হবে বলে। না নিজের স্বপ্নকে পূর্ণ করতে রঙ্গন কিছুতেই মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে যেতে
পারবে না। তাই সে নিজের স্বপ্নকে কুটি কুটি করে উড়িয়ে দিলো, আর চোখের জল মুছে মনে মনে হাসলো রঙ্গন এই দিদিকেই মা
ছোটবেলায় বেশি ভালোবাসতো দিদি শশুরবাড়ি চলে যাবে বলে আর চাকরী করে মাকে দেখবে বলে,
কারণ আজকালকার ছেলেরা তো মা এ দেখে না বলে।
ঘটনা-৫
প্রেমিকা মৃত্তিকা আজ
বিয়ের পিঁড়িতে বসছে, কারণ কিছুই না আবির আজও
টিউশন পড়ায় ওর সরকারি চাকরী নেই। মৃত্তিকা ওকে ভুলে যেতে বলেছে ওদের চারবছরের
সম্পর্কের কথা, কিন্তু বোকা আবির কিছুতেই
সেই চেনা গলার আওয়াজ, গায়ের গন্ধ, মিষ্টি হাসি কিছু ভুলতে পারছে না। আর পারছে না তাদের সেই
আবেগপ্রবণ মুহূর্তকে|
ওহো ও তো আবার পুরুষ তাই
বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস করার অভিযোগ আনতে পারে না প্রেমিকার বিরুদ্ধে।
ঘটনা-৬
আজও অফিস ফেরত রক্তিম
পাড়ার মোড়ে শুনতে পেলো
"ওই যে দেখ ঘরজামাই
যাচ্ছে, সত্যি কারো কারো কপাল হয়
মাইরি"।
ক্ষত-বিক্ষত মনটা নিয়ে
বাড়িতে ঢুকতেই মনটা হালকা হলো রক্তিম এর ওর অসুস্থ মামনি ওর নিজের মা এর সাথে বসে
লুডো খেলছে| হ্যাঁ রক্তিম
"ঘরজামাই", ওর মা ওকে বলেছে
"ঘরজামাই" হতে কারণ ওর অসুস্থ শাশুড়ি মা এর একমাত্র মেয়ে কাজরী ওর
স্ত্রী, তাই মামনিকে দেখার কেউ
নেই বলে আজ রক্তিম নিজের মাকে নিয়ে শশুরবাড়িতে উঠে এসেছে।
হ্যাঁ ওরা পুরুষ মানুষ,
কি তাই বলে ওদের কাঁদতে নেই কেন ওদের
অশ্রুগ্রন্থি নেই? ওদের আবেগ নেই? ওদের চামড়া কি লোহা দিয়ে তৈরী যে তার যত্ন নিলে মেয়েলি
শুনতে হয়, বউ এর কথা শুনলে বউ এর
আঁচলে ঢুকে থাকার কথা বলা হয়, মা-বাবাকে দেখার
দায়িত্ব কি শুধু ওদের কামাই ও শুধু ওরা একা করবে? কেন পুরুষ বলে কি ওদের কোনো ইচ্ছে-শখ-আল্লাদ নেই? প্রেম করলে আগে পুরুষটিকেই চাকরী পেতে হবে কেন? বাড়ির কোনো ভারী কাজ থাকলে ওদের সেটা করার দায়িত্ব,ওদের জ্বর হলে শুয়ে থাকার জো নেই কারণ ওরা পুরুষ, বাড়িতে বিয়ে লাগলে মেয়েরা হাজার রং এর জামা কাপড় পরে ঘুরে
বেড়ায় আর কনের ভাই বা দাদাটা হয়তো জামা বদলানোর সুযোগ পায়না। নারীবাদী বলে চিৎকার
করলেই হবে না মাঝে মাঝে ক্যাফের বিল, সারপ্রাইজ প্ল্যান, মুভির টিকিট
আপনিও কাটুন দেখবেন ভালো লাগবে। কারণ পুরুষদেরও তো সারপ্রাইজ পেতে ভালো লাগে।
0 comments:
Post a Comment