সংস্কৃত সুভাষিতমালা
সঙ্কলনকর্তা ও ব্যাখ্যাতা -
পার্থসারথি
सुभाषितम् -
अहो खलभुजङ्गस्य विचित्रोऽयं वधक्रमः।
अन्यस्य दशति श्रोत्रमन्यः प्राणैर्वियुज्यते॥
সুভাষিতম্ -
অহো খলভুজঙ্গস্য বিচিত্রোয়ং বধক্রমঃ।
অন্যস্য দশতি শ্রোত্রমন্যঃ
প্রাণৈর্বিযুজ্যতে।।
বঙ্গানুবাদ -
দুর্জনের (বা খলরূপী সাপের) বধের এই
কৌশল বড়ই বিচিত্র! একজনার কানে দংশন করে, আর অন্যজনের প্রাণ বিয়োগ হয়।
নিগূঢ়ার্থ -
দুর্জন বা খল ব্যক্তির অপকর্মের ফল
প্রায়শই এমন হয় যে, একজন ব্যক্তিকে
আঘাত করা হলেও, তার কুফল বা পরিণতি ভোগ করতে হয়
অন্য নির্দোষ ব্যক্তিকে।
এখানে 'খলরূপী ভুজঙ্গ'(দুর্জন সাপ) প্রতীকী অর্থে এমন এক অসৎ ব্যক্তিকে বোঝায়, যে পরোক্ষভাবে বা কূটকৌশলে ক্ষতি সাধন করে। তার আঘাতের
লক্ষ্যবস্তু হয়তো একজন, কিন্তু সেই আঘাতের
প্রকৃত ফল বা চরম পরিণতি ভোগ করে তৃতীয় কোনো ব্যক্তি, যে হয়তো সেই সংঘাতে সরাসরি জড়িতও নয়। এটি এক ধরনের
চাতুর্যপূর্ণ বা ছদ্মবেশী আক্রমণ, যেখানে অপরাধী
নিজের হাত নোংরা না করে বা সরাসরি নিজেকে প্রকাশ না করে অন্যের মাধ্যমে ক্ষতিসাধন
করে অথবা তার কৃতকর্মের প্রভাব অন্য নিরীহ মানুষের ওপর গিয়ে পড়ে।
বর্তমানকালে প্রাসঙ্গিকতা -
এই শ্লোকটি আধুনিক সমাজেও অত্যন্ত
প্রাসঙ্গিক। এর কয়েকটি দিক নিচে উল্লেখ করা হলো:
* মিথ্যা তথ্য ও গুজব: আজকের ডিজিটাল যুগে, মিথ্যা তথ্য বা গুজব (fake news) ছড়ানো একটি বড়
সমস্যা। একজন ব্যক্তি হয়তো কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে একটি মিথ্যা খবর ছড়ায়
("কানে দংশন করে"), কিন্তু এর প্রভাবে
সমাজে অস্থিরতা, ঘৃণা বা দাঙ্গা সৃষ্টি হয়, যার ফল ভোগ করে সাধারণ মানুষ ("অন্যের প্রাণ বিয়োগ
হয়")। গুজব ছড়ানো ব্যক্তিরা প্রায়শই আড়ালে থাকে।
* রাজনৈতিক চক্রান্ত ও দুর্নীতি: রাজনীতিতে প্রায়শই এমন ঘটনা দেখা যায় যেখানে
এক পক্ষ অন্য পক্ষকে ঘায়েল করার জন্য নানা চক্রান্ত করে। এক্ষেত্রে, একজন রাজনীতিবিদ হয়তো অন্যজনকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করার
চেষ্টা করেন, কিন্তু এর ফলস্বরূপ জনগণের আস্থা
নষ্ট হয়, উন্নয়ন ব্যাহত হয় এবং সাধারণ মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
দুর্নীতির ক্ষেত্রেও দেখা যায়, উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা অবৈধ সুবিধা নিলেও তার চূড়ান্ত চাপ পড়ে সাধারণ
নাগরিকদের ওপর, যেমন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি বা পরিষেবার
অবনতি।
* কর্পোরেট অনিয়ম: বড় বড় কর্পোরেশন যখন অনৈতিক ব্যবসায়িক নীতি অবলম্বন করে, যেমন পরিবেশ দূষণ বা শ্রমিকদের শোষণ, তখন হয়তো তাদের সরাসরি কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় না, কিন্তু সেই দূষণের শিকার হয় সাধারণ মানুষ বা শ্রমিকদের
জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। এখানে কর্পোরেট হলো "খল ভুজঙ্গ", আর ক্ষতিগ্রস্ত হয় জনগণ।
* সাইবার অপরাধ: সাইবার হামলার ক্ষেত্রে প্রায়শই দেখা যায়, একজন হ্যাকার দূর থেকে কারোর অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে বা ডেটা
চুরি করে ("কানে দংশন"), কিন্তু এর ফলে আর্থিক ক্ষতি, ব্যক্তিগত তথ্য
ফাঁস বা মানসিক হয়রানির শিকার হন অন্য কোনো নিরীহ মানুষ ("প্রাণ বিয়োগ
হয়")।
* সামাজিক বিভাজন ও উস্কানি: কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী সমাজে বিভেদ সৃষ্টির জন্য
উস্কানিমূলক কথা বলে বা বিদ্বেষ ছড়ায়। এর প্রত্যক্ষ লক্ষ্য হয়তো কোনো নির্দিষ্ট
ব্যক্তি বা সম্প্রদায়, কিন্তু এর সামগ্রিক
ফলস্বরূপ সমাজে অস্থিরতা দেখা দেয় এবং অনেক নিরীহ মানুষ এর বলি হয়।
সংক্ষেপে, এই শ্লোকটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, দুর্জনের কার্যকলাপের প্রকৃতি এমনই যে, তাদের দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতির প্রত্যক্ষ শিকার না হয়েও অনেক
নিরীহ মানুষ পরোক্ষভাবে তার ফল ভোগ করে। তাই সমাজে এমন ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা এবং
তাদের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি।
0 comments:
Post a Comment