Jul 25, 2021

"মিলন" - অয়ন চ্যাট্টার্জী

Edit Posted by with 8 comments

 


মিলন

অয়ন চ্যাট্টার্জী

 

ছোট্ট-এ জীবন, তার ছোট্ট ছোট্ট চাওয়া-পাওয়া,

মিলন-বিচ্ছেদ তারই অঙ্গ, যেন নয়নের দুই পাতা।

- না না কবি আমি নয় তাই কাব্যি করতে আসিনি।

কিন্তু ওই যে -

মনের মাঝে এলোমেলো ধারণা দিলে উঁকি,

খসখসিয়ে পেনটি দিয়ে কাগজে লিখে ফেলি।

তাহার পরে তুলে আনি তারে প্রেয়সীর মনেতে,

টাইপ করে ফেলি তারে ফোনের নোটপ্যাডেতে।

(বুঝেই গেছেন তাইলে আমার প্রেয়সী মানে মোবাইলফোন আর তার মন মানে নোটপ্যাড)

তো আজও এমনই একটা লেখা লিখছি এবং এটা অবশ্যই নির্ভেজাল বাস্তব সত্য ঘটনা অবলম্বনে লিখছি।

স্কুল জীবনে ২ টো আর কলেজ জীবনে ৩ টে মিলন ঘটিয়েছি। হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন, মিষ্টিমধুর প্রেমের সম্পর্কের মিলনের কথাই আমি বলছি। সেই ৫ টা সম্পর্কই আজও অবিরাম ও অবিচ্ছেদ্যভাবে সময়ের সাথে সাথে স্কুল-কলেজে-পাড়ার মোড়ে, ভিড় বাসে-ট্রেনে-ট্রামেতে, কোলাহলপূর্ণ পুজোর ভিড়েতে, উত্তরে হাতিবাগান-শ্যামবাজার থেকে দক্ষিণে কলেজস্ট্রিট-পার্কস্ট্রিট হয়ে বয়ে চলেছে, বয়ে চলেছে আর বয়েই চলেছে। কিন্তু সেই ৫ টা সম্পর্কই ছিল বিপরীত লিঙ্গের মধ্যে।

কিন্তু, আজকে আমি একই লিঙ্গের দুজনের মধ্যে মিলন ঘটালাম। হ্যাঁ! ঠিকই পড়েছেন এবং ঠিকই ধরেছেন! সমলিঙ্গের দুজনের মিলন ঘটালাম যতটা কষ্ট করতে হবে ভেবেছিলাম সেটা করতে হয়নি। খুব সহজে ও খুব তাড়াতাড়িই ওদের মিলন ঘটিয়ে দিলাম। ওদের মিলন ঘটানোর জন্য যেখানে নিয়ে গেছিলাম, ভেবেছিলাম সেখানে থাকা বাকি লোকজনের হ্যাঁন-ত্যাঁন-ঘ্যাঁন-ঘ্যাঁন-প্যাঁন-প্যাঁনের মধ্যে সমস্যার না সৃষ্টি হয়ে যায়। অথচ ওদের মিলন না ঘটিয়ে দিলে আমাকেও আমার বাড়ির লোকগুলো ছাড়বে না। প্রতিদিন!! বিশ্বাস করুন প্রতিদিনই পিতা-মাতা-ভ্রাতার কটুবাক্যবাণ শ্রবণ করতে হচ্ছিল আর সেইসব বাণ যেন মোকাম্বোর পিস্তলের গুলি হয়ে আমার এই ছোট্ট পুঁচকে মনের পিঞ্জিরাটারে ঝাঁঝড়া করে দিচ্ছিল। "আমি নাকি চাইলেই ওদের মিলন করিয়ে দিতে পারি কিন্তু করছিনা।" - কি মুস্কিলরে বাবা! ও হ্যাঁ কে কি বলেছেন বলি --

পিতা -  "কিরে কবে করাবি!",

মাতা - "কবে যাবি বলতো ওদের এক করতে?",

ভ্রাতা - "তুই ইচ্ছে করে দেরি করছিস কিন্তু ব্যাঙ্, এই কাজটা করতে যেন ভাও খাচ্ছিস বলে মনে হচ্ছে! এই শোন চাইলে না আমিই করিয়ে দিতে পারি, কিন্তু তুই করাবি বলেছিস তাই করছিনা।"

আরো যে কত কি না শুনতে হয়েছে কি আর বলি মানে লিখি!!! কিন্তু আমি যে কি অবস্থার মধ্যে আছি সেটা কে বুঝবে? যাই হোক সেসব কেউ না বুঝলেও চলবে।

তো! অবশেষে, এই ugc র মুড সুইং এর জন্য MA 2nd সেমিস্টার ক্যান্সেল হয়ে যাওয়ায় আজ আমি ওদের মিলন ঘটাতে সক্ষম হলাম। thanks to ugc, মাঝে মাঝে বাঁশ খাওয়াও কাজে লাগে।

কাল রাতে ঘুমানোর সময়ই ঠিক করেছিলাম আজকে দুজনকে এক করবোই করবো! কিন্তু রাত্রি থেকেই মারাত্মক চিন্তা হচ্ছিল, ওদের দুজনের একজনও কিংবা যদি ! যদি দুজনই বেঁকে বসে ? তাহলে তো হয়ে গেল রাম! যদি বলে - "একে আমি চিনি না, এর সাথে আমার সম্পর্ক নেই আর সম্ভবও নয়, আমার যা আছে ওর তা নেই, আমি যা চাই ও তা নয়, ও অতটাও ততটা নয় যতোটা হলে আমি পুরোটা হবো"  ইত্যাদি নানা উটকো চিন্তা মাথার মধ্যে বনবন করে ঘুরে ফিরে নিজেরা মরছিল আর তার জন্য মাথার ব্যাথা টনটন করে আমায় ভেতরে ভেতরে মারছিল। অথচ একজনকে আমি চিনি সেই ২০০১ সালে বোধজ্ঞান হবার পর থেকে আর একজনকে ২০০৯ সালে ওর জন্ম থেকে। ওদের দুই আত্মাকে একাত্মায় পরিণত করে দেবার ইচ্ছে আমার বহুদিনের, কারণ ওরা দুজনেই আমার খুব প্রিয় - দুটোই পুরো গুল্টুমুল্টুসুন্টু এক্কেরে। কিন্তু 'বিধি বাম' হলে যা হয়। প্রথমে কেউ-ই ওদের এক হতে দিচ্ছিল না আর যখন দিলো তো সেই এক করানোর দায়িত্ব পড়লো আমার ওপরে। কারণ ওরা দুজন আরো কিছু মানুষের সাথে সম্পর্কিত হলেও এই ভূ-ব্রহ্মান্ডে সবথেকে বেশি, সবার প্রথম ও সবার শেষে আমার সাথেই সম্পর্কিত। তাই আমাকেই ওদের মিলন করাতে হবে। কিন্তু যতক্ষণ না ওদের দুজনের মিলন ঘটাতে পারছি ততক্ষণ চিন্তা কিছুতেই পিছু ছাড়ছিল না।

মনকে শান্তি দেওয়ার জন্য একটাই সুভাষিতম্ আউরে যাচ্ছিলাম -

চিন্তা চিতাসমা বিন্দুমাত্রং বিশেষতা।

নির্জীবং দহতে চিতা সজীবং দহতে চিন্তা।।

অর্থাৎ,

চিন্তা চিতার সমান বিন্দুমাত্র তফাৎ।

চিতা পোড়ায় মৃতকে আর চিন্তা জীবন্তকে।।

কিন্তু তবুও রাম! তবুও -

চিন্তা আমার পিছু

ছাড়েনা কোনোকিছু(তেই)।

তাই চিন্তা আর দূর হচ্ছিল না। আর এই চিন্তায়! চিন্তায়! এই না না পড়ুন - দুশ্চিন্তায়!! দুশ্চিন্তায়!! গতকাল রাতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি খেয়াল নেই। ভোররাতে স্বপ্ন দেখলাম -  যে দুজনের মধ্যে আমি মিলন ঘটাবো সেই দুজনের মধ্যে বেঁধে গেছে ক‍্যাঁচাল আর ছোটাছুটি করে খারাপ হয়ে গেছে আমার হাল। এ-কে, ও-কে, তা-কে এবং ওদের দুজনের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্নজনকে বলতে হচ্ছে, যাতে তারা আমায় একটু যদি সহায়তা করে ওদের দুজনের মিলন ঘটাতে।

আর -

কালঘাম গেল ছুটে

বিশ্রী ওই স্বপ্ন দেখে,

উড়ে গেল মনটা

ভেঙে গেল ঘুমটা। - ঘড়িতে দেখি ৪ ৩০ বাজে। ভোরের স্বপ্ন নাকি সত্যি হয় এমনটাই শুনে এসেছি আবার! আর ঘুম এলো না ওই স্বপ্ন দেখে। ১০ টা নাগাদ দুজনকে নিয়ে একইছাদের তলায় দাঁড়িয়ে ওদের দুটিকে এক করে দেবো ভেবেছিলাম।

সময়মতো দুরু দুরু বুকে দুজনকে এক ছাদের তলায় নিয়ে এলাম। কিন্তু ঐযে ভালোবাসা!!! ওদের ভালোবাসার কাছে আমার দুশ্চিন্তা বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলেনি। মুহূর্তের মধ্যে ওদের দুটিকে এক করে দিতে পারলাম। যেন হরিহর আত্মা একেবারে!

বিশ্বাস করতে পারবেন না ওরা দুজন আজ কত্তোটা খুশি!!! সাথে আমিও বিশাল বিশাল আর বিশাল খুশি। আসলে মিলনের আনন্দের মতো আনন্দ আর কিছুই নেই। প্রভুর কাছে কামনা করি ওদের আগামীর পথ আরো ভালো হোক। ওদের চলার পথ মসৃন হোক।

এই যাহ্! দেখেছেন ? আমি এতটাই আনন্দে আত্মহারা হয়ে আছি যে আনন্দের চোটে ওদের নামটা বলতেই ভুলে গেছি!!! ওদের দুজনের নাম - রেশনকার্ড আর আধারকার্ড। সমলিঙ্গের দুজন। যাদের একজনকে চিনি ২০০১ সালে বোধজ্ঞানের পর থেকে আরেকজনকে ২০০৯ সালে জন্ম থেকে।


8 comments: