Jun 18, 2021

"দেশের আজব নিয়ম" - ইয়াকুব হোসেন

Edit Posted by with No comments

 


দেশের আজব নিয়ম

ইয়াকুব হোসেন

 

বৈশাখ মাস, প্রচণ্ড গরম দিনেরবেলা কোথাও বসে থাকা যায় না। তাই সবাই রাত্রিতে আড্ডা দেই। সেখানে বয়স্ক থেকে ছোট-ছোট ছেলেরাও উপস্থিত থাকতো। হঠাৎ একদিন দাদুর (ঠাকুরদা) মুখ থেকে এই কাহিনীটি শুনে আমি নিজের মতো করে লিখছি। এক গুরু তার শিষ্যকে নিয়ে ঘুরতে গেছেন এক দেশে। সেই দেশে তেলের দাম আর ঘি-এর দাম সমান। শিষ্য গুরুকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, কী দেশ গুরু তেলের দাম আর ঘি-এর দাম সমান। তার উওরে গুরু বলেছিলেন এই দেশের মানুষ সব শয়তান, তাই তাদের তেলের দাম আর ঘি এর দাম সমান। শিষ্য ঘি খেতে খুব পছন্দ করতো। তাই নিজের দেশে ফেরার সময় শিষ্য গুরুকে বলেছিলেন, ‘আপনি দেশে ফিরে যান, আমি যাবো না,’ গুরু বললেন ‘কেন যাবি না?’ উওরে শিষ্য বললেন, ‘আমি ঘি খাবো ও মোটা হবো। গুরু অনেক বোঝানোর পর একাই দেশে ফিরলেন।

কিছুদিন যাওয়ার পর সেই দেশে দু’জন চোর চুরি করতে গিয়ে দেওয়ালে চাঁপা পড়ে মারা যায়। চোরের পিতা রাজার কাছে নালিশ জানায় যে, তার দুটি সন্তান চুরি করতে গিয়ে দেওয়ালে চাঁপা পড়ে মারা যায়, আমি এর বিচার চাই। রাজা বললেন দেওয়ালটা কার বাড়ির ছিল। চোরের পিতা বললো লেবুর বাড়ির দেওয়াল ছিল। রাজা বললেন লেবু-কে ধরে নিয়ে আয়, ওর ফাঁসি হবে।

রাজার কথা মতো লেবুকে ধরে নিয়ে আসা হল এবং বলা হল তোমার ফাঁসি হবে। লেবু বললো ‘কেন?’, রাজা বললেন তোমার বাড়িতে চুরি করতে গিয়ে দেওয়ালে চাপা পড়ে দুটি ছেলের প্রাণ গেছে, তাই তোমার ফাঁসি হবে। লেবু বললো দোষ তো আমার না, রাজা বললেন, ‘তাহলে কার দোষ?’ লেবু বললো, ‘দোষ মিস্ত্রির, কারণ আমি সিমেন্ট, বালু, রড ইত্যাদি সবই তো ঠিক দিয়েছি। মিস্ত্রি এখন হালকা করে দেওয়াল বানিয়েছে।’ রাজা বললেন, ‘তাহলে মিস্ত্রির ফাঁসি হবে।’ রাজার কথা মতো সেই মিস্ত্রিকে ধরে নিয়ে আসা হল এবং তাকে বলা হল তোমার ফাঁসি হবে। মিস্ত্রি বলছে ‘কেন?’ রাজা বললো, ‘তুমি লেবুর যে দেওয়ালটা হালকা করে বানিয়েছ, সেই দেওয়ালে চাঁপা পড়ে দুজন নাগরিকের প্রাণ গেছে তাই তোমার ফাঁসি হবে।’ মিস্ত্রি বলছে, ‘দোষ আমার না, দোষ হচ্ছে জোগাইলের। আমি জোগাইলকে পানি (জল) কম দিতে বলেছি, ও বেশি দিয়ে ফেলেছে তাই দেওয়াল হালকা হয়েছে।’ রাজা বললেন, ‘তাহলে জোগাইলকে ধরে নিয়ে আয় ওর ফাঁসি হবে।’ রাজার কথা মতো জোগাইলকে ধরে নিয়ে আসা হল এবং বলা হল তুমি মশলায় পানি কেন বেশি দিয়েছিলে তোমার ফাঁসি হবে। জোগাইলা বলছে, ‘ও দোষ আমার না, ও দোষ হাতি ওয়ালার। কারণ হাতি ওয়ালা হাতি ছেড়ে দিয়েছিল। সেই হাতি দৌড়ে যাওয়ার সময় হাতির পা লেগে পানির বালতি পড়ে যায়, তাই মশলায় পানি বেশি হয়েছিল, দোষ আমার না, দোষ হাতিওয়ালার।’ রাজা বললেন, ‘হাতিওয়ালাকে ধরে নিয়ে আয় ওর ফাঁসি হবে।’ রাজার কথা মতো হাতিওয়ালাকে ধরে নিয়ে আসা হল এবং তাকে বলা হল তুমি হাতি ছেড়ে দিয়েছিলে কেন, তোমার ফাঁসি হবে। হাতিওয়ালা বললো, ‘দোষ আমার না, দোষ হচ্ছে মহিলার। মহিলাটি পায়ে ঘুঘরা পড়েছিল, সেই ঘুঘরার ঝনঝন আওয়াজ শুনে আমার হাতি দৌড় মেরেছিল।’ রাজা বললো তাহলে মহিলাটিকে ধরে নিয়ে আয়, মহিলার ফাঁসি হবে। রাজার কথা মতো মহিলাটিকে ধরে নিয়ে আসা হল এবং মহিলাটি বললো, ‘দোষ আমার না, দোষ হচ্ছে বানিয়ার। কারণ বানিয়াই আমাকে এই ঘুঘরা বানিয়েদিয়েছে।’ রাজা বললো, ‘তাহলে বানিয়াকে নিয়ে আয়, বানিয়ার ফাঁসি হবে।’ রাজার কথা মতো বানিয়াকে ধরে নিয়ে আসা হল এবং বলা হল তোমার ফাঁসি হবে। বানিয়া হতবাক হয়ে বলছে ‘কেন?’ তখন রাজা সব ঘটনা খুলে বললো কিন্তু বানিয়ার কাছে কোনো উপায় না থাকায় ফাঁসি নিতে বাধ্য হয়।

বানিয়াকে ফাঁসি দেওয়ার জন্য বিদেশ থেকে দড়ি নিয়ে আসা হল এবং বানিয়াকে ফাঁসিতে ঝোলানো হল, কিন্তু বানিয়ার গলা এতটাই চিকন যে দড়ি তার গলাকে ধরে রাখতে পারছেনা, সে দড়ি থেকে খুলে পড়ে যাচ্ছে। জল্লাদ বললো, ‘রাজামশাই আপনার হুকুম তো কার্যকরী হচ্ছে না !’ রাজা বললো ‘কেন?’ জল্লাদ বললো- ‘বানিয়ার ঘাড় খুব চিকন, দড়িতে আটকায় না।’ রাজা বললো, “এই দড়িতে যার গলা মিলবে তাকেই নিয়ে আয়।’ খুঁজতে খুঁজতে সেই শিষ্যকে পাওয়া গেল এবং তাকে ধরে নিয়ে আসা হল, তাকে বলা হল তোমার ফাঁসি হবে, শিষ্য বললো- ‘কেন আমি তো কোন অন্যায় করিনি।’ রাজা বললো, ‘তোর ঘাড় মোটা এই জন্য তোর ফাঁসি হবে।’ শিষ্য তখন নিরুপায়, রাজা তাকে বললেন, ‘তোমার কোন শেষ ইচ্ছে থাকলে বলো।’ শিষ্য বললেন ‘আমার শেষ ইচ্ছে হল আমি আমার গুরুর সঙ্গে দেখা করতে চাই।’

শিষ্যের কথা মতো তার গুরুকে চিঠি দেওয়া হল, সেই চিঠি পেয়ে গুরু সেখানে তাড়াতাড়ি পৌঁছে যায়। গুরুকে দেখে শিষ্য গুরুর পা জড়িয়ে ধরে বলে, ‘গুরু আমাকে বাচান।’ গুরু তখন শিষ্যকে বললো ‘আমার বুদ্ধি মতো কাজ করবি...।’ শিষ্য বললো ‘ঠিক আছে।’ ফাঁসির দিন গুরু বলছে ‘আমারে ফাঁসি দেন, আমার শিষ্যকে ছেড়ে দেন’ ; শিষ্য বলছে ‘আমাকে ফাঁসি দেন, আমার গুরুকে ছেড়ে দেন।’ জল্লাদ বলছে ‘রাজা দু’জনকেই ফাঁসি দিয়ে দেই।’ রাজা বলছে ‘না, ফাঁসি হবে একজনের। জল্লাদ তুমি একটু থেমে যাও, দুজনেই ফাঁসি নিতে চাচ্ছে এর মধ্যে রহস্য আছে।’ রাজা সেই রহস্য জানতে চাইলে তারা কেউ বলতে চাচ্ছিলেন না, অনেক অনুরোধের পর গুরু বলতে শুরু করে যে আমি ওই দড়ির মধ্যে সব স্বর্গ (জান্নাত) দেখতে পাচ্ছি। এই দড়িতে যার ফাঁসি হবে সে স্বর্গ (জান্নাত) লাভ করবে। রাজা মনে মনে বলছে আমি জীবনে কত পাপ করলাম, আমি জানি আমি নরকে (জাহান্নামে) যাবো, আর যদি এই দড়িতে আমার ফাঁসি হয় তাহলে আমি স্বর্গ (জান্নাত) লাভ করবো। এই ভেবে জল্লাদ-কে বলে ‘ওদের ছেড়ে দিয়ে আমার ফাঁসি দে।’


0 comments:

Post a Comment