Jun 10, 2021

"অ্যা নাইট ইন থর ডেসার্ট (৪ঠা অক্টোবর ২০১৪)" - তীর্থংকর দে

Edit Posted by with No comments

 


অ্যা নাইট ইন থর ডেসার্ট (৪ঠা অক্টোবর ২০১৪)

তীর্থংকর দে

 

পাধারো সা - স্বাগতম আপনাকে থর মরুভূমিতে আজকের রাত্রিযাপনে। গতকালই রাত ১০টা নাগাদ জয়সালমীর পৌঁছেছি। আজ সারাদিন সোনার কেল্লায় কাটিয়ে বিকেল ৪:৩০ মিনিটে আমরা থরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেলাম।

জয়সালমীর শহর থেকে থর মরুভূমি প্রায় ৪৫ কিমি। শহর ছাড়িয়ে গাড়ি এগিয়ে চলেছে আরব্য রজনীর পরিবেশে। এই পথেই উটের পিঠে মাল যেত সারা মধ্য প্রাচ্যে। প্রায় ২০ কিমি যেতেই পান্নালাল জি গাড়ি ঢুকিয়ে দিলেন ভাঙ্গাচোরা ইট আর মাটি দিয়ে তৈরি একটা রাস্তায়। গাড়ি টার্ন করার পর আমি কিছু বলার আগেই উনি বললেন সামনে কুলধ্রা গাঁও। এখানকার শাসকের কু নজরে পড়েছিল এই গ্রামেরই গ্রাম প্রধানের মেয়ে। স্বজাতির সেই মেয়ের সন্মান বাঁচাতে  সারা গ্রামের মানুষ একরাতে একসাথে গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। তারপর থেকেই এই গ্রাম একাকী সেই ইতিহাস বুকে নিয়ে দিনাতিপাত করছে। ঘুরে দেখলাম পরিত্যক্ত গ্রাম কুলধ্রা।

আবার গাড়ি ছুটতে শুরু করলো। চারিদিকে ধু-ধু বালুরাশি। একদম জনমানবহীন। অনেক পরে রাস্তায় একটি মিলিটারি গাড়ি দেখলাম। এই রাস্তাটি ইন্ডিয়ান আর্মির তত্ত্বাবধানে রয়েছে। কিছু দূর গিয়ে দেখলাম ফাকা মাঠে একটি জিপ গাড়ির সাথে দড়ি বেঁধে প্যারাস্যুট ডাইভিং ছচ্ছে। যদিও এক্ষেত্রে আমি সাহসিকতার পরিচয় দিতে পারিনি।

আরো কিছুটা যাবার পর একটা পয়েন্টে দেখি অনেক জিপ গাড়ি দাড়িয়ে রয়েছে। পর্যটকদের গাড়ি দাড় করিয়ে করিয়ে ওরা ডাকছে ১০০০ টাকায় জিপ সাফারি, ডেসার্ট মে সানসেট মত মিস করে স্যার, আইয়ে আপলোগ। ওদের ডাকে সাড়া দিয়ে ৮০০ টাকায় সানসেট দেখতে গেলাম আমরা। ৬ কিমি মরুভূমির  ভেতর গিয়ে দেখলাম সূযাস্তের অবর্ননীয় ছবি। চোখের সামনে মরুভূমির রঙ পরিবর্তন হতে লাগল। ভীষণ সুন্দর দৃশ্য দেখে ফেরার পথে হোলো ভয়ানক অভিজ্ঞতা। সাফারি জিপ হোলো নষ্ট, এদিকে অন্ধকার নেমেছে। আমাদের ফোনে তো নেটওয়ার্ক নেইই, ড্রাইভারের ফোনও কানেক্ট হচ্ছে না। মা আর দিদি প্রায় কাঁদতে শুরু করে দিয়েছে। সাফারির ড্রাইভর কোনো ভাবেই আমাদের শান্ত করতে পারছে না। অন্ধকারে কোনোভাবেই রাস্তা খুঁজে পাওয়া যাবে না, তবুও হেটে হেটে রওনা দিই একথা বাবাকে বললাম। বাবা রাজি নন। ১৫ মিনিটের মধ্যেই একটা জিপ চলে এলো, ওরা আমাদের খুঁজতেই এসেছে। পড়ে ভাবলাম মাত্র ১৫ মিনিটই আমাদের কাছে এতক্ষণ কয়েক ঘণ্টা মনে হচ্ছিলো। ভগবানের কৃপায় রক্ষা পেলাম।

সন্ধ্যা ৭টার কিছু পরে আমরা এলাম মরুভূমির মাঝে আমাদের ক্যাম্পিং স্টেশনে। গাড়ি দাড়াতেই ওরা যেভাবে আমাদের স্বাগত জানালো, প্রথমবার কোনো পর্যটন কেন্দ্রে এমন আতিথেয়তা পেলাম। বিরাট বড় ঢোল সহ বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে, কপালে তিলক কেটে আমাদের নিয়ে আসা হোলো ক্যাম্পিং স্টেশনের ভেতরে। চারিদিকে টেন্ট আর মধ্যিখানে নাচ-গানার আসরের জন্য ফাঁকা জায়গা। আমাদের নির্দিষ্ট টেন্টে ওরা লাগেজ ঢুকিয়ে দিলো। আমরা বসলাম নাচগানের আসরের সামনের নির্দিষ্ট জায়গায়। বসতে বসতেই চলে এলো চিড়ের পোলাও, কচুরি, চা আর বিস্কুট। শুরু হোলো রাজস্থানি ফোক সং, সঙ্গে বিভিন্ন শারীরিক কসরত। তারপর শুরু হোলো ফোক ডান্স। আমরাও যোগ দিলাম সেই আসরে। এখানে বাবা যা ডান্স দেখালো, একেবারে ৫৭ বছরের যুবক। ঘন্টা দুয়েকের এই অনুষ্ঠানে রাজস্থানি লোকসংস্কৃতির একটা আন্দাজ পাওয়া গেলো। থর মরুভূমিতে কাটানো বিগত কয়েক ঘণ্টায় মনে হচ্ছিল ভারতের মধ্যেই এ যেন এক অন্য ভারত।

এরপর ডিনার হলো বিভিন্ন ভেজ রাজস্থানি পদের সমন্বয়ে। রাতে খাবার পর টেন্টের কর্মচারীদের সাথে গল্প করছিলাম, ওরা জানালো এখান থেকে মাত্র ১২০ কিমি দূরে তানোট মাতা মন্দির, লঙ্গেওয়ালা পোস্ট। স্থানীয় মানুষ এবং বি এস এফ রোজ মন্দিরে পূজার্চনা করে, তারা প্রবলভাবে বিশ্বাস করে ১৯৭১ ভারত পাকিস্তান যুদ্ধে তানোট মাতার অসীম কৃপায় ভারতের যুদ্ধে জয়লাভ ঘটেছিল। আরো অনেক গল্প করতে করতে রাত প্রায় ১২টা বেজে গেলো, ঘুমতে চলে এলাম টেন্টর ভেতর। রাত যতো বাড়তে লাগল ঠান্ডাও পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকলো। ভোরের দিকে কম্বল টেনে নিয়েছিলাম। সকাল ৬টায় বেড়িয়ে পড়লাম ক্যামেল সাফারিতে। উটের পিঠে মরুভূমি ঘোরার অনন্য অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করলাম।

ক্যামেল সাফারির পর সকাল ৮টায় ব্রেকফাস্ট করে থর মরুভূমিকে টাটা জানিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম এখান থেকে প্রায় ৫১০ কিমি দূরের মাউন্ট আবুর উদ্দেশ্যে।




ছবি- সৌজন্যে লেখক


0 comments:

Post a Comment