দিদিভাই ও নিগমদা
সায়ন বণিক
পশ্চিমের সূর্য্য অস্ত যাওয়ার পথে। বাড়ির ঠিক ডান পাশ দিয়ে বয়ে গেছে
ছোট্ট নদী করলা। জলপাইগুড়ি শহরটাকে যেন ভাগ করে রেখেছে এই নদী। তাও, এখন অনেক ব্রিজ
হয়েছে। বড়দের মুখে শোনা অনেক আগে নাকি এপার-ওপার করতে নৌকো বা ভেলা পার হয়ে যেতে
হত। ছ-সাত বছর আগে সেরকম একটা বাড়ি-ঘর ছিল না, তখন মা-বাবার সাথে আসতাম মাসির বাড়ি।
রাত্রি হলেই নদীটার দিকে তাকালে ভয় করত। মনে হত, এই বুঝি জলের ভেতর থেকে কেউ উঠে আসে।
ঘন্টাখানেক হল মাসির বাড়িতে এসেছি। ওরা কেউ বাড়িতে ছিল না। ব্যাগদুটো
ভেতরে রেখে নদীর পাড়টাতে দাঁড়িয়ে আছি। অস্পষ্ট দৃষ্টিতে দেখে চলেছি নদীতে জামা-কাপড়
কেঁচে নিয়ে বাঁশের মধ্যে শুকোতে দিচ্ছে তিনজন মহিলা। আমার সামনে দিয়ে দুটো গোরু কোনো
খাবারের খোঁজে পাশ দিয়ে চলে গেল। সামনের লেবু গাছটাতে এখনও তেমনভাবে লেবু ধরেনি— মাথার
ওপর দিয়ে একঝাঁক পাখি তাদের বাসার দিকে চলেছে।
"এই গুড্ডু! এলি কখন তুই?"— আমার পিছন থেকে দিদিভাই আচমকা এসে
আমাকে বলল। আমার মাসির বড় মেয়ে 'অদ্রিজা', বাড়িতে সবাই 'আইভি' বলেই ডাকে। ওর সাথে
আমার খুব ভালো একটা সম্পর্ক, ছোট থেকেই। বছর তিনেকের বড় যদিও, তবুও আমাদের মধ্যে সমস্তরকম
কথাই আলোচনা হয়।
আমি বললাম, "এইতো, প্রায় একঘন্টার মত হলো দাঁড়িয়ে আছি। ভেবেছিলাম,
হঠাৎ তোমাদের বাড়িতে এসে সারপ্রাইজ দিব। কিন্তু, নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে গেলাম।"
বলে হাসতে লাগলাম। দিদিভাই-ও হাসা শুরু করে দিল।
"আসলে শিলিগুড়ি থেকে আমার আসার কথা ছিল কালকে, আমার কাজটাও শেষ হয়ে
গেল তাড়াতাড়ি, তাই ভাবলাম আজই চলে আসি তোমাদের বাড়ি। কিন্তু, এসে দেখি তোমরা কেউই
নেই।"
"বাড়িতে যখন দেখলি যে কেউ নেই, ফোন করলি না কেন আমাদের কাউকে?"
"করতেই গেছিলাম। মোবাইলটা অন করে দেখি কিছুক্ষণ আগেই রিচার্জটা শেষ
হয়ে গেছে।"
মাসিরা দুই বোনকে নিয়ে গেছিল ব্যাডমিন্টন খেলাতে। কিছুদিন বাদে ওদের টুর্নামেন্ট
আছে, তাই তাড়াতাড়ি চলে গেছিল আজ। ওর দুইবোন যমজ, ক্লাস সিক্সে পড়ে। খুব ছটফটে।
গেটটা খুলে ব্যাগদুটো হাতে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠলাম। ঘরটা কেমন নতুন-নতুন
লাগছে। মেঝেয় টায়েলস্ দিয়েছে নতুন, ঘরের রঙটাও নতুন করেছে। আগে যখন এসেছিলাম, তার
চেয়ে এখন বেশি ভালো লাগছে। জ্বলজ্বল করছে ঘরের দেওয়ালের সুন্দর রঙগুলো।
পাশের বাড়ি থেকে সন্ধ্যাবাতির আওয়াজ কানে আসছে। কিছুক্ষণ বাদে দেখলাম
মাসিরা বাড়ি ফিরে এল দুইবোনকে নিয়ে। তাদের সাথে আলাপ-গল্প করলাম অনেকক্ষণ। রাতের
খাওয়াদাওয়া শেষ হয়ে আসল। আমরা ঘুমোতে গেলাম।
দিদিভাই আর আমি প্রতিবারই আলাদা একটা ঘরে শুই। খুব মজা হয় ওর সাথে রাতের
বেলাটা। আমি বললাম, "দিদিভাই, তোমাদের রিলেশনশিপের ব্যাপারে কিছু বলো না! আগের
বার পুরোটা শোনার সময়ই ছিল না। এবার তোমায় প্রথম থেকে বলতে হবে।"
দিদিভাই মাথা নেড়ে "আচ্ছা" বলল।
মশারি টাঙানো খাটের উপরে। বাইরের দেওয়ালের হলুদ নাইট বালব্টার আলো কমে
এসেছে। মাথার ওপরের পাখাটা ভনভন করে ঘুরে চলেছে। আমরা ছোট্ট একটা খাটে শুয়ে উপরের
ছাদের দিকে তাকিয়ে আছি, আর পাখার ঘরঘর আওয়াজটা শুনে চলেছি।
"সেবার আমি ক্লাস ইলিভেনে পড়ি। কলকাতায় গিয়েছিলাম একটা সায়েন্স
এক্সিভিশনের জন্য। আমরা একটা মডেল তৈরি করেছিলাম, দুই বান্ধবী মিলে।
যাই হোক। অনেকে দেখতে এসেছিল আমাদের মডেল। একটা ছেলে এল আমাদের মডেল দেখার
জন্য। বেশ সুন্দর চেহারা, দাঁড়িগুলো ঠিকমত ঘন ছিল না— অগোছালো ধরনের। চুলগুলো ছোট
ছোট করে কাটা। একটা হাফ শার্ট, আর জিন্সের প্যান্ট পরা ছিল।
আমায় বলল, তোমরা কি বানিয়েছ একটু বুঝিয়ে বলো।
তার গলার মধ্যে একটা গম্ভীর ভাব ছিল। কিন্তু, তার মধ্যেও কোথায় যেন একটা
মিষ্টতা লুকিয়ে ছিল। তার চেহারা আর গলার আওয়াজ শুনে বুঝতে পারলাম যে, বয়স কুড়ি-একুশের
মাঝামাঝি।"
"কি সুন্দর রোমান্টিক গো তোমরা। আমার তো দারুণ লাগছে। তারপর?"
আমি বললাম।
দিদিভাই লজ্জা পেয়ে হাসল। বলল, "আমি ওর নাম জিজ্ঞেস করলাম, ও বলল
নিগম সরকার। কোনখান থেকে এসেছো জিজ্ঞাস করতেই, আমার মনটা প্রফুল্লিত হয়ে উঠল। ও বলল
যে জলপাইগুড়ি থেকে এসেছে।
আমি বললাম, তুমি জলপাইগুড়ি থেকে এসেছ? আমিও তো জলপাইগুড়িতেই থাকি।
—তাই নাকি? কোন জায়গায় থাকো জলপাইগুড়ির?
আমি ওর গম্ভীরভাবটা কাটিয়ে এতক্ষণে হাসি দেখতে পারলাম। কত সুন্দর করে সাজানো
ওর দাঁতগুলো..."
"আরে হ্যাঁ, বুঝেছি। নিগমদাকে আমিও ভালোমতই দেখেছি।" আমি দিদিভাইয়ের
কোথায় লজ্জা পেয়ে আটকে দিলাম।
"কেনো গুড্ডুভাই, খুব তো বলে চলেছিস আমাদের কথা শুনবি, এখন যখন বিস্তারিত
বলছি তখন লজ্জা লাগছে?" আমাকে বলে নিয়ে দিদিভাই খিলখিল করে কোলবালিশটা জড়িয়ে
হাসতে লাগল।
"তারপর, তোর নিগমদাকে সমস্ত কথা বলল আমায়। ও শুনলাম সেকেন্ড ইয়ারে
পড়ছে, ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে।
ওকে তারপর চলে যেতে লাগল। কোনো দায়িত্বে ছিল বোধহয়, তার জন্যেই ভিজিটিং-এ
এসেছিল।"
ওর চলে যাওয়ার পর আমি অনেকক্ষণ ধরে একটা চিন্তা করতে থাকলাম। জানি না কেন
! আগেও তো অনেকের সাথে কথা বলেছি— আগে তো মনের ভেতরটা ওরকম হতে কখনও দেখিনি।"
বাইরের হাওয়াটা একটু জোরে বইছে। আমি নীচে নেমে পাখার স্পিডটা কমিয়ে আসলাম।
পাশের ঘর থেকে সবার নাক ডাকার শব্দ কানে আসছে। টেবিলের ওপর রাখা বোতলটা থেকে জল খেয়ে
বিছানায় ঢুকে বললাম, "তারপরে কি হলো দিদিভাই? তুমি তো ওর নম্বর নিলে না, তবে?"
মশারিটা গুঁজতে গুঁজতে আমি বললাম।
দিদিভাই আমার দিকে পাশ ঘুরে বলল, "ভাগ্যে থাকলে যা হয়।
আমরা যথারীতি জলপাইগুড়ি চলে এসেছিলাম। এক সপ্তাহ, দু-সপ্তাহ এই করে একটা
মাস কেটে গেল।
একদিন, আমরা বান্ধবীদের সাথে ঘুরতে বেরিয়েছি রাজবাড়ী পার্কে। আমরা সবাই
যে-যার মত গল্প করছিলাম, কেউ বা ওদের বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে ঘুরতে এসেছিল।
দূর থেকে আমি লক্ষ করলাম, সেই ছেলেটা ! কাছে এগিয়ে আসতেই ঝাপসা ভাবটা কাটিয়ে
স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম সেই ছেলেটাই। যাকে আমি কলকাতায় দেখেছিলাম, ও আমার মডেল দেখবার
জন্য এসেছিল। আমি সামনে এগিয়ে গিয়ে বললাম, তুমি নিগম না?
ও বলল, হ্যাঁ।
রাজবাড়ী পার্ক। চারিদিকে লোকজনেরা বসে রয়েছে। ছোট-ছোট বাচ্চারা খেলছে,
কেউবা দৌড়াদৌড়ি করছে। আমার বান্ধবীরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমাদের দেখছে। ও কি করল
জানিস?"
আমি উৎসাহের সঙ্গে জানতে চাইলাম, "কী করল?"
"আমাকে সবার মাঝে প্রপোজ করে বসল"
"কী...?" আমি হাসব না লজ্জা পাবো, বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
"তারপর?"
"তারপর আর কি, আমাকে সবার সামনে হাঁটু গেড়ে প্রপোজ করল। তাও আবার,
পাশের গাছ থেকে একটা ফুল ছিঁড়ে।
সেই ফুলটা আমার কাছে এখনও আছে। ডায়েরীর ভেতর রাখা।"
"আমায় দেখিও কিন্তু দিদিভাই। যাই হোক, পরে?"
"আমায় তো সবার সামনে প্রপোজ করে বসল। আর আমি মুখে হাত দিয়ে লজ্জায়
হাসছিলাম।
আমি ওর কাছ থেকে ফুলটা নিলাম। আমি ওকে বললাম, আমি ভেবে নিয়ে তোমায় জানাব।
যেমন ভাবা, তেমনি কাজ। সারাটা সন্ধ্যা ওর কথা ভেবে রাত্রিবেলা মা-র ট্যাবটা
হাতে নিলাম। হোয়াটস্অ্যাপটা খুলে ওর নম্বরটা সেভ করে, হাই লিখে পাঠালাম।"
"তুমি ওর নম্বরটা কীভাবে পেলে?"
"আমি তখনই ওর নম্বরটা নিয়েছিলাম। বলেছিলাম যে, তোমার নম্বরটা আমায়
দিয়ে দাও বাড়িতে গিয়ে ভেবে বলবো।
ব্যাস ! সারাটা রাত ভাববার পরে আমি ওকে হ্যাঁ বলে দিলাম।"
ঘড়ির কাঁটার আওয়াজটা আসতে আসতে তীক্ষ্ণ হয়ে আসছে। বাইরে হাওয়াটা এতক্ষণে
ঠাণ্ডা হয়ে এসেছে। রাত্রি দুটো বাজে তাকিয়ে দেখলাম। দিদিভাই-এর গল্প শুনতে শুনতে
কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি, বুঝিনি।
সকালের পাখিদের ডাকে ঘুমটা ভেঙে গেল। দুটো সপ্তাহ জলপাইগুড়িতে কাটিয়ে
আমি নিজের বাড়ি চলে আসলাম।
নিগমদা-র সাথে কথা বলে আমার খুব মজা লাগে। এত সুন্দর ওদের লাভ স্টোরি, এত
সুন্দর ওদের মজাদার কথাবার্তা।
আগের বছর যখন ওদের বাড়িতে গিয়েছিলাম, দিদিভাই আমাকে নিয়ে বের হত ওর সাথে
দেখা করবার জন্য। আমি দূর থেকে লক্ষ করতাম, ওরা হাঁটছে— দু’জনে গল্প করছে।
ওরা একে অপরকে এতটা ভালোবাসে, যে বলাই বাহুল্য।
আমি ওদের সবসময় একসাথে দেখতে চাই, ওরা যেন পরক্ষণেও আলাদা না হয়ে থাকে।
এসব আমি দূর থেকে লক্ষ করতাম।
একদিন তো দুজনকেই বলে বসেছিলাম, এই তোমরা বিয়েটা কবে করছ গো?
দুজনেই লজ্জা পেয়ে গেছিল। নিগমদা বলল, আমার তো কোনো ব্যাপার না রে, আমার
এখন চাকরিটাও হয়ে গেছে, মা-ও সমস্ত কথা জানে। খালি বাবাকেই...ওই আর কি ! তোর দিদিকে
বল—
দিদিভাই বলে যে, এখন তো আমি তোর সাথে বিয়ে করছিই না— গান্ডু কোথাকার !
দিদিভাই, নিগমদার সাথে বহু জায়গায় ঘুরতে গেছি একসঙ্গে। 'ডমিনোস্', 'গল্প'—
বড় বড় রেস্টুরেন্টে। তাছাড়াও, তিস্তা স্পারে তো আমরা প্রায়শই আড্ডা দিতাম। ওখানে
'টাওয়ার' বলে একটা রেস্টুরেন্ট আছে, নদীর চরের মধ্যে। খুব সুন্দর করে সাজানো নদীর
ওপরের ছোট্ট রেস্টুরেন্টটা।
দিদিভাই আর নিগমদার মধ্যে কথাকাটাকাটি খুবই কম হত। বড়জোর একটা দিন, বা
একটা রাত্রি। সকালে উঠেই আবার তারা এক হয়ে যেত। এমনভাবে তারা পরের দিন বা নতুন দিনটিকে
শুরু করত, যেন তাদের কোনো ঝগড়ার কথাই মনে থাকত না।
প্রতিটা বছরই ভ্যালেন্টাইনস্ ডে তে দুজন দুজনের হোয়াটস্অ্যাপে স্ট্যাটাস
দেয়। খুব সুন্দর লাগে সেইগুলো পড়তে, আর একসাথে তোলা ওদের ছবি দেখতে। ওরা বাড়ির সমস্যার
জন্য দেখা না করতে পারলেও ফোন কল, ভিডিও কলের মধ্যে দিয়ে তারা একে অপরকে ভালোবাসার
বার্তা জানাতো।
ভ্যালেন্টাইনস্ ডে-র ঠিক চার-পাঁচ দিন পর, আমার ফোন একটা মেসেজ এল। হোয়াটস্অ্যাপটা
খুলে চেক করতেই দেখলাম দিদিভাই লিখেছে, "গুড্ডু, আমাদের মধ্যে সম্পর্কটা আর নেই
রে!"
আমি ভাবলাম আমার সাথে মজা করছে। আমিও হাসির ইমোজি সেন্ড করলাম, কিন্তু কোনো
রিপ্লাই আসল না। আমি সত্যিটা জানার জন্য নিগমদাকে মেসেজ করলাম, তার কাছ থেকেও একই উত্তর
এল।
কিছুক্ষণের জন্য চোখ বড়ো হয়ে মুখে হাত চলে গেছিল। হৃৎপিণ্ডের শব্দটা যেন
নিজের কানে শোনা যাচ্ছিল। আমি স্তব্ধ হয়ে গেছিলাম। আমার নিজের হাত-পা কাঁপা শুরু হয়ে
গেছিল।
আমার চোখে দেখা সবচেয়ে ভালো জুটি কেউ দেখতে চাইলে, আমি সোজাসুজি ওদের নাম
বলে দিতাম। আর, এটা সত্যিই অসম্ভব যে ওদের আলাদা হয়ে যাওয়াটা।
আমি দু’জনের সাথে কথা বলে যতটুকু বুঝতে পারলাম, ওদের আলাদা হয়ে যাওয়াটা
বা থাকাটা কোনো স্বাভাবিক ব্যাপারে নয়। বরং, সাময়িক আনন্দের জন্য তাদের আলাদা হয়ে
যেতে লাগলো।
দিদিভাই আর নিগমদা জলপাইগুড়িতে দেখা করা সত্ত্বেও, শিলিগুড়িতে দেখা করত।
কিন্তু, শিলিগুড়িতে দেখা করার উদ্দেশ্যটা একটু আলাদা ছিল। আর সেই উদ্দেশ্যের জন্যই
হয়তো তাদের সম্পর্কটা আজ বিচ্ছিন্ন।
সেবার, শিলিগুড়িতে ওরা দু’জন দেখা করে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়। ওরা
অন্ধকার ঘরে, ভালোবাসায় ভেসে গেছে। ওরা যৌনতার প্রকাশ ঘটিয়েছে, তিন বছর আগের নতুন
যৌবন আবার ফিরে পেতে চেয়েছে।
ওরা কোনো খারাপ করেনি। ওরা প্রাপ্তবয়স্ক। ওদের স্বাধীনতা, নিজের চাওয়া-পাওয়া,
মন, ইচ্ছা, আনন্দ বলেও কিছু একটা আছে। কিন্তু হ্যাঁ, বিশ্বাস হারিয়ে গেলে পাওয়াটা
খুব কঠিন হয়ে যায়।
আর ঠিক, সেরকমটাই হল ওদের সঙ্গে। কোনরকমভাবে নিগমদার মা জেনে গেছিল, সঙ্গে
ওর বাবা-ও। আর, তারপরেই তৈরি হলো ওদের মধ্যে ভাঙনের বাঁধ। যেই মা নিজের ছেলেকে এবং
সঙ্গে দিদিভাইকেও এতটা বিশ্বাস করেছিল, সেও কিনা আজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাল ছেড়ে দিল
!
সবচেয়ে বড় কারণ হয়ে উঠেছিল, নিগমদা-র বাবা। তিনি যেমনভাবে প্রতিটা দিন,
প্রতিটা মুহূর্তে কথা শুনিয়ে যেত, ওর বেঁচে থাকাটাও যেন দায় হয়ে উঠেছিল। শেষমুহূর্তে,
দু’জনেই একসাথে ভালোভাবে কথা বলে নিয়ে সম্পর্কের দড়িটা কাঁচি দিয়ে কেটে দিল। দু’জনের
মুখেই হাসি— দুজনেরই একই মন্তব্য, 'তুমিই আমার প্রথম ভালোবাসা এবং সারাটা জীবন এভাবেই
থেকে যাবে। সত্যিটা এটাই যে, ভালোবাসা কাকে বলে এই তিনটা বছরে আমরা বুঝেছিলাম— আর এটাও
ঠিক যে, তুমিই প্রথম তুমিই শেষ।'
তাদের দুজনের কথার ভাঁজটাও একইরকম— ওরা আজও প্রতিটা রাতে নিজের চোখ দিয়ে
জল গড়িয়ে দেয়। একাকীত্ব বোধ করে ওরা দুজনে। ওরা নিজেরাও জানে না যে, তাদের পরবর্তীতে
আদৌ মিলন হবে কিনা !
0 comments:
Post a Comment