জঞ্জালও
আবদুস সাত্তার বিশ্বাস
বাসে চেপে খানিক সিটে বসে রয় মইন।
তারপর সে নেমে পড়ে লোকের ভিড়ে দৌড়ে মিলিয়ে যায়। পরে একটা বাস ধরে চেপে নেবে।
বাসটা থেকে সে নামতো না। প্রথম গেট
থেকে দুটো সিট পরে জানলার ধারে সিটটা সে ভালো পেয়েছিল। টিকিট কাটার সময় কাউন্টারে
একটা ভালো সিট দেওয়ার কথা বলেছিল। তাই ভালো সিটটা পেয়ে সে বসেও ছিল আরাম করে।
জানলা দিয়ে বাইরে মুখ করে।
অতএব নামার তো কোন প্রশ্নই ছিল না।
কিন্তু নামতে হয় তাকে অন্য কারণে। না নামলে বিষয়টা খুবই খারাপ দেখাত বলে। তাছাড়া
অস্বস্তি হত। মুখ গোমড়া করে বেমুখ হয়ে বসে থাকতে হতো। বুকে পাথর নিয়ে বসে থাকার
মতো। ও বাসের মধ্যে পরিচিত কেউ থেকে থাকলে সে দেখে ফেলে গ্রামে গিয়ে বলে দিলে জাত
যেত। গ্রামের লোকের সামনে সে মুখ তো দেখাতে পারতোই না। বরং গ্রামের লোক তাদের এক
ঘরে করত। তাদের গ্রামের মানুষ এসব কাজে খুব সিদ্ধহস্ত। এসব কাজ পেলে হয়।
মুখে মাস্ক পরা একটা মেয়ে তার ডান
পাশের খালি সিটটায় বসে। ফলে মইন বাম দিকে একটু চেপে যায়। মইনেরও মুখে মাস্ক পরা।
বাস ছাড়তে এখনো পনেরো বিশ মিনিট লেট।
এতক্ষণ চুপচাপ বসে না থেকে পাশের মেয়েটার সঙ্গে টুকটাক গল্প করা যেতেই পারে। টাইম
পাস।
মইন জিজ্ঞেস করে, "কোথায় নামবেন?"
মেয়েটা এতক্ষণ অন্য দিকে মুখ করে বসে
থাকলেও সে এবার মইনের দিকে মুখ করে বসে।
মইন অমনি তাকে দেখে চিনতে পেরে গিয়ে
দ্রুত বাস থেকে নেমে পড়ে- সে চিনতে পেরেছে কি না সে জানে।
কেননা মেয়েটার নাম ঊর্বশী। দেখতে
ভালো মেয়েটা। মইনদের পাশের গ্রামে তার বাবার বাড়ি। বাবার অবস্থা খুব একটা ভালো না।
শুধু মেয়েটাই দেখতে ভালো বলে মইন তাকে বিয়ে করে এবং দু’বছর তার সঙ্গে ঘর সংসার করে। ভাগ্যিস কোন বাচ্চা কাচ্চা নেই।
থাকলে সমস্যা হতো।
গত বছর এই সময় মইন মেয়েটাকে ছাড়ান
দেয়। লোক ডেকে লোকের সামনে তিন তালাক ও বায়ান তালাক দিয়ে। ছাড়ান দিতে যদিও তার বেশ
কিছু টাকা গচ্চা লাগে। সে লাগুক গে। সে কেমন এখন আরামে আছে। শান্তিতে আছে। ভালো
আছে। দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে কেমন সুখে ঘর করছে। কোন উৎপাত নেই। কোন কান ভাঙানি
নেই। কোন জ্বালা যন্ত্রণা নেই।
আর ও থাকলে বাবাকে খুন করে বাবার
চাকরিটা নেওয়ার কথা আবারও বলতো।
সমাজের এরা শুধু কলঙ্কই নয়,জঞ্জালও।
0 comments:
Post a Comment