আলোর পথে
ঋষিব্রত গোস্বামী
কাশীপুর গ্রাম।গ্রামের মেয়ে মালিনী।সকাল থেকে বিকেল চলে তার সংসারের সংগ্রাম।সকালে উঠে বাবা মায়ের সেবা।তারপর ভাই-বোনেদের স্কুলে পাঠানোর জন্য দৌড়াদৌড়ি।একেবারে হুলুস্থুল কান্ড।বাবার ভাগচাষ অনিয়মিত।মায়ের মণিবের বাড়িতে বেতন স্বল্প।এইভাবে পাঁচ পাঁচটা পেট চলা দায় ।তার উপর আবার তিন ছেলে মেয়ের পড়াশুনা।বাধ্য হয়েই সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নেয় বছর ২০ এর মালিনী।নিত্যদিনের সংসারের কাজ শেষ করে মালিনী চলল নিজের কাজে।অন্ধকার জগতের একটি সর্বনাশের পাতা নিত্যদিনের মত খুলে গেল।
আজ যে বাবু ডেকেছে সে ৫০০০ টাকা দেবে।এই টাকাটা দিয়ে প্রথমে বাবার ওষুধ তারপর ভাই-বোনের বই তারপর তাদের স্কুলের মাইনা এসব শেষ করে যা থাকবে তা ভবিষ্যতের জন্য গচ্ছিত থাকবে।নিজের স্বাদ-আহ্লাদের চিন্তা কবেই জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।নিজেকে যখন চোখের সামনে অপবিত্র করে দেয় কামুকেরা তখন নিজের অসহায় সংসারের কথা ভেবে চোখ বুজে মুখ বুজে সব মেনে নেয় সে ।দেখা যাক আজ কি অপেক্ষা করছে তার জন্য।তবে দেখে মনে হচ্ছে এ অন্য কিছুর ধান্দায় আছে।কী সেই ধান্দা?
আজ যে ডেকেছে সে বিশাল কোটিপতি ব্যাবসায়ীর ছেলে।আসার পর থেকেই কী সৌজন্য শুরু করেছে সে ।বাড়ি কোথায়,কে কে আছে আরে বাবা কেমন ভদ্রলোক বোঝাই তো যাচ্ছে ।এত সৌজন্যের কী আছে রে বাবা?যে কাজ করবি কর,টাকা দে,তারপর কাজ আছে অনেক।মনে মনে গুমড়াতে থাকে মালিনী।কিছুক্ষন পরে ছেলেটি মালিনীর হাত ধরে নিয়ে গেল একটা ঘরে।মনে মনে অন্ধকারাচ্ছন্ন মুহুর্তের জন্য প্রস্তুত হল মালিনী।কিন্তু এ কী এখানে তো খাট বিছানা নেই।এ তো একটা চেম্বার।নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না সে।তার একটা চাকুরি হয়ে গেল।যে সেটা সততার সাথে করতে পারবে।
কথা বার্তা তেই আভাস পেল সে যে তার একটা চাকুরি হয়ে গেল ।কাল থেকেই কাজ শুরু।ফের হাত ধরে টেনে নিয়ে বাইরে এল সেই ছেলে।মালিনী র তখন স্রদ্ধায় মাথা নীচু হয়ে যাচ্ছে মালিনীর।"কী ৫০০০ টাকার থেকে বেশী হল তো?"ছেলেটির প্রস্নে মালিনী আর কিছু বলতে পারল না শুধু কাঁদতে লাগল।চোখের জল মোছাতে মোছাতে ছেলেটি বলতে লাগল"বোনটি।আজ থেকে কান্নার দিন শেষ।তোমরা মায়েদের রূপ।বুঝি এইরকম পরিস্থিতি হয়তো কখন কখন আসে যখন খুব অসহায় হয়ে এসব কাজ কর।কিনতু তোমরা ভাব তো নারী যদি ধৈর্য্য হারিয়ে অপবিত্র পথে পা বাড়ায় তবে সৃষ্টি যে রসাতলে চলে যাবে বোন ।আমি কদিন হল বিদেশ থেকে ফিরলাম ।বিজনেসের দায়িত্ব নেওয়ার আগে চেয়েছিলাম একটা ভালো কাজ করতে অন্তত মানুষের জন্য।তোমাদের গ্রামে আমার বন্ধুদের কাছ থেকে তোমার অসহায় অবস্থার কথা শুনি।বাবাকে বলি।তারপর এই সিদ্ধান্ত।"মালিনী শুধু ভাবতে লাগল এখন একটাই কথা যে নারী সম্বন্ধে উনি যে সম্মানজনক কথা বললেন।তা নিজে নারী হয়েও কোনওদিন বুঝতে পারল না।হয়তো বুঝতোও না যদি এই বাবু এক অন্ধকারে ডুবন্ত নৌকাকে এভাবে ভাসিয়ে না তুলতো।
0 comments:
Post a Comment