শাহীন ইমতিয়াজ
প্রসঙ্গতঃ
ভূমিকা- এই
রহস্য গল্পের হাজার প্রশ্ন থাকবেই স্বাভাবিক৷ কোনো এক বাস্তব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই
লেখার চেষ্টা৷ যদিও গল্পে আধুনিকতার সাদৃশ্য খুঁজলে তা বৃথা চেষ্টা হবে৷ সময়কাল
ঠিক রেডিও-সাইকেলের যুগ বলা যায় ৷ গল্পে সনাতনধর্মকে কোনো প্রকার হেয়তা করা হয়নি৷
এমন হাজার হাজার স্বপ্ন লোক লজ্জা, সম্মানের জন্য মৃত্যুশয্যা হয়ে ওঠে ৷ আমি
পরিজনদের অবৈধ সম্পর্ককেও মান্যতা দিচ্ছি না৷ শুধু নিয়তি মানুষের জীবনের কতো বড়ো
জটিলতা সৃষ্টি করে এবং তা পরোক্ষণেই দিক বদলে দেয়, তারই
উপস্থাপন ৷
-সম্ভ্রান্ত উচ্চ ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন
পরিবারের একমাত্র পুত্র শচীন্দ্র৷ জন্মলগ্নতেই সোনার চামচ মুখে৷ দেখতেও রাজপুত্র, স্বভাবেও ধীর ৷
উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হওয়ায় শচীন্দ্রের বাবা তাকে সাইকেল উপহার দেন৷ তা নিয়ে
দশ-বারো গ্রামে কানাকানি- ‘শচীন্দ্রের নতুন সাইকেল দেখেছিস?’ আয়না লাগানো তাতে আরো কতো কী! শচীন্দ্রও দিব্যি গম্ভীর প্রকৃতির স্বভাব ৷ হবেই
বা না কেনো? ব্রাহ্মণ
জমিদার সম একমাত্র পুত্র বলে কথা ৷
কলেজ পড়া কালীন তার একমাত্র বন্ধু ছিলো
তার স্কুল হেডমাস্টারের ছেলে অমিতের সাথে৷ সমস্ত আনন্দ উল্লাস অমিতের সাথেই ভাগ
করতেন৷ শচীন্দ্র কাকাতো বোন বনলতাকে সঙ্গে করে কলেজ যেতেন৷ বনলতাও ছিল সমবয়সী৷
অমিত প্রথমদিকে শচীন্দ্রকে হেঁয়ালি করে বলতো- ‘নাটোরের
বনলতা সেন’৷ তাতে শচীন্দ্র খুব ক্রুদ্ধ হত৷ শচীন্দ্রের
কঠোর শাসনে অমিত-ও ভুল করেও দ্বিতীয়বার হেঁয়ালিপনা আর করে না৷ কলেজ জীবন শেষের
দিকে শচীন্দ্র আর বনলতাকে একসঙ্গে দেখা যায়নি৷ অমিতের মনে বনলতাকে নিয়ে যা কল্পতরু
জন্মেছিল তা কোনোদিন প্রকাশ করেনি ৷
কলেজ জীবন শেষ, শচীন্দ্র
হয়তো বাইরে পড়তে যাবে! অমিতও চাকরির পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতি নিচ্ছে ৷
শচীন্দ্রের
সাথে অমিতের ক্রমে যোগাযোগ কমে গেলো ৷ মাসখানেক এইভাবে কেটে গেলো৷ একদিন ভোরবেলা
শচীন্দ্র; অমিতের বাড়িতে হাজির ৷ সেদিন আর শচীন্দ্রকে
পরিস্কার স্বভাবশোভা লক্ষ্য করা গেলোনা ৷ একপ্রকার হন্যে হয়ে ছুটে এসেছে ৷ এসেই
ঘাম ঝরতে ঝরতে বলল বনলতা বাড়ির বন্দুক দিয়ে আত্মহত্যা করেছে ৷ অমিত আকাশ পাতাল
কিচ্ছু ভাবতে পারলো না, শচীন্দ্রের সাইকেলে চেপে মুখ না ধুয়েই ছুটে
গেলো৷ বাড়ির চারপাশে লোকজন দিয়ে ভিড় ৷ ঘরে প্রবেশ করে দেখলো কোমল হাত খানা টেবিলে
৷ মাথাটা টেবিলের উপরেই ৷ মস্তিস্কের সমস্ত যন্ত্রণা স্তব্ধ করে দিয়ে রক্ত গড়িয়ে
গড়িয়ে পরছে টেবিলের উপরে ৷ শরীরটা চেয়ারেই বসানো ৷ পুলিশ এলো, সমস্ত
সাদা-কালো ছবি, কালো কলমের লেখালেখি আর শরীরটা ডাক্তারি
পরীক্ষার জন্য পাঠালো ৷ শচীন্দ্র -অমিত একপ্রকার শুন্য নির্বাক পৃথিবীর দিকে
তাকিয়ে ৷
সপ্তাহ
খানেক শচীন্দ্র বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে গেলো ৷ বাড়ি থেকে বলেছে শচীন্দ্র বাইরে
পড়াশুনা করতে গিয়েছে৷ বনলতার ডাক্তারি পরীক্ষাতে জানা যায়, গর্ভবতী ছিলো ৷
পুলিশের নানান তল্লাশি আর লোক কথায় শোনা যায় শচীন্দ্রের পরিবারের মান সম্মান, হিন্দু সম্ভ্রান্ত
নিয়মকানুন রক্ষার্থে বনলতার গর্ভধারিণীকে নষ্ট করার জন্য একপ্রকার চাপ সৃষ্টি
হয়েছিলো ৷ ক্রমে সমস্ত প্রকাশ হওয়া সত্বেও শচীন্দ্রকে পাওয়া যায়নি ৷ বছর দশেক পরে
শচীন্দ্র বাড়ি ফিরে আসলো৷ এতদিনে পুলিশি ব্যবস্থা খাতার তলে জমা পরে গেছিলো৷
একপ্রকার হীননম্মতা আর উচ্চ চক্ষু নিমীলিত হয়ে স্তব্ধ স্বভাবের হয়ে গেছে ৷ কারো
সাথেই ঠিক-ঠাক কথা বলেন না ৷ দুই পরিবার ভাগ হয়ে গেছে ৷ জমিদার পরিবার সংকোচ হতে
হতে ভিটেমাটিতে ঠেকেছে ৷ অমিতের সাথে চিঠিপত্রেও যোগাযোগ হয়নি ৷ শুধু লোকমুখে
শুনেছে শচীন্দ্র ফিরে এসেছে ৷ অমিতকেও নানা কটু কথা শুনিয়ে ছেলেপেলে পিছু কথা বলে
৷
রবি প্রচন্ড বিষণ্ণ হয়ে উদিত হচ্ছে, রৌদ্র
জানালা বেয়ে অমিতের চোখে পড়তেই ধীর স্থিরতায় বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো ৷ বাইরে
বেরোতেই কথা কানাকানি আর মানুষের চিত্কার চ্যাচামেচিতে হতভম্ব উত্সুক হয়ে শুনতে
অগ্রসর হলো ৷ কত লোকের কত কথা শুনলেন ৷ কেউ বলছে শচীন্দ্রের মা মারা গেছেন, কেউ
বলছে শচীন্দ্রের কাকার মার্ডার হয়েছে৷ আদতে কী হয়েছে কেউ সঠিক বলতে পারছেনা ৷ অমিত
এবারেও মুখ না ধুয়ে ছুটে গেলো৷ কিন্ত বাড়িতে প্রবেশ করতে দিচ্ছেনা পুলিশ বাহিনী ৷
সময়-ভীর ক্রমশ বাড়তে থাকার মাঝে লুটোপুটি করে ঘরে প্রবেশ করে নিজের চোখের জল ধরে
রাখতে পারলোনা ৷ ঘরের মাঝে একটি চেয়ারে বড়ো বড়ো রশি দিয়ে প্রচন্ড জোরে শচীন্দ্র
বাঁধা ৷মুখটি গামছা দিয়ে বদ্ধ৷ আর সারা
শরীরে রক্তের বন্যা ৷ শরীরে ধারালো ছুরি হৃদপিণ্ডে বসানো আর রক্ত ফিনকি দিয়ে
দেওয়াল মেঝেতে ছড়ানো ছিটানো ৷ অমিত ধীরে ধীরে বাইরে বেরিয়ে এলো৷
আর সেই থেকে অমিত বাকরুদ্ধ , শুধু
চোখের চাহনিতেই হাজার প্রশ্ন-উত্তর খেলা করছে ৷
This comment has been removed by the author.
ReplyDeleteরহস্য গল্প এরকমই হওয়া উচিত...বর্তমানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখতে পাই ভৌতিক আর গোয়েন্দা গল্পকে রহস্য গল্প বলে চালানো হয়,যা ঠিক নয়...ভালো লিখেছিস রে, এইভাবেই চালিয়ে যা
ReplyDeleteধন্যবাদ, পাশে থাকুন এভাবেই।
ReplyDelete