অনুপমা
অনিকেত
কিছু মানুষ যেমন জীবনকেই নিজের সঙ্গী বানিয়ে নেয়, ঠিক তেমনই কিছু মানুষ,
নিজের অজান্তেই নিজের কাছের মানুষকে নিজের জীবন বানিয়ে ফেলে। যেন তাঁকে ঘিরেই তাঁর
সমস্ত জীবন, সমস্ত উদ্দেশ্য আবর্তিত হয়। কে জানে হয়তো এটাকেই ভালোবাসা বলে !
অনুপমাও ঠিক এইভাবেই হয়তো ভালোবাসতো অরুণকে। ভালোবাসবে নাই বা কেন? কলেজের
অন্য বন্ধুরা যখন ওর গাড়ি দুর্ঘটনায় আধপোড়া বিকৃত মুখটা দেখে, ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল,
অনুপমার কাছে অরুণই হয়ে উঠেছিল একমাত্র বন্ধু, একমাত্র কথা বলার সঙ্গী। ওর একাকিত্বের
অন্ধকারে ডুবে থাকা মনটাকে ভরে তুলেছিল আনন্দে। অনুপমাও তাই একটু একটু করে, নির্ভর
করতে শুরু করেছিল অরুণের উপর।
বয়সে অনেকটা ছোট হলেও তাই, অরুণকে নিয়ে সত্যিকারের সংসারের স্বপ্ন দেখতো
অনুপমা। অরুণকে বলেও ফেললো সেই কথা একদিন। নিজের জীবনে প্রতিষ্ঠিত অরুণ সেদিন ফেরায়নি
তাঁকে। কথা দিয়েছিল, বাড়িতে সব জানিয়ে অনুমতি নিয়ে, শুরু করবে একসাথে পথ চলা।
সেইমতো দুইজনেরই বাড়িতে কথাটা উঠলো। বয়সের তফাতটা নিয়ে চিন্তা করলেও, দুই
পক্ষই রাজী হয়ে গেলো এক সময়।
কিন্তু হঠাৎ, এই সময়েই, কেমন একটা পরিবর্তন দেখল অনুপমা, অরুণের মধ্যে।
অনুপমার সমস্তকিছুতেই যেন সে বড্ড অসন্তুষ্ট। কোনওটাই যেন তাঁর পছন্দসই নয়, আর সেই
অপছন্দের তালিকা যেন ক্রমশ বাড়তে লাগলো।
হয়তো বন্ধু আর স্বামীর মধ্যে এই ফারাকটা থাকেই। অনুপমা আপ্রাণ চেষ্টা করতে
লাগলো নিজেকে ওর মনের মতো বানিয়ে ফেলার। কিন্তু সবই বৃথা।
এমনই একদিন, দু’জনে যখন বিয়ের কেনাকাটা করে ফিরছে, হঠাৎ ওদের দেখা হল অর্পণের
সাথে।
অর্পণ অনুপমার স্কুলজীবনের বন্ধু। বহুদিন বাদে যখন ছোটবেলার বন্ধুকে পেয়ে
অনুপমা উচ্ছ্বসিত হয়ে কথা বলতে লাগলো, অরুণের মনে বাসা বাঁধলো, এক অনিয়ন্ত্রিত রাগ।
অন্য পুরুষের সাথে এত কথা কিসের, ফেরার পথে, মনে পুঞ্জীভূত রাগটা ফেটে বেরোল চিৎকারে।
না, আজ আর আগের মতো মেনে নিলো না অনুপমা। ধরে থাকা হাতটা ছেড়ে, এগিয়ে যাওয়ার
পথে, একবার ফিরে তাকিয়ে শুধু বললো, “ভালোবাসা মানে বিশ্বাস আর ভরসা অরুণ, নিজেকে বিক্রি
করে দেওয়া নয়!!”
নিজের সম্মান, নিজের মর্যাদাকে সে আর বিকোবে না। সে নিজেই লড়বে তাঁর লড়াই,
নিজের পথ নিজেই গড়বে।
বাঃ।
ReplyDeleteউৎসাহমূলক বেশ❣️💖
ধন্যবাদ
Delete