কাউকে জিতিয়ে
মিলন পুরকাইত
কাউকে জিতিয়ে নিজের হারের মধ্যেও আনন্দ আছে। এটা
আমি খুব ভালো করেই উপলব্ধি করতে পারলাম। সুদীপ সেদিন এসেছিল
বাড়িতে। অনেকদিনের পর ওর সময় হয়েছে আসার। আসলে খেলাধূলা, গরীব মানুষকে সাহায্য করা
এইসব নিয়ে থাকাই ওর পছন্দ। সুদীপ আমার পিসির
ছেলে। অনেকটাই ছোটো আমার থেকে। ও এলে বাড়িতে একটা আনন্দের পরিবেশ তৈরি হয় যেন। কি
ভালোই না লাগে ওর কথা। আমার মেয়ে তো ওর খুব ফ্যান। খুবই পছন্দের সুদীপ মামা।
পাড়ায় মাঠে মাঝে মাঝে ফুটবলের টুর্নামেন্ট হয়। অনেক স্পনসর থাকে। যেহেতু
আমাদের পাড়ার ক্লাবের সভাপতি হলেন মি. অরূপ রায় মহাশয়। উনি রাজনৈতিক দলের বড় নেতা।
ওনার সুবাদেই অনেক ডোনেশন আসে। জেতার পুরস্কার মূল্যও
নেহাত কম নয় । তবে সুদীপ প্রতিবার খেলে না। থাকে না হয়তো ওই সময়।
ওর চাকরিও তো ঘুরে ঘুরে। আজ উত্তরবঙ্গ তো কাল গৌহাটি। তবে ও
খেললে প্রথম পুরস্কার ওকে দিতেই হবে। ওর পায়ে বল এলে কারোর সাধ্যি নেই সেটাকে আটকানোর।
গোল দেবেই। চেহারাও তেমনি । ছয় ফুট এক। পেটানো চেহারা। তবে মুখখানা একেবারে শিশুর মতো
সারল্যে মাখানো। তাই ও পাড়ার সবার প্রিয়।
"জানিস দিদিভাই, মিলন মন্দির
পাড়ার তরুন বলে এটা ছেলে আছে। আমাদের বন্ধু। আমিও যাই ও পাড়াতে অনেক সময়। দারুণ খেলে ও। ওর মায়ের
খুব শরীর খারাপ। এই মুহূর্তে অনেকগুলো টাকার দরকার। পাড়া
থেকে তোলা হচ্ছে চাঁদা। ওদের অবস্থা একেবারেই ভালো নয়। বাবা নেই। ও একটা মুদির দোকানে
সামান্য মাইনের কাজ করে। পড়াশোনাও করতে পারে
নি বেশি দূর। তিনটে বোন ওর। দুজনকে বিয়েও দিলো কদিন আগে। পুরস্কারটা
ও পেলে প্রপার কাজে লাগবে। আর ও জানে, শুধু ওইই না, সবাই জানে আমি খেললে প্রথম পুরস্কার
আমার হবেই। কিন্তু আমি খেলব না বলতেই কেউ ছাড়লো না। বিশেষ করে তরুণ। তরুনের অনুরোধেই
খেললাম । ওর খারাপ লেগেছে আমি খেলব না। ওর জন্যেই।
আমিও খেলেছি। কায়দা করে গোলটা দিতে গিয়েও দিলাম না। ব্যাস তরুণের গোলে
জিতলো আমাদের পাড়া। প্রথম পুরস্কার নেবার সময় ও আমার দিকে তাকিয়ে কেঁদে ফেলে। ব্যাটা
ঠিক আমার কারসাজি বুঝে গেছে। পরে বাড়িতে এসে আমাকে জড়িয়ে কি কান্না। একটা ছেলে কতটা
অসহায় হলে কাঁদে বলতো। "আমিও সুদীপের কথা শুনে কেঁদে ফেলেছি। ওইটুকু মেয়েটার
চোখটাও চিকচিক করছে। বুঝতে পারছি না কাকে
বাহবা দেব। প্রথম পুরস্কার যে পেল তাকে নাকি যে
পাইয়ে দিল তাকে।
ধন্যবাদ স্যার
ReplyDeleteস্বাগত
Deleteখুব সুন্দর
ReplyDeleteধন্যবাদ
Delete