Jan 5, 2018

নেটফড়িং সংখ্যা ১৭ এর গল্প

Edit Posted by Exam Detail with No comments


কঠিন বাস্তবতা

সুবিনয়

কলেজ থেকে বের হয়ে একটি টোটোতে উঠলাম বাড়ি আসার উদ্দেশ্যে টোটোর চালক একজন ছেলে, দেখেই বোঝা গেল তার বয়স সম্ভবত ২৩-২৪

প্রথমে তার সাথে কথাও বলিনিভাড়া ঠিক করেছি অতটুকই

হচ্ছিলো কথা, তো, হঠাৎ করে সে জিজ্ঞেস করল, তুমি কিসে পড়ো? আমি ভদ্রভাবেই বলেছি সেকেন্ড  ইয়ার 'অনার্স', সে জিজ্ঞেস করলো আবার, "কোন সাব্জেক্ট?? তার অতটুক কথা শুনেই বুঝলাম তিনি well mannered এবং

ভদ্র ফ্যামিলির ছেলে  আমি আর কিছুই বলিনি, সে আমাকে বার বার বলতে লাগলো এখন কোন দিকে যাবো? সোজা? তখন আমি জিজ্ঞেস

করেছি "দাদা তুমি কি এখানে নতুন?" সে বললো " হ্যাঁ, আমি টোটো চালানোর জন্য এসেছি, শিলিগুড়িতে আমার বাড়ি, তেমন কিছুই চিনিনা এখানের" আমি জিজ্ঞেস

করলাম তুমি শিলিগুড়িতে কি করতে?' সে বলেছে "আমি পড়াশুনো করতাম" আমি জিজ্ঞেস করলাম "কিসে পড়তে?" সে বললো "আমি অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে, Siliguri Institute Of Technology কলেজে মেনেজম্যান্ট ডিপার্টমেন্টে".. আমি

পুরো "" হয়ে গেলাম!

আমি বললাম তুমি পড়াশুনা ছেড়ে টোটো  কেন

চালাচ্ছ তবুও আবার এই কোচবিহারে?

সে তার পারিবারিক ঘটনা গুলো বলল "আমার বাবা শিলিগুড়ি

এগ্রিকালচারাল অফিসের হেড মেনেজার ছিলো,

বাবার শেয়ার ব্যবসা ছিলো, ২০১৬ এর শেষের

দিকে বিশাল ক্ষতি হয় বাবার, শেয়ার মার্কেটে ক্ষতি

হওয়ার পর বাবা heart attack করে, তারপর থেকে

বাবার এগ্রিকালচারাল অফিসের চাকরি করার মত শক্তি,বল

ছিলো না, আমি একটাই ছেলে আমার মা বাবার আমার

পরিবারের খুব খারাপ অবস্থা হয়ে গিয়েছিল তাই মা বাবাকে নিয়ে এখানে মাসির বাড়ি চলে এসেছি আর আমার মাসি আমায় এই টোটো কিনে দিয়েছে,কখনো কল্পনাও করিনি এভাবে পরিস্থিতির স্বীকার

হতে হবে, কিন্তু আমি টোটো চালাই দেখে আমার

মোটেও লজ্জা হয়না, আমার নিজেকে ছোটো

মনে হয়না  however I m proud of myself. আমার বাবা

একজন high educated person, আমার বাবাও কখনো

চায়নি তার পরিবারের কেউ টোটো চালাক! কিন্তু আমি

সত্যিই গর্ববোধ করি, আমি টোটো চালিয়ে আমার

পরিবার কে চালাই এবং আমি নিজেও চলি

এতদিন আমার বাবা আমার পরিবারের জন্য কষ্ট

করেছেন, আজ আমি আমার পরিবারের জন্য করছি..

এতে লজ্জার কিছুই নেই ছেলেটার সাথে

আরো কিছুক্ষণ কথা বললে ভালো লাগতো

আমাদের আসতে ১০ মিনিটের মত লেগেছিলএই ১০ মিনিট আমি একজন সুশিক্ষিত টোটো চালকের কাছ

থেকে অনেক কিছুই শিখেছি অনেক ভালো

লেগেছে

আসলে এই যুগে ছেলে মেয়েরা কম্পিটিশন করে কার কত ফেসবুক,হোয়াটসআপ ফলোয়ার বেশি? কার বাইক

আছে? কার কোন ব্র্যান্ড এর বাইক আছে? কোন বন্ধু বান্ধবীর ল্যাপটপ আছে, কার হ্যান্ডসেট কত দামী? কারো থেকে কারোরটা একটু কম দামী হলে বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়, মা বাবাকে ব্ল্যকমেল করে, কয়েকদিন না খেয়ে থাকি বাড়িতে, ওদিকে খিদের টানে বাইরে নামি দামি রেস্টুরেন্টে ঠিকই খেয়ে ক্ষুধা মিটায় আর এদিকে আমাদের না খেতে দেখে আমাদের বাবা মা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে টাকা আয় করে আমাদের অতৃপ্ত আবদার পূরণ করে একবারও কি ভেবেছি আমরা? আমরা এসব কেন করছি? কি লাভ এতে? আমাদের আসল জায়গা কোনটা? দিন শেষে তোমাকে তো তোমার বন্ধু তার বাড়িতে নিয়ে যাবেনা, তুমি গেলেও তোমাকে  এক বেলা খাওয়াবে, দুই বেলা খাওয়াবে,

পরের বার ঠিকই তোমাকে খাওয়াতে তার ইচ্ছা হবেনা এটাই দুনিয়ার নিয়ম, দিন শেষে আমাদের যার কাছে ফিরতে হবে সে হচ্ছে আমাদের পরিবার আমরা আমাদের পরিবারের সুখ শান্তির জন্য কিছু করতে পারবোনা??

একটা শিলিগুড়ির স্মার্ট, লেখাপড়া জানা ছেলে যদি টোটো চালিয়ে তার পরিবার চালাতে পারে তাহলে তুমি

কোন দেশের রাজা হয়ে গেছ??

আমি ওই ছেলেকে সুশিক্ষিত বলেছি, হ্যা! সে অনার্স এ পরে

কিন্তু তার বিবেক, মানসিকতা, সাহস, আত্মবিশ্বাস আমাকে বাধ্য করেছে তাকে সুশিক্ষিত বলতে

আমরা কোনো কাজকে ছোটো চোখে দেখবো না হয়তো কারোর জীবনে এমন কোনো পিছুটান আছে যা তাকে বাধ্য করছে এমন কোনো কাজের জন্য ছেলেটার নাম আমার জানা হলো না তবে তাকে আমি স্যালুট জানাই স্যালুট জানাই এমন সব মানুষদের

0 comments:

Post a Comment